
ভিডিও সাক্ষাৎকারে গ্যাজেটের স্ক্রিনে এবং ক্যামেরার ক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোলটির দিকে তাকিয়ে ইন্টারভিউয়ারের সঙ্গে বসতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন নানান বিষয়ে প্রস্তুতি। জানাচ্ছেন অনিন্দ্য শোভা
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং প্রদানকারী (প্রার্থী) দুপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যে ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করা হয় সাধারণত সেটিই রিমোট ইন্টারভিউ বা দূরবর্তী সাক্ষাৎকার। রিমোট ইন্টারভিউ প্রাণবন্তভাবে সম্পূর্ণ করতে বিভিন্ন দিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরি।
প্রস্তুত থাকুন : নিয়োগকর্তা বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে আগেই জানিয়ে দেবেন অনলাইনের কোন প্ল্যাটফর্মটির (জুম, গুগল মিট, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল হ্যাংআউট, মাইক্রোসফট টিম ইত্যাদি) মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেবেন। যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে একটি লিংক বা মিটিং আইডি নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দেবে। কোন ডিভাইসে (ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, পিসি) সাক্ষাৎকারটি দিতে চান, বাছাই করুন।
বিভ্রান্তি থেকে রেহাই : সাক্ষাৎকারের সময় বাসায় বা ঘরে যে কক্ষে সাক্ষাৎকার দেবেন, সেটির দরজায় নোটিস লিখে রাখুন, যেন আপনাকে বিরক্ত না করে। আপনার সঙ্গে বা পাশে যদি অন্য কোনো ডিভাইস (মোবাইল, টিভি, ফোন) থাকে তাহলে বন্ধ রাখুন।
ইন্টারভিউয়ের আগে : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সঙ্গে যোগাযোগের ভিন্ন মাধ্যম জেনে রাখুন, যেন অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে লগ ইন বা নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা দেখা দিলে জানাতে পারেন। নোট করে হাতে রাখুন, যা অযথা কথা থেকে বিরত রাখবে এবং বিশেষ কিছু জানতে বা বলতে সাহায্য করবে। কয়েক মিনিট আগে লগ ইন করুন, যেন সবকিছু ঠিকঠাক থাকে।
পেশাদারিত্ব দেখান : বাড়িতে বসেই ইন্টারভিউ দেবেন তবুও এমন পোশাক পরুন, যা আপনাকে পেশাদারিত্ব দেখায়।
স্ক্রিনে নাম ব্যবহার করুন :ভিডিও মিটিং প্ল্যাটফর্মের ডিসপ্লে প্রার্থী এবং ইন্টারভিউ গ্রহণকারীর পুরো নাম ব্যবহার করুন। কথা বলার সময় ক্যামেরার দিকে তাকাতে ভুলবেন না। উত্তর দেওয়ার এবং প্রশ্ন শোনার পর কয়েক সেকেন্ড সময় নিন, যেন তাড়াহুড়ো করছেন বোঝা না যায়। প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হলে বুঝিয়ে বলুন। প্রশ্নটি আবার করার অনুরোধ করুন । সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে আতঙ্কিত হবেন না, ভিডিও মিটিংয়ে সমস্যা হলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার অনুরোধ জানাতে ভুলবেন না।
কম্পিউটারের প্রতি অন্যরকম ভালো লাগা থেকেই ২০০১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত থাকাকালে শিখেন কম্পিউটার ব্যবহার। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ২০০৬ সালে তার সেজো ভাই নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করে, তা দেখে তখন থেকেই ওয়েবসাইট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু। নতুন কিছু করার চেষ্টায় ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পেশাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। যার কথা বলছি, তিনি রোকন-উদ-দৌলা লিংকন মিঞা। লিংকন মিঞা নামেই যার পরিচিতি। ২০১০-১১ সালে বর্তমান আপওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মে কাজ করলেও বর্তমানে তিনি ডব্লিউপি ডেভেলপারে সিনিয়র ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া এসেনশিয়াল অ্যাড অন্স ফর এলিমেন্টর প্লাগিনের ডেভেলপমেন্ট টিমে কাজ করছেন।
ওয়েব ডেভেলপার পেশা সম্পর্কে রোকন-উদ-দৌলা লিংকন মিঞা বলেন, ‘পেশা হিসেবে ওয়েব ডেভেলপার পছন্দের তালিকায় প্রথম রাখা যায়। কারণ চাইলে অফিসে উপস্থিত হয়ে কাজ করা যায় আবার চাইলে ঘরে বসেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করা যায়।’
যোগ্যতা-দক্ষতা : কোডিং, প্রোগ্রামিং, কম্পিউটারের কাজ যাদের ভালো লাগে, ইন্টারনেট ব্যবহারে যারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা আসতে পারেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পেশায়। এই পেশায় আসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে মনে করেন লিংকন মিঞা। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ইংরেজিতে দক্ষ হন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং বা বিদেশি রিমোট জব অনেক সহজ হয়ে যাবে। তবে দেশি বা বিদেশি যেকোনো কোম্পানিতেই কাজ করতে হলে অবশ্যই ওয়েব ডেভেলপমেন্টে দক্ষ হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষতা।’ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ (এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচটি), প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (সি++, সি#, জাভা, পাইথন), ডেটাবেইস, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস, গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন, গিটহাব বিষয়ে জানাশোনা এবং দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
শিখতে যা প্রয়োজন : ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ শিখতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য। বর্তমান সময়ে ইউটিউবে বা বিভিন্ন ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের টিউটোরিয়াল বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়। সেখানে কম খরচেই শিখতে পারেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। এ ছাড়া চাইলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোর্সে ভর্তি হয়েও শিখতে পারেন।
ওয়েব ডেভেলপারের কাজ : ওয়েবসাইট বা ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করাই হলো ওয়েব ডেভেলপারের প্রধান কাজ। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ মূলত দুই ভাগে বিভক্তএক. ফ্রন্ট-এন্ড, দুই. ব্যাক-এন্ড। ওয়েবসাইট বা ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের যে অংশ দৃশ্যমান থাকে তা হলো ফ্রন্ট-এন্ড এর কাজ এবং যে অংশ দেখা যায় না (যেমন : ডেটা প্রসেসিং বা গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা) সেগুলো হলো ব্যাক-এন্ডের কাজ। প্রজেক্টভেদে একজন ওয়েব ডেভেলপারের বিভিন্ন ধরনের কাজ থাকতে পারে। ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের ফিচার ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের ভিত্তিতে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিক নির্ধারণ, কোডিংয়ের মাধ্যমে ওয়েবসাইটের প্রাথমিক ভার্সন বানানো, কার্যকারিতা নিয়মিত পরীক্ষা করাসহ কোনো সমস্যা ধরা পড়লে তা সমাধান করা, নিয়মিত আপডেট করা ইত্যাদি।
কাজের ক্ষেত্র : দেশের অনেক কোম্পানিতে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজের সুযোগ বেড়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থায় বা বিভিন্ন প্রজেক্ট, ব্যাংক-বীমা বা আর্থিক সেবার প্রতিষ্ঠানসহ আইটি সেবা প্রদানকারী, আউটসোর্সিং ফার্ম, ডিজিটাল প্রোডাক্ট/সার্ভিস প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইত্যাদি জায়গায়ও কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটভিত্তিক মার্কেটপ্লেসে প্রচুর কাজের চাহিদা আছে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ : লিংকন মিঞা বলেন, ‘দেখুন আমরা অফিস বা ব্যবসার হিসাব রাখার জন্য কিছুদিন আগেও ডেস্কটপভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতাম কিন্তু তা পর্যায়ক্রমে সব ক্লাউড বেসড করে ফেলছি। কিছুদিন আগেও কোনো কোম্পানি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের কথা ভাবতেন না, কিন্তু এখন একটা ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানের ও নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। সুতরাং আমরা ধরেই নিতে পারি, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ দিন দিন বাড়বে এবং কাজের ক্ষেত্রও বাড়তে থাকবে।’
আয়-রোজগার : ওয়েব ডেভেলপমেন্ট পেশাতে বাংলাদেশি কোম্পানিতেই এখন একজন মিড লেভেলে মাসিক আয় ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো। সিনিয়র লেভেলে মাসিক আয় ১ থেকে ৩ লাখ বা ক্ষেত্রবিশেষ আরও বেশি। এ ছাড়া বিদেশি কোম্পানিতে মাসিক আয় ২ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার ডলার বা ক্ষেত্রবিশেষ আরও বেশি রয়েছে।
পার্টনারশিপ বা অংশীদার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং এবং ফলপ্রসূউভয়ই হতে পারে। একের অধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে সাধারণত তাই অংশীদারত্ব ব্যবসা। অংশীদারত্ব ব্যবসায় অনেক কিছু করণীয়ের পাশাপাশি বর্জনীয় রয়েছে। অংশীদারত্ব ব্যবসায় যা খেয়াল রাখা জরুরি
দুজনে একই দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন। অর্থাৎ ব্যবসা পরিচালনার সবদিক বিবেচনা করে দুজনের ভাবনা একই বিন্দুতে স্থির করুন।
ব্যবসায়ের দায়িত্বগুলো দুজনে কীভাবে ভাগ করে নেবেন, তা নির্ধারণ করুন। কথা ও কাজের মিল রাখুন।
আর্থিক দায়বদ্ধতার লিখিত দলিল করে নিন। আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
মাসে অংশীদারত্ব মিটিং ও হিসাব-নিকাশ করুন।
ব্যবসা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিটি পুনরায় বিবেচনা করার চেষ্টা করুন।
অংশীদারত্বের লিখিত চুক্তিপত্র রাখুন।
শুরু থেকেই প্রত্যাশা নির্ধারণ করুন।
কীভাবে ব্যবসায়ের অর্থ লেনদেন করবেন তার রূপরেখা তৈরি করুন।
আইনি কাগজপত্র তৈরিতে আইনজীবীর সাহায্য নিন।
বিরোধ হলে বা কোনো কারণে ব্যবসা থেকে কেউ সরে দাঁড়াতে চাইলে কীভাবে ভাগবাটোয়ারা করবেন, তার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রাখুন।
ব্যবসার খারাপ বা লোকসান হলে কীভাবে ঠিক করবেন সে বিষয়েও নীতিমালা তৈরি করে রাখুন।
নাঈম হোসেন
স্বত্বাধিকারী, সুজান ব্যাগ , ইস্টার্ন মল্লিকা
আমার ব্যাগের ব্যবসা। ১২ বছর চাকরি করার পর আমি চাকরিটা ছেড়ে দিই। এরপর ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসা শুরুর পরপরই করোনা মহামারীর কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। আমি হতাশ হয়ে যাই। তখন এক বন্ধু বলল, আমি অনলাইনে বিক্রি করতে পারলে তুই কেন পারবি না। ওর পরামর্শেই সুজান ব্যাগ-এর নামে ফেইসবুক পেইজ খুলে ওর কাছ থেকে ব্যাগ এনে অনলাইনে বিক্রি শুরু করি। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অনলাইন ব্যবসার পাশাপাশি আজ ইস্টার্ন মল্লিকায় আমার দোকান। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে প্রতিটি জেলায় শোরুম দেওয়ার। আমি মূলত ব্র্যান্ডের ব্যাগই বিক্রি করি। আর এসব ব্যাগ আনি থাইল্যান্ড, চায়না থেকে। কোয়ালিটি নিয়ে আপস করি না। মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন এমন অনেক ক্রেতা আছেন যাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমার ওপর অনেক ক্রেতার এমন আস্থা যে শুধু ছবি দেখে অর্ডার দিয়ে দেয়, কোয়ালিটি বা দাম নিয়ে কোনো কথা হয় না।
কথা বলেছেন : নাহার সুলতানা
বিভিন্ন রঙের নেইলপলিশ হয়। ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে সুন্দর সুন্দর নাম দেওয়া হয়। সেই নাম দেওয়ার কাজটি যারা করেন তারাই নেইলপলিশের নামকারী। লিখেছেন ফয়সাল ইসলাম
নেইলপলিশ যে বিভিন্ন রঙের হয় আর সেই রঙের নাম দেওয়ার জন্য যে বিশেষ পেশা থাকতে পারে এমনটা হয়তো আমরা ভাবতেই পারি না। আবার ভাবলেও হয়তো অপ্রয়োজনীয় পেশা মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটা একটা সৃজনশীল পেশা।
এটি মূলত কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত এক পেশা। এ পেশার মানুষ চাইলে অন্য অনেক সৃজনশীল পেশায় নিজেদের স্থানান্তর করতে পারেন। অনেক নামি-দামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে খুব সহজে সখ্য হয়ে যায় তাদের। সেই সঙ্গে লেখালেখিরও যোগ্যতা থাকলে এর সঙ্গে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও এই পেশাকে বেছে নিতে পারেন।
তবে নাম লেখার কাজ দেখতে যেমন ছোট, এর পেছনের কাজও তেমনি জটিল। শুধু শিল্প সম্পর্কে ধারণা থাকলেই চলবে না। সমসাময়িক বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সম্পর্কেও দরকার স্বচ্ছ ধারণা। নামকারীকে খেয়াল রাখতে হয় তিনি কোন ধরনের মানুষের জন্য এই নামটি তৈরি করছেন। সেই নির্দিষ্ট শ্রেণিপেশা বা গোষ্ঠীর মানুষের কাছে নামটি হতে হবে আকর্ষণীয় এবং সহজেই মনে রাখা যায় এমন। আবার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিও যেন অক্ষুণœ থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর সবকিছুতে প্রতিযোগিতার বিষয় তো রয়েছেই।
নেইলপলিশ নামকারী পেশার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার দরকার হয় না। অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভ রাইটিং, মার্কেটিং অথবা কমিউনিকেশনে পড়াশোনা করা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো ডিগ্রির শর্ত কোনো প্রতিষ্ঠান দেয় না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে তার পর নিয়োগ দিয়ে থাকে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।