নাপিতের হাতে ছাঁটাই করা সবুজ না, একদম জংলা সবুজ
ফাতিমা তুজ সারওয়ার | ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১২:২৯
গল্পটি বরগুনা নিয়ে। যারা জানেন না, তাদের জন্য বলে রাখছি বরগুনা বরিশালের একটি জেলা, সমুদ্র আর সুন্দরবনের কাছাকাছি। এই নিয়ে সেখানে গিয়েছি ৬ বার- আমার বড় খালামনির বাড়ি। আমি থাকি বরিশালে। বরিশাল থেকে সর্বসাকল্যে ৩ ঘণ্টার দূরত্ব। দক্ষিণ ভারতের কেরালার প্রতি যদি টান থেকে থাকে, তাহলে বরগুনাকে কেরালা বললেও খুব বেশি ভুল হবে না। চারিদিকে গাঢ় সবুজ। ইউরোপের মতো ঠিক নাপিতের হাতে ছাঁটাই করা সবুজ না, একদম জংলা সবুজ। প্রকৃতির স্বাধীনতায় এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। শেষ দু'বার আমার এমন হয়েছে- বরগুনা থেকে ফিরে এসেও মন ওখানেই পড়ে থাকছে। আগের নিয়মে ফিরে আসতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে। গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির শেষে, মাত্র দুই মাস আগে।
বরগুনা গিয়ে নিজেরে অনেকখানি মানুষ লাগছিল, এর বাইরে নিজেকে বেশির ভাগ সময় আশরাফুল মখলুকাত মনে হয়। অথবা, বরগুনা গিয়ে নিজেরে প্রকৃত অর্থে কিছুটা আশরাফুল মখলুকাত লাগছিল।
প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্ক এখানে অনেকখানি সরল, স্বাভাবিক, আর দশটা প্রাণীর মতোই। জটিলতা কম। বাসা গুলাও দুর্গের মতো না। ওপেন ফর অল- আলো, বাতাস, শীত, বিড়াল, চান্স পাইলে কুকুরের বাচ্চা, নানা ‘জাতের’ লোক, এমনকি চোর....., হনুমান, হাঁস, মানুষ, বরই গাছ, পুকুর, কুয়াশা, জঙ্গল মিলেমিশে সব এক সাথে আছে। নিজের বাড়িঘর মনে করেই আনন্দে আহ্লাদে থাকে। হারমনি বলে যেটাকে। এমনকি স্বজনদের কবরগুলাও বাড়ির কাছাকাছি...।
কলাপাতা কাটতে গিয়ে রহমান ভাই বলল যখন পলিথিন ছিল না তখন কচু পাতা, কলা পাতায় মোড়ায় জিনিসপত্র দিত, আর খাড়ই, সাঝি এগুলায় করে বাজার থেকে নিয়ে আসত। আমার এত সুন্দর লাগল আইডিয়াটা! আর মনে হইলো সভ্য হইতে গিয়ে আমরা মনে হয় আরও বেশি অ-সভ্য হয়ে গেছি। আরও মনে হইছে সংস্কৃতি সব গ্রামের দিকে, শহরে আছে শুধু অনুকরণ।
বরগুনা নিয়ে ভীষণ গল্প করতে ইচ্ছা করছে। প্রকৃতি আর মানুষের প্রতি এই একান্ত অনুভূতি আরও বড় পরিসরে প্রকাশের বাসনা নিয়ে লিখতে শুরু করলাম।
এবারের যাওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত-খালুর হঠাৎ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এমন যাওয়া আর যেতে চাই না.....। খালুর বাবা জনাব আব্দুল লতিফ ছিলেন বরগুনা জিলা স্কুলের শিক্ষক। খালু ছিলেন পেশায় উকিল। তার অন্যান্য ভাইবোনরাও যথেষ্ট শিক্ষিত এবং অধিকাংশই ছিলেন পেশাজীবী৷ খালামনিও চাকরি করেছেন ব্যাংকে। সেই পঞ্চাশের দশকে শহর থেকে দূরে এমন একটা পরিবারের গল্প যেন স্বপ্নের মতো লাগল আমার কাছে।
বরগুনা গিয়ে ‘আয়রন ম্যান’ ডকুমেন্টারিতে মো. শামসুজ্জামান আরাফাতের বলা একটা কথা বারবার মনে পড়ছিল- ‘বাংলাদেশ যে কত সুন্দর এইটা আমি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া না দৌঁড়াইলে বুঝতাম না।’ আসলেই বাংলাদেশ যে কত সুন্দর.....
আমরা কম বেশি শহরমুখী। ছোট থেকে বড় হওয়ার সময়টাতে আমার ঝোঁকটাও ছিল সেই দিকে। বড় হতে হতে চোখটা এখন অনেকখানি মাটির দিকে। আমি বিশেষ কোনো প্রকৃতিপ্রেমী নই, তাও কেন যেন বরগুনা আমার ভালো লেগে গেল। এবার গিয়ে বারবার মনে হলো এমন একটা জায়গায় আমার একটা চাকরি নেই কেন! খালুদের বাড়ির সামনে আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা জীবন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছি। মনে মনে ভাবলাম এবার যদি কৃষক, দিনমজুরের ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারতাম, হয়তো শান্তিই পেতাম।
বাড়ির পেছনে ঘন জঙ্গল, সারা দিন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। শহরে যেই অর্কিড দাম দিয়ে কিনতে হয়, পুকুরপাড়ের জাম গাছটায় সেই অর্কিড বাসা বেঁধেছে মনের সুখে, এগুলো কি আভিজাত্য নয়? বাড়ির সামনেই একটা ব্রিজ, নিচ থেকে চলে গেছে পায়রা নদীর খাল। এই খাল ধরে প্রতি সপ্তাহে জেলেদের ট্রলার যায় পায়রা নদীতে, সেখান থেকে সমুদ্রে। সেই ছোট্ট ব্রিজে, বাড়ির পুকুরঘাটে এত বাতাস, মনে হয় যেন আয়ু আরও কয়েক বছর বাড়িয়ে দিয়ে যায়। পুরো বাড়ি জুড়ে এত স্নিগ্ধ ফার্ন গাছ, চোখ ফেরানো যায় না। পুকুরপাড়ে বসে চোখটা বন্ধ করে আদিম যুগের পৃথিবীকে কল্পনা করার চেষ্টা করি- পাখির ডাক আর বাতাসের শব্দ- যন্ত্রের শব্দ সেখানে তেমন একটা কানে আসে না।
খালুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনেকে এসেছেন দেখা করতে। বাড়িটা খালুর ভীষণ প্রিয়। তিনি শহরে যেতে পারতেন সহজেই, কিন্তু শহরবিমুখ ছিলেন, কেনই বা যাবেন?! বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে মনে হলো এই সব ঝোপ, লতা-পাতা, পানের বরজ সব যেন খালুর অন্তরে এসে মিশেছে। এই সব সবুজের কেন্দ্রে, রাজার মতো হাসিমুখে বসে ছিলেন খালু। খালামনিও ঠিক একই কথা বলছিলেন- এটা ছিল তোমার খালুর রাজত্ব, আর উনি ছিলেন এই রাজ্যের রাজা। শৌখিন ছিলেন, কিন্তু সেই শৌখিনতা ঠিক শো-পিসের শৌখিনতা নয়... বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখে পড়ল আনারসের গাছ.... গোয়ালে গরু ছিল, পুকুরে মাছ ছিল, খামারে দেশি মুরগি আর হাঁস ছিল, গোলায় মোটা চালের ধান ছিল, পানের বরজ ছিল, পথের মাঝে গাছ থেকে টুপ করে পড়া বেল ছিল..... খালুর শৌখিনতা ছিল এসবকে কেন্দ্র করে, ঠিক লোক দেখানো নয়।
বরগুনা ভালো লাগার আরেকটা কারণ মানুষ। আমি যে ধরনের তাতে শুধু প্রকৃতি দিয়ে আমার পোষাবে না..., খালু আর খালামনি সেখানকার লোকদের আপন করে নিয়েছেন। তাদের বাড়িতে মানুষের সাথে মানুষের তেমন কোন তফাৎ চোখে পড়ে না। এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে? খালামনি কথায় কথায় বলছিলেন, ‘এখানে আমি যেই ভালোবাসা পাই সেটা আর কোথায় পাব? ওদের বাড়িতে গিয়ে বলি, কী রানছ আজকে? আচ্ছা শাক ভাজি দিয়া আমারে একটু মুড়ি দাও৷ আমারে খাওয়াইতে পেরে ওদের মুখে যে হাসি সেইটার তো তুলনা হয় না...।’
বরগুনার এক কলেজের একজন অধ্যাপক আসলেন, কথায় কথায় বললেন তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে দাদুর কাছে আসতেন বাংলা ব্যাকরণ শিখতে, দাদুর কাছে সুপসুপা সমাস শিখেছেন, এখনো ভোলেননি... লতিফ মাস্টারের বাড়িতে জায়গা হয়েছে মানুষের- এখানে থেকে পড়ালেখা করেছেন তারা। এইভাবে সেই বাড়ি যেন রাজমহলে পরিণত হয়েছে। যার আন্তরিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছে পরের প্রজন্মও। আজকের দিনের সামাজিক আচরণের প্রেক্ষিতে এই সব গল্প যেন রূপকথা... লেখাটা শেষ করতে করতে হঠাৎ ‘Beautiful Bangladesh- School of life’ নামে আরেকটা ডকুমেন্টারির কথা মনে পড়ে গেল.... আর মনে হলো প্রকৃতি আর শুদ্ধ মানুষের সহচার্যে বরগুনার এই টুকরো অংশ যেন আসলেই জীবনের পাঠশালা।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
ফাতিমা তুজ সারওয়ার | ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১২:২৯

গল্পটি বরগুনা নিয়ে। যারা জানেন না, তাদের জন্য বলে রাখছি বরগুনা বরিশালের একটি জেলা, সমুদ্র আর সুন্দরবনের কাছাকাছি। এই নিয়ে সেখানে গিয়েছি ৬ বার- আমার বড় খালামনির বাড়ি। আমি থাকি বরিশালে। বরিশাল থেকে সর্বসাকল্যে ৩ ঘণ্টার দূরত্ব। দক্ষিণ ভারতের কেরালার প্রতি যদি টান থেকে থাকে, তাহলে বরগুনাকে কেরালা বললেও খুব বেশি ভুল হবে না। চারিদিকে গাঢ় সবুজ। ইউরোপের মতো ঠিক নাপিতের হাতে ছাঁটাই করা সবুজ না, একদম জংলা সবুজ। প্রকৃতির স্বাধীনতায় এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি। শেষ দু'বার আমার এমন হয়েছে- বরগুনা থেকে ফিরে এসেও মন ওখানেই পড়ে থাকছে। আগের নিয়মে ফিরে আসতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাচ্ছে। গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারির শেষে, মাত্র দুই মাস আগে।

বরগুনা গিয়ে নিজেরে অনেকখানি মানুষ লাগছিল, এর বাইরে নিজেকে বেশির ভাগ সময় আশরাফুল মখলুকাত মনে হয়। অথবা, বরগুনা গিয়ে নিজেরে প্রকৃত অর্থে কিছুটা আশরাফুল মখলুকাত লাগছিল।
প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্ক এখানে অনেকখানি সরল, স্বাভাবিক, আর দশটা প্রাণীর মতোই। জটিলতা কম। বাসা গুলাও দুর্গের মতো না। ওপেন ফর অল- আলো, বাতাস, শীত, বিড়াল, চান্স পাইলে কুকুরের বাচ্চা, নানা ‘জাতের’ লোক, এমনকি চোর....., হনুমান, হাঁস, মানুষ, বরই গাছ, পুকুর, কুয়াশা, জঙ্গল মিলেমিশে সব এক সাথে আছে। নিজের বাড়িঘর মনে করেই আনন্দে আহ্লাদে থাকে। হারমনি বলে যেটাকে। এমনকি স্বজনদের কবরগুলাও বাড়ির কাছাকাছি...।
কলাপাতা কাটতে গিয়ে রহমান ভাই বলল যখন পলিথিন ছিল না তখন কচু পাতা, কলা পাতায় মোড়ায় জিনিসপত্র দিত, আর খাড়ই, সাঝি এগুলায় করে বাজার থেকে নিয়ে আসত। আমার এত সুন্দর লাগল আইডিয়াটা! আর মনে হইলো সভ্য হইতে গিয়ে আমরা মনে হয় আরও বেশি অ-সভ্য হয়ে গেছি। আরও মনে হইছে সংস্কৃতি সব গ্রামের দিকে, শহরে আছে শুধু অনুকরণ।
বরগুনা নিয়ে ভীষণ গল্প করতে ইচ্ছা করছে। প্রকৃতি আর মানুষের প্রতি এই একান্ত অনুভূতি আরও বড় পরিসরে প্রকাশের বাসনা নিয়ে লিখতে শুরু করলাম।
এবারের যাওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত-খালুর হঠাৎ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এমন যাওয়া আর যেতে চাই না.....। খালুর বাবা জনাব আব্দুল লতিফ ছিলেন বরগুনা জিলা স্কুলের শিক্ষক। খালু ছিলেন পেশায় উকিল। তার অন্যান্য ভাইবোনরাও যথেষ্ট শিক্ষিত এবং অধিকাংশই ছিলেন পেশাজীবী৷ খালামনিও চাকরি করেছেন ব্যাংকে। সেই পঞ্চাশের দশকে শহর থেকে দূরে এমন একটা পরিবারের গল্প যেন স্বপ্নের মতো লাগল আমার কাছে।
বরগুনা গিয়ে ‘আয়রন ম্যান’ ডকুমেন্টারিতে মো. শামসুজ্জামান আরাফাতের বলা একটা কথা বারবার মনে পড়ছিল- ‘বাংলাদেশ যে কত সুন্দর এইটা আমি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া না দৌঁড়াইলে বুঝতাম না।’ আসলেই বাংলাদেশ যে কত সুন্দর.....

আমরা কম বেশি শহরমুখী। ছোট থেকে বড় হওয়ার সময়টাতে আমার ঝোঁকটাও ছিল সেই দিকে। বড় হতে হতে চোখটা এখন অনেকখানি মাটির দিকে। আমি বিশেষ কোনো প্রকৃতিপ্রেমী নই, তাও কেন যেন বরগুনা আমার ভালো লেগে গেল। এবার গিয়ে বারবার মনে হলো এমন একটা জায়গায় আমার একটা চাকরি নেই কেন! খালুদের বাড়ির সামনে আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সারা জীবন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছি। মনে মনে ভাবলাম এবার যদি কৃষক, দিনমজুরের ছেলেমেয়েদের পড়াতে পারতাম, হয়তো শান্তিই পেতাম।
বাড়ির পেছনে ঘন জঙ্গল, সারা দিন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। শহরে যেই অর্কিড দাম দিয়ে কিনতে হয়, পুকুরপাড়ের জাম গাছটায় সেই অর্কিড বাসা বেঁধেছে মনের সুখে, এগুলো কি আভিজাত্য নয়? বাড়ির সামনেই একটা ব্রিজ, নিচ থেকে চলে গেছে পায়রা নদীর খাল। এই খাল ধরে প্রতি সপ্তাহে জেলেদের ট্রলার যায় পায়রা নদীতে, সেখান থেকে সমুদ্রে। সেই ছোট্ট ব্রিজে, বাড়ির পুকুরঘাটে এত বাতাস, মনে হয় যেন আয়ু আরও কয়েক বছর বাড়িয়ে দিয়ে যায়। পুরো বাড়ি জুড়ে এত স্নিগ্ধ ফার্ন গাছ, চোখ ফেরানো যায় না। পুকুরপাড়ে বসে চোখটা বন্ধ করে আদিম যুগের পৃথিবীকে কল্পনা করার চেষ্টা করি- পাখির ডাক আর বাতাসের শব্দ- যন্ত্রের শব্দ সেখানে তেমন একটা কানে আসে না।
খালুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনেকে এসেছেন দেখা করতে। বাড়িটা খালুর ভীষণ প্রিয়। তিনি শহরে যেতে পারতেন সহজেই, কিন্তু শহরবিমুখ ছিলেন, কেনই বা যাবেন?! বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে মনে হলো এই সব ঝোপ, লতা-পাতা, পানের বরজ সব যেন খালুর অন্তরে এসে মিশেছে। এই সব সবুজের কেন্দ্রে, রাজার মতো হাসিমুখে বসে ছিলেন খালু। খালামনিও ঠিক একই কথা বলছিলেন- এটা ছিল তোমার খালুর রাজত্ব, আর উনি ছিলেন এই রাজ্যের রাজা। শৌখিন ছিলেন, কিন্তু সেই শৌখিনতা ঠিক শো-পিসের শৌখিনতা নয়... বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখে পড়ল আনারসের গাছ.... গোয়ালে গরু ছিল, পুকুরে মাছ ছিল, খামারে দেশি মুরগি আর হাঁস ছিল, গোলায় মোটা চালের ধান ছিল, পানের বরজ ছিল, পথের মাঝে গাছ থেকে টুপ করে পড়া বেল ছিল..... খালুর শৌখিনতা ছিল এসবকে কেন্দ্র করে, ঠিক লোক দেখানো নয়।

বরগুনা ভালো লাগার আরেকটা কারণ মানুষ। আমি যে ধরনের তাতে শুধু প্রকৃতি দিয়ে আমার পোষাবে না..., খালু আর খালামনি সেখানকার লোকদের আপন করে নিয়েছেন। তাদের বাড়িতে মানুষের সাথে মানুষের তেমন কোন তফাৎ চোখে পড়ে না। এর চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে? খালামনি কথায় কথায় বলছিলেন, ‘এখানে আমি যেই ভালোবাসা পাই সেটা আর কোথায় পাব? ওদের বাড়িতে গিয়ে বলি, কী রানছ আজকে? আচ্ছা শাক ভাজি দিয়া আমারে একটু মুড়ি দাও৷ আমারে খাওয়াইতে পেরে ওদের মুখে যে হাসি সেইটার তো তুলনা হয় না...।’
বরগুনার এক কলেজের একজন অধ্যাপক আসলেন, কথায় কথায় বললেন তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে দাদুর কাছে আসতেন বাংলা ব্যাকরণ শিখতে, দাদুর কাছে সুপসুপা সমাস শিখেছেন, এখনো ভোলেননি... লতিফ মাস্টারের বাড়িতে জায়গা হয়েছে মানুষের- এখানে থেকে পড়ালেখা করেছেন তারা। এইভাবে সেই বাড়ি যেন রাজমহলে পরিণত হয়েছে। যার আন্তরিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছে পরের প্রজন্মও। আজকের দিনের সামাজিক আচরণের প্রেক্ষিতে এই সব গল্প যেন রূপকথা... লেখাটা শেষ করতে করতে হঠাৎ ‘Beautiful Bangladesh- School of life’ নামে আরেকটা ডকুমেন্টারির কথা মনে পড়ে গেল.... আর মনে হলো প্রকৃতি আর শুদ্ধ মানুষের সহচার্যে বরগুনার এই টুকরো অংশ যেন আসলেই জীবনের পাঠশালা।