বিশ্ব নারী দিবস আজ
শত বাধা পেরিয়ে দেশের সেবা করছেন তারা
ইমন রহমান | ৮ মার্চ, ২০২০ ১৩:১২
নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফরিদা পারভীন (বাঁয়ে) ও ডিএমপির সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফি তানজিনা।
বর্তমান সময়ের নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমতলে এগিয়ে যাচ্ছেন। সব বাধা, বিপত্তি পেছনে ফেলে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এসব নারীরা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি চাকরি ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছেন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশর পুলিশ, সেনা, বিমান নৌ বাহিনী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ক্রিকেট-ফুটবল সব ক্ষেত্রেই এখন সমান বিচরণ নারীদের। বাংলাদেশ পুলিশের এমন দুই নক্ষত্র নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফরিদা পারভীন ও ডিএমপির সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফি তানজিনা। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা সংসার ও দেশের সেবা সমান তালে করছেন। জীবনের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তারা।
১৯৮৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানায় ফরিদার জন্ম। জামালপুরের মেয়ে হলেও বাবার চাকরির সূত্র ধরে বড় হয়েছেন টাঙ্গাইল সদরে। বাবা মো. আবদুর রাজ্জাক, পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলী এবং মা নিলুফা ইয়াসমিন, একজন সাধারণ গৃহিণী। তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় তিনজন কন্যা সন্তান। সমাজের প্রচলিত রীতি না মেনে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করাই ছিল তাদের ব্রত। বাবার চাকরির সূত্র ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা টাঙ্গাইলে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ তার ভালো ফলাফলের জন্য এ সময় তিনি মেধা পদকে পুরস্কৃত করেন। ৩১ তম বিসিএসের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে নৌ পুলিশ ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন।
ফরিদা পুলিশের মতো ব্যস্ত পেশায় থেকেও পরিবার এবং সমাজকে সময় দেন। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি নৌ পুলিশের লিগ্যাল, মিডিয়া এবং ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। উপরন্তু নৌ পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। বিয়ের পৌনে চার বছরের মাথায় তার স্বামীকে হারান। সে সময় তার দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান ছিল। অন্যদিকে সাড়ে চার মাসের অনাগত সন্তানকে শরীরে ধারণ করে ওই কঠিন সময়েও নিজেকে ধীরে ধীরে প্রমাণ করেছেন। বর্তমানে তার তিন বছরের কন্যা রাইম ও এক বছরের ওপরে পুত্র সন্তান রোরিকে নিয়ে খুব সাহসিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এত কিছুর পরেও ভালোবাসার অমরত্ব নিয়ে এবার একুশের বই মেলায় ফরিদা প্রথম কবিতার বই, ‘ভালোবাসা কথা কয়’ প্রকাশ করেন।
এদিকে পুলিশের আরেক নারী সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফি তানজিনা। তার জন্ম টাঙ্গাইলের দেলদেও সিংহরাগি গ্রামে। বাবা স্কুলশিক্ষক। চার বোনের মধ্যে সবার বড় তানজিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে হয় তার। একই বছর সন্তান প্রসব করেন। এরপরও অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্টে মেধাতালিকায় প্রথম দিকেই ছিলেন তানজিনা। ৩৩ম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন তিনি। এর পর থেকে দেশ সেবা ও সাংসার সমান তালে সামলে চলছেন।
পুলিশে কোনো বৈষম্য নেই উল্লেখ করে তানজিনা বলেন, আসলে গৃহিণী আমি ও সারদা থেকে প্রশিক্ষণ শেষের আমি দুটোতেই বিস্তর ফারাক। সারদায় প্রশিক্ষণকালীন সময়য়ে ১১ ফিটের একটি দেয়াল লাফ দেওয়া ছাড়া ছেলে সদস্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে হয়েছে আমাকে। ওই কারণেই এখন নিজেকে যে কোনো কাজের যোগ্য বলেই মনে হয়। ট্রাফিকের মতো একটি ব্যস্ততম বিভাগের দায়িত্বে থেকেই আবার সংসার সামলানোর বিষয়ে এ নারী কর্মকর্তা বলেন, আমার স্বামী একজন ব্যাংকার। ৪ বছরের মেয়েকে রেখে সারদায় ট্রেনিংয়ে যাই আমি। এখন আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। আসলে কর্মজীবী নারী বা মায়েদের ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে বোঝাপড়া, সহমর্মিতা ও দায়িত্বগুলো ভাগ করে নেওয়া একটি বড় বিষয়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
ইমন রহমান | ৮ মার্চ, ২০২০ ১৩:১২

বর্তমান সময়ের নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমতলে এগিয়ে যাচ্ছেন। সব বাধা, বিপত্তি পেছনে ফেলে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। এসব নারীরা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি চাকরি ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছেন চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশর পুলিশ, সেনা, বিমান নৌ বাহিনী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ক্রিকেট-ফুটবল সব ক্ষেত্রেই এখন সমান বিচরণ নারীদের। বাংলাদেশ পুলিশের এমন দুই নক্ষত্র নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফরিদা পারভীন ও ডিএমপির সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফি তানজিনা। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা সংসার ও দেশের সেবা সমান তালে করছেন। জীবনের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তারা।
১৯৮৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানায় ফরিদার জন্ম। জামালপুরের মেয়ে হলেও বাবার চাকরির সূত্র ধরে বড় হয়েছেন টাঙ্গাইল সদরে। বাবা মো. আবদুর রাজ্জাক, পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলী এবং মা নিলুফা ইয়াসমিন, একজন সাধারণ গৃহিণী। তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় তিনজন কন্যা সন্তান। সমাজের প্রচলিত রীতি না মেনে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করাই ছিল তাদের ব্রত। বাবার চাকরির সূত্র ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা টাঙ্গাইলে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ইডেন কলেজ কর্তৃপক্ষ তার ভালো ফলাফলের জন্য এ সময় তিনি মেধা পদকে পুরস্কৃত করেন। ৩১ তম বিসিএসের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে নৌ পুলিশ ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন।
ফরিদা পুলিশের মতো ব্যস্ত পেশায় থেকেও পরিবার এবং সমাজকে সময় দেন। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি নৌ পুলিশের লিগ্যাল, মিডিয়া এবং ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। উপরন্তু নৌ পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। বিয়ের পৌনে চার বছরের মাথায় তার স্বামীকে হারান। সে সময় তার দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান ছিল। অন্যদিকে সাড়ে চার মাসের অনাগত সন্তানকে শরীরে ধারণ করে ওই কঠিন সময়েও নিজেকে ধীরে ধীরে প্রমাণ করেছেন। বর্তমানে তার তিন বছরের কন্যা রাইম ও এক বছরের ওপরে পুত্র সন্তান রোরিকে নিয়ে খুব সাহসিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এত কিছুর পরেও ভালোবাসার অমরত্ব নিয়ে এবার একুশের বই মেলায় ফরিদা প্রথম কবিতার বই, ‘ভালোবাসা কথা কয়’ প্রকাশ করেন।
এদিকে পুলিশের আরেক নারী সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফি তানজিনা। তার জন্ম টাঙ্গাইলের দেলদেও সিংহরাগি গ্রামে। বাবা স্কুলশিক্ষক। চার বোনের মধ্যে সবার বড় তানজিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে হয় তার। একই বছর সন্তান প্রসব করেন। এরপরও অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্টে মেধাতালিকায় প্রথম দিকেই ছিলেন তানজিনা। ৩৩ম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন তিনি। এর পর থেকে দেশ সেবা ও সাংসার সমান তালে সামলে চলছেন।
পুলিশে কোনো বৈষম্য নেই উল্লেখ করে তানজিনা বলেন, আসলে গৃহিণী আমি ও সারদা থেকে প্রশিক্ষণ শেষের আমি দুটোতেই বিস্তর ফারাক। সারদায় প্রশিক্ষণকালীন সময়য়ে ১১ ফিটের একটি দেয়াল লাফ দেওয়া ছাড়া ছেলে সদস্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে হয়েছে আমাকে। ওই কারণেই এখন নিজেকে যে কোনো কাজের যোগ্য বলেই মনে হয়। ট্রাফিকের মতো একটি ব্যস্ততম বিভাগের দায়িত্বে থেকেই আবার সংসার সামলানোর বিষয়ে এ নারী কর্মকর্তা বলেন, আমার স্বামী একজন ব্যাংকার। ৪ বছরের মেয়েকে রেখে সারদায় ট্রেনিংয়ে যাই আমি। এখন আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। আসলে কর্মজীবী নারী বা মায়েদের ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে বোঝাপড়া, সহমর্মিতা ও দায়িত্বগুলো ভাগ করে নেওয়া একটি বড় বিষয়।