
চাকরির বাজারে ব্যাংক একটি বিশাল ক্ষেত্র। এ পেশায় যেমন রয়েছে সম্মান তেমনি রয়েছে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা। রয়েছে উপযুক্ত সম্মানী ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অফিসার ফারজানা ইসলামের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন অরণ্য সৌরভ
স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর পালাক্রমে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে ৬১টি। অনেক প্রাইভেট ব্যাংকের আগমনে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। প্রত্যেক বছরই ব্যাংকগুলো শাখা বাড়াচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। এ সেক্টরে অনেক সুযোগ-সুবিধা, ভালো বেতন আর চাকরির নিরাপত্তা থাকায় বিশ্বায়নের যুগে স্মার্ট ক্যারিয়ারের বিরাট ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ব্যাংক। ব্যাংকার ফারজানা ইসলামের মতে, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর যেকোনো দেশেই ব্যাংকিং পেশাকে হোয়াইট কলার জব ধরা হয়। এই পেশার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। যারা পরিশ্রমী, ক্যারিয়ারের স্বপ্ন, নিজেদের একটা ভালো পজিশনে দেখতে চায়; তাদের জন্য ব্যাংকিং ক্ষেত্র চমৎকার পেশা।’
কাজের ক্ষেত্র : ব্যাংকে প্রধানত চারটি উইং রয়েছে। অ অপারেটিং উইং, ইনভেস্টমেন্ট উইং, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং উইং, ইন্টারনাল কান্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স উইং। এই উইংগুলোর আবার রয়েছে একাধিক বিভাগ।
ফারজানা ইসলামের ভাষায়, ব্যাংকে মূলত চার ধরনের কাজ হয়। ১. ক্যাশ- টাকা জমা ও উত্তোলন, ২. জেনারেল ব্যাংকিং- অ্যাকাউন্ট ওপেনিং, ডিপিএস, ফিক্সড ডিপোজিট, গ্রাহক অনুসন্ধান, চেক নিকাশ ইত্যাদি, ৩. ক্রেডিট- লোন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ, ৪. ফরেন ট্রেড আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ।
ব্যাংকে নিয়োগ : ব্যাংকগুলো সাধারণত বিভাগভিত্তিক নিয়োগ না দিয়ে, কয়েকটি ক্যাটাগরিতে নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে প্রবেশনারি অফিসার (সিনিয়র অফিসার), সহকারী অফিসার, অফিসার ক্যাশ, ফিল্ড অফিসার ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংকই এসব পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে।
নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি : ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষাগুলোতে ব্যাংকভেদে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও প্রশ্নের ধরন প্রায় একই হয়ে থাকে। নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণত ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। প্রায় সব ব্যাংকেই এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়ে থাকে। পরীক্ষার সময় ও নাম্বার বণ্টনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়।
অনেক ব্যাংকে এই পদ্ধতি ৬/৭ ধাপেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক অনলাইন স্ক্রিনিং, আইটি টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা এবং একাধিক মৌখিক পরীক্ষাও হতে পারে বলে জানান ফারজানা ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, লিখিত পরীক্ষার আদলটা ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন টেস্টের আদলে হয়ে থাকে। বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, বিশ্লেষণধর্মী বা অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি, সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। যেন যেকোনো বিষয় থেকে পড়াশোনা করা প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। অন্যদিকে মৌখিক পরীক্ষাতে সাধারণত নিজের পড়াশোনা এবং সেই সম্পর্কিত প্রশ্ন, দেশ এবং অর্থনীতি, সাধারণ জ্ঞান, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যাবতীয় প্রশ্ন করা হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা : সাধারণত ব্যাংকের শুরুর পদগুলো হয়ে থাকে প্রবেশনারি অফিসার/ ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার, অফিসার/ জুনিয়র অফিসার/ অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার ইত্যাদি। কিছু পদের জন্য সুনির্দিষ্ট বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটরাই আবেদন করতে পারেন। কমার্স থেকে যারা পাস করেছেন, তাদের সাধারণত নিয়োগ দেওয়া হয় ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশন, ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন, ফরেন এক্সচেঞ্জ, রেমিট্যান্স ডিভিশন, জেনারেল ব্যাংকিং, এইচআর ইত্যাদি বিভাগে।
পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ : ব্যাংকিংয়ের ওপর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু রয়েছে। ব্যাংকিং অথবা ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট নামে এ বিষয়ে ব্যবসায় অনুষদ থেকে ডিগ্রি নেওয়া যায়। এছাড়া আছে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট থেকে বিভিন্ন কোর্স। যেমন: বিআইবিএমের এমবিএম কোর্স, ডিপ্লোমা ইন ব্যাংকিং ইত্যাদি।
যে গুণাবলি থাকা চাই : ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি কম্পিউটার দক্ষতা, সুন্দর ইংরেজিতে কথা বলা এবং উপস্থিত বুদ্ধি থাকতে হবে। ফারজানা ইসলাম বলেন, ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যাংকিং একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। বিচক্ষণতা, পরিশ্রমী, সততা, নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা, দৃঢ় মনোবল, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি গুণাবলি একজন ব্যাংকারের থাকা উচিত।
বেতন কেমন : ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি বা প্রবেশনারি অফিসার অত্যন্ত লোভনীয় পোস্ট প্রতিটি ব্যাংকে। সেখানে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই একজন প্রার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে আনুমানিক ৪০০০০-৫৫,০০০ টাকা বেতন দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এছাড়াও জুনিয়র অফিসার বা ক্যাশ অফিসার হিসেবে ১৮০০০-২৫০০০ টাকায় ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন বলে জানান ফারজানা ইসলাম।
সুযোগ-সুবিধা : ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে মূল বেতনের পাশাপাশি আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমন- প্রত্যেক কর্মদিবসে খাবারের জন্য ভাতা, বছরে দুটি আনুষ্ঠানিক ভাতা, লভ্যাংশে বোনাস বছরে প্রায় দুই-তিনটি, চাকরিজীবী ঋণ, কম্পিউটার ঋণ, ঘরবাড়ি তৈরির ঋণ ইত্যাদি।
সারা বিশ্বে পরোক্ষভাবে প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন মানুষ সামাজিক মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, টুইটার, টেলিগ্রাম ইত্যাদির মতো সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একজন মানুষ গড়ে তিন ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন। আর এই তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কোনো একটা সময় পণ্যের মার্কেটিং কোনো না কোনোভাবে তার মনোযোগ আকর্ষণ করছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্বন্ধে জানার পর সবচেয়ে জরুরি হলো যেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে মার্কেটিং করা হবে, সে সম্বন্ধে ধারণা থাকা। অনেক সামাজিক মাধ্যম থাকলেও ৬টি মাধ্যমের মার্কেটিং সম্বন্ধে জেনে নিন।
ফেইসবুক : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের প্রচারে লিফলেট, কার্ড, পোস্টার, টিভি থেকে সোশ্যাল মার্কেটিংয়ের দিকেই ঝুঁকছেন সবাই। তাই ফেইসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। যেকোনো ধরনের ছোট বা বড় ব্যবসার উন্নতির জন্য সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেইসবুক মার্কেটিং। বাংলাদেশে ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন, এর মধ্যে ফেইসবুক ব্যবহারকারী প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ। তাই মার্কেটিং ব্যবসার ভেতরে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ফেইসবুক মার্কেটিং।
ইন্সটাগ্রাম : পৃথিবীর ফেইসবুকের পরই সামাজিক মাধ্যম হচ্ছে ইন্সটাগ্রাম। বিশ্বে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী রয়েছেন। আপনি ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্যের প্রচার করতে পারবেন সহজেই। ইন্সটাগ্রামে ফ্রি ও পেইড উভয় পদ্ধতিতেই প্রচার করা যায়। তবে প্রফেশনাল ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয় বিজ্ঞাপন করার জন্য হয়। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সঙ্গে যেন অনুসরণকারী বৃদ্ধি পায় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
ইউটিউব : ইউটিউব মার্কেটিং পণ্য বা ব্যবসা প্রচারণায় তুমুল জনপ্রিয়। যেখানে সংশ্লিষ্ট পণ্য বা ব্যবসার সামঞ্জস্যপূর্ণ ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে ব্যবহারকারীদের দেখানো হয়। ইউটিউবে থাকা ব্যবহারকারী পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে ঘরে বসেই পণ্য অর্ডার করতে পারেন। ইউটিউবের মাধ্যমে যে কেউ ইন্টারনেটে তাদের পণ্যের বিভিন্ন প্রচার করে ফেলতে পারবেন ঘরে বসে খুব সহজে। আপনি যদি চান আপনি ঘরে বসে ইউটিউবে নিজের ব্যবসা অন্যান্য যেকোনো পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোর ভিডিও আপলোড করতে পারবেন।
টুইটার : টুইটারের মাধ্যমে পণ্যের মার্কেটিং সহজেই অর্ডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। টুইটার বিজ্ঞাপনে টার্গেট কিওয়ার্ড সেট করার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিওয়ার্ড নিয়ে নানা রকম কোর্স ইউটিউবে পাওয়া যায়। যখন আপনি টার্গেট কিওয়ার্ড সেট করে রাখবেন। আপনার দেশের মানুষ খুব সহজেই আপনার প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে পাবেন। টার্গেট শব্দ সেট করার ফলে খুব সহজে টার্গেট ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে পারবেন।
হোয়াটসঅ্যাপ : ব্যক্তিগত মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে যে প্রচার করা সম্ভব এটা অনেকেই ভাবেন না। অনলাইন ব্যবসার প্রচার ও প্রচারণায় হোয়াটসঅ্যাপ। মার্কেটিংয়ে মনোযোগী হতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপের দ্বারা সহজেই আপনি পেয়ে যেতে পারেন কাক্সিক্ষত ও পরিচিত কাস্টমার।
টেলিগ্রাম : টেলিগ্রাম মার্কেটিং এখনো তেমনভাবে চালু হয়নি। তবে পণ্যের প্রচারের জন্য টেলিগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন। টেলিগ্রামের মাধ্যমে, আপনি সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে আপনার পণ্য এবং পরিষেবাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বড় ধরনের গ্রুপ সেট আপ করতে পারেন। কেননা টেলিগ্রামে ১০ হাজারের অধিক সদস্য নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করা যায়। এ ছাড়া আপনি নির্দিষ্ট কাজগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করার জন্য টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে বটগুলোকে সংযুক্ত করতে পারেন, যাতে একই সঙ্গে আপনার সময়ও বাঁচে।
পৃথিবীতে বিচিত্র পেশার পেশাজীবী আছে। ঘুম থেকে থেকে ডেকে তোলাও একটা পেশা। এই পেশার নাম নকার আপ। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা কষ্টকর অনেকের জন্য। আপনার সেই কঠিন কাজকে সহজ করে দেবে কিছু মানুষ। যাদের কাজই হচ্ছে অন্যদের ঘুম থেকে জাগানো। এজন্য তারা বেতনও নেন মাস শেষে। ব্রিটেনে কিছু মানুষের এটা পেশা ছিল। ৭০ এর দশক পর্যন্ত এই পেশা জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে যতদিন পর্যন্ত ঘড়িতে অ্যালার্ম যোগ না হয়। এই পেশাজীবীরা সকাল সকাল চলে আসতেন সেই সব বাড়িতে যারা সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে চাইতেন না। বাড়িতে এসে তারা প্রথমে লাঠি দিয়ে জানালা বা দরজায় আওয়াজ করতেন, যতক্ষণ না বাড়ির মানুষের ঘুম ভাঙে। নয়তো বাঁশি বাজিয়েই যেতেন। ঘুম ভাঙার পরই তাদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যেত। এই কাজ যারা করতেন তারা সবাই বেতন পেতেন।
নকার আপার্সরা মূলত শ্রমিকদের ঘুম ভাঙানোর কাজ করতেন। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষও বেতন দিয়ে নকার আপার্স রাখতেন।
ফয়সাল
যেকোনো কাজে প্রথমে প্রয়োজন ভালোবাসা। কাজ ভালো না বাসতে পারলে, সহজ কাজ হলেও ঠিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই শুরুতে কাজের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিক মনোভাব প্রয়োজন। মনোযোগী কর্মীর কাজের প্রতিটি বিষয়ই থাকে নজরে। তাতে কাজে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। সাফল্যের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবেন আপনি।
পরিকল্পনার অভাব : কাজ শুরুর আগে যদি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা যায়, তাহলে বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যায়। সাফল্য পেতে, প্রয়োজন গুছিয়ে কাজ করা। গুছিয়ে কাজের জন্য প্রয়োজন ছকে বাঁধা পরিকল্পনা। যেমন, পরের দিন কী কাজ, কীভাবে করবেন, তা আগে ঠিক করে রাখুন।
দক্ষতা খুঁজে বের করুন : নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানোই সফলতার পূর্বশর্ত। আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করুন। নিজেকে সে অনুযায়ী গড়ে তুলুন। কষ্ট, সময় লাগলেও হতাশ হওয়া যাবে না। নিজের দক্ষতা, পরিশ্রম এবং কাজের ওপর বিশ্বাস রেখে কাজ করলে, সাফল্য আসবেই।
সৎ থাকুন : কর্মক্ষেত্রে সৎ থাকা এবং দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে সাফল্য আসবেই। এ ধরনের কর্মীর মূল্যায়ন করতে কোনো বস পিছপা হয় না।
নীতি সম্পর্কে অবগত : কোম্পানির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং নীতি সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার চিন্তা ও পরিকল্পনার সঙ্গে কোম্পানির লক্ষ্য সমন্বয়ের চেষ্টা করুন। এতে আপনি ও কোম্পানি একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠবেন। কোম্পানির উন্নতির সঙ্গে পেশাজীবনের উন্নতি হবে।
নিয়ম মেনে চলুন : যেকোনো কাজেরই একটি নিয়ম রয়েছে, রয়েছে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কাজটি সম্পন্ন করার উপায়। কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য নিজের ওপর অর্পিত কাজ বুঝে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিয়মের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
ঝুঁকি নিতে শেখা : কর্মক্ষেত্রে যারা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন তারা তুলনামূলক সাফল্যের দেখা পান। ঝুঁকি নেওয়ার মানে এই না যে, আপনি সব কাজ করতে যাবেন। যে কাজে পারদর্শিতা থাকা সত্ত্বেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
ভুল থেকে শিখুন : ভুল থেকে যদি শিখতে না পারেন তাহলে সাফল্য আপনার থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে যেতে পারে। ভুলকে ভুলে গিয়ে, নতুন শেখার প্রত্যয় নিন। ভুল শোধরানোর বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক : কর্মস্থল হলো প্রতিটি কর্মীর ‘সেকেন্ড হোম’। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা আপনার কাজের অংশ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।