ইরানের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর কড়া সমালোচনা জানিয়েছে। সেইসাথে আঞ্চলিক উত্তেজনা থেকে বৈশ্বিক সংঘাতের ঝুঁকি মনে করছে রাশিয়া।
ইরানের পরামাণু স্থাপনায় মার্কিন হামলাকে ‘কান্ডজ্ঞানহীন’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের কঠোর লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে মস্কো।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই স্পষ্ট যে বিপজ্জনক উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। মধ্যপ্রাচ্যে এই সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অঞ্চলটি ইতোমধ্যেই বহু সংকটে জর্জরিত।
রবিবার এক জ্যেষ্ঠ রুশ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলা চালিয়ে একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন, যা কেবল তেহরানের নেতাদের আরও শক্তিশালী করবে, কারণ এই ঘটনায় জনগণ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতি সমর্থন আরও বাড়াবে।
ক্রেমলিন বারবার ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে বলেছিল, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা গোটা অঞ্চলকে ‘কৃষ্ণ গহ্বরে’ ঠেলে দেবে। ইরানের সঙ্গে ক্রেমলিনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। একইসাথে ইসরায়েলের সঙ্গেও তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি-চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার বয়ান ছেড়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই এখন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। এসব করে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে পারবেন না।
মেদভেদেভ বলেন, ‘ইরানের শাসন ব্যবস্থা টিকে তো গেছেই বরং তা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। জনগণ এখন সর্বোচ্চ নেতাকে নিরাপত্তার বলয়ে ঘিরে রেখেছে। এমনকি যারা আগে এই শাসককে সমর্থন করত না তারাও এখন সমর্থন দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হয় না। বরং যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা স্থল হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদিও গত সপ্তাহে তিনি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় অনীহা প্রকাশ করেন।
পুতিন বলেন, ইসরায়েল মস্কোকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছে বুশেহরে রাশিয়ার নির্মীয়মাণ দুটি পারমাণবিক চুল্লিতে কাজ করা রুশ বিশেষজ্ঞরা বিমান হামলার শিকার হবেন না।
ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইরান থেকে অস্ত্র কিনেছে রাশিয়া। এই বছর শুরুর দিকে তেহরানের সঙ্গে ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি সই করেছে মস্কো।
এমনকি রাশিয়ার ভেতর থেকেও ইরানকে সাহায্য করার দাবি উঠেছে ঠিক যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়েছে— বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্যাটেলাইট গোয়েন্দা তথ্যসহ।
‘এখন আমাদের সময় এসেছে তেহরানকে সহায়তা করার,’ বলেন রুশ ব্যবসায়ী কনস্তানতিন মালোফেয়েভ।
রুশ জাতীয়তাবাদী ইগর গিরকিন বলেন, যদি রাশিয়া ইরানকে সমর্থন না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে প্রস্তর যুগে পাঠিয়ে দেবে এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
‘যদি ইরান তার মিত্রদের — রাশিয়া এবং চীনের — কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ও জোরালো সমর্থন না পায় তাহলে সম্ভবত এক মাসের মধ্যে তার শত্রুরা তাদের লক্ষ্য পূরণ করে ফেলবে,’ টেলিগ্রামে বলেন গিরকিন।