উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলেও সংগীতচর্চার বদৌলতে পরিচিত হয়ে উঠেছেন আফ্রিকার সংগীত অঙ্গনেও! গান করেছেন সেখানকার স্থানীয় শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়নপ্রাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় গায়ক এসজাভার সঙ্গে একাধিক গান করে পেয়েছেন শ্রোতাপ্রিয়তাও। ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতিতে কীভাবে মিশে গেলেন জুয়েল চৌধুরী? সেই সব গল্প নিয়ে সংগীতশিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন অনন্যা সুগরা
বর্তমান ব্যস্ততা?
দীর্ঘদিন পর এসজাভার সঙ্গে আবারও গান করেছি। এরই মধ্যে গানের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন এই গানটির নাম ‘স্থান্ডাসাম’। যার ইংরেজিতে অর্থ ‘লাভার’। আগামী দুই-তিনমাসের মধ্যে গানটি রিলিজের পরিকল্পনা আছে। গানটি আমি গেয়েছি ইংরেজিতে, এসজাভা গেয়েছে জুলু ভাষায়। হিপহপ ফিউশনধর্মী গান।
গানের শুরুটা কীভাবে হলো?
আমার পুরো পরিবার সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত। বড় বোন, ভাইয়েরা ছিলেন সংস্কৃতিমনা। কেউ গান করত, কেউ আবার অভিনয়। গানের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমি পারিবারিক সূত্রেই পেয়েছি। শুরুটা হয়েছে কচিকাঁচার আসর দিয়ে। তারপর আমি ১৯৭৯ সালে প্রথম বিটিভিতে পারফর্ম করি। অভিনয়ও করেছি। বিটিভিতে প্রচারিত সেই সময়ের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কোন কাননের ফুল’-এও অভিনয় করেছি। তবে গানের প্রতিই আমার প্রধান আকর্ষণ। সেই আগ্রহ থেকেই ব্যান্ড মিউজিক শুরু করি ১৯৮২ সাল থেকে। ৮৪-৮৬ এর দিকে ‘মিউজিক টাচ’-এর সঙ্গে বেইজ গিটারিস্ট হিসেবে জড়িত ছিলাম। নব্বইয়ের শুরুতে বহু ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও গান করেছি আমি।
ছোটবেলা থেকেই হিপহপ গান শুনতেন?
আমি যখন দেশে থাকতাম তখন হার্ড রককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে শুনতাম। কিন্তু আফ্রিকা যাওয়ার পর সেই রুচির পরিবর্তন ঘটে। দেশে থাকতে আফ্রিকান মিউজিকের প্রতি আকর্ষণ ছিল। বব মার্লে আমার পছন্দের শিল্পী। হার্ড রক শুনে বড় হয়েছি, কিন্তু সশরীরে এখানে এসে দেখি হিপহপ চলে। যেহেতু সংগীতের প্রতি আকর্ষণ ছিল, তাই বিভিন্ন ক্লাবে যেতাম গান শুনতে। সেখানে থাকতে থাকতে ‘কোয়াইটে মিউজিক’-এর প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়।
আফ্রিকায় প্রথম স্টুডিওর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এখানে যারা গান করে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার আফ্রিকান ফ্রেন্ড তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। শুরুতে হাউজ মিউজিকের কয়েকটি ট্র্যাক করি। ২০০৬ সালে আমি যখন প্রথম রেকর্ড করি, খুবই নার্ভাস ছিলাম। ট্র্যাকটির নাম ছিল ‘মানি হানি’। আফ্রিকায় এটাই আমার শুরু।
অ্যালবামের কী খবর?
প্রথম অ্যালবাম ছিল ‘পেইন কিলার’। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়। ১০টির মতো গান ছিল। এরপর করি ‘হট বেবি’ অ্যালবাম। এটি ফ্লপ করে। এরপর আবার হিপহপে চলে আসি। আমেরিকান হিপহপ এখানে ফলো করে সবাই। এটা খুব ভালো চলে।
আফ্রিকায় কোন কোন শিল্পীর সঙ্গে গান করা হয়েছে?
২০২৪ সালের দিকে পরিচয় হয় আফ্রিকান জনপ্রিয় শিল্পী অ্যামি মনোনয়নপ্রাপ্ত এসজাভার সঙ্গে। প্রথমে উনি আমাকে দেখে বলেন ‘ওর সঙ্গে কী গান করব? ওতো ইন্ডিয়ান, সে কি আমাদের মতো গান করতে পারবে?’এমনটা ভাবা খুব স্বাভাবিক। একে তো আমি অন্য ভাষার, অন্য দেশের মানুষ; তার ওপর আমার কোনো পরিচিতিও নেই। কিন্তু আমি যখন গাইলাম তার সামনে, সে অবাক হয়। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘তোকে দেখতে লাগে এক রকম, কিন্তু গান তো দারুণ করিস।’ উনি আমার আগের গান দেখেও আমার সঙ্গে কোলাবরেট করতে রাজি হন। উনি ভিন্নভাষী মানুষের কাছে আফ্রিকান গান শুনে এতটাই প্লিজড ছিলেন! এসজাভার সঙ্গে আমার প্রথম গান ২০১৫ সালে। গানটির নাম ‘শো মি দ্য মানি’। এমটি নামের আরও একজনসহ চার জনের কোলাবরেশন ছিল এটি। জুয়েল বলেন, দারুণ জনপ্রিয়তা পায় গানটি। আমার খুব ভালো লাগার একটা অনুভূতি আছে গানটি নিয়ে। ২০১৬ সালে আরও একটি গান করি, নাম ‘শরাব’। হিন্দি গান এটি। এস জাভা জুলু ভাষায় গাইল, আমি গাইলাম হিন্দিতে, জজি মেন্টাল গাইল সোথোতে। এটাও পপুলার হয়। এটা সাউথ আফ্রিকার প্রথম মাল্টিল্যাংগুয়েজ গান! আফ্রিকার বিভিন্ন রেডিওতে গানটি চলে।
বাংলাদেশে কোন শিল্পীদের সঙ্গে গান করতে আগ্রহী?
বাংলাদেশি এই প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে গান করতে ভীষণ আগ্রহী। আমি যে ধাঁচের গান করি, বাংলাদেশে অনেকেই এখন এমন গান করছেন। আমি নিয়মিত দেশের গানের হালচাল নিয়ে খোঁজ রাখি। আমার ভীষণ পছন্দ ঐশী, জেফারের গানের ধরন। তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করতে পারলে ভালো লাগবে।