পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) উদ্যোক্তার বড় অংকের শেয়ার বিক্রি আটকে দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রিতে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় কেপিসিএলে সামিট করপোরেশনের প্রায় ১৮০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি আটকে দেয়।
একই সঙ্গে কেপিসিএলের লেনদেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ডিএসই। বুধবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ৯ ধারার ৭ উপধারা ও ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ৫০ (১) অনুযায়ী, খুলনা পাওয়ারের লেনদেন স্থগিত করে ডিএসই। গত ৪ নভেম্বর কোম্পানির অন্যতম উদ্যোক্তা সামিট করপোরেশন কেপিসিএলের ১ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৫টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয় যা কেপিসিএলের মোট শেয়ারের প্রায় ৫ শতাংশ। এ ঘোষণায় পরদিন কেপিসিএলের শেয়ার ১০ শতাংশ দর হারায়। ৬ নভেম্বর অবশ্য শেয়ারটির দর প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বাড়ে।
সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ঘোষণা দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা কিংবা স্থানান্তর করতে পারেন। অবশ্য এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারধারণের পরিমাণ ন্যূনতম ৩০ শতাংশ থাকতে হবে। কেপিসিএলে উদ্যোক্তা পরিচালকদের বর্তমানে ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এ শেয়ারের উল্লেখযোগ্য অংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে সামিট গ্রুপের মূল কোম্পানি সামিট করপোরেশন লিমিটেড।
উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি আটকে দেয়ার বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, মূলত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে বড় অংকের উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রি স্থগিত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে ডিএসইর ক্ষমতা রয়েছে কোনো সিকিউরিটিজের লেনেদেন স্থগিত করার।
রকিবুর রহমান জানান, সামিট করপোরেশন যে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, সেটির বাজার মূল্য প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। আর বর্তমান বাজার বড় ধরনের বিক্রয়চাপ নিতে পারবে না। এর প্রভাবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার দর কমে যাওয়ার পাশাপাশি পুরো বাজারকে প্রভাবিত করবে, যা নির্বাচনের সময় পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক জানান, কেপিসিএলের উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছে যে, বিপুল পরিমাণের এ শেয়ার খোলা বাজারে বিক্রি করা উচিত হবে না। এজন্য ক্রেতা খুঁজে ব্লক মার্কেটে বিক্রির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সামিট করপোরেশন পরামর্শ গ্রহণ না করায় ডিএসই কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এক কোম্পানি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন গুজবে গত ২৭ আগস্ট থেকে মাত্র দুই মাসে কেপিসিএলের শেয়ার দর দ্বিগুণ হয়ে যায়। অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে সিরিয়াল ট্রেডিং হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন ডিএসইর একাধিক পরিচালক। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই।
গত ৩১ অক্টোবর কেপিসিএল তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ বোনাসসহ মোট ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর ৪ নভেম্বর সামিট করপোরেশন কেপিসিএলের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেয়। আগামি ২২ নভেম্বর রেকর্ড ডেট রয়েছে। লভ্যাংশ না নিয়ে রেকর্ড ডেটের আগে উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কেপিসিএলের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ টাকা ১৮ পয়সা যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।