
ঢাকার অদূরে সবুজে ঘেরা, শহরের কোলাহল ও ট্রাফিকমুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের মানুষ দেশের একমাত্র ‘সম্পূর্ণ আবাসিক’ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই চেনে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ, এমনকি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল প্রশাসন একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারে না। যে অসীম সম্ভাবনাময়ী ও আত্মপ্রত্যয়ী বয়সে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন করার কথা, তখন তাদের গণরুম নামক এক ‘নরকে’ টিকে থাকার লড়াই করতে হয়। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে, হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীকে বেছে নিয়ে কীভাবে তাদের মেধা ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম নামক ‘নরকের’ বিলুপ্তি, অছাত্রদের হল থেকে বের করে দেওয়া ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে গত চারদিন ধরে ‘প্রত্যয়’ নামের একজন শিক্ষার্থী হলের বাইরে মাঠে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের একটি স্নাতক সম্পন্ন করতে যান। অথচ তার স্নাতক কোর্সের অর্ধেক সমাপ্ত হওয়ার সময়ে তাকে হলে একটি সিটের দাবিতে খোলা আকাশের নিচে রাত-দিন অবস্থান করতে হচ্ছে। এই সময়ে প্রত্যয়ের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তরুণ ও শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জার্নাল লেখার কথা কিন্তু দেশের একমাত্র ‘আবাসিক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও তাকে হলে থাকার ন্যূনতম আবাসনের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীর দাবি যৌক্তিক, কিন্তু বাস্তবায়নে সময় লাগবে’। ভিসি মহোদয়ের বক্তব্যে আমার ন্যূনতম আস্থা নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর পড়ালেখা করেছি। চার বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে ফাংশান করে, খুব কাছ থেকে দেখেছি। ভিসি আসে ভিসি যায়। প্রভোস্ট আসে, যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের সমাধান আসে না। প্রতি বছর নতুন ব্যাচ আসার আগে হল প্রশাসন ‘অছাত্রদের হল ছাড়তে’ বলে নিয়ম রক্ষার একটি নোটিস সাঁটান। তাদের দৌরাত্ম্য অতটুকুই। হল প্রশাসনের অছাত্রদের হল থেকে বের করার ইচ্ছে বা সাহস নেই। হল ছাড়া কেন, শিক্ষার্থীদের হলের সিট বণ্টনেও হল প্রশাসনের ন্যূনতম প্রভাব নেই। এমনকি কোনো হল প্রভোস্ট বলতে পারবেন না, তার হলে কতজন ছাত্র ও কতজন অছাত্র অবস্থান করছেন! আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম বিলুপ্তি করে নিয়মিত ছাত্রদের সিট বণ্টনের দাবি করেছিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাব ছিল ‘নতুন হল হলেই আবাসন সমস্যার সমাধান হবে’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর হলের সিট সাপেক্ষে নতুন ভর্তি নেওয়া হয়। তাহলে যতজন নিয়মিত ছাত্র আছে তত সিটই আছে। তবু কেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে সিট পান না? কারণ ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও দুই-তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করেন। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের সিট দখলদারিত্ব তো আছেই! এখন যখন নতুন হল হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের আসন সংখ্যা বেড়েছে। ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যাও বাড়বে। নতুন আঙ্গিকে দখলদারিত্ব শুরু হবে। ফলে সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ না করে, নতুন হল দিয়ে আবাসন সমস্যার সংকটের আশা ‘কুমিরের বাচ্চা দেখানোর গল্প’ ছাড়া কিছুই না।
গণরুমের অমানুষিক নির্যাতন : গণরুমের অবাসযোগ্য পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আরেক নারকীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায় না যে, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের বাছাই করে তাদের গণরুমে রেখে রাত জাগিয়ে ‘ম্যানার শেখানোর’ নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। গণরুমে যা হয় সবকিছু সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত। কিন্তু হল প্রভোস্ট ‘অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা’ শীর্ষক ‘তোতাপাখির বুলি’ ছাড়া কোনো কিছুর ক্ষমতা রাখেন না। প্রক্টর অফিস জানে না, কতটি অভিযোগ তাদের দপ্তরে জমা আছে। র্যাগিং, নবীন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, রাত জাগিয়ে রাখা, গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা এসব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমের নিত্যদিনের চিত্র। গণরুমের কাছে গিয়ে কান পাতলেই শোনা যায় কী অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। একজন সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে বাবা-মায়ের বছরের বছর কী পরিমাণ আত্মত্যাগ করতে হয় তা শুধু মা-বাবাই জানেন। আর সে কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর রাত জাগিয়ে বাবা-মা’কে গালি শুনানো হয়। এটা কোন সভ্য দেশের প্রক্রিয়া? বাবা-মা কি সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠিয়েছে রাত জেগে তাদের গালি শুনাতে? এসব বছরের পর বছর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী করেছে এবং করতে পেরেছে? কিছুই না।
গাছ কাটা নিষেধ : বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে মেগা উন্নয়ন প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অংশীজন অতিথি পাখি যাতায়াত, আবাস্থল ও ন্যূনতম গাছ কেটে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি কোনো পরামর্শ, প্রস্তাবকে আমলে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার একটা দাবিতে তিনি শেষ পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী দ্বন্দ্বে পরিণত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌহার্দ্যকে বিসর্জন দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগরের অংশীজন প্রাণ-প্রকৃতির বেশ যতœশীল ও আবেগপ্রবণ। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশনেও বসতে পারেন। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি তীব্র আন্দোলনের রেশ না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফের ‘মহাপরিকল্পনা’র বাইরে গিয়ে একটি সংরক্ষিত অঞ্চলে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের আপত্তির মুখে প্রশাসন এই প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এখন ভবন নির্মাণে অমূল্য আরও ৫০০ গাছ কাটা যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২৫ মে, ২০২৩।
ইতিমধ্যে অপরিকল্পিত মহাপরিকল্পনার জন্য জাহাঙ্গীরনগরে সবুজ, প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে। অথচ দেশের একমাত্র ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলাম জানিয়েছিলেন, তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘জাহাঙ্গীরনগরের সুবজ যেন নষ্ট করা না হয়’। অথচ নির্বিচারে গাছের পর গাছ কেটে অপরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্যে আবারও ৫০০ গাছ কাটার কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের রেশ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে পড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। হয়তো আমাদের আগামী ভবিষ্যতের মধ্যে সবচেয়ে কম গরমের বছরটি আমরা পার করছি। আসছে বছর আরও তীব্র তাপপ্রবাহ অপেক্ষা করছে। পরের বছর তীব্রতর। এখন বৃক্ষ সৃজন, প্লাস্টিক বর্জন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি-নির্ভর বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করে ধরণীকে বাঁচানোর সময়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের আসার আগে অন্তত দেশের বুদ্ধিভিত্তিক জায়গাগুলোতে তৈরি হওয়া দরকার। ঢাকার মতো জায়গায় যেখানে একটি গাছ মানে একটি অমূল্য হীরা সেখানে সিটি করপোরেশন গাছ কেটে ফেলছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ইতিমধ্যে প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির সম্মুখীন সেখানে বেপরোয়া প্রশাসন ফের গাছ কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন না পারছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করতে, না পারছে মেধাবী তরুণদের জীবনকে গতিশীল রাখতে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সম্প্রতি মার্কিন ভিসানীতি দেওয়া হয়েছে সেটাকে দুইভাবে দেখা যায়। এই যে ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রকে সমর্থন বা সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন, এটার মধ্যেও একটা জিও-পলিটিক্যাল দিক আছে। সেটা কীরকম? একটা হলো তাত্ত্বিক পর্যায় থেকে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে। সেটা বিভিন্ন পর্যায়ে, বহুমাত্রিকভাবে। সেই সম্পর্কটা কিন্তু গত ৫২ বছরে ইতিবাচকভাবেই আবর্তিত হয়েছে। যেমন প্রথম দুই দশকের কথা যদি ধরি, সেই সম্পর্কটা ছিল মূলত এইড নির্ভর। ওই সময় বাইরে থেকে আমরা যে আর্থিক অনুদানগুলো পেতাম তার একটা বড় কন্ট্রিবিউটর বা অংশীদার ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা যে আর্থিক অনুদান দিত তার ভিত্তিতে আমরা আমাদের অর্থনীতিটা চালু রাখার চেষ্টা করতাম। আমাদের বাজেটও হতো সেভাবে। প্যারিস ক্লাবের পয়সা থেকেই তখন আমাদের বাজেট হতো। আমরা প্যারিসে গিয়ে জেনে আসতাম যে ডোনাররা কত দেবে, তার ভিত্তিতে আমরা বাজেট তৈরি করতাম। আর প্যারিস ক্লাবের সবচেয়ে বড় দাতা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের সবচেয়ে বড় ডোনারও তারা। স্বাধীনতার প্রথম দুই দশক এই নির্ভরতাটা ছিল। তার পরের ২০ বছরে দেখা যায় সম্পর্কটা বিবর্তিত হয়েছে। সেই এইড বা অনুদান নির্ভর সম্পর্ক থেকে এটা কিন্তু বাণিজ্যিক সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়েছে। এই পর্যায়ে সম্পর্কটা লেনদেনের দিকে গেল। অর্থাৎ আগে আমরা একপাক্ষিকভাবে তাদের কাছ থেকে কেবল সাহায্য নিতাম পরে লেনদেনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিকে গেলাম। এর মধ্য দিয়ে সম্পর্কেও একটা গুণগত পরিবর্তন হলো। বাংলাদেশের ৫২ বছরের হিসেবে এর পরের ১২ বছর যদি ধরি তাহলে এই সময়ে সম্পর্কটা কৌশলগত সহযোগিতার জায়গায় এসেছে। ২০১২ সালে আমাদের মধ্যে পলিটিক্যাল ডায়ালগ শুরু হয়েছে। সিকিউরিটি ডায়ালগ, ইকোনমিক ডায়ালগ হয়েছে। তখন থেকে এসব শুরুর পর এখন কাঠামোটা অনেক বেশি নিয়মতান্ত্রিক হয়েছে। একটা সম্মানজনক জায়গায় পারস্পরিক সহায়ক হিসেবে আমাদের সম্পর্কটা তৈরির দিকে এগিয়ে নিয়েছি। এর ফলে সম্পর্কে নতুন যে উপাদানগুলো যোগ হয়েছে বা প্রত্যাশাটা তৈরি হয়েছে সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ যেন গণতান্ত্রিক পথে যায়। আমরা একটা বড় জনগোষ্ঠীর দেশ, বঙ্গোপসাগরের পাশেই আমাদের অবস্থান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটা সংযোগ স্থাপনের ভৌগোলিক অবস্থানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশ কৌশলগত গুরুত্বও তৈরি করেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান বা পশ্চিমা জগৎ এশিয়া অঞ্চলের ইতিবাচক অর্থনীতির অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে যখন বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। সেই মনোযোগের দিক থেকে আমরাও সেই বিশেষ মনোযোগের বা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছি। এই কারণেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেহারা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী যেসব কর্মকা- হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটার মাত্রা এর মাধ্যমেই বোঝা যায়।
এবার যদি নতুন প্রেক্ষাপটে আসি। বাইডেন প্রশাসন আসার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আগের সেই সন্ত্রাসবাদবিরোধী গ্লোবাল ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন মার্কিন প্রশাসন তার অভ্যন্তরীণ কারণে, গত ৭/৮ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই গণতান্ত্রিক সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকট থেকে উত্তরণের আলোকেই এখন অনেক কিছু হচ্ছে। তারা মনে করছে যে বাইরের পৃথিবীটাতেও যদি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী না করা যায় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে বৈশ্বিক স্বার্থ আছে সেটা রক্ষা করা যাবে না। এখানে বৈশ্বিক স্বার্থ বলতে তাদেরই কৌশলগত স্বার্থের কথা বুঝিয়েছি। তারা একটা রুল বেজড গ্লোবাল অর্ডারের কথা বলে। সেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকার কথা বলে। এগুলোর সবই তো আমাদের জন্যও ইতিবাচক। ভারত মহাসাগরে বা বঙ্গোপসাগরে যদি রুল বেজড মানে আইনের শাসন থাকে বা সমুদ্রপথটা যদি নির্বিঘ্ন হয় তাহলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মার্কিন বর্তমান প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো গণতন্ত্র। বাইডেন প্রশাসন পরিষ্কার বলেছে, গণতান্ত্রিক বিশ্ব, অগণতান্ত্রিক বিশ্ব। তারা গণতান্ত্রিক বিশ্বটাকেই শক্তিশালী করতে কাজ করবে এটা তো ঘোষণাই করা হয়েছে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও গণতন্ত্র যাতে শক্তিশালী হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন চালু থাকে সে লক্ষ্যে সক্রিয় হয়েছে। কাজেই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই দুটি মৌলিক বিষয়কে যদি আমরা দেখি তাহলেই বোঝা সম্ভব হবে যে এখানে কীভাবে আমরা কৌশলগত জায়গায় একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছি।
এখন ভূ-রাজনৈতিক জায়গার প্রসঙ্গে আসি। এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধু বাড়াতে চাইছে এটা যেমন সত্যি কথা তেমনি আমরা তো নিজেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বলেই মনে করি। সে ক্ষেত্রে তাদের যে পরিকল্পনা সেখানে কয়েকটা বিষয় আছে। একটা হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি। অর্থাৎ এই ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে ঘিরে তারা এখন বন্ধু বা একটা গণতান্ত্রিক বাতাবরণ তৈরি করতে আগ্রহী। এরও কারণ রয়েছে। তারা মনে করে চীন অগণতান্ত্রিক। কাজেই চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো আমার বন্ধু হিসেবে থাকলে মার্কিন অবস্থানটা শক্তিশালী হয়। এজন্য তারা চাইছে আমরা যেন আদর্শিকভাবে গণতন্ত্র চর্চার মধ্যে থাকি।
গণতন্ত্র কিন্তু শাসক দলের গণতন্ত্র না বা শাসনব্যবস্থার গণতন্ত্র না। গণতন্ত্রের মূল বক্তব্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার। সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। কাজেই সেই গণতন্ত্রের আলোকে জনগণই নির্ধারণ করবে কারা শাসন ক্ষমতায় থাকবে। এবং সেটা ঠিক করার প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে নির্বাচন। যদি লক্ষ করি, গণতান্ত্রিক চর্চার কথা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বলছে না, অন্যরাও বলছে। আমাদের প্রতিবেশীরাও তাই-ই প্রত্যাশা করে। এখন এটা নিয়ে ভিসানীতি দেওয়াতে বা ব্লিঙ্কেন সাহেব কথা বলেছেন বলে আমাদের একটু খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সবাই চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা চালু থাকুক ও সেটা শক্তিশালী হোক। এর মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকারের জায়গাটাও সাবলীল থাকুক। নিরাপদ থাকুক। বিশ্বের যে বড় বড় অর্থনীতি আছে যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমাদের গার্মেন্টসের বড় চালান যায় সেখানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সিঙ্গেল এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন। জাপান আমাদের এক নম্বর বাই ন্যাচারাল ডোনার। তারপর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাতিসংঘের কথাও এক। জাতিসংঘ তো স্পষ্ট করেই গণতান্ত্রিক চর্চার কথা বলেছে। কাজেই লক্ষ করলেই বোঝা যাবে যে, এখানে একটা বৈশ্বিক আকর্ষণ বা অ্যাটেনশন যদি বলি, সেটা কিন্তু বাংলাদেশ পাচ্ছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হোক মানুষ তার অধিকারটা পাক। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিটাও চালু থাকুক, নির্বিঘœ থাকুক। এসব নিয়ে দেশে-বিদেশে একটা সচেতনতা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ব্লিঙ্কেন সাহেব যেটা বলছিলেন যে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনটার দিকে বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এই জায়গাটায় আমরা তার একটা ইঙ্গিত বা প্রতিফলন দেখতে পাই। আমরা সামগ্রিক অর্থে বিবেচনা করি তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চা, আগামী নির্বাচন, মানুষের অধিকারের মতো বিষয়গুলো যে শুধুমাত্র আমাদের জন্যই প্রয়োজন বা দরকার তা নয় কিন্তু। বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশকে অন্যরা কীরকম দেখতে চায় তারও একটা ইঙ্গিত রয়ে গেছে। এটা তো আমাদের জন্যও ইতিবাচক হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো ইতিমধ্যেই বলেছে যে আমরা যদি জিএসপি প্লাস পেতে চাই তাহলে আগামী নির্বাচনটা তারা সুষ্ঠু দেখতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেটা দেখতে চায়। জাপানও তার প্রত্যাশার কথা বলেছে। আর চীন যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকুক সেটা চায় না, সেটা কিন্তু কখনই বলেনি। চীন চায় এমন একটা বাংলাদেশ যেটা স্থিতিশীল, অগ্রসরমাণ। কাজেই আমাদের বন্ধু বলেন আর উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র, তারা সবাই কিন্তু এই একটা ব্যাপারে সহমত বলে আমার মনে হয়েছে।
এক্ষেত্রে তাদের চাওয়া তো আছেই তার চেয়ে বড় তো আমাদের নিজেদের চাওয়া। সেটা হলো শান্তিপূর্ণভাবে, টেকসইভাবে আমাদের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেজন্য সবচেয়ে উত্তম পথ হচ্ছে গণতান্ত্রিক চর্চাটাকে সাবলীল রাখা। তবে মার্কিন ভিসানীতির ক্ষেত্রে এখানে বাংলাদেশের দিক থেকে চীন-রাশিয়ার দিকে খানিকটা ঝুঁকে থাকার প্রবণতার বিষয়টির কথা অনেকে বলতে পারেন। তা খানিকটা থাকলেও আমি মনে করি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলে অটোমেটিক্যালি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু হয়ে যাব। স্থিতিশীলতার জন্যও এটা দরকার। শ্রীলঙ্কার উদাহরণই যথেষ্ট। দেশটির পরিস্থিতির জন্য পুরোটা না হলেও চীনা ঋণের একটা ভূমিকা আছে। চীনা সহায়তার প্রশ্নে পাকিস্তানেরও প্রায় একই অবস্থা। তারা এখন আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে চেষ্টা করছে। তাদের দৃষ্টিতে চায়না একটা সমস্যা। তাই এই দেশগুলো যাতে সেদিকে না যায় সেজন্য একটা কৌশলগত জায়গা পশ্চিমাদের থাকতে পারে। কিন্তু তাদের এই কনসার্ননেস বা সহায়তার উপাদানটা কাজে লাগবে না, যদি দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক না থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? এক্ষেত্রে কতগুলো জিনিস দেখা দরকার। একটা হলো মার্কিন ভিসা রেস্ট্রিকশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম না। তারা বেশ কতগুলো দেশের ওপর ভিসা রেস্ট্রিকশন বিভিন্ন সময়ে দিয়েছে। তাতে সেই দেশের রাজনীতি ও পরিস্থিতির যে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারের ওপরও এরকম রেস্ট্রিকশন আছে, তাতে যে দেশটির কোনো পরিবর্তন হয়েছে সেটা দেখা যায় না। ঠিক একইভাবে অনেক দেশ আছে যেখানে হয়তো গণতন্ত্রের কাঠামো খুবই দুর্বল। যেমন, পাকিস্তানের কথা ধরা যেতে পারে। কিন্তু সেসব দেশের বেলায় আমরা এ ধরনের রেস্ট্রিকশন দেখি না। অন্যকথায়, এটা তারা যে খুব চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে এটা করেই তা আমার কখনই মনে হয়নি। কারণ, মনে রাখতে হবে, যেকোনো দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের যে বিষয় সেখানে ন্যূনতম কতগুলো বিষয় বা শর্ত থাকতে হয়। গণতন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম ডেফিসিট বা ঘাটতি বিভিন্নভাবে আছে। কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এক ধরনের ঘাটতি আছে। আবার অন্য দেশে সেই ঘাটতিটা অন্য ধরনের। কথা হচ্ছে, সেটা বাইরের একটা ফোর্স এসে কি সমাধান করতে পারবে? আজ আমেরিকার গণতন্ত্রের যে ঝামেলা সেটা কি বাইরের কোনো শক্তি তার সমাধান করতে পারবে? আমার মনে হয় না। এটা ওই দেশের জনগণকেই সমাধান করতে হবে। এখন ন্যূনতম শর্ত যেটা, সেটা বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন আস্থা থাকে। পশ্চিমা কাঠামোতে যেই নির্বাচনের কথা বলা হয়, আমাদের দেশেও যেহেতু ব্রিটিশদের হাত ধরে সেটা এসেছে; সেখানে বড় বড় পার্টিগুলোর মধ্যে আস্থা থাকতে হবে। দেশের বড় বড় দলগুলোর নিজেদের মধ্যে কোনো আস্থা নেই।
আমেরিকা এই যে ভিসা রেস্ট্রিকশনটা দিল, এতে কি আস্থা বাড়বে নাকি বিভাজন বাড়বে? খুব সহজে এর উত্তর হলো এখানে আস্থাটা বাড়বে না, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভাজনটা আছে সেটাই আরও বাড়বে। তাহলে যেই গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করা হচ্ছে সেখানে এই বিভাজনটা যদি বাড়ে, তাহলে তো আর সেই গণতন্ত্রটা আর হয় না। তাহলে এই বিভাজন যে তারা বাড়াচ্ছে এর কারণটা কী? এটা কি তারা জেনেশুনেই বাড়াচ্ছে? ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে শুরু করে জিও-পলিটিক্যাল স্বার্থ, এসব পূরণেই কি ভিসানীতি বা বিভিন্ন স্যাংশন, রেস্ট্রিকশন? অনেক দেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আছে যেখানে গণতন্ত্রের অভাব আছে।
এখন আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণার বড় দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। এগুলো হচ্ছে রাজনীতির কথা। কিন্তু আমি ওই রাজনীতির আলাপে যেতে চাই না। অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে আমি মনে করি না, দেশের বড় দুই দল এই মার্কিন ভিসানীতির কারণে নিজেদের মধ্যে ওই আস্থার জায়গায় আসছে বা আসবে। বিরোধী দল মনে করছে বা বলার চেষ্টা করছে যে সরকারি বা ক্ষমতাসীন দলের ওপর প্রেশার দেওয়া হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দল বলতে চাচ্ছে যে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব কিন্তু বিরোধী দল যেন সেখানে বাধা দিতে না পারে। আবার সরকারি দলের অনেকে এটাও মনে করছে যে, যেহেতু কেয়ারটেকার সরকারের কথা ভিসানীতিতে বলা হয়নি সেহেতু আমেরিকাও বুঝে ফেলেছে যে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এবং ইলেকশন কমিশনকে এখন দেখাতে হবে যে এটা স্বচ্ছ নির্বাচন হলো কি না। সেক্ষেত্রে বিভাজন বাড়ানোর যেই রাজনীতি সেটাই চোখে পড়ছে। শেষ বিচারে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যেই দুর্বলতা আছে সেটা যদি ঠিক করতে হয় ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশে তেমন পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি কিন্তু সেভাবে কখনই ছিল না, যেটা এবার হয়েছে বা ২০০৯ থেকে যদি বলি সেটা একটা রেজিম স্ট্যাবিলিটি হয়েছে, এটাও কিন্তু পার্থক্যকরণের দরকার। পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি বাংলাদেশে কখনই ছিল না, এই রেজিম স্ট্যাবিলিটি বা একটি গোষ্ঠীতন্ত্রের স্থিতিশীলতায় যেটা হয় উন্নয়নের কাঠামোটা করা সম্ভবপর হয়। রেজিম স্ট্যাবিলিটির কারণে উন্নয়নের একটা কাঠামো করা গেছে। ফলে বাংলাদেশের প্রতি অনেকের আকর্ষণ বেড়েছে। অনেকে মনে করছে, উন্নয়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের একটা প্রমিস আছে। পলিটিক্যাল আনস্ট্যাবিলিটি সত্ত্বেও রেজিম স্ট্যাবিলিটি থাকার ফলে উন্নয়নের যে কাঠামো বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তাতে অনেক দেশই মনে করে এখানে উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বিশ^ব্যাংকও মনে করে, আইএমএফও মনে করে। এবং সেই হিসেবে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ মনে করে। কথা হচ্ছে যে এই জিনিসটাকে ধরে রাখার বিষয়। আমাদের এমন সময় এটা ধরে রাখতে হবে যখন গোটা পৃথিবীতেই একটা বড় পরিবর্তন আসছে বা ঘটছে। সেটা হলো এককেন্দ্রিক বিশ^ থেকে বহুকেন্দ্রিক বিশ^ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে পৃথিবী।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকা যে ভিসানীতি দিয়েছে, সেখানে পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে নির্বাচন বা সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে প্রভাব পড়বে কি না। আমার কথা হচ্ছে, কোনো প্রভাবই পড়বে না। ধরলাম কারও কারও ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, আমেরিকায় যাওয়াটা তাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কথা হচ্ছে যে সে যদি ক্ষমতায়ই না থাকে তাহলে আমেরিকা যাওয়া না যাওয়ার কী আছে! আমাদের তো সবকিছুতেই বিভাজন হয়ে গিয়েছে। এটা কেবল রাজনীতিবিদদের মধ্যে না। ধারণা করা হয়, রাজনীতিবিদ ছাড়া অন্য পেশাজীবী যারা অবৈধ সম্পদ আহরণ করেছেন, আত্মীয়দের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা আসলে একটা সেফ এক্সিট চান। কিন্তু এটা এত সহজ না। ক্ষমতা চলে গেলে তো সে এমনিতেই সমস্যায় পড়বে। প্রশ্ন উঠতে পারে, যারা মানি লন্ডারিং করছে তাদের সেফ প্যাসেজ দিতেই এসব ভিসানীতি, রেস্ট্রিকশন কিনা। কথা সেটা না, কথা হচ্ছে যারা ক্ষমতার অবৈধ বা অনৈতিক চর্চা করছে সে তো এমনিতেই বড় প্রেশারে আছে। কারণ ক্ষমতা চলে গেলে কী হবে সেটা তার বড় চিন্তার বিষয়। এখন আমরা তো দেখছি যে নানা রকম মামলা, গ্রেপ্তার, আইনি প্রক্রিয়ায় পড়ে বিরোধীদের কী নাজেহাল অবস্থা। তখন তো সে এসবের মধ্যে পড়বে। ফলে তারা ক্ষমতাটা ধরেই রাখতে চাইবে। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে যেমন, পেশাজীবীদের মধ্যেও তেমন। ক্ষমতাটা কেউ আসলে ছাড়তে চায় না। এটা আমি পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট হিসেবে বলছি, এটা অনেকেই বুঝতে চায় না।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের একটা বড় ভূমিকা থাকে। এখানে গণতন্ত্র নিয়ে যতগুলো পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো কিন্তু জনগণই করেছে। সেই জনগণের ওপর আস্থা রাখতেই হবে। বাইরের কোনো শক্তি ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়ে বা স্যাংশন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক করে দেবে, এটা সম্ভব না। আমি মনে করি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পলিটিক্যাল পার্টি বা সিভিল সোসাইটির যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে তাদের জনগণের কাছেই যেতে হবে। এখন জনগণ কী চাচ্ছে সেটা যদি আমরা না দেখি তাহলে কিন্তু আমরা বুঝতে পারব না যে জনগণ কখন আন্দোলন করে বা কখন করে না। কেউ যদি বলে কাঠামোটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে তাই চাইলেও জনগণ আন্দোলনে নামতে পারছে না, সেটাও ঠিক না। কারণ আমারা তো এর চেয়ে বড় সিচুয়েশন ফেস করেছি, মার্শাল ল’ দেখেছি। বিভিন্ন কাঠামো ভাঙতে জনগণ যে বাসায় বসে ছিল তা তো নয়। আমাদের যেটা বোঝা দরকার, আমরা যেভাবে গণতন্ত্রকে ডিফাইন করি সব মানুষ তো আর একভাবে গণতন্ত্রকে দেখে না। জরিপেও দেখা গেছে গণতন্ত্র বলতে তারা যতটা না নির্বাচন বোঝে, বাংলাদেশের জন্য ৫৪ শতাংশের বেশি মনে করে খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, বস্ত্রকে মানে বেসিক নেসেসিটিকে বড় মনে করে। ওই জরিপে মাত্র ১১ শতাংশ নির্বাচনকে বড় মনে করেছে। এই ১১ শতাংশের মধ্যে আবার এলিট বেশি, জনগণ কম। এর স্পষ্ট উদাহরণ হলো শ্রীলঙ্কা। দেশটির নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্ন করে না কেউ। ছোট দেশ, নির্বাচনও স্বচ্ছই হয়। কিন্তু তারপরও আমরা দেখেছি সেখানে পার্লামেন্টে পাবলিক অ্যাটাক করেছে, প্রেসিডেন্টের বাসায় আগুন দিয়েছে। কেন হয়েছে? কারণ দেশটির ইকোনমি যেভাবে ধসে পড়েছিল তাতে মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়ে কি এটা করা যাবে? বা স্যাংশন? আমেরিকায় আমাদের যে মার্কেট, গার্মেন্টস প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে, এটা তারা দয়া দেখিয়ে করেনি। মনে রাখতে হবে এটা একটা ক্যাপিটালিস্ট বিশ^। সেই প্রিন্সিপাল মেনেই সেখানে আমাদের মার্কেট হয়েছে। ভারত, চীন, ভিয়েতনামের থেকে আমদানির চাইতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিলে তাদের প্রফিট বেশি, বিষয়টা খুবই পরিষ্কার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই যে বার্মা অ্যাক্ট করল আমেরিকা সেখানে তারা একসেপশন ক্লজ রেখেছে যে কোনোভাবেই বার্মার ইমপোর্ট থামানো যাবে না। কারণ, আমেরিকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ। সবশেষে যেটা বলতে চাই, আমেরিকার উদ্দেশ্য হয়তো সৎ আছে, যে তারা চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হোক। কিন্তু এই ভিসানীতি যেভাবে তারা দিয়েছে, সেখানে তেমন চিন্তাভাবনা তাদের ছিল বলে মনে হয় না। আর আমাদের যেটা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন কমাতে হবে, আস্থা বাড়াতে হবে। এই বিভাজন রেখে বাংলাদেশে যেই গণতন্ত্রের কথা বলা হয় সেটা আসবে না। এখানে আমাদের যেমন নতুন চিন্তাভাবনার অভাব আছে, তেমনি বিদেশিরাও এই জায়গাতে ফোর্স করছে না। তাতে হচ্ছে কি, বিভাজনটা বাড়ছে।
অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড সাধারণত বিভিন্ন গুদামজাত শস্যকে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ইঁদুর দমনে এই ওষুধের জুড়ি নেই। কিন্তু ছারপোকা, আরশোলা দমনের নামে এই পেস্ট বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট আকারে যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে। মারাত্মক কীটনাশক অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাতাসের সংস্পর্শে গেলেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। প্রকাশ করে তার আসল ক্ষমতা। এই মারাত্মক কীটনাশক, বাতাসে মিশে গিয়ে উৎপাদন করে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফাইন। এই গ্যাসের কারণেই মৃত্যু হয় পোকামাকড়ের। কিন্তু বাসাবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে, গ্যাস বাতাসের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে। কোনো মানুষ যখন শ^াসপ্রশ^াসের মাধ্যমে সেই গ্যাস টেনে নেন, তখনই তিনি ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। সামান্য সময়ের ব্যবধানে, প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে শুরু হয় মাথাধরা, বমি। একপর্যায়ে মানুষ অচেতন হয়ে পড়ে। বেশি পরিমাণে তা শরীরের মধ্যে প্রবেশ করলে মৃত্যু সুনিশ্চিত। যে কারণে ছারপোকা, আরশোলা, ইঁদুর বা কোনো ধরনের পোকামাকড় বিনাশ করতে চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, যে কোনো পেস্ট কন্ট্রোল বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা উচিত। কম সময় ও সঠিক উপায়ে এইসব পোকামাকড় দূর করার পদ্ধতিই হচ্ছে-পেস্ট কন্ট্রোল। শহর বা গ্রামে এ সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার কারণে, প্রায়ই মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার খবর জানা যাচ্ছে।
খোদ রাজধানীর বিভিন্ন পাবলিক বাস, ফুটপাত অথবা বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই এই ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ‘পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস’র নামে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মীরা জানেনই না, তারা কী ধরনের ওষুধ বাসাবাড়িতে স্প্রে করছেন! অধিকাংশই অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রশাসনিক তৎপরতার খবর কেউ জানে না। গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘বাসায় পেস্ট কন্ট্রোলে মৃত্যুঝুঁকি’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সংবাদে আরও বলা হয়েছে, পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
আসলে পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরণের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, সেই তথ্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে আছে, আমাদের জানা নেই। এও জানা নেই, সেই ওষুধে কোন কেমিক্যালের মিশ্রণ ঘটানো হচ্ছে? রাস্তাঘাটে যখন সাধারণ মানুষের কানে আসে চিৎ হইয়া মরবো, কাইৎ হইয়া মরবো, ধরফরাইয়া মরবো, উপ্তা হইয়া মরবো, পাও চ্যাগাইয়া মরবো তখনই শহরের বিভিন্ন এলাকার ভ্যানগাড়ি বা পাবলিক বাসে হকারদের কথার ছন্দে আকৃষ্ট হয়ে তারা নিয়মিতভাবে ক্রয় করছেন এই ওষুধ। এসব কেমিক্যাল স্প্রে বা ট্যাবলেট বিক্রির বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ অণুজীববিজ্ঞানী, জৈব পদার্থবিদ এবং স্নায়ুবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস হ্যারি কম্পটন ক্রিক ১৯১৬ সালের ৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াটসন ও মরিস উইলকিন্সের সঙ্গে যৌথভাবে ডিএনএ মলিকিউলের কাঠামো আবিষ্কার করেন তিনি। তাদের এই আবিষ্কারে নিউক্লেয়িক অ্যাসিডের আণবিক কাঠামো, ডাবল হেলিক্স এবং জীবিত সত্তার দেহে তথ্য স্থানান্তরে এর ভূমিকার কারণে ১৯৬২ সালে যৌথভাবে ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ফ্রান্সিস ক্রিক। বিশ্বসেরা একজন অণুজীববিজ্ঞানী হিসেবে তার গবেষণাগুলো জেনেটিক কোডের রহস্য উন্মোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নোবেল প্রাপ্তির পরের সময়টা থেকে বাকি জীবন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ‘সাল্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ’-এ গবেষণা করে কাটিয়েছেন ফ্রান্সিস ক্রিক। পরবর্তী জীবনে তার গবেষণার কেন্দ্রে চলে আসে তাত্ত্বিক স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মানুষের স্নায়বিক চৈতন্যবিষয়ক বৈজ্ঞানিক গবেষণা। ফ্রান্সিস ক্রিকের জন্ম হয়েছিল যুক্তরাজ্যের নর্থহ্যাম্পটনে। তার বাবার নাম হ্যারি ক্রিক ও মায়ের নাম অ্যানি এলিজাবেথ ক্রিক। তার বাবা ও চাচা বুট ও জুতো তৈরির পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। নর্থহ্যাম্পটন গ্রামার স্কুলে পড়ালেখার পর ১৪ বছর বয়সে ফ্রান্সিস বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে পড়তে চলে যান। সেখানে গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯৩৭ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ফ্রান্সিস একজন বিদেশি হিসেবে ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস’-এর সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন এবং ১৯৯১ সালে ‘ব্রিটিশ অর্ডার অব মেরিট’-এ ভূষিত হন।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আট মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম উন্মে সুলতানা সুইটি (২২)। সে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুছা চৌধুরীর বাড়ির মমতাজ আহম্মেদের ছেলে রিয়াজ আহম্মদ সাকিবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়ির নিজ বসত ঘরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত উন্মে সালমা সুইটি একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবুল কালামের ছোট মেয়ে। সে পটিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে কেন সুইটি আত্মহত্যা করেছেন সে ব্যাপারে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উম্মে সুলতানা সুইটির সাথে গত ৮ মাস পূর্বে মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রকাশ শাকিবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ওড়না পেছিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি । এ সময় পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে হলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কোন সন্দেহ নাই। মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্য ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা মোকদ্দমা করব না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা নিহত গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। নিহতের পরিবারের কারো কোন অভিযোগ না থাকায় রাতেই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।