শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

উচ্চতর কেশ সজ্জার প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরলেন দুই হিজড়া

আপডেট : ০২ মার্চ ২০১৯, ০৮:৫৯ পিএম

তৃতীয় লিঙ্গের দুই সদস্য শাম্মি ও নিশাত কলকাতায় জাভেদ হাবিব অ্যাকাডেমিতে ‘উচ্চতর কেশ সজ্জা’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে শনিবার দেশে ফিরেছেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান উত্তরণ ফাউন্ডেশন ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা। গত ৩০ জানুয়ারি শাম্মী ও নিশাত ভারতে যান।

বিমানবন্দরে নেমে নিশাত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন-আমরা উত্তরণ ফাউন্ডেশনের নিকট কৃতজ্ঞ। এসময় তারা পুলিশের ডিআইজি হাবিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দেখিয়ে দেব, আমরাও মানুষ, আমরাও পারি’।

শাম্মী বলেন- কয়েক বছর ধরে ঢাকার আশুলিয়ায় উত্তরণের ১নং বিউটি পারলারটি পরিচালনা করে আসছি। ইতিমধ্যে অনেকের কাছে বিউটিশিয়ান হিসেবে আমার বেশ জনপ্রিয়তাও বেড়েছে, কিন্তু যে কাজগুলোকে আমি এতদিন সঠিক বলে জানতাম সেই কাজগুলোর মধ্যে যে এত ছোট ছোট ভুল ছিল তা এই প্রশিক্ষণে না গেলে বুঝতেই পারতাম না। এখন নিজেকে প্রচণ্ড রকমের আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। আর কখনোই পিছে পড়ে থাকব না। হাবিব স্যারের স্বপ্ন পূরণ করে সবাইকে দেখিয়ে দেব।

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসেন ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান । তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’। বেদে সম্প্রদায়কে সাড়ে চার’শ বছরের গ্লানিময় জীবন থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে এই সংগঠনটি, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের সাহায্যেও এগিয়ে আসে ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’।

ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হিজড়াদের জন্য আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪টি উত্তরণ বিউটি পারলার স্থাপন করা হয়েছে। উত্তরার কামারপাড়া, গাইবান্ধার ডেভিড কোম্পানি পাড়ায় এবং রাজবাড়ী সদরে ৩টি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার মগবাজারে ট্রেনিং সেন্টার ও বুটিক হাউস, উত্তরার ডিয়াবাড়ীতে মিনি গার্মেন্টস, উত্তরা রাজউক মার্কেট ও তুরাগে টেইলার্স, ধামরাই বাজারে ১টি বুটিক হাউস স্থাপন করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলোতে আরও সদস্যর কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন-২০১৩ সালে সরকার হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে বুকে টেনে নিয়ে সাম্যের বলিষ্ঠ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তবে এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতি আমাদের সমাজের মানুষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নন। এখনো অনেকেই তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখেন, অবজ্ঞা করেন। অথচ তারা কেউই শখ করে হিজড়া হননি। প্রকৃতির নিয়মে সমাজের যে কেউই তাদেরই একজন হতে পারতেন। যে কারওরই জীবন হতে পারত এমন অভিশপ্ত ও গ্লানিময়, যাদেরকে বলা হতে পারত সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীরই একজন।

তিনি বলেন, হিজড়াদের সমাজেরই একজন মনে করতে হবে, আর সকল মানুষের মতো তাদেরকেও ভালোবাসতে হবে। তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, ওরা আমাদেরই কারও না কারও ঘরেরই সন্তান।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত