
কঠোর শাসনের ঘেরাটোপ থেকে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত স্বাধীন জীবনের প্রথম স্বাদ পায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর। অনেকেই আবেগের আতিশয্যে ভুলেই যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রবেশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য। মুক্ত স্বাধীন ক্যাম্পাস জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে চোরাবালি। পরিকল্পিত রুটিনবদ্ধ জীবনযাপন করতে না পারলে উচ্চশিক্ষার সোনার হরিণ মেলে না। লিখেছেন বিপুল জামান
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে প্রবেশের আগে সব শিক্ষার্থীকেই পার হতে হয় ভর্তি পরীক্ষার বৈতরণী। ভর্তি পরীক্ষার দুর্লঙ্ঘ বাধা পেরোনোর জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকরা তাদের এই বলে উৎসাহিত করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে এই কঠোর তপস্যার শেষ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন পড়াশোনা করতে হয় না। শিক্ষার্থীরা ভর্তির পর অভিভাবকদের কথা আক্ষরিকভাবে বিশ্বাস করে। নতুন পরিচয় হওয়া বন্ধু, সদ্য ভর্তি হওয়া ক্যাম্পাস আর প্রথম পাওয়া স্বাধীনতা উদযাপনে মগ্ন থাকেন তারা। দিন যায়। পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করে এই দুস্তর পারাবার পার হওয়ার চেষ্টা করে। ফলাফল খারাপ রেজাল্ট অথবা ইয়ার ড্রপ বা সেমিস্টার ড্রপ, হতাশা, অভিভাবক, শিক্ষক, বন্ধুদের কটুকথা, বকাঝকা। এসব অনেকের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয় না। কেউ কেউ বেছে নেন আত্মহননের মতো হঠকারী পথ। অথচ একটু সচেতন হলেই সম্ভব হবে পড়াশোনা ঠিক রেখেই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় ক্যাম্পাস লাইফকে উদযাপন।
ক্যাম্পাস জীবনে পড়াশোনা ও অন্যান্য সবকিছুর সুসমন্বয় কীভাবে করতে পারেন শিক্ষার্থীরা জানতে চাই এনপিএল প্রশিক্ষক ও লাইফকোচ মো. মিরাজ হোসেনের কাছে। মিরাজ হোসেন শিক্ষার্থীদের এই সমস্যার জন্য দায়ী করেন অভিভাবক, শিক্ষক তথা সমাজের তৈরি কিছু ভুল ধারণাকে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের যুদ্ধ করে আসতে হয় আমি বলব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার ব্যাপারটি তাই তাদের কাছে বিজয় অর্জনের মতো একটি বিষয়। তারা এটি উদযাপন করতে চায় এবং তারা উদযাপন করবে। কিন্তু কিছু ভুল ধারণার ভুল দৃষ্টিভঙ্গির ফেরে পড়ে তারা ভুল করেন। তিনি উচ্চশিক্ষার পথে কিছু চোরাবালির কথা উল্লেখ করেন।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন ক্যাম্পাসে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পড়াশোনা নেই। এ কারণে তারা সারা বছর পড়াশোনা না করে পরীক্ষার আগে পড়তে বসেন। কিন্তু সারা বছর ক্লাস না করলে বেসিক বিষয়গুলো জানা থাকে না ফলে পরীক্ষার আগে অথই সাগরে পড়েন। সেক্ষেত্রে ফলাফল ভালো হয় না। ক্যাম্পাসে পড়াশোনা নেই এটা হলো ভুল কনসেপ্ট। এটা তো পড়াশোনারই জায়গা, বিশ্ববিদ্যালয় তো উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্থান। আড্ডা-গল্প-বন্ধুত্ব সামাজিক সংগঠন সবকিছু হবে পড়াশোনাকে ঠিক রেখে। পড়ার সময় পড়া আর অবসর সময়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট, সমাজসেবা, বাকি সব।
শিক্ষার্থীদের আরেকটা ভুল ধারণা হলো, সিজিপিএ গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা ঠিক না। যেকোনো চাকরির জন্য একটি সিজিপিএ নির্ধারিত থাকে যার নিচে ফলাফল থাকলে আবেদন করা যায় না। তাছাড়া ভাইভার সময়েও কিন্তু জানতে চাওয়া হয় সিজিপিএ কত। তাই সিজিপিএ কমপক্ষে ৩.৫ থাকলে ভালো হয়, ন্যূনতম ৩.০ তো থাকতেই হবে। সিজিপিএ গুরুত্বপূর্ণ নয় এটা বুঝতে বুঝতে সময় চলে যায়, অনার্স মাস্টার্স শেষ হয়ে যায়। হা-হুতাশ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
অনেকে মনমতো বিষয় না পেলে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনায় আর মনোযোগী হন না তারা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বিসিএসের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতির দরকার আছে সত্য কিন্তু প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করতে হবে বিষয়টা এমন না। বিভাগীয় পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে। কারণ এই বিষয়ের ওপরেই যেহেতু তার ডিগ্রি সেহেতু সব জায়গায় কিন্তু এ বিষয়ে কিছু না কিছু জিজ্ঞেস করা হবে। ফলে অ্যাকাডেমিক বিষয়ে বেসিক ধারণাগুলো অর্জন করতে হবে। তাছাড়া এ সময়ে সামাজিক সংগঠন, ক্যাম্পাসের যে সংগঠন আছে সেগুলোতে যুক্ত হতে হবে, তাহলে নেট-ওয়ার্কিংটা ভালো হবে, পরিচিতি বাড়বে। এগুলো খুব সাহায্য করে পরবর্তী জীবনে। কিছু গুণাবলি আছে যেগুলো সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলেই শেখা সম্ভব সেগুলো অর্জন করা যায় না বই পড়ে।
অনেকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য মাদক গ্রহণ করে থাকে। জীবনে সবকিছুর অভিজ্ঞতা নেওয়ার দরকারও নেই। নেগেটিভ জিনিসের অভিজ্ঞতার দরকার নেই। পজেটিভ বিষয়গুলো ঠিক রাখতে হবে। পড়াশোনা ঠিক রাখতে হবে, ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে, ক্যাম্পাসে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
এগুলো থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক ও রুটিনবদ্ধ জীবনযাপন করতে হবে। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দ-মজা-বন্ধুত্ব সব হবে কিন্তু একটা রুটিন থাকবে, পরিকল্পনা থাকবে, শর্টটার্মে কী লাভ, লং টার্মে কী লাভ, এগুলো বিচার বিবেচনা করে তাদের এগোতে হবে, তাহলে ভুল করবে না, সময় ব্যবস্থাপনাও সুন্দর হবে।
ছবি : আবুল কালাম আজাদ
তিক্ত সত্য কথা বলতে আহমদ ছফা কখনো কুণ্ঠিত হতেন না। আবার ভালোবাসা- স্নেহ-মমতার প্রকাশেও ছিল না তার কোনো দ্বিধা। জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাককে তিনি গুরুজ্ঞান করতেন। গুরুকে নিয়ে আছে তার বইও, নাম ‘যদ্যপি আমার গুরু’। মজার ব্যাপার হলো, গুরু-শিষ্যের প্রথম সাক্ষাৎ কিন্তু মোটেও মধুর ছিল না। প্রথম সাক্ষাতে আহমদ ছফা আবদুর রাজ্জাককে প্রায় আক্রমণ করেই বসেছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে আহমদ ছফা যখন তার পিএইচডির সুপারভাইজার হওয়ার জন্য আবদুর রাজ্জাককে অনুরোধ জানাতে যান তখন। তার গবেষণার বিষয় ছিল, দ্যা গ্রোথ অব মিডল ক্লাস ইন বেঙ্গল অ্যাজ ইট ইনফ্লুয়েন্সড ইটস লিটারেচার, সোসাইটি অ্যানড ইকোনমিকস ফ্রম এইটিনথ টু এইটিনথ ফিফটি এইট। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আলোচনা করলে তাকে তারা বলেন আবদুর রাজ্জাক হতে পারেন তার গবেষণার উপযুক্ত পরামর্শক। সেই অনুরোধ নিয়েই আহমদ ছফা সেদিন গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন, ঘরের দরজা আধ ভেজানো, আবদুর রাজ্জাক কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন। আসার কারণ জানতে চাইলে ছফা তা জানালেন। শুনে আবদুর রাজ্জাক কোনো কথা না বলে পাশ ফিরে শুলেন। ছফা আবারও চৌকির অপর পাশে গিয়ে একই কথা বললেন। আবদুর রাজ্জাক আবার পাশ ফিরে শুলেন। এটা দেখে আহমদ ছফা করলেন কি, আব্দুর রাজ্জাকের গায়ের কাঁথা টেনে হাতে নিলেন, গোটাতে শুরু করলেন। বললেন, ‘আমার মতো একজন আগ্রহী যুবককে আপনি একটি কথাও না বলে তাড়িয়ে দিতে পারেন, এত বিদ্যা নিয়ে কী করবেন? পরিচ্ছন্ন হয়ে এসে বললেন, বলেন কী কয়বার চান? আহমদ ছফা তার আর্জি জানালে তিনি জানালেন, পিএইচডি গবেষণা সুপারভাইজ করতে কমপক্ষে রিডার হতে হয় কিন্তু তিনি স্রেফ লেকচারার, তাই তার পক্ষে ছফার পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক হওয়া সম্ভব না। তখন আহমদ ছফা জানান, তিনি অন্য কোনো শিক্ষকের অধীনে বিষয়টি নিবন্ধন করে নেবেন কিন্তু সার্বিক দিকনির্দেশনা তিনি আব্দুর রাজ্জাকের কাছেই চান। আব্দুর রাজ্জাক এতে সম্মত হন। মজার ব্যাপার হলো, যে পিএইচডি ডিগ্রির নিবন্ধন নিয়ে এত কিছু আহমদ ছফা কিন্তু সেটা সম্পন্ন করেননি। এর দায় বা
কৃতিত্বও তিনি দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাককে। আব্দুর রাজ্জাকের পরামর্শে তিনি বই পড়েন যে নির্ধারিত সময়ে পিএইচডির কাজ শেষ করতে পারেননি।
সুলতানা রাজিয়া, যদ্যপি আমার গুরু অবলম্বনে
শুরুটা এন্ড্রয়েড ফোন দিয়ে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় শখের বশে টুকটাক প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতেন। এসএসসি পরীক্ষার পর বাবাকে রাজি করিয়ে কিনে ফেললেন ক্যামেরা। এরপরের সময়টা শুধুই উত্থানের। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ছেলে মুন এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার। মুনের পুরো নাম মির্জা মুন হৃদয়। বর্তমানে মুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ইন্সটাগ্রাম পেজে ‘ডেথ অব কিস’ শিরোনামে তার একটি ছবি প্রকাশিত হওয়ায় ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে সবার প্রশংসায় ভাসছেন মুন। ছবি প্রকাশে ভীষণ উচ্ছ্বসিত মুন। তিনি জানান, সব ফটোগ্রাফারের ইচ্ছে থাকে তাদের ছবি কোনো বড় নিউজ মিডিয়াতে থাকুক, যেমন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, বিবিসি, ডিসকভারি, আমার ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে পাবলিশ হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া, আমার পাঁচ বছরের কষ্টের ফল।
বগুড়ার ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদের কাজ দেখে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি বিষয়ে আগ্রহ জাগে মুনের। তারপর এন্ড্রয়েড ফোন দিয়ে গৃহস্থালি পশুপাখির ছবি তোলার চেষ্টা। মুন জানান, এসএসসি পরীক্ষার পর বাবাকে রাজি করিয়ে ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনেন। তারপর কেটে গেছে পাঁচ বছর। ছেদ পড়েনি মুনের সাধনায়। তারই ফলে একে একে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জমা হচ্ছে মুনের ঝুলিতে। পড়াশোনা আর প্যাশন দুটোর ভারসাম্য রক্ষা করে ঠিকই দুর্লভ সব ছবি তুলে চলেছেন মুন। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফির জন্য প্রয়োজন হয় সময়, পশুপাখির বিশেষ মুহূর্তকে ধরতে করতে হয় দীর্ঘ অপেক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার ফাঁকে বের করতে হয় সে সময়। ছুটির দিনগুলোতে মুন বেছে নেন ছবি তুলতে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কাক্সিক্ষত ছবি পাওয়া যায় এমনটা নয়। মুন জানালেন, একবার বগুড়ায় Black Naped Monarch(নীল ঘাড় রাজন) পাখির বাচ্চাসহ ছবি তোলার জন্য দেড় মাস অপেক্ষা করেও ছবিটি তুলতে পারেননি। কাক্সিক্ষত ছবিটি তুলতে না পারলে নিশ্চয় মন খারাপ হয় কিন্তু বিভিন্ন সম্মাননা সেসব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। মুন ফটোগ্রাফির জন্য দেশের নানা পুরস্কার পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালে ইতালির মর্যাদাপূর্ণ sieana award’ ও ২০২১ সালে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা ‘Fuzia Weather Contest’ প্রথম পুরস্কার।
ভবিষ্যতে মুন ভারতের বিখ্যাত ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ভারুণ আদিত্যর মতো একজন বড় ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হতে চান। তিনি শুধু নিজে বিখ্যাত হতে চান না বরং তিনি নিজের কাজে মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে রাখতে চান অবদান।
‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটি একজন শিক্ষার্থীর কাছে হাজারো স্বপ্নের হাতছানি দেয়। স্কুলে পড়ার সময় উত্তরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক দুলাল স্যার বলেছিলেন, এই তো কয়টা দিন। তারপর তোদের আর কেউ পড়া ধরবে না। তোরা তখন মুক্ত আকাশে স্বাধীন পায়রার মতো উড়ে বেড়াবি।
স্কুল-কলেজ জীবন শেষ হলো। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পালা। ভর্তিযুদ্ধে মনমতো বিষয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। ক্যাম্পাস হতে হবে রাজধানী ঢাকা শহরের ভেতরে। ঢাকায় নিজস্ব ক্যাম্পাস, খরচ এবং অন্যান্য সুবিধা বিবেচনায় ভর্তি হলাম ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-ইইউবিতে।
ক্যাম্পাসের প্রথম দিন। পৌষের কনকনে শীতের এক সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে নিলাম। ক্যাম্পাসে এসে সরাসরি চলে গেলাম হেল্প ডেস্কে। সবিনয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপু, রুম নম্বর ৬২০ কোন দিকে? উনি আমার বিভাগের নাম জেনে নিলেন। মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, ছয় তলায় হাতের ডান পাশে।
গেলাম ক্লাসরুমের দিকে। নিশ্চিত হলাম ঠিক রুমে প্রবেশ করেছি। চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরুল হুদা স্যার, আফসানা চৌধুরী শান্তা ম্যাম, রিংকু ম্যাম, শাহাদাত স্যার, মঞ্জুরুল স্যার, সালমা নাসিমান নূর ম্যাম, মিথিলা ম্যাম, নিলয় স্যারসহ অর্থনীতি বিভাগের দুজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন সেদিন। নবাগত শিক্ষার্থীদের একটি রজনীগন্ধ্যা ফুল, ফাইল আর কলম উপহার দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। ছোট্ট প্রোগ্রাম শেষে ক্লাস শুরুর পালা। সেই আপু! আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তিনি যে আমাদের শিক্ষক তা বুঝতে আর বাকি রইল না। পরিচয়পর্বে জানলাম তিনি জিনাত সানজিদা নাসরিন, তিনি আমাদের ফান্ডামেন্টালস অব রাইটিং কোর্সের ক্লাস নেবেন। আমার ভীত ও অপ্রস্তুত মুখ দেখে বললেন, আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল নিচে। সমস্যা নেই। ইট’স ওকে।
ক্লাসের প্রথম দিনেই ইমরান আর ওলিউল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। এখন আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত থ্রি ইডিয়টস হিসেবে। ক্লাস শেষে নতুন বন্ধুদের নিয়ে গল্প, আড্ডা আর শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু কর্নার, স্টুডেন্ট কর্নার, লাইব্রেরিসহ পুরো ক্যাম্পাস ঘোরাঘুরি। শেষে ফুরফুরা মনে বাসায় ফেরা। সেই দিনটি ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। যদি আবারও ফিরে যেতে পারতাম ক্যাম্পাসের সেই প্রথম দিনে!
অহিদুল ইসলাম অন্তর
চতুর্থ বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-ইইউবি
আজকের প্রশ্ন : আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?
আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে প্রশ্নকারীর নাম। উত্তর পাঠাও [email protected] এই ইমেইল ঠিকানায়।
গত সংখ্যার প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত? প্রশ্ন করেছিলেন আহমদ মানিক, শিক্ষার্থী, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
গত সংখ্যার উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অসংখ্য উত্তরদাতার মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে গত সংখ্যার ক্যাম্পাস কুইজ বিজয়ী হয়েছেন আবুল বাশার মিরাজ, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।