ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা প্রত্যাহারে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল মার্কিন সিনেট। ইয়েমেন ইস্যুতে রেজ্যুলেশনের জন্য বুধবার ভোটাভুটির মাধ্যমে একমত হন সিনেটররা।
আলজাজিরা বলছে, সিনেটররা ৬৩-৩৭ ভোটে ইয়েমেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষে সিদ্ধান্তের দেন।
আরেক দফা ভোটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত পাস হয়ে গেলে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি জোট থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সকল ধরনের সমর্থন-সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে।
গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার ঘটনা এবং এর পরবর্তী অনুসন্ধান ও সমালোচনার ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত নিল মার্কিন সিনেটররা।
একাধিক সিনেটর সাংবাদিকদের জানান, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের অবস্থানে তারা সন্তুষ্ট নন। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকেই দায়ী করেন।
এদিন এক রুদ্ধদ্বার শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস সিনেটকে জানান, খাসোগি ইস্যুতে মার্কিন-সৌদির বন্ধুত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে বড় ধরনের ভুল হবে।
তারা এই প্রক্রিয়ার পক্ষে একমত না হতে সিনেটরদের বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাদের মতে, ইয়েমেনে সৌদি জোটের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিলে সেখানকার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটবে এবং যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাও ব্যাহত হবে।
শুনানি অধিবেশনে সিআইএ’র পরিচালক জিনা হাসপেল উপস্থিত ছিলেন না। তুরস্কের দেওয়া খাসোগি হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ড শুনেছিলেন তিনি এবং এ ঘটনার অন্যান্য তথ্য-প্রমাণও তার কাছে এসেছে। এজন্য শুনানিতে তিনি না থাকায় সিনেটররা তীব্র সমালোচনা করেন। জিনার অনুপস্থিতিকে ‘ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা’ বলেও সমালোচনা করেন একজন সিনেটর।
এদিকে সিনেটের এই সিদ্ধান্তকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি রাজপরিবারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সৌদি আরবকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ উল্লেখ করে মধ্যপ্রাচ্যের এ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বানও এড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
শুরুর দিকে এই রেজ্যুলেশন আনার বিপক্ষে থাকা কয়েকজন সিনেটর পরবর্তীতে পক্ষে ভোট দেন। তাদের একজন ডেমোক্রেটিক সিনেটর বব মেনেনদেজ। তার মতে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও চরম অমানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য সৌদি আরবকে কড়া বার্তা পাঠানোর এখনই সময়।
তবে ইয়েমেন যুদ্ধ অবসানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে ‘অনুপযুক্ত সময়ে’ ভোটাভুটি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পম্পেও। কিন্তু এই ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা বন্ধে এখনই উপযুক্ত সময়।
তিনি আরো বলেন, এই যুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে অনাহারী ৮৫ হাজার শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি। জাতিসংঘের মতে, লাখ লাখ মানুষ অনাহারে ভুগছে। সুপেয় পানির অভাবে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে। নতুন করে ১০ হাজার কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তিন বছর আগে ইয়েমেনে স্বৈরাচারী ও অসৎ নেতৃত্বে সৌদি জোটের অভিযানের ফলেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
রেজ্যুলেশনের কো-স্পন্সর রিপাবলিকান সিনেটর মাইক লি এ যুদ্ধে মার্কিন সমর্থনের জন্য বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুজনেরই সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ইয়েমেনে দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ যুদ্ধ। আর যুক্তরাষ্ট্রের একজন ডেমিক্রেটিক প্রেসিডেন্ট (বারাক ওবামা) আমাদেরকে তাদের সে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছিলেন আর এখন একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) সেই সমর্থন ধরে রেখেছেন।