
দেশে মৌমাছির চাষ বাড়িয়ে মধু উৎপাদন বাড়াতে ইউরোপ গিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে চান কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩০ কর্মকর্তা। আরও ১০০ কর্মকর্তা ইউরোপ যেতে চান শিক্ষা সফরে। সফরকালে শুধু মধু চাষ দেখাই নয়, তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জ্ঞান অর্জন করবেন তারা। জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে এই ১৩০ কর্মকর্তার ইউরোপ ভ্রমণে ব্যয় হবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা।
‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শিরোনামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেওয়া এক প্রকল্প প্রস্তাবে কর্মকর্তাদের ইউরোপ সফরের এই সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এতে বাদ সেধেছে পরিকল্পনা কমিশন। তারা বলছে, প্রকল্পের আওতায় বিদেশগামীর সংখ্যা কমাতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৪৯৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর এই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বিভিন্ন খাতে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রস্তাব রয়েছে জানিয়ে তা কমাতে বলেছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। যেনতেন কাজে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাবের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন তারা।
প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ৪৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) ২০ কোটি ৪৪ লাখ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ১৫ কোটি ২১ লাখ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ২০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করবে। প্রস্তাবের ওপর সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে চলতি বছরের জুন থেকে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ। এই অর্থ দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার ৪৭৬টি উপজেলায় ক্রপিং প্যাটার্নভিত্তিক ৯০ হাজার ১৪০টি প্রদর্শনী স্থাপন, ২৬ হাজার ৭২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ, ৬ হাজার ৫৭০ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ, ২১ হাজার ৬০০টি কৃষক মাঠ দিবস প্রশিক্ষণ, ১০০ কর্মকর্তার শিক্ষা সফর, ৩০ কর্মকর্তার মধু চাষবিষয়ক উচ্চতর প্রশিক্ষণ, ৫টি জাতীয় ও ৭০ আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ, বিএডিসির বীজ গুদাম মেরামত, ৭৮টি গাড়ি বা যানবাহন ক্রয়, বিভিন্ন তেলবীজ বিতরণ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
পিইসি সভায় বলা হয়, প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। তাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে মৌমাছি চাষ বা মধু উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক নেই। আর ডিএইর নেওয়া আরেকটি প্রকল্পে মৌচাষের কর্মকা- অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওই প্রকল্পে তারা কতটা সফল হয়েছে, সেটা দেখতে হবে। এ ছাড়া মধুর চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কাজ। এ ক্ষেত্রে ডিএই শুধু তাদের সহায়তা করবে। তাই মধু চাষ টেকসই করার নামে বাণিজ্যিকীকরণ ডিএইর কাজ নয়। অথচ জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মৌ চাষ শিখতে ডিএইর ৩০ জন কর্মকর্তা বিদেশে উচ্চ প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন জনপ্রতি বরাদ্দ ঠিক রেখে কর্মকর্তার সংখ্যা কমিয়ে ৩০ থেকে ৪ জনে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে। শর্ত দিয়ে বলেছে. এই ৪ জন অবশ্যই কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হতে হবে। অন্যরা কেউ যেতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি একাধিক বিভাগ বাস্তবায়ন করবে, এ জন্য বিদেশ সফরে সব বিভাগের প্রতিনিধি রাখতে গিয়ে সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। তবে কোন দেশে যাবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে ইউরোপের কোনো একটি দেশে যেতে পারে। আর প্রস্তাব পাঠালেও পরিকল্পনা কমিশন যেহেতু অনুমোদন করেনি, তাই কমিশনের পরামর্শ মন্ত্রণালয় মেনে নেবে।
অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় উচ্চ বেতনে ৪ জন পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে এসব পরামর্শকের বিদেশ ভ্রমণেও বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শক ৪ জনের জায়গায় ২ জন নিয়োগ দিয়ে তাদের বিদেশ সফর বাতিল করার পরামর্শ দেয়। এ ছাড়া অন্যান্য কর্মকর্তাও বিদেশে শিক্ষা সফর কমিয়ে ১০০ থেকে ৩৬ জনে নামিয়ে আনার কথা বলে দিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সারা দেশের সব উপজেলায় তেলবীজ উৎপাদনের চিন্তা করা বাস্তবসম্মত নয়। এ জন্য আড়াই শ উপজেলাকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেখানে আনুপাতিক হারে প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
প্রকল্পে প্রস্তাবনায় বেশ কয়েকটি খাতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় যৌক্তিক হারে কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে পিইসি সভায় বলা হয়েছে, প্রকল্পে প্রস্তাবিত ভিডিও ক্যামেরা, ডিএসএলআর ক্যামেরা, পরামর্শকদের বিদেশে শিক্ষা সফর, আনুষঙ্গিক ব্যয়, প্রতিটি জেলায় উপপরিচালক কর্তৃক বছর শেষে মেন্টরিং ও ফলোআপ আলোচনা, আঞ্চলিক ও জেলা মনিটরিং টিম গঠন করে ডিএইর কার্যক্রম মনিটরিং করার নামে আলাদা অর্থ বরাদ্দ বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ বাতিলের ফলে এসব খাতও রাখার প্রয়োজন নেই বলে মনে করে কমিশন। অন্যদিকে গাড়ি কেনার প্রস্তাব করলেও ড্রাইভার নিয়োগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকায় ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, আমরা দেখেছি, প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে অহেতুক ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় যৌক্তিক হারে কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছি। পরামর্শ অনুসারে সংশোধিত ডিপিপি পাঠালে সেই অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট ভোজ্যতেলের চাহিদা ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে উৎপাদন হয়েছে মাত্র আড়াই লাখ টন, বাকি ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়েছে। দেশে তেল ফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ ভাগে তেল ফসলের আবাদ হয়। দেশে সামান্য পরিমাণ সয়াবিন উৎপন্ন হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। চসিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন অনেকটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও তাকে ঠেকাতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত নাছির মনোনয়ন পেলে চসিকে লড়াই হতে পারে নাছির-শাহাদাতের। এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। তবে বিএনপি গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেনি।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক বৈঠক শেষে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো চসিকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
চসিক নির্বাচনে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সে বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চসিক নির্বাচনে আ জ ম নাছিরকে ঠেকাতে একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। এ কারণে আ জ ম নাছিরবিরোধী বলয় এখন শক্তিশালী। ফলে এখন পর্যন্ত নাছিরের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ নৌকার টিকিট নাছিরের হাতে তুলে দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, একটি বড় শক্তি অবশ্য চান চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে। ওই শক্তির তদবিরের কারণে আ জ ম নাছির এখনো নিশ্চিত নন। আগামীকাল শনিবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখতে চান নাছির। গ্রুপ রাজনীতি নিয়ে নাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের নেতারা নাছিরের ওপর বিরক্ত। তিনি বলেন, তাদের দাবি নাছির হটাও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিটি করপোরেশনের অবিভাবক হিসেবে আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ না থাকলে স্থানীয় রাজনীতির পরস্পর বিরোধীরা নাছিরকে বন্দরনগরীর অবিভাবক হিসেবে আর দেখতে চান না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পার এই আশঙ্কায় দলটির মনোনয়ন বোর্ড নাছিরের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। আবার বিকল্পটিও ভাবা হচ্ছে, এখনই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতি কতটা কী হবে তা নিয়ে।
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের অন্তরের নেতা মরহুম এবিএম মহিউদ্দীন আহমেদের ছেলে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু প্রস্তাব নওফেল নাকচ করে দেওয়ায় আ জ ম নাছিরের বিকল্প কাকে বেছে নেওয়া হলে ভালো হবে
তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা দোটানায় পড়েছেন। তিনি বলেন, চসিকে নৌকা কার হাতে তুলে দেবেন সেটা চূড়ান্ত করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো এখানে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কথাও ভাবতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। তিনি বলেন, নাছিরের বাইরে নতুন কিছু নাম আলোচনায় এলেও স্থানীয় রাজনীতি তারা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সেটাও মাথায় নেওয়া হচ্ছে। ফলে কার হাতে নৌকা তুলে দেওয়া যায় সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো কেন্দ্র নিতে পারেনি।
সম্পাদকম-লীর আরেক সদস্য বলেন, আলোচনায় আ জ ম নাছির পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেও পেয়ে যেতে পারেন চূড়ান্ত মনোনয়ন। তিনি বলেন, মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে বসে নেই নাছির। সর্বোচ্চ দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি। ওই নেতা বলেন, অবশ্য মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চসিক মেয়র হিসেবে নাছির ও আবদুুুচ ছালাম দুজনের কাউকেই মনোনয়ন দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য ওই নেতা আরও বলেন, এখন সেই অবস্থানে নেই প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দলের নিয়ন্ত্রণ রাখার ব্যপারটিও আমলে নিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতি, তাদের চাওয়া-পাওয়া এসব বিবেচনা করে মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। স্থানীয় রাজনীতির বিরূপ প্রভাব যেন নির্বাচনে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা হবে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় ফরম বিতরণ শুরু হয়। গত বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ১৩ মেয়র ও ৩৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী।
বিএনপির যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী : ঢাকায় অবস্থানরত চট্টগ্রামের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্ভাব্য মেয়র পদে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও এরশাদ উল্লাহ।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে থাকা শাহাদাৎ গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এখন তারা কাকে চসিকের মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন তা দেখতে হবে। দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে ইচ্ছুক।’
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বক্কর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করছি। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।’
বিএনপির মেয়র পদে আলোচনায় থাকা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি তদবির করবেন না। তবে দল মনোনয়ন দিলে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।
শাহাদাতের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, চসিক নির্বাচন করার জন্য শাহাদাৎ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছেড়ে দিয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি হয়েছেন। সে লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি, চসিকে শাহাদাৎই দলের মনোনয়ন পাবেন।
গত সোমবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত। বৈঠক শেষে মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রামে যান। ঐদিন বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে চলমান সরকারবিরোধী এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এবং আসন্ন চসিক নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র নেওয়া ও জমা দেওয়ার সময় তফসিল ঘোষণার পর জানিয়ে দেওয়া হবে।
রোজিনা বেগম (ছদ্মনাম)। বয়স ৩৮ বছর। বাড়ি রংপুর। বছর তিনেক আগে পাড়ি জমান সৌদি আরব। যাওয়ার আগে আশা ছিল ভাগ্য খুললে হাল ধরবেন তার সংসারের। কিন্তু তার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে দালাল চক্র। চাকরির পরিবর্তে তাকে পাঠানো হয়েছে পতিতালয়ে। রিয়াদের একটি বাসার ভেতরেই এই ব্যবস্থা। বাঁচার জন্য দেশে ফিরতে আকুতি জানিয়েছেন রোজিনা। ভাগ্য ফেরাতে কুমিল্লার পারুল বেগম বছর দুয়েক আগে জেদ্দায় যান। তারও একই দশা হয়েছে। নির্যাতন ছাড়া তার ভাগ্যে আর কিছুই জুটছে না। তিনিও বাঁচতে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। রোজিনা ও পারুলের মতো সৌদিপ্রবাসী লাখো বাংলাদেশি নারীর দশা প্রায় একই।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্যানুযায়ী, সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা সেফ হোমগুলোতে গড়ে আড়াইশ নারীশ্রমিক আশ্রয় নিয়েছেন। গত চার বছরে অন্তত ছয় হাজার নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। ওইসব নারীর একটি বড় অংশ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। ২০১১ সালে ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশ সৌদি আরবে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
তার অন্যতম কারণ ছিল নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতন। এ অবস্থায় গত এক বছরে হাজারের বেশি নারী সৌদি থেকে ফিরেছেন এবং লাশ ফিরেছে ১১৯ জনের।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে সৌদি শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ ছিল। সরকার নানা দেনদরবার করে কয়েক বছর পরই সৌদি আরবে শ্রমবাজার চালু করে। আর এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সৌদি আরবে নারীশ্রমিক পাঠাতে রাজি হয়। কিন্তু নারীশ্রমিকদের পাঠিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। সৌদি আরবের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে মিনি পতিতালয় গড়ে তুলেছে ওই দেশের নিয়োগদাতা বিভিন্ন কোম্পানি। নারীশ্রমিকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি যারা দেশে ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে যৌন নির্যাতনের কারণে অনেকে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন অনেকেই। গত চার বছরে ২ লাখেরও বেশি নারীশ্রমিক পাঠানো হয় সৌদি আরবে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রিয়াদ ও জেদ্দায় দুটি ‘সেফ হোম’ আছে। যেসব নারীকর্মী বিপদে পড়েন, তাদের সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়। আবার অনেকে পরিবারের কথা চিন্তা করে নির্যাতন সহ্য করে চাকরি করছেন। অনেকে দেশে ফিরতে আকুতি জানান। যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাদের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছি।
সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রবাসে গিয়ে কষ্টের আয়ে যেসব নারীশ্রমিক বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন, তারা শিকার হচ্ছেন অমানবিক নির্যাতনের। আবার কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন লাশ হয়ে। সৌদিতে মালিকের অত্যাচারে অনেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুললেও লজ্জায় মুখ বন্ধ রাখেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ পরিবারের কথা চিন্তা করে নির্যাতন সয়ে থাকছেন। নিয়োগকর্তার মাধ্যমে যৌন নির্যাতন ও গর্ভধারণের জন্য আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে সৌদি আরবে। কাজ করতে গিয়ে নারীরা গড়ে ১৮ ঘণ্টার পরিশ্রম শেষে তিন বেলা খেতে পান শুধু শুকনো রুটি। তারা আরও জানান, দেশে ফেরত আসা নারী কর্মীদের ৬১ শতাংশ নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ১৪ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ৫২ শতাংশ নারীকে দীর্ঘ সময় জোরপূর্বক কাজে বাধ্য করা হয়। আর নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ৬৩ শতাংশ নারী। ৮৬ শতাংশ শ্রমিককে ঠিকমতো বেতন দেওয়া হয় না।
জেদ্দায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী দেশ রূপান্তরকে জানান, তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে এসেছিলাম। নির্যাতন সইতে না পেরে পালিয়ে এক বাংলাদেশির সহায়তায় তার বাসায় আশ্রয় নিই। ওই বাংলাদেশির স্ত্রী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেখানে খণ্ডকালীন চাকরি করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দালালদের মাধ্যমে এই দেশে আসি। এখানে আসতে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। একটি শপিং মলে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দালাল চক্র একটি বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসাটি সৌদি নাগরিকের। তারা প্রথমে অসামাজিক কাজ করার প্রস্তাব দেয়। প্রতিবাদ করলে মারধর শুরু করে। তিনি আরও বলেন, ওদের কথা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাকে কেনা হয়েছে। তাদের খুশিমতো কাজ করতে হবে। ওরা যখন যেটা ইচ্ছা তাই করতে বাধ্য করত। বাধা দিলেই চাবুক দিয়ে মারধর করত। ওই বাসাতে আরও কয়েকজন নারী আছে। তারা আমার সর্বনাশ করেছে। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে ওরা। আর এইজন্য সম্পূর্ণ দায়ী দালালরা। ১০ দিন থাকার পর এক গার্ডের সহায়তায় পালিয়ে আসি। খুলনার খালিশপুরের এক তরুণী কয়েক মাস আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সৌদি আরবে নির্যাতনে তার ছোট বোন মারা গেছেন। লাশ আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম, মক্কা, মদিনাসহ আরও কয়েকটি স্থানে ১৫ থেকে ১৬ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। তার মধ্যে নারীশ্রমিকরা খারাপ অবস্থায় আছেন। আসলে বাংলাদেশের দূতাবাসের লোকজন শ্রমিকদের খোঁজ নিচ্ছেন না। কোম্পানির লোকজন বেশিরভাগ শ্রমিকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। আর বাংলাদেশের দালালরা বেশি সক্রিয়। তাদের সঙ্গে সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে এসব বেশি হচ্ছে।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট শুরুর অনেক দিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটাররা। এক মাসেরও বেশি সময় তারা পরিবারছাড়া। বুধবার দেশে ফিরে হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমীর সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন তারা। মিরপুরে ট্রফি হাতে বিশ্বকাপজয়ী উল্লাসের পুনরাবৃত্তি করেছেন আরও একবার। তবে তাদের চোখে-মুখে ছিল পরিবারের কাছে ফেরার আকুতি। গতকাল বৃহস্পতিবার যে যার বাড়িতে ফিরেছেন দামাল ছেলেরা। সেখানেও পেয়েছেন সংবর্ধনা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের বাড়ি ফেরার ক্ষণ তুলে এনেছেন দেশ রূপান্তরের জেলা প্রতিনিধিরা রংপুরবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত আকবর
সকাল থেকে প্রধান সড়কের দু’ধারে হাজারো কৌতূহলী মানুষ। কেউ হাত উঁচিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন, কেউবা ফুল ছিটিয়ে। আবার কেউ কেউ গাড়ির বহর দাঁড় করিয়ে জানিয়েছেন ফুলেল শুভেচ্ছা। এভাবেই নিজের জেলায় ফিরেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক আকবর আলী।
ঢাকা থেকে রওনা হয়ে দুপুর ১২টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছান ‘আকবর দ্য গ্রেট’। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমানসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের সুধীজন। পরে তাকে মোটরসাইকেল ও গাড়ির বিশাল বহরে রংপুরে নিয়ে আসা হয়। পথের
বিভিন্ন স্থানে ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানান হাজার হাজার মানুষ।
নগরের মেডিকেল মোড় থেকে মডার্ন মোড় হয়ে শহরের ভেতর দিয়ে গণসংবর্ধনার স্থান পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে গাড়িবহরে আকবরকে নিয়ে ৪৫ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। তাকে একনজর দেখার জন্য নারী, শিশু, পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়েছিল।
পরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে পুলিশের সুসজ্জিত বাদ্যযন্ত্রের সুরে ও রংপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমির শিশু-কিশোররা ফুল ছিটিয়ে আকবর আলীকে বরণ করে নেয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা ও বড় ভাই মুরাদ হোসেন। বেলা ৩টার পর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে নির্মিত মঞ্চে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়।
রংপুরবাসীর উদ্দেশে আকবর বলেন, ‘রংপুরবাসী আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছে তা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি যাতে সুস্থ হয়ে ভালোভাবে খেলতে পারি তার জন্য রংপুরবাসীসহ সারা দেশের কাছে দোয়া চাই।’
ছেলের অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় আকবরের মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘আকবর দেশের জন্য খেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা তার হাত ধরেই আসল। এটা আমাদের জন্য গর্বের। দেশবাসীর কাছে আমার ছেলেসহ অন্য খেলোয়াড়দের জন্য দোয়া কামনা করছি। তারা যেন সামনের দিনে এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে।’
বিকেল ৪টায় আকবরের গাড়িবহর ছুটে যায় পশ্চিম জুম্মাপাড়ার দিকে। নিজের পাড়ায় ঢোকার পথে নগরের সিটি বাজারের পাশে কৈলাশ রঞ্জন স্কুল গেটের সামনে থেকে আবারও ফুলেল শুভেচ্ছা পান আকবর।
চাঁদপুরে জয়-শামিম
আকবর আলীর মতো বিমানে চড়ে দ্রুত নিজ জেলায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না মাহমুদুল হাসান জয় ও শামিম হোসেনের। লঞ্চে করে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ যেতে হয়েছে দুজনকে। তাদের বরণ করতে সকাল থেকেই উৎসুক জনতার ভিড় ছিল লঞ্চঘাটে। দুই ক্রিকেটার সেখানে পৌঁছালে ভক্ত, সমর্থক ও ক্রিকেটপ্রেমীরা বরণ করে নেন তাদের। দামাল দুই বীরকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন চাঁদপুরবাসী। চাঁদপুর পৌরসভা, চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিশ্বজয়ী দুই টাইগারকে সঙ্গে নিয়ে শহরে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। বিশ্বকাপ জয়ে সন্তানদের অবদান থাকায় আনন্দে আত্মহারা তাদের পরিবারের সদস্যরা। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আগামীতে যেন জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেন সে জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছে শামিম ও জয়ের পরিবার। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে দুই যুবা টাইগার বলেন, ‘দেশবাসীর দোয়া আমাদের সঙ্গে ছিল বলে আমরা এত ভালো করতে পেরেছি। একসঙ্গে আমরা অনেক দিন খেলে আসার ফল পেয়েছি। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম ভালো কিছু করার ব্যাপারে। ভবিষ্যতেও ভালো ক্রিকেট খেলতে যেন পারেন সে জন্য সবার কাছে দোয়া চান তারা।’ চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, জয় ও শামিমকে অচিরেই বর্ণাঢ্য আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
শরিফুল পৌঁছালেন মৌমারী
পঞ্চগড়ের ছেলে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামের বাড়ি দেবীগঞ্জের দ-পাল ইউনিয়নের মৌমারী গ্রামে পৌঁছান। এর আগে বিমানে করে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে আসেন। সেখান থেকে বাবা-মা ও এলাকার মানুষ শোভাযাত্রা করে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। গ্রামের মৌমারী বাজারে পৌঁছালে এলাকাবাসী বাদ্য-বাজনায় তাকে বরণ করেন। এলাকার মানুষ ও শিক্ষকরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ক্রিকেট ভক্তরা শরিফুলের বাড়িতে ভিড় করেছেন এবং দিনভর চলছে মিষ্টি খাওয়া আর আনন্দ উল্লাস। সংবর্ধনার জবাবে শরিফুল বলেন, ‘বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর দোয়া ও ভালোবাসায় এতদূর এসেছি। ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলতে চাই। ভালো ক্রিকেট খেলে এলাকা ও দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শরিফুলকে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।
প্রান্তিক কৃষক দুলাল মিয়া ও বুলবুলি বেগম দম্পতির ৪ ছেলেমেয়ের মধ্যে শরিফুল দ্বিতীয়। তার বাবা জানান, আর্থিক সংকটের কারণে এক সময় তারা সাভারের জিরানী বাজারে চলে যান। সেখানে রিকশা চালাতেন তিনি। জিরানীবাজার গোহালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে শরিফুল। পরবর্তীতে ২০১০ সালের দিকে আবারও গ্রামে চলে যান দুলাল মিয়া। জানান, ‘শরিফুলের লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি খুবই ঝোঁক ছিল। স্কুল ফাঁকি দিয়ে মাঠে মাঠে ক্রিকেট খেলত। আজ সে দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছে, যাতে আমি খুবই খুশি।
মাশরাফীর শহরে অভিষেক বরণ
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার এলাকার ছেলে অভিষেক দাশকেও বরণ করে নিলেন নড়াইলবাসী। নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে গতকাল ১২টার দিকে যশোর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান অভিষেক। সেখানে বাবা অসিত দাস, মা অরুণা দাসসহ পরিবারের সদস্যরা অভিষেককে মালা পরিয়ে বরণ করে নেন। সেখান থেকে গাড়িতে করে যাত্রা করেন নড়াইলের উদ্দেশে। নড়াইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নড়াইল-যশোর সড়কের গাবতলা এলাকায় শতাধিক মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার নিয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ বিপুলসংখ্যক ক্রিকেটপ্রেমী তার অপেক্ষায় ছিলেন। অভিষেক পৌঁছালে তাকে নিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংসদ সদস্য মাশরাফীর বাড়িতে যান তারা। এ সময় মাশরাফীর মা হামিদা বেগম ও বাবা গোলাম মোর্ত্তজা স্বপন অভিষেককে মিষ্টিমুখ করান। পরে অভিষেককে তার বাড়ি শহরের বাঁধাঘাট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেওয়া সংবর্ধনার জবাবে অভিষেক বলেন, ‘আরও ভালো কিছু অর্জনের জন্য চেষ্টা করে যাব। আপনারা আমাকে আশীর্বাদ করবেন, আমি যেন এর থেকে ভালো কিছু অর্জন করতে পারি। বাংলাদেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।’
বগুড়ায় হৃদয়-তামিম
ঢাকা থেকে সড়কপথে বেলা ১২টার দিকে বগুড়া শহরের বনানীতে পৌঁছালে তৌহিদ হৃদয় ও তানজিদ হাসান তামিমকে ফুল দিয়ে ও মিষ্টি খাইয়ে অভ্যর্থনা জানান ক্রীড়া সংস্থার লোকজন ও স্থানীয় ক্রিকেটভক্তরা। এ সময় তামিম সবার উদ্দেশে বলেন, ‘বিশ্বকাপ জয় শুধু আমাদের নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিজয়। আমাদের জন্য এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দোয়া করবেন।’ পরে দুই ক্রিকেটারকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেনু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল।
সিলেটে সাকিব বরণ
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলে সিলেটের একমাত্র সদস্য তানজিম হাসান সাকিবকেও তার জেলায় স্বাগত জানানো হয় সাড়ম্বরে। সিলেটের বালাগঞ্জের সন্তান তানজিম হাসান বৃহস্পতিবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। এ সময় সাকিবের মা সেলিনা পারভিন, বাবা গৌছ আলীসহ আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। সাকিব বিমানবন্দরে এসে তার মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কান্না শুরু করেন। এসময় সাকিবের মা বলেন, ‘আমার এই ছেলে এখন কেবল আমার নয়, সারা বাংলাদেশের। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন’।
সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বকাপ জিতে সাকিবরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাদের এই কীর্তি জাতি আজীবন মনে রাখবে। তিনি বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলকে সিলেটে সংবর্ধনা দেওয়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের করা ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলাটি গ্রহণ করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ উৎপল ভট্টাচার্য মামলাটি গ্রহণ
করে শাজাহান খানকে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দেন। এদিন আদালতে মামলার গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত ওই আদেশ দেয় বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. রেজাউল করিম।
এর আগে গত বুধবার একই আদালতে ওই মামলাটি করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর ইলিয়াস কাঞ্চন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তিনি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এটি করতে গিয়ে তিনি নানা ধরনের হুমকির মুখোমুখি হন। ২০১৮ সালে ঢাকায় দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়। যার প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। এরপর বিবাদী শাজাহান খানের নেতৃত্বে মালিক ঐক্যপরিষদ সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। তখন শাজাহান খানের প্ররোচনায় দেশের সব বাস টার্মিনালে ইলিয়াস কাঞ্চনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পরে গত বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর শুরু হয়। এর পরদিন শাজাহান খানের প্ররোচনায় বাস ও কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। ওইদিন শাজাহান খানের প্ররোচনায় ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিকা ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়।
মামলায় ইলিয়াস কাঞ্চন উল্লেখ করেন, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে জেলা মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে তার (ইলিয়াস কাঞ্চন) সম্পর্কে শাজাহান খান বলেন, ‘আপনি যে বিদেশিদের কাছ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন, আপনি কয়টা প্রতিষ্ঠান করেছেন? কয়টা স্কুল করেছেন? কতজন মানুষকে টেনে নিয়েছেন? ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান এবং সেখান থেকে নিজের নেতৃত্বে বধূর নামে লাখ লাখ টাকা নেন। সেই হিসাব আমি জনসমক্ষে তুলে ধরব। নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে বিদেশিদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ইলিয়াস কাঞ্চন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অবৈধ অর্থ দিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যবসা ও স্কুল করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন একজন জ্ঞানপাপী।’ শাজাহান খানের এই বক্তব্য পরদিন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য শাজাহান খান তার সম্পর্কে মনগড়া ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। পরে ওই বক্তব্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের জন্য শাজাহান খানকে আলটিমেটাম দেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও শাজাহান খান তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি।
প্রায় কোটি টাকা দামের পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স জিপ গাড়ি পাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। তাদের জন্য ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে ৫০টি নতুন গাড়ি কিনছে সরকার। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে গাড়িগুলো কেনার একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে ইউএনওদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাবসহ মোট পাঁচটি প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ইউএনওদের জন্য ৫০টি জিপ গাড়ি কেনার একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব গাড়ি কেনা হবে।
গাড়ির দাম জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বৈঠকে উপস্থাপিত ক্রয় প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ৯৪ লাখ টাকা। এতে আরও বলা হয়, সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ইউএনওদের সরকারি ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জিপ গাড়ি ক্রয় করে বরাদ্দ দিয়ে আসছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, পুরনো জিপগুলোর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় তা মেরামত করে প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় গতিশীলতা আনতে ব্যাহত হচ্ছে। এসব গাড়ির বদলে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে নতুন ৫০টি জিপ গাড়ি কেনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে ইউএনওদের জন্য ৫০টি পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স জিপ গাড়ি সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনা হবে। ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ৯৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৫০টির মূল্য দাঁড়াবে ৪৭ কোটি টাকা।
বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় এলইডি সড়কবাতি সরবরাহ ও স্থাপনে একটি প্রস্তাবেও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতে ব্যয় হবে ৩৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
বৈঠকে জরুরি প্রয়োজনে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ পারসোনালাইজড ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মহেশখালী, মাতারবাড়ী এবং বাঁশখালী এলাকায় নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের প্রস্তাবেও বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বৈঠকে চট্টগ্রামে রেলের পরিত্যক্ত জমিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ স্থাপনে একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৪৮৬ কোটি টাকা। ছয় একর জায়গার মধ্যে নতুন এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে সিমিত চন্দ্র (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সিমিত চন্দ্র বেলগাছা গ্রামের মানিক চন্দ্র ড্রাইভারের ছেলে। অভিযুক্ত কিশোর (১৬) একই গ্রামের প্রদীপ চন্দ্রের (দর্জি) ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের গীতা সংঘ অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিমিত ও তার বড় ভাই। সিমিতকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে বাড়িতে ফেরে তার বড় ভাই। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সিমিতের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় সিমিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে তাদের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের গর্তে সিমিতের মরদেহ পুতে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সিমিত বাড়িতে না ফিরলে স্বজনরা তার খোঁজে বের হয়। অভিযুক্ত কিশোরকে সিমিতের বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে অসংলগ্ন আচরণ করে। পরে তার বাবা প্রদীপ চন্দ্র তাদের পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের একটি গর্তে সিমিতের মরদেহ দেখিয়ে দেন। বুধবার ভোরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আটক কিশোরের স্বীকারোক্তিতে সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে সিমিতসহ অনেকেই ওই কিশোরকে খোঁচা দিত। গত রাতে সিমিত ওই কিশোরের সাথে এ নিয়ে আবারও খোঁচা দিলে সে সিমিতের গলা চেপে ধরে। এত শ্বাসরোধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।