শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের সামনে যুদ্ধের ছায়া

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৮ এএম

কাশ্মিরের পেহেলগাঁওয়ের বৈসরণ তৃণভূমিতে লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর ভয়াবহ হামলায় ২৬ ভারতীয় পর্যটক নিহত হওয়ার পর উপমহাদেশে ফের যুদ্ধের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। নিহতদের সবাই পুরুষ। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে নয়াদিল্লি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদ-সংক্রান্ত পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আরও কিছু কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছে। অপরদিকে পাল্টা জবাব হিসেবে পাকিস্তানও ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

এরইমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে অভিযান চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক কর্মকর্তারা। বিশেষত, অতীতে সার্জিকাল স্ট্রাইকের অভিজ্ঞতার আলোকে ভারত আবারও ‘প্রত্যাঘাত’ চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারত আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলে তারা চুপ করে থাকবে না। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেকোনো দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত। আমরা সজাগ এবং উচ্চ সতর্কতায় আছি, তবে ভারতের মতো অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা ছড়াতে আগ্রহী নই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত যদি মনে করে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসবে না, তবে তারা ভুল করছে। আমরা পরমাণু অস্ত্রধারী দুটি দেশ। ভারতের যেকোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলের জন্য মারাত্মক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। তাই উভয় দেশকেই সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে।’

এদিকে হামলার সময়টাও বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। কারণ সোমবারই নয়াদিল্লিতে চার দিনের সরকারি সফরে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তিনি বর্তমানে ভারত সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও কৌশলগত অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হামলার ঘটনা ভারতকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সুবিধা দিতেই সংগঠিত হয়েছে বলে দাবি করছে দিল্লি।

আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানে হামলা হয়েছে, সেটি পাকিস্তান সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। অথচ সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঁচ লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এত বড় নিরাপত্তা বলয়ের মাঝেও হামলা হওয়া ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা ঢাকতে ভারত পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলছে।’

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘এই হামলা কি কাশ্মিরকে স্বাধীনতা এনে দেবে? ভারত বরং নিজেদের নিরাপত্তা ত্রুটি নিয়ে ভাবুক, আত্মসমালোচনা করুক। না হলে এমন আরও ঘটনা ঘটবে, আর তারা শুধু দায় চাপিয়ে যাবে।’

চলমান এই উত্তেজনার পেছনে দীর্ঘদিনের ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন, সীমান্ত সমস্যা ও কাশ্মির প্রশ্নকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। ভারত ও পাকিস্তান—দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মাঝে এমন পরিস্থিতি শুধু অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বকেই উদ্বেগে ফেলেছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সংযম এবং আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতামূলক চেষ্টার ওপর। তবে পেহেলগাঁওয়ের রক্তাক্ত ঘটনা নিঃসন্দেহে উপমহাদেশের স্থিতিশীলতাকে নতুন করে বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত