হত্যা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি তিনি। পুলিশ তাকে খুঁজে না পেলেও খোদ থানায় বসে ওসির সঙ্গে দুই দিনে দফায় দফায় সালিস বৈঠক করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ছলিমাবাদ ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ইকবাল হোসেন। থানার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়ও রয়েছে তার নাম।
থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছলিমাবদ ইউনিয়নের পাইকারচর গ্রামে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ গার্মেন্টসকর্মী গোলাপ মিয়াকে প্রকাশ্যে টেঁটাবিদ্ধ ও পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় গোলাপের ভাই ফারুক হোসেন বাদী হয়ে ৪২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার অন্যতম আসামি ইকবাল হোসেন।
একই সূত্র জানায়, মামলার চার্জশিটেও রয়েছে ইকবাল হোসেনের নাম। এই মামলায় তিনি কখনো আদালতে হাজিরা দেননি। গত ৬ বছর এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রকাশ্যে। আদালত থেকে তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ইকবাল হোসেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা সদরের বিভিন্ন দপ্তর ও থানা। নিয়মিত সালিস বৈঠক করছেন বিভিন্ন জায়গায়। অথচ পুলিশ বলছে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় তিতাস নদী থেকে উত্তোলিত বালি ব্যবসার বিরোধ মেটাতে ইকবাল হোসেন, ছলিমাবাদ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য অলি মিয়াসহ আরো কয়েকজন থানার হলরুমে দুপুর ১২টা থকে ৩টা পর্যন্ত সালিস বৈঠকে বসেন অফিসার ইনচার্জ মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী ও পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান তালুকদার।
রাতে আবারো ওসির কক্ষে বৈঠক করেন ইকবাল ও অলি মিয়া। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় বুধবার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আবারো ওসির কক্ষে তারা বৈঠকে বসেন।
এই বৈঠকের খবর এলাকায় জানাজানি হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ইকবাল হোসেন জানান, ‘গোলাপ হত্যা মামলায় আমি আসামি। মামলাটি মীমাংসার পর্যায়ে রয়েছে। ওসি স্যার আমাকে ও অলি মেম্বারকে থানায় ডেকে আমাদের মধ্যে বালি ব্যবসা নিয়ে যে বিরোধ তার মীমাংসা করে দিয়েছেন’।
গোলাপ হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি ‘এগুলি (পরোয়ানা) লুকিয়ে রেখেছি’ বলে ফোন কেটে দেন।
ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ৬নং ওয়ার্ড সদস্য অলি মিয়া জানান, ‘সরকারি ড্রেজার দিয়া আমার জমিন ভরাট করছি। তাতুয়াকান্দির ইকবাল আমার কাছে টাকা চায় বালুর জন্য। আমি টাকা না দেওয়ায় থানায় অভিযোগ করছে। ওসি সাব (সাহেব) মঙ্গলবার ও বুধবার আমাদের দুই পক্ষরে ডাকাইয়া বৈঠক করছে। গোলাপ হত্যা মামলার আমরা দুইজনই আসামি। তবে ইকবালের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে।’
গোলাপ হত্যা মামলার বাদী ফারুক হোসেন জানান, ‘আমাদের জমি অন্যরা দখল করে নিয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করায় আমার ভাইকে ইকবাল, জয়নালরা টেটাঁবিদ্ধ ও পিটিয়ে হত্যা করে। ইকবাল ও জয়নালের নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। এরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। আমি আড়াই বছর এলাকায় যাই না। ভাইকে মেরে ফেলেছে, যদি আমাকে মেরে ফেলে এই ভয়ে’।
বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি সালাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘তাতুয়াকান্দির ইকবাল ও অলি মেম্বারের মধ্যে বালি ব্যবসা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। আমি তাদের ডেকে থানায় বসেছিলাম বিষয়টি মীমাংসা করতে। ইকবালের নামে ওয়ারেন্ট আছে আমার জানা নেই। জানলে তাকে আটক করতাম’।