শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

কৃষ্ণ সাগরে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত রাশিয়া-ইউক্রেন

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম

সৌদি আরবে তিন দিনের শান্তি আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণ সাগরে সামরিক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে পৃথক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এই চুক্তির ফলে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ পুনরায় উন্মুক্ত হতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খবর: বিবিসি।

শান্তি আলোচনার পর ওয়াশিংটন জানিয়েছে, এই চুক্তি ‘দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই শান্তির’ জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এছাড়াও, উভয় পক্ষ একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না চালানোর পূর্ববর্তী চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

রাশিয়ার শর্ত ও প্রতিক্রিয়া

তবে রাশিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের খাদ্য ও সার রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এই অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে না। ক্রেমলিনের দাবি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে:

- রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর সুইফট পেমেন্ট সিস্টেমে পুনঃসংযোগ,
- রাশিয়ান পতাকাবাহী খাদ্যবাহী জাহাজগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার,
- কৃষি সরঞ্জাম ও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন সামগ্রীর সরবরাহ পুনরায় চালু করা।

ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই চুক্তিকে ‘সঠিক পথে একটি ধাপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, এটি কার্যকর হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তিনি বলেন, ‘এবার কেউ ইউক্রেনকে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে না যাওয়ার অভিযোগ করতে পারবে না।’

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন, নিরপেক্ষ কিছু দেশ চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করতে পারে। তবে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ যদি কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব অংশ ছাড়িয়ে চলে যায়, তাহলে এটি চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। সেই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে।’

আগের চুক্তি ও বর্তমান বাস্তবতা

২০২২ সালে যুদ্ধের সময় একটি চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য নিরাপদ পথ নিশ্চিত করা হয়েছিল, যা খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের সরবরাহ সচল রাখে। তবে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে আসে, অভিযোগ করে যে, এতে তাদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়নি।

সাম্প্রতিক আলোচনার ভিত্তিতে উভয় পক্ষ একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে শীতকালে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এছাড়া, ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর হামলার পর জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থাও সতর্কবার্তা দিয়েছে।

শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া, নাকি নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা?

এই চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নতুন মোড় আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে একটি অগ্রগতি, নাকি সাময়িক বিরতি, তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওপর। যদিও বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে এই চুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এখনো প্রকট।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত