
চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা এখনো কঠিন সময় অতিক্রম করছে বলে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৫ শতাংশ নারী চাইলেও চাকরি পাচ্ছেন না, সেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ১০.৫ শতাংশ। দুই দশক ধরেই এই লিঙ্গ ব্যবধান অব্যাহত রয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, নারী-পুরুষের আয় বৈষম্যও এখনো ব্যাপক। বিশ্বজুড়ে গড়ে একজন পুরুষ শ্রম দিয়ে এক ডলার আয় করলে তার বিপরীতে নারীর আয় ৫১ সেন্ট। অর্থাৎ বৈশ্বিক হিসাবে নারীর শ্রম আয় এখনো পুরুষের অর্ধেক। এই ব্যবধান নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে আরো বেশি। সেখানে পুরুষের প্রতি ডলার আয়ের বিপরীতে নারীর গড় আয় ৩৩ সেন্ট, তবে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে নারীর আয় ৫৮ সেন্ট। সূত্র : এএফপি, আইএলও, বিশ্বব্যাংক।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডুডলে ভিন্নতা এনেছে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল। সাধারণত বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে ডুডলে পরিবর্তন আনে গুগল। এবারও তাই হলো। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ডুডলকে রাঙানো হলো বেগুনি রঙে।
বুধবার (০৮ মার্চ) দেখা গেল, এবার প্রতিটি অক্ষরের ভিগনেটগুলো নারীদের বিচরণের কয়েকটি ক্ষেত্রকে হাইলাইট করেছে, যেখানে সারা বিশ্বের নারীরা একে অপরকে সমৃদ্ধ করতে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে সমর্থন জোগায়। ফলে গুগলের ছয়টি অক্ষরে দেখা মিলছে নারীর ছয় রকম অবস্থানের প্রতিচ্ছবি।
‘জি’ অক্ষরটিতে স্থান পেয়েছে সমাজের প্রগতিশীল নারীর চিত্র। তারা অধিকার নিয়ে কথা বলে এবং তাদের কথা সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব ফেলে। দুটি ‘ও’-এর একটিতে নারীর সাধারণ জীবনের চিত্র এবং অপরটিতে বিভিন্ন বয়সী আধুনিক নারীর চিত্র দেখা যায়।
দ্বিতীয় ‘জি’তে উঠে এসেছে নারীর মাতৃত্বের চিরচেনা রূপ। ‘এল’ অক্ষরে আছে প্রতিবাদী নারীদের মুখ। সর্বশেষ ‘ই’ অক্ষরটিতে সেবাদানকারী নারীর প্রতিচ্ছবি। চমৎকার ডুডলটি নকশা করেছেন অ্যালিসা উইনান্স।
যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে মাধ্যমেই নারীরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নারী অধিকার বাস্তবায়ন অনেকটাই কঠিন। তবে নির্যাতন, বৈষম্যসহ হাজারও প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে নারীরা দখল করে নিচ্ছে তাদের যথোপযুক্ত স্থান।
নারীরা এখন শুধু ঘরোয়া কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, গণমাধ্যমকর্মী, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থানে রয়েছে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। তারা অবদান রাখছে অর্থনীতি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সর্বোপরি উন্নয়নে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী অধিকার বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর দিবসটি উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে নারী শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া ও ভাবনা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
‘নারী তুমি মেলো তোমার ডানা নির্ভয়ে’
হাফসা আলম
আমাদের সমাজে ‘লক্ষ্ণী মেয়ে’ বলতে আমরা ধরে নিই শান্ত প্রকৃতির সেই সুবোধ মেয়েটাকে যে সমাজ ও পরিবারের কথা ভেবে হয়তো বলি দেয় তার অতি সাধের কোনো শখ অথবা স্বপ্ন। এই একবিংশ শতাব্দীতে যখন সারা বিশ্ব নারীর অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে, আমাদের অধিকাংশ মেয়ে এখনো পড়ে আছে তথাকথিত ‘লক্ষ্ণী মেয়ে’ হয়ে ওঠার চক্রে।
এই চক্র থেকে বের হওয়ার প্রথম উপায় অবশ্যই শিক্ষা। কিন্তু শুধু শিক্ষায় আলোকিত হলে চলবে না, জানতে হবে শিক্ষার প্রয়োগ, সচেতন হতে হবে নিজের অধিকার সম্পর্কে এবং আওয়াজ তুলতে হবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সাথে পরিবার ও সমাজের সমর্থন থাকলে, আমাদের মেয়েরাও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বহুদূর।শিক্ষার্থী, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
‘বৈষম্য নয়, সাম্যই হোক মুক্তি’
রেহেনুমা নুরাইয়া তান্নি
নারী কখনো মা, কখনো মেয়ে, কখনো স্ত্রী, কখনো বোন। ইতিহাস জানে নারীর সাহসিকতায় রুখে গিয়েছিল পরাধীনতা। নারীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি সার্বভৌম দেশ। গর্ব নিয়ে বাচাঁর অধিকার। নারীরা কখনো বাধা নয়। বরং তারাই তৈরি করেছে পথ। মাতৃত্বের মমতায়, প্রিয়তমার ভালোবাসায়, বোনের স্নেহে বারবার আগলে রেখে।
প্রতিটি জাতি ও সম্প্রদায় জানে নারী মানেই শক্তি। কাজেই তাদের রক্তে মাংসে গড়া অমূল্য সৃষ্টি ভেবে ভালোবাসায়, স্নেহে, মমতায় আগলে রাখতে হবে। বৈষম্য রোধ করে হাঁটতে দিতে হবে সমতার গণপথে। এতেই জাতি শ্রেষ্ঠ হবে। নারীর জন্য চাই সহমর্মিতা, সহানুভূতি। কবি নজরুলের ভাষায় ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি
‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে চাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’
আলিফেন্নেছা আলিফ
বিশ্বায়নের এই যুগে কোনো দেশকে এগিয়ে যেতে হলে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। নারীর ক্ষমতায়ন বলতে শুধু সমান অধিকার লাভকেই বোঝায় না, দেশের সকল অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজে অংশগ্রহণও এর উল্লেখযোগ্য অংশ।
নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর মাধ্যমে সঠিক নির্দেশনা, তথ্য ও জ্ঞানের সমাবেশে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নারীরা। একমাত্র সচেতনতাই নারীদের মনে কর্মস্পৃহা তৈরি করেছে। সমাজের নানা কুসংস্কার, হুমকি উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে পথে দাঁড়িয়েছে নারীরা। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের চাহিদা পরিলক্ষিত।
আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা কাজ করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। আত্মবিশ্বাস, নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সামাজিক রীতিনীতি ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে। আইসিটি প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার ব্যক্তিগত পর্যায়ে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া যেমন উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি নারীদের এ খাতে অংশ নেওয়া ছাড়াও উন্নয়ন সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
‘শুধু মা, বোন, স্ত্রী হিসেবে সম্মান জানানোই যথেষ্ট নয়’
মেহেরুন্নেসা ইসলাম মৌ
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নারীদের সমতার লড়াই করা কিছুটা দুর্বোধ্যই বলা চলে। চারপাশে তাকালে দেখা যাবে, সবক্ষেত্রেই নারীরা নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। তবে একটু হিসাব কষলেই বোঝা যাবে, এই জায়গায় পৌঁছাতে কতটুকু অন্যায়ের শিকার হয়েছে এই নারীরা। সমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে ফেমিনিজমের সূত্রপাত হয় উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে।
ফেমিনিজম যেমন পরিচিত একটি শব্দ, তেমনি খুব তর্কসাধ্যও বটে। আধুনিক নারীবাদী তত্ত্বের কিছু ঘোলাটে দিককে প্রাধান্য দিতে যেয়ে আমরা হয়তো নারীবিদ্বেষী সমস্যাগুলোয় আলোকপাত করতে ভুলে যাচ্ছি। নারীরা শত বাধা-বিপত্তি ছাড়িয়ে জয় করে নিচ্ছে সফলতার চূর্ণ শিখর। তবে, এই সফলতার পথটা এতটা ঝঞ্ঝার না হলেও পারত।
‘ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ কে ‘নারীর নিরাপত্তা’র নাম দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যেন খুব সাধারণ একটি বিষয়। আদৌ নিরাপত্তা নিশ্চিতে কতটুকু জোর দেওয়া হচ্ছে, তার প্রতিফলন আশপাশে তাকালেই দেখা যাবে। চারদিকে এত উন্নয়নের মাঝে কোথাও না কোথাও নারীরা এখনো নিষ্পেষিত। সফলতার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে মোকাবিলা করতে হয় নারীবিদ্বেষী নিয়ম-কানুনের। পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র ও সম্মানের সাথে বাঁচা ব্যক্তি স্বাধীনতার অংশ হলেও নারীদের জন্য যেন অন্য এক একটি যুদ্ধের নাম। এর ফলে ঝরে যায় অনেক মেধাবী প্রাণ আর সৃষ্টিশীল চেতনা, থেমে যায় সার্বিক উন্নয়নের ধারা।
এসব সমস্যা শুরু হয় দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও কিছু গোড়া চিন্তার প্রতিফলন থেকে। স্বাধীনতা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে, কঠোর আইন প্রণয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন মানসিকতা পরিবর্তন করা। নারীকে লিঙ্গভেদে নয়, বরং মানুষ হিসেবে সম্মান ও অধিকারের সাথে বাঁচতে দেওয়াই হোক নারীবাদীতত্ত্বের উদ্দেশ্য।
ফলে নারী দিবসকে সামনে রেখে শুধু মা, বোন, স্ত্রী হিসেবে সম্মান জানানোই যথেষ্ট নয়। এখন সময়, বৈষম্য ছাড়িয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশিষে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করা।
শিক্ষার্থী, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
‘নারী-পুরুষের পারষ্পরিক সহযোগিতায় সম্ভব সামগ্রিক উন্নয়ন’
ফারহানা নৌশিন তিতিলী
নারী তার মেধা, মনন, সততা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে অতীতের সকল কালিমাকে পেছনে ফেলে বিশ্বের অগ্রগতি এবং উন্নয়নে সমান ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যুগ পাল্টানোর সাথে সাথে নারীরাও তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীতে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ঘরে বা বাইরে কোনো জায়গাতেই উন্নয়নের কথা চিন্তা করা আর মূর্খের স্বর্গে বসবাস করা একই বিষয়। ঠিক তেমনি বাকি অর্ধেক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ পুরুষের সহযোগিতাও নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী, পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব।
শিক্ষার্থী, আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
‘চাকরি করতে না পারায় মায়ের আফসোস দেখেছি’
তাসমিয়া বিনতে জহির
আমার মা সারা জীবন আফসোস করেছেন চাকরি না করতে পারা নিয়ে। ছোট থেকে তিনি শিখিয়েছেন পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে নিজের একটা আলাদা পরিচয় থাকতেই হবে। এ কারণে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই আমার অন্তরাত্মায় মিশে গেছে। এমন পরিবেশে বড় হওয়ায় যখন দেখি বাল্যবিয়ের মামলার ভয়ে কোনোমতে ১৮ বছর পার করা মেয়েগুলো হুট করে বিবাহিতা হয় এবং তার ক’দিন পরেই শিশুর জন্ম দেয়, আমি কষ্ট পাই।
চিন্তা করি আমার মায়ের মতোন একজন নারীর অভাবে কতজন নিজের অস্তিত্বের স্বাদ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হলো। কত নারী নিজের প্রথম বেতনের টাকায় পরিবারকে উপহার দেওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হলো বা পরিবারকে নিজের যোগ্যতায় গর্বিত করা থেকে। গুটিকতক সুখী এবং সৌভাগ্যবতীদের কথা আমি বলছি না, বলছি বাংলাদেশের স্বাভাবিক চিত্রের কথা। আমি নারী দিবসে আমার মায়ের মতোন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নারীদের অন্তর থেকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানাই।শিক্ষার্থী, সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম
চা বাগানের সবুজ বুকে নারীদের পাতা তোলার ছবি যতটা মুগ্ধ করে, এই নারীদের জীবনের গল্প ততটা আনন্দদায়ক নয়। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে চা বাগানের টিলায় টিলায় পাতা তুলেই নিঃশেষ হয়ে যায় নারী চা শ্রমিকের জীবন।দেশে চা শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের অর্ধেকের বেশি নারী। পাতা বা কুঁড়ি তোলার প্রধান কাজটিই করেন নারী চা শ্রমিকেরা।প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নারী শ্রমিকেরা এই কাজ করে গেলেও কাজের ক্ষেত্রে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তার অনেক কিছুই এখনো নাগালে আসেনি। এই নারীরা অর্থ উপার্জন করলেও এখনো পরিবারে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগানের নারী শ্রমিকেরা জানান, সাত সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়। সংসারের কাজ করতে হয়। বাগান দূরে হলে আগেভাগে রওনা দিতে হয়। সপ্তাহে সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কেউ সকাল খেয়ে বের হন, কারও সময় না থাকলে বাটিতে খাবার নিয়েই ছুটতে হয়। দুপুরে খাবার বলতে চাল ভাজা, চায়ের কুঁড়ি পাতা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ইত্যাদি দিয়ে বানানো ‘পাতিচখা’ বা ‘পাতি চাতনি’। লাইনে (শ্রমিকদের বসতি) ফিরতে ফিরতে কারও সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা বেজে যায়। ঘরে ফিরে আবার সংসারের কাজ করতে হয় তাদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কমলগঞ্জের আলীনগর ও মাধবপুর চা বাগানের নারী শ্রমিকরা জানান, ১৭০ টাকা মজুরি পেতে বাগানভেদে ২৫-৩০ কেজি চা পাতা তুলতে হয়। বাড়তি চা পাতা তুললে যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা, তাও পান না বেশির ভাগ নারী শ্রমিক। কাজের স্থানে নারীদের কোনো শৌচাগার না থাকায় বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে তারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা রামভজন কৈরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, চা বাগানে অর্ধেক নারী শ্রমিক হলেও নারী হিসেবে কর্মস্থলে যে সুযোগ-সুবিধা থাকার দরকার, তা তারা পাচ্ছেন না। কর্মক্ষেত্রে শৌচাগার নেই, কিন্তু চুক্তিতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চা বাগানে নারীরা উপার্জন করলেও অনেক ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে। কিছু কিছু অগ্রগতি হলেও পরিবারে পুরুষেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। নারীর চিন্তাভাবনা কাজে লাগছে না। নারী চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার নেই। ফলে কর্মজীবী মায়েরা তাদের সন্তানদের কোথায় রেখে কাজ করবেন তা নিয়ে যেমন চিন্তায় থাকে, একইভাবে আদর-যত্ন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিটি চা বাগানে নারী শ্রমিকদের সুখ-দুঃখ, ব্যক্তিগত বিষয়ে আলাপের জন্য একজন নারী কর্মকর্তা থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সামাজিক ও ট্রেড ইউনিয়নের সকল কর্মকাণ্ডেও নারী চা শ্রমিকদের কার্যকর অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।
ইসলামের সোনালি যুগ থেকেই নারীরা আর্থসামাজিক উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন। বিচিত্র পেশায় অংশ নিয়ে সমাজে অবদান রেখেছেন। রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে হাজার বছরের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে নারীরা জ্ঞানচর্চা, সমাজসেবা ও অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা লাভ করেছেন এবং পুরুষদের মতোই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, পর্দা-শালীনতা ও ইসলামের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি তারা অবশ্যই মান্য করেছেন।
জ্ঞানচর্চা : মহানবী (সা.) বিভিন্নভাবে নারীদের জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং সুযোগ দিয়েছেন। মদিনার নারীরা একবার রাসুলের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘পুরুষরা আপনার কাছে আমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন। তিনি তাদের বিশেষ একটি দিনের অঙ্গীকার করেন; সেদিন তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং দিকনির্দেশনা দিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০১)
রাসুলের যুগে অনেক প্রাজ্ঞ নারী সাহাবি ছিলেন। নবীপত্নী আয়েশা (রা.)-এর জ্ঞানের কাছে তো অনেক অভিজ্ঞ সাহাবিও হার মেনেছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের অসামান্য অবদান নিয়ে ৪৩ খন্ডের বিশাল এক বিশ্বকোষ রচনা করেছেন ক্যামব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভি। এ গ্রন্থে তিনি ১০ হাজারের বেশি নারী হাদিসবিশারদ ও শিক্ষাবিদের জীবন-কর্ম-অবদান তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব : ইসলামের সোনালি যুগে নারীরা রাজনীতির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে না থাকলেও তারা বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আয়েশা (রা.) মুয়াবিয়া ও আলী (রা.)-এর মধ্যকার সংকট নিরসনে এগিয়ে আসেন। তেমনি সাওদা বিনতে আম্মারা বিন আশতার হামদানি তার গোত্রের প্রতিনিধি হয়ে মুয়াবিয়া (রা.)-এর কাছে যান এবং দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। মুয়াবিয়া (রা.) তাদের দাবি মেনে নেন এবং ইবনে আরতাকে বরখাস্ত করেন। (আকদুল ফারিদ, পৃষ্ঠা : ৩৪৪-৪৬)
সমাজসেবা : সোনালি যুগে নারীরা বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবায়ও অংশ নেন। তারা অসংখ্য শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা দীর্ঘ খাল খনন করে হাজিদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন। সেলজুক শাসক সুলতান মালিক শাহর স্ত্রী তুরকান বিনতে তুরাজ বাগদাদে তিনটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তা পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ সম্পদ ওয়াক্ফ করেন। (তারিখু দাওলাতুল আব্বাসিয়া, পৃষ্ঠা ৯৭)
এ ছাড়া একাদশ শতাব্দীতে মামলুক শাসনামলে মুসলিম নারীরা দামেস্কে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যা নারীদের দ্বারাই পরিচালিত হতো।
ব্যবসা-বাণিজ্য : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যও করতেন। নারী সাহাবি কায়লা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো এক ওমরাহ আদায়কালে মারওয়া পাহাড়ের পাদদেশে আমি তার কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন নারী। আমি বেচাকেনা করি। আমি কোনো জিনিস কিনতে চাইলে আমার কাক্সিক্ষত মূল্যের চেয়ে কম দাম বলি। এরপর দাম বাড়িয়ে বলতে বলতে আমার কাক্সিক্ষত মূল্যে গিয়ে পৌঁছাই। আবার আমি কোনো জিনিস বিক্রি করতে চাইলে কাক্সিক্ষত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য চাই। এরপর দাম কমাতে কমাতে অবশেষে আমার কাক্সিক্ষত মূল্যে নেমে আসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে কায়লা, এমন করো না। তুমি কিছু কিনতে চাইলে তোমার কাক্সিক্ষত মূল্যই বলো, হয় তোমাকে দেওয়া হবে, নয় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, তুমি কোনো কিছু বিক্রয় করতে চাইলে তোমার কাক্সিক্ষত দামই চাও, হয় তুমি দেবে অথবা দেবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২০৪)
চিকিৎসা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা চিকিৎসক হিসেবেও দক্ষতা অর্জন করেন। যারা শৈল্যবিদ্যায়ও পারদর্শী ছিলেন। আয়েশা (রা.) নিজেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে আয়েশা (রা.) অপেক্ষা দক্ষ মানুষ দেখিনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, খালা, আপনি এই জ্ঞান কোথা থেকে অর্জন করলেন? তিনি বলেন, আমি মানুষকে রোগীর চিকিৎসা করতে দেখেছি এবং তা মনে রেখেছি।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ২/১৮২)
সাহাবাযুগে নারী সাহাবি উম্মে সুলাইমের নেতৃত্বে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। (আবুদাউদ, হাদিস : ১৫৭৫)
মিসরে মুসলিম শাসক কর্তৃক প্রথম আবাসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে নারীরাও চিকিৎসক ও শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান। তাদের কেউ কেউ ‘মাশিখাতুত তিব’ তথা ‘মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান’ পদেও অধিষ্ঠিত হন। (আহমদ ইসা বেগ, তারিখুল বিমারিস্তান ফিল-ইসলাম)
কৃষিকাজ : মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ করতেন। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, ‘যখন জোবায়ের আমাকে বিয়ে করেন, তখন তার কোনো ধন-সম্পদ ছিল না। এমনকি কোনো স্থাবর জমিজমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু কুয়া থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তার উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম, কিন্তু ভালো রুটি তৈরি করতে পারতাম না।... রাসুল (সা.) জোবায়েরকে একখণ্ড জমি দিলেন। আমি সেখান থেকে মাথায় করে খেজুরের আঁটির বোঝা বহন করে আনতাম। ওই জমির দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল।...’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২২৪)
হস্তশিল্প : মহানবী (সা.)-এর যুগে নারীরা হস্তশিল্পের কাজ করেও অর্থ উপার্জন করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সাক্ষাৎ পাবে যার হাত সর্বাধিক লম্বা’। সুতরাং তারা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘অবশেষে আমাদের মধ্যে জয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা স্থির হলো। কেননা তিনি হাতের কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬০৯৪)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী রায়িতা (রা.) হস্তশিল্পে দক্ষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তা বিক্রি করতেন এবং উপার্জিত অর্থ দান করে দিতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৬০৩০)
অন্যান্য পেশা : স্পেনের অধিবাসী আয়েশা বিনতে আহমদ বিন কাদিম ছিলেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার। লুবনি ছিলেন বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও আরবি ব্যাকরণশাস্ত্রে পারদর্শী। রাবিয়া কাসিসাহ প্রসিদ্ধ বক্তা ছিলেন। শিফা বিনতে আবদিল্লাহ ছিলেন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ। ওমর (রা.) তাকে আদালতের ‘কাজাউল হাসাবাহ’ তথা ‘অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি কোর্ট এবং ও ‘কাজাউস সুক’ তথা ‘মার্কেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর দায়িত্বে নিয়োগ দেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৫/৭৮)
সমাজে নারীর অসামান্য ভূমিকার প্রশংসা করে তেরো শতকের প্রখ্যাত মুসলিম স্কলার আল্লামা ইবনুল কাইয়িম বলেন, ‘সমাজের অর্ধেকই নারী। বাকি অর্ধেকেরও জন্ম দেন নারী। তাই নারীরাই যেন পুরো সমাজ।’
অনেক নারী সন্তান লালন-পালন করতে গিয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও নফল নামাজের মতো ইবাদত-বন্দেগি মনভরে করতে পারেন না। এটা নিয়ে অনেকের খুব মন খারাপ থাকে, আফসোস করেন। কিন্তু বিষয়টি আফসোসের নয়। পবিত্র কোরআন-হাদিসে এ বিষয়ে স্পষ্ট আলোচনা রয়েছে।
ইসলাম মতে, শিশুসন্তানের পরিচর্যা ও প্রতিপালন, তাদের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা ও তালিম-তরবিয়ত করা পিতামাতার দায়িত্ব। বিশেষত আয়-উপার্জন এবং সাংসারিক তাকিদে পিতার অধিকাংশ সময় বাইরে অবস্থানের কারণে মায়ের ভূমিকা এক্ষেত্রে বেশি। এ দায়িত্ব ইসলামি শরিয়ত কর্র্তৃক তার প্রতি অর্পিত। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে নিজ অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের ওপর দায়িত্বশীল। স্ত্রী স্বামীর ঘর ও সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল। সবাই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৫২০০
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, পুরুষের দায়িত্ব হলো পরিবারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা এবং তাদের হক আদায় করা। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হলো, ঘরের কাজকর্ম সম্পাদন করা, সন্তান পরিচর্যা করা, সেবক-সেবিকাদের পরিচালনা করা এবং সব বিষয়ে স্বামীর কল্যাণ কামনা করা। -ফাতহুল বারি : ১৩/১১৩
শরিয়ত কর্র্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনের দ্বারা সন্তানের মা অবশ্যই অনেক সওয়াবের অধিকারী হবেন। এসব কাজে মা যতক্ষণ ব্যস্ত থাকেন, পুরো সময়ই নেকি ও সওয়াবের মধ্যে কাটে। হাদিস শরিফে উত্তম নারীর বর্ণনা দিতে গিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আরবের নারীদের মধ্যে উত্তম নারী হলো- কুরাইশের নারী। তারা সন্তানের প্রতি অধিক স্নেহপরায়ণ এবং স্বামীর সম্পদ হেফাজতের প্রতি অধিক যত্নশীল।’ -সহিহ বোখারি: ৫০৮২
সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- এক দরিদ্র মহিলা তার দুই সন্তান নিয়ে আমার কাছে এলো। আমি তাকে তিনটি খেজুর দিলাম। সে তাদের দুজনের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল আর একটি খেজুর সে নিজে খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নিল তখন তার দুই মেয়ে তার কাছে আরও চাইল। সে তার খেজুরটি দুজনের মধ্যে ভাগ করে দিল। তার এ বিষয়টি আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে। আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ঘটনাটি বললে তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন। অথবা তিনি বলেছেন এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৬৩০
হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা তার দুই সন্তানসহ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসে। সে একটি সন্তানকে কোলে এবং অপরটিকে হাতে ধরে নিয়ে আসে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, গর্ভধারিণী, সন্তান জন্মদানকারিণী এবং সন্তানের প্রতি মমতাময়ী তারা যদি স্বামীদের কষ্ট না দেয় তবে তাদের মধ্যে যারা নামাজি তারা জান্নাতে যাবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২০১৩
সুতরাং নারীদের সন্তান পরিচর্যা ও প্রতিপালন এবং তাদের সেবা করার গুণটি উত্তম গুণ। এর পেছনে তারা যে সময় ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন- এতে তারা বড় সওয়াবের অধিকারী হচ্ছেন। এর পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির-আজকারের প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং তা না করতে পারার আক্ষেপ খুবই প্রশংসনীয়। এক্ষেত্রে নারীদের করণীয় হলো, দৈনন্দিনের ফরজ-ওয়াজিব এবং সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজসমূহ আদায় এবং সাংসারিক ব্যস্ততা থেকে ফারেগ হয়ে যদি উক্ত নফল ইবাদত-বন্দেগি কিছু করা সম্ভব হয় তাহলে করবে- আর সময় সুযোগ না থাকলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বরং সন্তান লালন-পালনের জন্য তারা সওয়াব পেতে থাকবেন- ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, সন্তানের পরিচর্যা, প্রতিপালন এবং ঘর-সংসারের কাজ সাধারণত মহিলাদের কাজ হলেও পুরুষ যখন ঘরে অবস্থান করবে সময় সুযোগমতো তাদের কাজে সহযোগিতা করা উচিত। বিশেষত নিজের ব্যক্তিগত কাজ তো নিজেরই করা উচিত। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে অবস্থানকালে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজকর্ম নিজে করতেন। এক হাদিসে এসেছে, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন? তিনি বললেন, তিনি নিজ কাপড় সেলাই করতেন, জুতা সেলাই করতেন, ঘরের কাজকর্ম করতেন যেমন তোমরা ঘরের কাজকর্ম করে থাকো। -মুসনাদে আহমাদ : ২৫৩৪১
টিপ পরায় ঢাকার রাস্তায় গতকাল শনিবার হয়রানির শিকার হয়েছেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। এ বিষয়ে গতকাল শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
লতা সমাদ্দারের ঘটনাটি গতকাল শনিবার রাতেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুকে নারীরা টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পুরুষেরাও শামিল হচ্ছেন প্রতিবাদে।
রবিবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে এ ঘটনা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এ ধরনের ঘটনা বাংলার আবহমানকালের জাতি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মানুষের সাংস্কৃতিক অধিকার ও নারীর সাজ এবং পোশাকের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস। জননিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনের কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে সংঘটিত এই ন্যক্কারজনক ঘটনা সম্মিলিতভাবে এখনই প্রতিহত করা দরকার।
এ ঘটনায় সংসদে অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কোন আইনে আছে মেয়েরা টিপ পরতে পারবে না।
নারীপক্ষ নামে একটি সংগঠনও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ-আল মামুন ফেসবুকে পুরোনো একটি টিপ পরা ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘ছবিতে সবাই টিপ পরা। ওই ছবিতে নৃবিজ্ঞানী বখতিয়ার আহম্মেদও আছেন।
টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কবি সৈয়দ তারিক। তিনি কোনো ক্যাপশন না দিয়ে শুধু টিপ পরা ছবি দিয়েছেন।
সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের স্কলার ইমামুল বাকের এ্যাপোলো টিপ পরা ছবি শেয়ার করেছেন।
সাংবাদিক ওমর ফারুক শামীম নিজের ও তার সহকর্মীদের টিপ পরা ছবি শেয়ার করেছেন। শুধু ‘প্রতিবাদ’ শব্দটি লিখে তিনি ছবি শেয়ার করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতের অধ্যাপক কৌশিক আহমেদ লিখেছেন, ‘একটি লাল টিপ/ হারিয়ে যাওয়া/ হাজার বছরের পাণ্ডুলিপি। হোক প্রতিবাদ।’
লেখক শেখ সাদ্দাম হোসেনও টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।
এ ঘটনায় অনেকে সবর হয়েছেন। কবি লেখক বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মহল এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
কবি ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ লিখেছেন, ‘অমঙ্গল থেকে বাঁচার জন্য আমাদের মেয়েরা প্রাচীনকাল থেকে টিপ পরে। তবু অমঙ্গল থেকে বাঁচতে পারে না। অমঙ্গল থেকে বাঁচতে সবাইকে টিপ পরতে হবে। টিপ পরে দলে দলে সবাই শাহবাগে যান। টিপ আন্দোলনের সঙ্গে আছি।’
সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ টিপ পরা নিয়ে টিজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, টিপ পরা বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। বাঙালি সংস্কৃতির চেয়েও বড় আলোচনার বিষয় হচ্ছে, মানুষের রুচিবোধ ও জীবনযাপন নিয়ে পুলিশিংয়ের ঘটনাকে মানুষ ‘না’ করছে।
চলতি বছরের ‘আলোকিত নারী সম্মাননা স্মারক’ পেলেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ১৫ নারী। এ স্বীকৃতি দিয়েছে আলোকিত নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশন।
এ উপলক্ষে শনিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি। উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। সভাপতিত্ব করেছেন আলোকিত নারী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শারমিন সেলিম তুলি।
এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা রুপা খাঁন-মালা খাঁন।
এ ছাড়া সম্মাননা পেয়েছেন নাসরিন আক্তার নিপুণ (চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও নারী উদ্যোক্তা), বিদ্যা সিনহা সাহা মিম (চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব), ফারজানা চুমকি (নাট্যব্যক্তিত্ব), দীপা খন্দকার (নাট্যব্যক্তিত্ব), রাহিমা সুলতানা রিতা (মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রন্ধনশিল্পী), রহিমা আক্তার লাকী (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ), সেলিনা আলী (চেয়ারম্যান; ইউনিক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ), সোমনূর মনির কোনাল (সংগীতশিল্পী), আয়েশা আক্তার তৌশী (সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার), খালেদা বেগম (জেনারেল ম্যানেজার; সিএনজি-আরপিজিসিএল), ফারহানা শেখ (কনসালট্যান্ট, ডিপার্টমেন্ট অব গাইনি ও অব্স) ও নানজীবা খান (মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপিকা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা) ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড) পাচ্ছেন আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১১ দেশ থেকে ১১ জন সাহসী নারী এই পুরস্কার পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখায় নারীদের এই পুরস্কার দিয়ে থাকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এবার দিয়ে ১৬ বার এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রিজওয়ানা হাসান একজন বাংলাদেশি আইনজীবী। তিনি পরিবেশ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় সাহসী নেতৃত্ব দেখিয়েছেন। গত ২০ বছর ধরে যুগান্তকারী আইনি মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিশীলতা পরিবর্তন করে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের ওপর জনকেন্দ্রিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। জনস্বার্থ আইন সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে বন উজাড়, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ভাঙা এবং অবৈধ ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন এবং জিতেছেন। ২০০৯ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন এনভায়রমেন্টার হিরোর একজন হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১২ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। শক্তিশালী মহলের প্রতিরোধ ও নিজের এবং পরিবারের প্রতি সহিংসতার হুমকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ১৪ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কারের আয়োজন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি ড. জিল বাইডেন এ বছরের পুরস্কারপ্রাপ্তদের অর্জনকে স্বীকৃতি জানাতে বক্তব্য রাখবেন।
এ বছর আরও যারা পুরস্কার পাচ্ছেন- ব্রাজিলের সিমোন সিবিলিও দো নাসিমেন্টো, মিয়ানমারের ই থিনজার মং, কলম্বিয়ার জোসেফিনা ক্লিঞ্জার জোনিগা, ইরাকের তাইফ সামি মোহাম্মদ, লাইবেরিয়ার ফ্যাসিয়া বোয়েনোহ হ্যারিস, লিবিয়ার নাজলা মাঙ্গোশ, মলদোভার ডোইনা ঘেরমান, নেপালের ভুমিকা শ্রেষ্ঠা, রোমানিয়ার কারমেন ঘেওর্গে, দক্ষিণ আফ্রিকার রোয়েগচান্দা পাস্কো, ভিয়েতনামের ফুমওয়ান ট্রাং।
কক্সবাজারে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২২ ডিসেম্বর (বুধবার) কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্ট থেকে গৃহবধূকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে একাধিকবার দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।
জানা যায়, পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিন যুবক। পরে একটি হোটেলে নিয়ে জোরপূর্বক ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা ধর্ষণ করা হয়। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তিন যুবক।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তপূর্বক দ্রুত গ্রেফতার ও যথাযথ শাস্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিও জানান তারা।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর সুচিকিৎসাসহ তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একইসঙ্গে পর্যটন এলাকায় এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে সরকার, প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি চেয়েছে তারা।
সেইসঙ্গে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সারাদেশে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা সাহিদা রহমান সেতু। এবার ভারতের কলকাতায় গ্লোবাল ফেইম অ্যাওয়ার্ডস ২০২১ এ বাংলাদেশের উদীয়মান সফল নারী উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে অসামান্য ভূমিকার জন্য সম্প্রতি তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বলিউড তারকা বিপাশা বসু তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ভি কানেক্ট স্টারের আয়োজনে কলকাতার একটি পাঁচতারকা হোটেলে পুরস্কার প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
সাহিদা রহমান সেতু বলেন, ‘এটি আমার জন্য অনেক গর্বের । বাংলাদেশের সীমান্ত শহর বেনাপোলের একজন নারী হিসেবে বিদেশের মাটিতে এমন পুরস্কার অর্জনে আমি সত্যিই আনন্দিত। আর বিপাশা বসু ভারতের একজন নামী তারকা অভিনেত্রী। আমি অনুষ্ঠান আয়োজকদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।’
নারীবাদকে বিষয় করে নারী অধিকারকর্মীদের একটি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নারী অধিকার নিয়ে কথা বলেন এমন বিশিষ্ট ৪ নারীকে গানটি গাইতে দেখা দেখা যায়।
শুক্রবার ২ মিনিট সতেরো সেকেন্ডের গানটির একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
গানটি প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’ গানের সুরে গাওয়া।
জানা গেছে, গানটি এর আগে গেয়েছিলেন নারীবাদের আইকন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নারী অধিকারকর্মী কমলা বাসিন। তিনিই গানটি বাংলাতেই লিখেছিলেন।
আরো জানা গেছে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া গানটিতে গলা মিলিয়েছেন নারীনেত্রী খুশি কবীর, ফৌজিয়া খন্দকার ইভা, নাহিদ সুলতানা এবং সোহানা আহমেদ। হারমোনিয়ামে ছিলেন সোহানা আহমেদ।
গানটির কয়েকটি পঙ্ক্তি- ‘আমরা নারীবাদী নারীবাদী কারণ আমরা সুখী হতে চাই/ কারণ আমাদের কোনো উপায় নাই/পুরুষতন্ত্র চাই না/শ্রেণিতন্ত্র চাই না/হিংসা নিন্দা ছেড়ে আমরা ভালোবাসা চাই।’
জয়িতা অন্বেষণ বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমে ‘সফল জননী নারী’ ক্যাটাগরিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনোনীত হয়েছেন মোসা. বেদেনা আমিন।
আশি বছর বয়সী এই আলোকিত নারী পাহাড়ি সীমান্তঘেঁষা নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার বরুয়াকোনা গ্রামের অধিবাসী। তার স্বামী মরহুম হাজী ইব্রাহিম আমিন ছিলেন ধর্মপ্রাণ, সমাজসেবক ও ধনাঢ্য গৃহস্থ।
সফল জননী নিজে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পারলেও সন্তানদের করেছেন সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এবং পড়িয়েছেন সেরা বিদ্যাপীঠে। সার্টিফিকেট মাপে শিক্ষিত না হলেও মনের আলোয় শিক্ষিত নারী বেদেনা আমিন।
দুর্গম পাহাড়ি জনপদ, নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, অপ্রতুল শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝেও সন্তানদের করে তুলেছেন শিক্ষিত ও সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।
এই নারী ১০ সন্তানের বড় গৃহস্থ সংসার সামলে সন্তানদের নিয়ম করে স্কুলে পাঠাতেন এবং দেশে নামকরা বিদ্যাপীঠে পড়ার উৎসাহ জোগাতেন।
স্কুল পেরিয়ে কলেজের সময় হলে আশপাশে না পড়িয়ে ঢাকায় পাঠাতেন এই শিক্ষা সচেতন নারী। তার অনুপ্রেরণায় ছোট তিন ছেলেমেয়ে দেশসেরা নটরডেম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান।
বেদেনা আমিন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উদাহরণ টেনে সন্তানদের উৎসাহ দিতেন। এবং বর্তমানে তার সন্তানেরা সুনামের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। শুধু তাই নয় সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন তিনি।
অত্যন্ত কোমল স্বভাবের মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন এই শিক্ষানুরাগী এই নারী সন্তানদের পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি-সহ নানাভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উৎসাহ জোগাতেন। পড়ালেখায় ক্লাসে কেউ প্রথম হলে তার বাড়ি গিয়ে অনুপ্রেরণা দিতেন ও অভিভাবকদের বোঝাতেন।
শুধু সন্তানই নয়, নাত-নাতনির উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে সজাগ এই নারী। তার দেখানো পথ অনুসরণ করে নাতি-নাতনির মাঝে ২ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১ জন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ১ জন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ১ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ১ জন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়, ১ জন ইডেন, ১ জন ঢাকা কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
নিজে পড়তে না পারার কষ্ট সন্তানদের শিক্ষিত করে উশুল করার চেষ্টা করেছেন মা হিসেবে এটাই তার সফল সার্থকতা।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।