শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

খামারবাড়িতে অস্থিরতা

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর দুর্নীতিবাজ কৃষি কর্মকর্তারা

** চাকুরিবিধি লঙ্ঘন করে সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
** বদলি ও প্রকল্পের কমিশন বানিজ্য করতে সরব
** খামারবাড়িতে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মহড়া
**ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমান কৃষি কর্মকর্তাও দুর্নীতিবাজদের রোষানলে

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ পিএম


সরকারের চাকুরিবিধি লঙ্ঘন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু কৃষি কর্মকর্তা সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। খামারবাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখাসহ এলাকার সড়ক দখল করে রাখেন কিছু কর্মকর্তা। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছেন তারা। দলীয় পরিচয় দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া এক কৃষি কর্মকর্তাও দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়েছেন। তাকেও অফিস রুমে নির্যাতন করা হয়েছে।

অনুসন্ধান বলছে, খামারবাড়ি দখল নিতে বদলি ও প্রকল্পের কমিশন বাণিজ্য করতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করছে বিতর্কিত কর্মকর্তার সিন্ডেকেট।

অস্থিরতার মূলে বিতর্কিত কৃষি কর্মকর্তা মুকুল

জানা গেছে, চলতি মাসের ১৩ তারিখ উপপরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদকে বদলির আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ আদেশের পর থেকে বদলি ঠেকাতে মূল ফটকে তালা দিয়ে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ রাখা, সংবাদ সম্মেলনসহ বহিরাগত লোকজন নিয়ে সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করা হয়। এসবের নেতৃত্বে বিসিএস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব পরিচয় দেওয়া এবং ডিএই হবিগঞ্জের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. রেজাউল ইসলাম মুকুলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া মো. মুরাদুল হাসানকে খামারবাড়ি ছাড়ার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি খামারবাড়ি অচল করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

জানা গেছে, রেজাউল ইসলাম মুকুল ২০০১ সালে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০০৭ সালে তিনি বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনা স্মলহোল্ডার সাপোর্ট প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ছিলেন। ২০১০ সালে ছিলেন বৃহত্তর বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ত পতিত জমিতে সম্প্রসারণ কর্মসূচির পরিচালক। এর মধ্যে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়। 
২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালে রেজাউল ইসলামকে (পরিচিতি নং-১৯৭৭) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়। চোরাই মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ১১ (১) এবং বিএসআর পার্ট-১ এর ৭৩ নং বিধির নোট-২ অনুসারে গ্রেপ্তারের পর ২৬ নভেম্বর ২০১৩ থেকে তাকে সরকারি চাকুরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে কর্মস্থলের বাইরে অবস্থান এবং চোরাই মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৩ (বি) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু (মামলা নং-০২/২০১৪) করা হয়। 
বিভাগীয় মামলা তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে তৎকালীন উপসচিব সনৎ কুমার সাহাকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় এবং তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত বিধিমালার এর বিধি ৪(৩) (সি) অনুযায়ী কেন তাকে “চাকুরি হতে অপসারণ” গুরুদণ্ড প্রদান করা হবে না এ মর্মে ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ জারী করা হয়। এরপর ২য় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৭(৭) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে তাকে ‘চাকুরি হতে অপসারণ’ গুরুদন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

এর বেশ কয়েক বছর পর আবার চাকরিতে যোগ দিয়ে উপপ্রকল্প পরিচালক পদ পান। এখানেও ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ নানা অভিযোগে প্রকল্পের মাঝপথে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এ নিয়ে সেমসময় বাধে বিপত্তি। দায়িত্ব ছাড়তে গড়িমসি শুরু করেন তিনি। স্বপদে বহাল থাকতে শুরু করেন তদবির। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাপে তার সেই চেষ্টা টেকেনি।

২০২১ সালের জুন থেকে ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নতমানের কনফারেন্স ও ট্রেনিং রুম সংস্কার কাজে ২৫ লাখ টাকা কমিশন খাওয়ার তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ইকবাল হোসেন জানান, মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স ব্যবহার করে শিহাব সজল নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ৪০ শতাংশ কাজ রেজাউল ইসলাম মুকুল করেছেন। মাল্টিবিজ 

ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শিহাব সজল নামে কারও সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। এ কাজের বিল মাল্টিবিজ পরিশোধ করেছে রেজাউল করিম মুকুলকে। তিনি (রেজাউল) শিহাবের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। এ ছাড়া কেমিক্যাল সরবরাহসহ আরও বেশ কয়েকটি কাজ অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার করে রেজাউল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাকুরিবিধি লঙ্ঘন করে সংবাদ সম্মেলন

গত ১৫ মার্চ বিসিএস কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে সংবাদ সম্মলেন করেছেন রেজাউল ইসলাম মুকুল। নিজেকে এই সংগঠনের সদস্য সচিব হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও সেই সংবাদ সম্মেলনে আর কোন পদধারী ছিলেন না। সেখানে তিনি নিজেই গত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে চাকৃরি বিধি লঙ্ঘন করে কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাব ঘাটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনিও সেই একই ভাবে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরির বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হয়। বিধি ৫ অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে বা জনসমক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন না। অথচ সংবাদ সম্মেলনে ডিজিকে অপসারণের দাবি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা এই বিধির পরিপন্থী। বিধি ৭ অনুসারে, সরকারি কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো সমালোচনা করতে পারেন না। তবে এই সংবাদ সম্মেলনে ডিজির বিরুদ্ধে ‘অদক্ষতা’ ও ‘বিভাজন সৃষ্টির’ অভিযোগ তোলা হয়েছে, যা বিধিবিরুদ্ধ। বিধি ২১ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে প্রশাসনিক বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। কিন্তু এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সরাসরি মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়েছেন, যা চাকরির শৃঙ্খলার লঙ্ঘন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারবাড়ির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, খামারবাড়িতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির দাপট চলছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন কর্মকর্তারা বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা হিসেবে প্রভাব খাটাচ্ছেন। যদিও বিএনপি এদেরকে কোন ধরনের স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি বিএনপি পন্থী কৃষিবিদদের সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পলে এখন যারা বিএনপি পন্থী পরিচয় দিচ্ছেন তারা কোনভাবেই বিএনপির কেউ নয়। এরা বিএনপিকে উল্টো সুনাম ক্ষুন্ন করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। নেতৃত্বে থাকলে এরকম অপপ্রচার থাকতেই পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যেসব কর্মকর্তা ছিল তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। আমাদের আন্দোলন মূলত তাদের বিরুদ্ধেই।’ চাকরি থেকে বরখাস্ত ও মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। মামলা মিমাংসা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘খামারবাড়ি চত্ত্বরে শৃঙ্খলাবিরোধী চাকরিবিধি বহির্ভূত কোনো কার্যক্রম বা মিছিল গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে আমরা খতিয়ে দেখব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরির বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে হয়। বিধি ৫ অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে বা জনসমক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন না। অথচ সংবাদ সম্মেলনে ডিজিকে অপসারণের দাবি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা এই বিধির পরিপন্থী। বিধি ৭ অনুসারে, সরকারি কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো সমালোচনা করতে পারেন না। তবে এই সংবাদ সম্মেলনে ডিজির বিরুদ্ধে ‘অদক্ষতা’ ও ‘বিভাজন সৃষ্টির’ অভিযোগ তোলা হয়েছে, যা বিধিবিরুদ্ধ। বিধি ২১ অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে প্রশাসনিক বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। কিন্তু এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সরাসরি মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়েছেন, যা চাকরির শৃঙ্খলার লঙ্ঘন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামারবাড়ির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, খামারবাড়িতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির দাপট চলছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন কর্মকর্তারা বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা হিসেবে প্রভাব খাটাচ্ছেন। যদিও বিএনপি এদেরকে কোন ধরনের স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি বিএনপি পন্থী কৃষিবিদদের সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে এখন যারা বিএনপি পন্থী পরিচয় দিচ্ছেন তারা কোনোভাবেই বিএনপির কেউ নয়। এরা বিএনপিকে উল্টো সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। নেতৃত্বে থাকলে এরকম অপপ্রচার থাকতেই পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যেসব কর্মকর্তা ছিল তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। আমাদের আন্দোলন মূলত তাদের বিরুদ্ধেই।’ চাকরি থেকে বরখাস্ত ও মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। মামলা মীমাংসা হয়েছে।’ 

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘খামারবাড়ি চত্ত্বরে শৃঙ্খলাবিরোধী চাকরিবিধি বহির্ভূত কোনো কার্যক্রম বা মিছিল গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে আমরা খতিয়ে দেখব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত