
ফ্রান্স কি টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারবে? যে কৃতিত্বটা আছে শুধু ইতালি ও ব্রাজিলের। ইংল্যান্ড কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছে ফরাসিদের। অন্যদিকে স্বপ্নযাত্রা চলছে মরক্কোর। ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বাইরে কোনো দেশ আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতেনি। প্রথম কোনো আরব দেশ এবং আফ্রিকার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মরক্কো। কতটা দূর যাবে তারা?
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফ্রান্স আর মরক্কো হবে মুখোমুখি। যে দলগুলো সেমিফাইনালে পৌঁছেছে, ধরে নেওয়া হয় এই চারটা দলই আসরের সেরা। এই পর্যায়ে এসে বিজয়ী নিয়ে পূর্বানুমান করা কঠিন। তবুও বিগত কয়েক মাসের পারফরম্যান্স আর বিশ্বকাপের প্রথম দিকের রাউন্ডের খেলাগুলো পর্যালোচনা করলে বলা যায়, ফ্রান্স সহজেই মরক্কোকে হারিয়ে ফাইনালে খেলবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মরক্কোর লড়াকু মনোভাব ছিল প্রশংসা করার মতো। লড়াকু মনোভাবের কথা বললেই আসলে আবেগ চলে আসে। আবেগের কথা বললে, মরক্কো দারুণ একটা বিশ্বকাপ কাটাচ্ছে, ওদের খেলোয়াড়রা ইউরোপের বড় বড় লিগে নামি ফুটবলারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছে। সেমিফাইনালে খেলা প্রথম আফ্রিকান দল, ইতিহাসটা আরেকটু সমৃদ্ধ তারা করতেই পারে!
মরক্কো বিশ্বকাপে হারিয়েছে বেলজিয়াম, সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন আর সাবেক ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে। তারা চাইবেই এই গতিতে এগিয়ে যেতে, সামনে বাধা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। মরোক্কানরা চাইবেই রূপকথাটা নতুন করে লিখতে।
মরক্কোতে বেশ কয়েকজন ভালো ফুটবলার আছে যারা ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবে খেলে। আশরাফ হাকিমি খেলে প্যারিস সেন্ত জার্মেইতে, হাকিম জিয়েচ চেলসির উইঙ্গার আর সেভিয়ার গোলরক্ষক বুনু। তাদের প্রত্যেকের কাছেই ভালো খেলার প্রত্যাশা করেছিল দেশটি। তবে এতটা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেনি যে তারা একটার পর একটা ম্যাচে নিজেদের ভালো খেলার মাত্রাটা বাড়িয়ে দেবে আর বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠে আসবে। মরক্কোর আগে আফ্রিকার কোনো দলের সেরা সাফল্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানা এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিল।
মরক্কোর এই বিশ্বকাপে সফল হওয়ার কারণ তারা খেলার গতিটা কমিয়ে এনে রক্ষণে সুদৃঢ় এক দেয়াল তৈরি করতে পেরেছে। তারা খুবই কম গোল হজম করেছে। ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপের পর কোনো দলকে এতটা সফলভাবে রক্ষণ আগলে রাখতে দেখা যায়নি। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালি, তারা রক্ষণে খুবই সফল ছিল, সেমিফাইনালে আসার পথে তারা বোধহয় মাত্র ১ গোল হজম করেছিল সেটাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে।
আফ্রিকান দলগুলো খুব কঠিন রক্ষণ আর কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর খেলা খেলে। মরক্কোও সেরকমই খেলেছে। পাঁচটা ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষের গোলে শট নিয়েছে ১০ বার। অন্যদিকে মরক্কো মাত্র একটা গোল হজম করেছে, সেটাও আত্মঘাতী। নায়েফ অগার্দের গোলের পরও সেই ম্যাচটা তারা কানাডার বিপক্ষে জিতেছিল ২-১ গোলে। ইউরোপের বড় বড় সব দল বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়ে মরক্কো আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ফ্রান্স দেখিয়েছে কেন তারা বিশ্বের সেরা দল। এমবাপ্পেকে ওরা বোতলবন্দি করে রেখেছিল। তারপরও দেশমের শিষ্যরা দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা সাহসী, পরিণত আর দক্ষ একটা দল। যে কোনো মুহূর্ত থেকে ফ্রান্স দলটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং তারা সেটা করে দেখিয়েছে, এজন্য তাদের দলে প্রতিভাবান ফুটবলারের যে অবিরাম প্রবাহ সেটাই একটা বড় কারণ। যারাই দলে আসে, তারা নিখুঁতভাবে দলের ছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। এজন্য দেশম এবং ফেডারেশনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে কারণ ছোটবেলা থেকেই তারা খেলোয়াড়দের মনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জয়ের মানসিকতাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের পরিণতবোধের কারণে দলটা অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণও। ফ্রান্স খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করে কারণ তাদের সেটা করার মতো সামর্থ্য আছে। তারা জানে কখন গতি বাড়াতে হবে আর কখন ধৈর্য ধারণ করতে হবে, এটা তারা করতে পারে কারণ তাদের হাতে খেলোয়াড় আছে। তাই কাতারে যদি পারফরম্যান্স গণনা করি, তাহলে বলতে হবে ফ্রান্সের কথা আর যদি আবেগের কথা বলি তাহলে বলতে হবে মরক্কোর কথা।
বাঁ পায়ের খুদে জাদুকর জাদুর বাক্স খুললেন, পুরো ৯০ মিনিটে সেই জাদুতে সম্মোহিত করে রাখলেন লুসাইল স্টেডিয়ামের বিশাল গ্যালারিকে। পেনাল্টি থেকে গোল করে বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইনদের এগিয়ে নেওয়ার পর জুলিয়ান আলভারেজকে দিয়ে করালেন জোড়া গোল। তাতেই ভেঙে গেল ক্রোয়েশিয়ার সব প্রতিরোধ। ৩৬ বছরের স্বপ্নপূরণের পথে দেশকে আরেকটি অসাধারণ জয় উপহার দিলেন লিওনেল মেসি। ৩-০ গোলের জয়ে আর্জেন্টিনা আট বছর পর ফের ফাইনালের মঞ্চে। লাউতারো মার্তিনেজের অফ-ফর্ম এই বিশ্বকাপে একাদশে সুযোগ করে দেয় ২২ বছরের ম্যানসিটি স্ট্রাইকার আলভারেজকে। সে সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে এর মধ্যেই বিশ্বকাপে চতুর্থ গোলের দেখা পেয়েছেন এ তরুণ। ৩৫-এর মেসির সঙ্গে ১৩ বছরের ছোট আলভারেজের রসায়নটা জমে ক্ষীর। তাই তো তিনি মেসির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে গোলের কাজটা করছেন ঠিকঠাক। আবার নায়ককে উপহার দিচ্ছেন পেনাল্টি।
দুটি বাধ্যতামূলক পরিবর্তন করে একাদশ সাজান আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। কার্ডে কাটা পড়া আকুনার জায়গায় লেফট ব্যাকে খেলান তাগলিয়াফিকোকে। আর ক্রোয়াটদের সঙ্গে মাঝমাঠে সেয়ানে সেয়ানে লড়তে অভিজ্ঞ পারেদেসকে খেলান লিসান্দ্রো মার্তিনেজের জায়গায়। তাতে কাজ হয়েছে, মাঝমাঠে লুকা মদ্রিচের নেতৃত্বে ক্রোয়াটরা সেভাবে আধিপত্য ফলাতে পারেনি। যা মেসি, আলভারেজকে দিয়েছে আক্রমণে ওঠার অবারিত সুযোগ। ৩৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মেসির সফল লক্ষ্যভেদের কৃতিত্ব পাবেন আলভারেজ। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বল পেয়ে আলভারেজ দ্রুত বক্সে ঢুকে টোকা দেওয়ার আগেই আগুয়ান ক্রোয়াট কিপার লিভাকোভিচ গুঁতো দিয়ে ফেলে দেন। সেই পেনাল্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে মেসি এ বিশ্বকাপে করেন পঞ্চম গোল। গোলের হিসাবে ছুঁয়ে ফেলেন ফরাসি তারকা এমবাপ্পেকে। সব মিলিয়ে ১১ গোল করে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে যান। ছয় মিনিট পর প্রতিআক্রমণ থেকে ব্যবধান বাড়ান আলভারেজ। নিজেদের অর্ধ থেকে বল বাড়িয়েছিলেন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার অর্ধের প্রায় পুরোটা দৌড়ে তিনজনকে কাটিয়ে ডান পায়ের ভলিতে বিশ্বকাপে তৃতীয় গোলের দেখা পান তিনি।
বিরতি থেকে ফিরেও একই কৌশলে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। ৬৯ মিনিটে আবারও জাদুর বাক্স খোলেন জাদুকর। ধীরলয়ের মেসি বল পেয়েই সেই ট্রেডমার্ক ছুট। বাঁদিক থেকে সারাক্ষণ গায়ে গায়ে লেগে থেকেও মেসিকে রুখতে পারেননি জসকো ভারদিওল। অসাধারণ ড্রিবলিংয়ের আরও এগিয়ে ছোট্ট পাস থালায় সাজিয়ে দেন আলভারেজকে। নাম্বার নাইন তাতে আলতো টোকায় ৩-০ করেন। তাতেই লুসাইলের আরব্য রজনী নায়ক হয়ে যান মেসি।
উত্তর আফ্রিকার আটলান্টিক তীরবর্তী দেশ মরক্কো। এক পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এটলাস পর্বতমালা। সেখানেই বাস দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিমান সিংহের। মরোক্কানদের কাছে পর্বতের পাদদেশে বাস করা ভয়ংকর প্রাণীটি গর্বের প্রতীক। এই বিশ্বকাপে তাদের ফুটবলার একেকজন যেন একেকটা এটলাস লায়ন্স। একেবারে হিসাবের বাইরে থেকে তারা জন্ম দিয়ে চলছে একের পর এক বিস্ময়। হিংস্র সিংহের থাবায় একে একে রক্তাক্ত করেছে ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগালের মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের। এবার পালা ফ্রান্সের। সেমিফাইনালে আজ তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারলেই নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হবে গোটা বিশ্ব। তবে এটলাস লায়ন্সদেরও ভয় আছে। ফরাসি ভা-ারে আছে ভয়ংকর এক ক্ষেপণাস্ত্র। নাম তার কিলিয়েন এমবাপ্পে। যিনি শুরু থেকেই বিস্ফোরিত হচ্ছেন। ৬০ বছর আগে ব্রাজিলের গড়া টানা দুই শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বুকে লালন করে ২৩ বছরের ফরাসি রাজা ছুটছেন দুর্বার গতিতে। এর মধ্যেই করে ফেলেছেন পাঁচ গোল। ফ্রান্সের শেষ ১৫ ম্যাচে তার ১৬ গোল। খুনে এই ফরোয়ার্ডের নান্দনিক পায়ে এটলাস লায়ন্সদের বসাতে হবে মরণ কামড়। তাতে অবশ্য দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ারও আছে ঝুঁকি। এই এমবাপ্পেকে বেঁধে রাখতে পারেনি বিশ্বের অনেক বড় বড় দলের শক্তিশালী রক্ষণভাগ। প্রতিপক্ষরাই স্বীকার করে নিয়েছেন এমবাপ্পে মানুষ নন, এলিয়েন।
এই এলিয়েন ২৩ বছর বয়সেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন সবাইকে ছাড়িয়ে বিশ্বসেরা হওয়ার। চার বছর আগে রাশিয়ায় করেছিলেন ৪ গোল। যার তিনটিই নকআউটপর্বে। এবার ৫ গোল করে গোল্ডেন বুটের রেসে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। গ্রুপপর্বে ডেনমার্কের বিপক্ষে জোড়া গোলে দলকে জেতানোর পর ও দ্বিতীয়পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও তার জোড়ায় কোয়ার্টারে আসে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ৯ গোলে তিনি ছাড়িয়েছেন ম্যারাডোনাকে। আজ হেরে গেলেও তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে। তার মানে আরও দুই ম্যাচে এমবাপ্পের সামনে সুযোগ নিজের গোল সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়ার।
ডান দিক চেপে খেলেন বলেই এমবাপ্পেকে থামানোর মূল দায়িত্বটা থাকবে ইয়াহিয়া আতিয়াত ও রোমান সাইসের। তবে একের পর এক ম্যাচে ভয়ংকর গতি, নিখুঁত ড্রিবলিং-এ যেভাবে বল্গাহীন হয়ে উঠেছেন পিএসজি তারকা, তাতে মরোক্কানদের এতদিনের সব প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আচ্ছা ধরে নিন, গেল পাঁচ ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করা মরক্কোর রক্ষণ রুখে দিল এমবাপ্পেকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড যেমন তাকে গোল করতে দেয়নি। তাতে কি খুব ক্ষতি হয়েছে ফ্রান্সের? সে দলে যে গোল করার মানুষের আকাল পড়েনি। অলিভিয়ে জেরুদ ছুটছেন ঠিক তার পেছন পেছন। এই অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে চার গোল। আচ্ছা না হয় জিরুদও পারলেন না। আন্তোইন গ্রিজমান, অরলিয়েন শুয়ামেনি, আদ্রিয়ের রবিয়ট, উসমান দেম্বেলেদের আটকাবেন কী করে? এমবাপ্পে-জিরুদ ঝড় আটকাতে ব্যস্ত থাকা মরক্কোর রক্ষণভাগ কতদিক সামলাবে?
তাই বলে তো আর আশা ছেড়ে দিলে চলবে না। পুরো আসর জুড়েই আশার পালে চড়েই তো বড় বড় সব তারকাখচিত দলকে ঘায়েল করে আজ সেমিফাইনালের মঞ্চে মরক্কো। সেটাও আফ্রিকা অঞ্চলের প্রথম কোনো দল হিসেবে। সুতরাং এই মরক্কোতে বাজি ধরতেই পারেন। দলটির ৪৭ বছর বয়সী কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই তার দলটাকে মাত্র আড়াই মাসে অজেয় রূপ দিয়েছেন। অদম্য মনোবলের জোরে তারা বিশ্বকে চমকে দিচ্ছে বারবার। এ দলের ফুটবলারদের একটা বড় অংশের জন্ম ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। সে সব দেশের ফুটবল আস্বাদনে তাদের বড়ে ওঠা এবং ফুটবলার হয়ে ওঠা। আর সব শক্তিকে একীভূত করে একতাবদ্ধ হয়ে খেলার মন্ত্রটা তাদের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছে ফ্রান্সেই জন্ম নেওয়া কোচ রেগরাগুই। স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ইয়াসিন বোনোর বীরত্বে জিতেছিল মরক্কো। দলটির নিরেট রক্ষণের নেতৃত্ব দেন পিএসজি তারকা এবং এমবাপ্পের বন্ধু আশরাফ হাকিমি। এই রাইটব্যাকের ঠিক ওপরে আক্রমণে দায়িত্বে থাকেন চেলসি ফরোয়ার্ড হাকিম জিয়েচ। নাম্বার নাইন পজিশনে ইউসেফ এন-নাসেরির গোলে পর্তুগাল কোয়ার্টার ফাইনালে কাঁদায় দলটি। এছাড়া মাঝমাঠের দখলের মূল দায়িত্বে সুফিয়ান আমরাবাত। আজও ওয়ালিদকে ভয়ংকর হয়ে ওঠা ফরাসি আক্রমণভাগকে রুখতে নিতে হবে আক্রমণাত্মক কৌশল। যে....... কাজে লাগিয়েই এতদূর আসা তাদের। তারপরও এমবাপ্পে নেতৃত্বাধীন ফরাসি ফরোয়ার্ড লাইনের কাছে তাদের দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিসকে পাল্টা পরীক্ষায় ফেলার আগে ফরাসি রক্ষণের মুখোমুখি হতে হবে হাকিম জিয়েচ, ইউসেফ এন-নাসেরিদের। এত এত পরীক্ষা উতরেই তাদের পেতে হবে কাক্সিক্ষত জয়। যে জয়ে হয়তো বদলে দেবে ফুটবল নিয়ে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি।
বিশ্বকাপ মঞ্চে দুদলের এটি প্রথম সাক্ষাৎ। ২০০৭ সালে সর্বশেষ মুখোমুখি লড়াইটা শেষ হয়েছিল ২-২ ড্রয়ে। বিশ্বকাপের আগে তাই মরক্কো ছিল বড্ড অজানা। তবে সময় যত গড়িয়েছে দলটি নিজেদের চিনিয়েছে। আর এই চেনার কাজটা গত দুদিন খুব বেশি করতে হয়েছে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমকে। তার সংবাদ সম্মেলনের আগে মরক্কো কোচ ওয়ালিদ দিয়ে গেছেন সতর্কবার্তা। ২০০৮-এ দেশম নিজেকে সেরা প্রমাণ করাটা তার কাছে এখন কিছু যায় আসে না। এ কথা শুনে দেশম হেসে বলেছেন, ‘এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমিও খুব বন্ধুপরায়ণ থাকব না (হাসি)। এটাই স্বাভাবিক যে তারাও চাইবে ফাইনাল খেলতে। দলটির রক্ষণভাগ অনেক শক্তিশালী। এখন পর্যন্ত কেউই তাদের গোলের দরজা খুলতে পারেনি। আশা করছি আমরা সেই সমস্যার সমাধান আগামীকাল পেয়ে যাব। পরিসংখ্যান হয়তো তাদের পক্ষে কথা বলবে না, তবে সবকিছুরই একটা বৈপরীত্য থাকে। ছোট ছোট ভুলগুলোই হয়তো ম্যাচের নির্ধারক হয়ে দাঁড়াবে। গ্যালারি থেকে তাদের অনেক সমর্থন থাকবে। আমাদের নিজেদের খেলাটাই খেলতে হবে। ছেলেরা সতর্ক হয়েই মাঠে নামবে।’
ওয়ালিদ সাফ জানিয়েছেন, তারা বিশ্বকাপ জিততে চান। কথাটায় আপনি ঔদ্ধত্য খুঁজে পেতে পারেন। তবে ৪৭ বছরের মাস্টারমাইন্ড তার কথায় অবিচল, যেন গোটা এটলাস পর্বতমালাটাই বুকে ধারণ করেছেন মরোক্কান কোচ, ‘আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই। এটা শুধু বলার জন্য বলা নয়। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো এরকম সুযোগ আমরা আর কখনো পাব না। আমরা হয়তো ফেভারিট নই। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী। হয়তো এটাই আমাকে খ্যাপাটে করে তুলেছে। তবে কখনো কখনো খ্যাপাটে হওয়ার প্রয়োজন আছে।’ ওয়ালিদের ভাবনায় এমবাপ্পে আছেন ফ্রান্সের আর দশজন খেলোয়াড়ের মতোই, ‘আমরা আসলে চাইব নিজেদের খেলাটাই খেলতে। আর তার জন্য বিশেষ একজনকে নিয়ে বাড়তি কোনো পরিকল্পনা করার প্রয়োজন নেই। নিজেদের কাজটা করি আগে, এরপর দেখা যাবে মাঠে কী হয়।’
এমনধারা কথা ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সব দলের কোচই বলেন। ইংল্যান্ড শিবির থেকেও শোনা গিয়েছিল একই কথা। তবে মাঠে দেখা গেছে এমবাপ্পেকে বোতলবন্দি করার গ্যারেথ সাউথগেটের বিশেষ কৌশল। সেটা ঠিকঠাক হলেও রোখা যায়নি অন্যদের। তাই আরেকবার বিদায়ের সাগরে ভাসতে হয়েছিল ইংলিশদের।
মরক্কোর কোচও বলছেন একই কথা। তবে তার কথায় কেন যেন আছে এক অদৃশ্য শক্তি। সত্যিই যদি আরেকবার রাতটা এটলাস লায়ন্সদের হয়, ফরাসি আস্ফালন যদি এটলাস পর্বতে থমকে যায়, এ সময়ের মহাতারকা এমবাপ্পেকে রুখে দিয়ে আশরাফ হাকিমি, এন-নাসেরি যদি আবারও আলো কেড়ে নেন, সেটাকে নিশ্চয় আর অঘটন বলবেন না? কারণ অঘটন ঘটিয়ে একটা-দুইটা ম্যাচ জেতা যায়, বিশ্বকাপ নয়।
এমন বন্ধুত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে লিওনেল মেসি ও নেইমারকে। হয়তো বার্সেলোনার রোনালদিনহো ও মেসিকেও। এক ক্লাবে দুজনের পথচলা খুবই মসৃণ। জাতীয় দলেও সেই মসৃণতা বজায় রাখতে চান তারা। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজে তা সম্ভব হয় না। এই বিশ্বকাপে আশরাফ হাকিমি ও কিলিয়ান এমবাপ্পের এখন এমনই অবস্থা। পিএসজিতে একসঙ্গে খেলা দুজনের এত সুন্দর বন্ধুত্ব আজ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজে এদিক-ওদিকে হতে যাচ্ছে। তবে সেমিফাইনালে ফ্রান্স ও মরক্কোর লড়াই নিশ্চিত হওয়ার পর দুজনের মধ্যে যেই হৃদ্যতা দেখা যাচ্ছে, মাঠে লড়াইয়ে হয়তো এতটা হৃদ্যতা নাও দেখা যেতে পারে! তবে সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে পাওয়ার পরই হাকিমি এমবাপ্পেকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘দ্রুত দেখা হচ্ছে বন্ধু’। ওদিকে স্পেনের বিপক্ষে শেষ টাইব্রেকারে লক্ষ্যভেদ করা হাকিমিকে ‘মরক্কোর রাজা’ বলেছেন এমবাপ্পে। তার টুইটটা ছিল এমন আশরাফ হাকিমি, পেঙ্গুইন ইমোজি, মুকুটের ইমোজি, দুই হাতে লাভ সাইন। স্পেনের সঙ্গে শেষ টাইব্রেক শুট নেওয়ার পর পেঙ্গুইনের মতো উদযাপন করেছিলেন হাকিমি। ঠিক যেমনটা এমবাপ্পে করে থাকেন। এখন এই বন্ধুত্ব মাঠে নামছে একে অপরকে হারাতে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই আটকে থাকেনি এমবাপ্পে-হাকিমি হৃদ্যতা। দোহায় হাকিমিদের টিম হোটেলে গিয়ে দেখা করে এসেছেন এমবাপ্পে। দুজনের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল। বিশ্বকাপের মধ্যে দুই দলের ফুটবলারের এমন বন্ধুত্ব সচরাচর দেখা যায় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরকে শুভকামনা জানানো পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু একেবাবে বন্ধুর টিম হোটেলে গিয়ে উপস্থিত হওয়া কখনই দেখা যায় না। সেই ব্যতিক্রম ভালোবাসা দেখিয়েছেন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপে সচরাচর ফুটবলাররা নিজ দল নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের পরিকল্পনা সাজানোতেই থাকে মূল ব্যস্ততা। এর মধ্যে বিরতি পেলে নিজেদের নিয়েই সময় কাটান। যেমন এবার মেসি ও রোনালদো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু এমবাপ্পে ছুটে গেছেন বন্ধু হাকিমির কাছে।
মরক্কো ও ফ্রান্সের দুই তারকার শুরুটা ২০২১-এ। রিয়াল মাদ্রিদের দ্বিতীয় রাইট ব্যাককে কিনে নেয় পিএসজি। সেই থেকে ফরাসি ক্লাবের সেরা একাদশের একজন হাকিমি। নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে বেশ নাম কুড়িয়েছেন। কানাডায় জন্ম নেওয়া হাকিমিকে বিশ্বসেরা রাইটব্যাক বলেছেন এমবাপ্পে। এ বছর জানুয়ারিতে কাতারের বিশ্বকাপ ভেন্যু দেখতে এসেছিল পিএসজি ক্লাব। তখন এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে এক সাক্ষাৎকারে মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচ পড়লে কী করবেন এমন প্রশ্ন এমবাপ্পে জানান, ‘এডুকেশন স্টেডিয়ামটি দারুণ। এখানে ৪০ হাজার সমর্থক ধরে। এখানে খেলাটাও বেশ উপভোগ্য হবে। তবে আমরা যদি মরক্কোর বিপক্ষে খেলি তবে হাকিমির মুখোমুখি হতে হবে। তখন আমার বন্ধুকে শেষ করে দিতে হবে। ওই ম্যাচে অবশ্যই আমরা জিতব।’ এদিকে বিশ্বকাপের আগে এমবাপ্পেকে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বন্ধুর প্রশংসা করে হাকিমি বলেন, ‘এমবাপ্পেকে আমি খুব ভালোবাসি। শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নয় মানুষ হিসেবেও সে দারুণ। ওর বড় ক্ষমতা হলো ওকে বল দিয়েই আপনার কাজ শেষ। এরপর সে নিজেই ঠিক করে নেবে বলটি দিয়ে কী করতে হবে।’
এমন হরিহর আত্মার দুই বন্ধু আজ নামবেন দেশকে এগিয়ে নিতে, ফাইনালে। এমবাপ্পে এই স্বাদ আগেই পেয়েছেন। হাকিমি যদি রাইটব্যাক পজিশনে থেকে, লেফট উইঙ্গার এমবাপ্পেকে আটকে দিতে পারেন, তবে তিনিও পাবেন ফাইনালের স্বাদ। বন্ধুত্ব এখানে তুচ্ছ হয়ে যাবে।
এবারের আসরে মরক্কোর যাত্রাটাকে বলব ‘বিস্ময়কর সুন্দর’। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দেওয়ার পর বেলজিয়ামকে হারাল। শেষ ষোলোয় স্পেনকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালেরও স্বপ্নভঙ্গ করল। আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালের মঞ্চে তারা। এই দলটা আরও এগিয়ে যাক, মন তো এমন চাইবেই। হ্যাঁ, কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে আমার মন মরক্কোর দিকেই। তবে মাথা বলছে এগিয়ে থাকবে ফ্রান্সই।
কাগজে কলমে ফ্রান্স অবশ্যই অনেক বড় ব্যাপার। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওরা। এবারও খেলছে দুর্দান্ত। ওদের সামনে সুযোগ ৬০ বছর পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখার। তবে মরক্কোর যে মানসিকতা, ওরা কখনো খুশি হয় না। দ্বিতীয় রাউন্ড বা কোয়ার্টারে উঠেও তারা খুশি ছিল না। সেমিফাইনালে উঠেও খুশি না। ওরা ফাইনাল খেলতে চায়। এর সঙ্গে কাতারে অনেক সাপোর্টারও তাদের। এই ম্যাচ দেখতে আরও অনেক সাপোর্টার যাবে বলে শুনেছি। এটা ওদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। প্রতিপক্ষ দলের কাছে বল থাকলেও ওরা শিস বাজাচ্ছে। গ্যালারিতে ওদের দাপট থাকছে। খেলোয়াড়রা তাতে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত থাকছে।
ফ্রান্সের জন্য ইতিবাচক হচ্ছে ওদের কোনো চোট সমস্যা নেই। তবে মরক্কোর আবার এখানে দুর্ভাবনা আছে। তাদের একাধিক খেলোয়াড়ের চোট সমস্যা আছে। বিশেষ করে আগের ম্যাচে অধিনায়ক রোমান সাইস স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন। নুসে মাসাওয়ি ও ডিফেন্ডার নায়েফ আগের্দও গত ম্যাচের প্রথম একাদশে ছিলেন না। এই খেলোয়াড়রা খেলতে না পারলে কিছুটা হলেও দুর্বল করবে তাদের।
ফ্রান্সের আক্রমণভাগ যে বিশ্বসেরা এতে কোনো সন্দেহ নেই। মাঠে তারা সেটা প্রমাণও করে যাচ্ছে। আর দিদিয়ের দেশম তার ফুলব্যাকদের খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে থিও হার্নান্দেজকে। এমবাপ্পে যেহেতু ইনসাইডে অনেক বেশি ঢুকে যায়, তাই হার্নান্দেজ ওভারল্যাপ করে। এমবাপ্পের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে তারা জায়গা তৈরি করে দিয়ে বাধ্য করে। মজার ব্যাপার যেটা হবে মরক্কো একটু নিচের দিকে নেমে কমপ্যাক্ট ডিফেন্ডিং করে কাউন্টার অ্যাটাকে যায়। ফ্রান্সও এই জিনিসটাই করে। অনেক সময় দেখেছি বল হারালে ধীরে ধীরে নিচে ড্রপ করে। যাতে কাউন্টারে এমবাপ্পেকে ব্যবহার করা যায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য এটা পারেনি তারা। তবে মরক্কোর বিপক্ষে ঠিকই সফল হতে চাইবে।
এখন মরক্কো যদি ওপরে না ওঠে তখন কিন্তু ফ্রান্স জায়গা পাবে না। এমন হলে ফ্রান্সকে অতিরিক্ত মুভমেন্টগুলো করতে হবে। এখানে গ্রিজম্যান, জিরু ও এমবাপ্পের কম্বিনেশন জরুরি হবে। আদ্রিওঁ রাবিওর কথাও বলব। বাম পাশে এমবাপ্পে ও হার্নান্দেজ তো আছেই। রাবিও বেশ ভালো প্রভাব রাখে। তিনজন যখন এক লাইনে চলে যায়, তখন মাঝখানে একটা জায়গা তৈরি হয়। প্রতিপক্ষ তখন ওইদিকে চাপে, যা ফ্রান্সের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের জন্য জায়গা তৈরি করে দেয়।
মরক্কোর বিপক্ষে কাউন্টার অ্যাটাক করা কঠিন। ট্রানজিশনে তারা খুব দুর্দান্ত। দেখা যায় খুব দ্রুতই তারা ৪-১-৩-২ শেপ নিয়ে ফেলে। এটা তাদের অ্যাডভান্টেজ। তবে গ্রুপ পর্বে কানাডা দেখিয়েছিল কাউন্টারে মাঝেমধ্যে অগোছালো থাকে মরক্কো। সেট পিস রোখার ক্ষেত্রেও ওরা খুব বেশি ভালো না। তাই পেনাল্টি এরিয়ার আশপাশে ফাউল করে না। কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। তবে ফ্রান্স এমন সুযোগ পেলে যে মিস করবে না এটা নিশ্চিত। এই পর্যায়ে দলগুলো ভুল খুব কম করে। আর ভুল হলে কেউ পার পায় না। ফ্রান্সের সঙ্গে আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন যেমন পেনাল্টি মিস করল। বিশ্বকাপ থেকেই তাদের বিদায় নিতে হলো।
ফ্রান্স মিডফিল্ডে ব্লক খুব ভালো করে। ইংল্যান্ডের সঙ্গেও এটা করেছে। ট্রানজিশনে দেখা যায়, নিজেদের কোন খেলোয়াড় কোথায় যাচ্ছে এটা তাদের কাছে কোনো বিষয় না। বোঝাপড়াটা ভালো। একজন আরেকজনের পজিশনে গেলেও দলের শেপটা ঠিক রাখে। অগোছালো হয় না। এক্ষেত্রে বল হারালেও ডিফেন্ডিং করতে সুবিধা হয়। মরক্কোর আবার বিল্ডআপ নিখুঁত। ওদের হাইপ্রেস করা যায় না সহজে। পর্তুগাল যেমন পারেনি। ওরা কাউন্টার অ্যাটাকনির্ভর দল হলেও তড়িঘড়ি করে না। বেশ ঠা-াভাবে ওপরে যায়। সব মিলিয়ে হাড্ডাহাড্ডি এক লড়াইয়ের অপেক্ষাতেই আছি।
বিশ্বকাপের চরিত্রটাই এমন। অচেনাকে চিনিয়ে দেওয়া, পড়তে থাকা তারকাকে তুলে ধরা অথবা সেরা তারকাদের মাটিয়ে নামিয়ে আনা। অ্যান্তোইন গিজমান ও হাকিম জিয়েচের ক্ষেত্রে হয়েছে মাঝেরটা। এই বিশ্বকাপের আগে ক’জন ফ্রান্স বা মরক্কোর হয়ে জ্বলে ওঠার সার্টিফিকেট দিতেন এ দুই ফুটবলারকে? অথচ সেমিফাইনালের আগে প্লে-মেকার হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তাদের নিয়েই। দায়িত্বে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, কিন্তু পুরো মাঠজুড়েই বিচরণ করে খেলার গতিবিধি বদলে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপকে নিজের জন্য স্মরণীয় করে রাখছেন দুজন। আজ মুখোমুখি হওয়া দু’দলের লড়াইয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ার মূল ভূমিকা তাদের পায়েই।
কিন্তু বিশ্বকাপের আগে হারিয়েই গিয়েছিলেন গ্রিজমান ও জিয়েচ। তরতর করে বেড়ে ওঠা ক্যারিয়ার যেন মুহূর্তেই ধসে পড়ছিল। হাকিম জিয়েচকে তো অবসরই নিতে হয় ফেব্রুয়ারিতে। এরপর চেলসির হয়ে এ বছর একটিও শুরুর একাদশে খেলার সুযোগ না পাওয়া। গোপন খবর জানায় ক্লাব থেকে তাকে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়। ওদিকে গ্রিজমান নিজের উত্থানের ক্লাব আতলেতিকোতে ফিরেছেন বটে, কিন্তু আগের মতো কিছুই পাচ্ছিলেন না। বার্সেলোনার নানা নিষেধাজ্ঞায় গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুরুর একাদশে খেলার সুযোগই হচ্ছিল না। সেই আক্ষেপ এবার ভুলিয়ে দিলেন বিশ্বকাপের দ্যুতিতে।
নেদারল্যান্ডসে এক মরোক্কান পরিবারে জন্ম জিয়েচের। তাই ডাচ অথবা মরক্কো জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল। বাবা-মা নেদারল্যান্ডসে থাকেন বলে দেশটির ফুটবলের সঙ্গে বেড়ে ওঠেন। কিন্তু ২০১৪ সালে মরক্কো বিদেশে জন্ম তবে মরোক্কান যোগ আছে এমন প্রতিভাবান ফুটবলারদের দেশটির হয়ে খেলতে উৎসাহিত করে। ওই সময় অন্য অনেকের মতোই সাড়া দেন জিয়েচও। নয়তো ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়েই খেলার কথা ছিল। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে ডাক পেয়েছেন নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও লাটভিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচে খেলার কথাও ছিল তার। খেলেছেন ডাচ ক্লাব হেরেনভিন ও এফসি টোয়েন্টিতে। মরক্কো জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর খেলেছেন আয়াক্সে। এই ক্লাবেই সবচেয়ে বেশি ১১২ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩৮ গোল। ২০২০ থেকে আছেন চেলসিতে। কিন্তু ৫১ ম্যাচে মাত্র ৬ গোল করায় জিয়েচকে চেলসিতে ফ্লপ ধরা হয়। তবে এই বিশ্বকাপে কানাডার বিপক্ষে একটি গোল, বেলজিয়ামের বিপক্ষে একটি অ্যাসিস্ট ও স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে লক্ষ্যভেদ করেন। মরক্কোর আগের কোচ ভাহিদ হালিল হোদজিক জিয়েচসহ বিদেশি যোগ আছে এমন ফুটবলারদের বাইরে রেখেছিলেন। জাতীয় দলে ডাক না পেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে নেন ২৯ বছর বয়সে। কিন্তু আগস্টে রাগ্রেগুই দায়িত্ব নিয়েই ওই সব ফুটবলারকে ফিরিয়ে আনেন। জিয়েচও তার কথায় অবসর ভেঙে ফিরে আসেন। এ নিয়ে খুব সমালোচনায় পড়েছিলেন রাগ্রেগুই। কিন্তু এখন সেসবের রেশ মাত্র নেই। রাগ্রেগুই জানান, ‘যেসব ফুটবলার জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনে জন্ম নেয় এবং সেখানেই ফুটবলের সঙ্গে বেড়ে ওঠে ওদের এই খেলাটির ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি থাকে। আমি নিজেও ফ্রান্সে জন্মেছি। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে সবার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটা দারুণ মিশ্রণ তৈরি করেছি। যা এই বিশ্বকাপে কাজে লেগেছে।’ মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদও বলেছেন, ‘মরোক্কানদের আশা ও স্বপ্ন পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।’ সাবেক ইংলিশ তারকা ইয়ান রাইট বিশ্বকাপে জিয়েচকে দেখে মুগ্ধ। তার মতে চেলসিতে ম্যাচ সুযোগ না পাওয়া জিয়েচ দেশের হয়ে নতুন উদ্যমে ফুটে উঠেছেন।
গ্রুপ পর্বে মোট সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন জিয়েচ। ডি বক্সে মোট ৪৩ বার বল পঠিয়েছেন আর সরাসরি স্ট্রাইকার বা অন্য ফরোয়ার্ডদের ডি বক্সে পাস বাড়িয়েছেন ১৭ বার। অন্য কোনো মরোক্কান ফুটবলার এই সংখ্যার কাছেও যেতে পারেননি। তবে এসব জিয়েচকে আলাদা করতে পারবে না। যা পারবে তা হলো দলের প্রতি দায়বদ্ধতা, সতীর্থদের প্রতি সহমর্মিতা আর মাঠে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া। জিয়েচ হানেরভিনে খেলার সময় তার কোচ ছিলেন ডাচ গ্রেট মার্কো ফন বাস্তেন। এই ফরোয়ার্ডকে নিয়ে বাস্তেনের মন্তব্য ছিল ‘আনম্যানেজেবল’ (যাকে সামলানো যায় না)। কিন্তু রাগ্রেগুই বলেন, ‘অনেকেই ওকে নিয়ে বাজে কথা বলে। সমালোচনা করে। কিন্তু আসল কথা হলো জিয়েচকেব স্বাধীনতা ও ভালোবাসা দিলে সে আপনার জন্য মরতেও প্রস্তুত।’
জিয়েচের মতো জ্বলে ওঠা আরেকজন গ্রিজমান। দুই বিশ্বকাপ আগে তাকেই ধরা হচ্ছিল ফ্রান্সের সেরা ফরোয়ার্ড। সেই পথে হেঁটে দেশটির সেরা স্কোরারদের তালিকায় তিনে আছেন। অথচ তার ক্যারিয়ারের গ্রাফটা কেমন যেন ওপর থেকে নিচের দিকে। ক্যারিয়ারে স্ট্রাইকার ও পরে ফরোয়ার্ড হয়ে শুরু করা গ্রিজমানের পথচলা থেমে গিয়েছিল বার্সেলোনায় গিয়ে। মেসি ও সুয়ারেজের সঙ্গে পজিশনের লড়াইয়ে নিজের জায়গাটা পাচ্ছিলেন না। ফর্ম পড়তির দিকে যাওয়ায় আবারও চলে আসেন আতলেতিকো মাদ্রিদে ধারে। পুরনো ক্লাবে ফিরলেও নিজেকে ফিরে পাননি গ্রিজমান। কিন্তু বড় মঞ্চের তারকারা বড় মঞ্চেই জ্বলে ওঠেন। গত বিশ্বকাপ জয়ী গ্রিজমানও জ্বলে উঠলেন বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। তার কাঁধে চড়ে ভরসা রাখছে ফ্রান্স।
নতুন ভূমিকায় এ বিশ্বকাপে সেরা পারফর্মটা দেখালেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে। নিখুঁত ও কার্যকর পাসের দারুণ প্রদর্শনী গড়েছিলেন গ্রিজমান। নিজের ডান পাশে থাকা উসমান দেম্বেলে ও রাইট ব্যাক জুলেস কুন্দের সঙ্গে পাস দেওয়া-নেওয়ায় দারুণ ত্রিভুজ তৈরি করেন। ম্যাচে আক্রমণ গঠনে কুন্দে ও গ্রিজমানের পাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪৯ ও ৪৮। ইংল্যান্ডের উঠতি তারকা ও এই বিশ্বকাপে সেরা তরুণদের একজন জুড বেলিংহামের সঙ্গে পজিশন ডুয়েল ছিল গ্রিজমানের। তবে তরুণ বেলিংহাম অভিজ্ঞতার কাছে হার মানেন।
গ্রিজমানের এই নতুন ভূমিকায় ফ্রান্স শক্তির চেষ্টা নয় বরং গাণিতিক পরিকল্পনায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলাতেই নজর দিচ্ছে। দেশমের এই নতুন ‘ছায়া মিডফিল্ডার’ তাকে লক্ষ্য পূরণের পথে নিয়ে চলেছে। গ্রিজমানের কারণে দেশম বিপক্ষের চিন্তায় আরও একজনকে রাখার সুযোগও পেয়েছেন। এখন এমবাপ্পে-জিরুর পাশাপাশি মরক্কোকে গ্রিজমানের ভূমিকা নিয়েও ভাবতে হবে। এতে সুবিধা কোচ দেশমের। এক দুই গুটি সামনে রেখে পেছনের গুটি দিয়ে বিপক্ষের অর্ধে হামলা দেওয়ার চাল চালতে পারছেন। শুরু থেকে না হলেও কোয়ার্টারে এই নতুন গুটির চালে দারুণ সফল দেশম। এবার সেমিতে সফল হওয়ার পালা। এই বিশ্বকাপে গ্রিজমানকে ব্যাখ্যা করে লেকিপ লিখেছে, ‘প্রতি ম্যাচে আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যান যেন একেক ধাপ ওপরে উঠছেন। ডেনমার্কের বিপক্ষে ম্যাচে ফেরায় একাধিক কাউন্টার অ্যাটাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পোল্যান্ডের বিপক্ষে মধ্যমাঠ থেকে গোল হয়ে ঘুরেছেন। সহযোগিতা করেছেন ডিফেন্ডারদেরও। আর থ্রি লায়নদের বিপক্ষে ওদের সেরা পরিকল্পনাকেও এলোমেলো করে দিয়েছেন। গ্রিজু’র গ্রেটনেসটা এখানেই। সময়ের সঙ্গে ওয়াইনের মতো সুপেয় হয়ে ওঠেন। অনুষ্ঠানের (খেলার) সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতা বাড়ান এবং সেরা মুহূর্তের বিশেষ বস্তু হয়ে ওঠেন।’
একই অবস্থানে থেকে জ্বলে উঠেছেন দুই তারকা। শেষ হাসিতে এই অগ্রযাত্রা শেষ করতে চান দুজন। তার আগে একই পজিশনে আজ মাঠ নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে গ্রিজমান ও জিয়েচকে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।