একাকিত্ব বড়দের জন্যই ভালো না সেখানে ছোটদের অবস্থা কল্পনা করা তো প্রায় অসম্ভব। একটি শিশু জন্মানোর পর থেকে মায়েরা বেশিরভাগ সময়টাই তাদের সঙ্গে কাটান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মায়েদের ব্যস্ততাও বাড়তে থাকে।
বিশেষ করে চাকুরীজীবী হলে মেটারনিটি লিভ শেষে মায়েদের কাজে যোগ দেওয়ার পর শিশুর মধ্যে একাকিত্ব বাড়তে থাকে। ছোট পরিবারে শিশুকে দেখার জন্য পরিবারের সদস্যদের অভাব আজকের যুগে সাধারণ ব্যাপার। অগত্যা কাজের লোক অর্থাৎ ন্যানির উপর ভরসা করেই বাবা-মাকে অফিস ছুটতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত ৭ মাসের প্রথম দিক থেকেই শিশুর মধ্যে একাকিত্বের নানা লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। ৯ মাস বয়স থেকে সেই সমস্যা গুরুতর হতে শুরু করে। আর ১০ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে অবস্থা পৌঁছতে পারে চরম পর্যায়ে।
সাধারণত ২ বছর বয়সের মধ্যেই শিশু বিচ্ছেদ উদ্বেগে ভুগতে থাকে। নতুন মায়ের পক্ষে সবসময় এই সমস্যা বুঝতে পারা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু যদি শিশুর মধ্যে কয়েকটি বিশেষ লক্ষণ দেখতে পান তা হলে সচেতন হোন।
একাকিত্ব শিশুদের মানসিক ও আবেগিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কিছু লক্ষণ দেখলে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি। নিচে একাকিত্বের কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
শারীরিক লক্ষণ:
১. খাওয়াদাওয়ার প্রতি অনাগ্রহ বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
২. ঘুমের সমস্যা, যেমন অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম।
৩. অসুস্থ লাগা বা বারবার অসুস্থতার কথা বলা।
আচরণগত লক্ষণ:
১. একা সময় কাটানোর প্রবণতা বা অন্যদের থেকে দূরে থাকা।
২. মেজাজের পরিবর্তন, যেমন সহজেই রাগ হওয়া বা কান্নাকাটি।
৩. অতিরিক্ত ফোন, টিভি বা গেমের প্রতি আসক্তি।
৪. স্কুল বা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারানো।
সামাজিক লক্ষণ:
১. বন্ধুবান্ধব না থাকা বা বন্ধুত্ব করতে না পারা।
২. পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে না চাওয়া।
৩. সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনাগ্রহ।
মানসিক লক্ষণ:
১. আত্মবিশ্বাসের অভাব।
২.নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা।
৩.বারবার একাকিত্ব বা বিষণ্নতার কথা বলা।
যেসব লক্ষণ দেখা দেয়:
১. অন্যান্য শিশুদের থেকে আপনার সন্তান বেশি কান্নাকাটি করলে বা ঘন ঘন কাঁদলে সজাগ হোন। পেট ভর্তি কিংবা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পরেও যদি শিশু কান্নাকাটি চালিয়ে যায় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
২. শিশু যদি বাবা-মায়ের সঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে বেশি সময় ধরে খেলতে চায় বা তাদের আঁকড়ে ধরতে চায় তা হলে বুঝবেন সে একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
৩. শিশু যদি তার বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে বাবা-মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে, তা হলেও সচেতনতা প্রয়োজন।
৪. ন্যানি কিংবা বাবা-মা ঘর থেকে বের হয়ে গেলেই যদি শিশু কান্নাকাটি শুরু করে, তাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে বা রাত জেগে কান্নাকাটি করে, তা হলে বুঝবেন সে একা থাকতে চাইছে না।
৫. অপরিচিতদের দেখে শিশু যদি উত্তেজিত হয়ে পড়ে, কিংবা নিয়মিত যাদের সে দেখছে তাদের দেখে লাজুক আচরণ করে তা হলেও তা শিশুর একাকিত্বের লক্ষণ হতে পারে।
৬. একাকিত্বে ভুগতে থাকা শিশুর ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিংবা বাবা-মাকে ছাড়া সে ঘুমোতে নাও চাইতে পারে।
অবশ্য এইসব লক্ষণ শুধু মানসিক নয়, শিশুর শারীরিক অসুস্থতা থেকেও হতে পারে। তাই না জেনে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার চাইতে, শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বেশি প্রয়োজন। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে শিশু একাকিত্ব কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবে।