শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

মিয়ানমারে দুই পক্ষের সঙ্গেই খেলছে চীন

  • চীন একদিকে জান্তাকে সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে অন্যদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সশস্ত্র করছে
  • লাউক্কাইকে উত্তর মিয়ানমারের অপরাধের রাজধানী বানিয়েছে চীনা গ্যাং
  • চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অনেক সদস্য সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচারসহ অবৈধ ব্যবসায় যুক্ত
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৮ পিএম

চলতি বছর মিয়ানমারের সরকারবিরোধী বাহিনী লাউক্কাইয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের কাছে অর্ধশতাধিক ঘাঁটি হারিয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা। কোকাং অঞ্চলের রাজধানী লাউক্কাইয়ের সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। মূলত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের (মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, আরাকান আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির জোট) কাছে শহরটির দখল হারানোর পর অঞ্চলটিতে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব নিয়ে নেপিডোর শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়।

দীর্ঘদিন ধরে জান্তাকে সমর্থন দিয়ে আসা চীন এখন দুই পক্ষের সঙ্গেই খেলছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বেইজিংয়ের সমর্থন ছাড়া থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের পক্ষে শহরটি দখল করা অসম্ভব ছিল। জান্তার সঙ্গে চেক-অ্যান্ড-ব্যালেন্সের খেলা টিকিয়ে রাখতে চীন বিদ্রোহী বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে।

চীন একদিকে নেপিডোকে সামরিক সরঞ্জাম ও বিমান সরবরাহ করছে; অন্যদিকে আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির মতো বিদ্রোহী বাহিনীকে ক্রমাগত সশস্ত্র করছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন বেইজিংই এই তিনটি গোষ্ঠীকে জান্তার বিরুদ্ধে জোট হতে সহায়তা করেছে।

সম্প্রতি থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স উত্তর সীমান্তে একটি বড় অংশ দখল করেছে। এটি কাকতালীয় নয়, কারণ চীন এই অঞ্চলে শতাধিক ক্যাসিনোসহ কসাইকেন্দ্র পরিচালনা করছে। অঞ্চলটিতে প্রভাবশালী চীনা গ্যাংয়ের কারণে লাউক্কাই উত্তর মিয়ানমারের অপরাধের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। জুয়ার আসর থেকে শুরু করে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র চোরাচালান এসব সশস্ত্র চীনা গ্যাংয়ের প্রভাবে অন্য মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।

গত এক বছরে জান্তা এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করেছে। একইসঙ্গে এই চীনা গ্যাং এবং অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) অনেক সদস্যদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংযোগ রয়েছে। সীমান্তবর্তী ইউনান এবং সিচুয়ান প্রদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত সিসিপি সদস্যদের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা এসব কার্যক্রমে জড়িত হতে বাধ্য হয়। অন্যত্থায় তাদের স্থানান্তরিত হতে হয়।

আরেকটি ব্যবসায় সিসিপি সদস্যদের অনেকেই জড়িত তা হলো মাদক পাচার। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের অংশ হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চোরাচালান হওয়া মাদকের ৫০ শতাংশেরও বেশি মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে যায়। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মিয়ানমার বিশ্বের বৃহত্তম আফিম উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে, যার আনুমানিক উৎপাদন বছরে এক হাজার টনেরও বেশি।

বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন অনুসারে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অনেক সদস্য এবং তাদের সহযোগী ও স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে মাদকের চাষ ও চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। বেইজিং এদের সম্পর্কে সচেতন কিনা অথবা মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো প্রভাবশালী জড়িত থাকায় বেইজিং প্রশাসনকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রাখে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

জান্তা আশঙ্কা করছে মাদক চোরাচালান থেকে যে লাভ হয়েছে, তা অবৈধ অস্ত্র আমদানিতে ব্যবহার করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। যদিও এসব চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং ভূ-রাজনৈতিক খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিয়ানমারের জনগণ। ২০২১ সাল থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।

মিজিমা নিউজ থেকে সংক্ষেপিত

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত