আফ্রিকা, ভারতের পর এবার বাংলাদেশে দেখা মিলল ভয়ংকর ‘ফল আর্মাইওয়ার্ম’ পোকার। পৃথিবীব্যাপী বিধ্বংসী হিসেবে পরিচিত এই পোকার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গায়।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের একটি ভুট্টাক্ষেতে ভয়াবহ এ পোকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে।
কৃষকরা জানান, পোকাটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষেতে। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেও প্রতিকার মিলছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোকাটির কারণে প্রথমে ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের ভুট্টা চাষ। এরপর ছড়িয়ে পরবে ধান-গমসহ অন্যান্য ফসলেও। খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এই পোকা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ‘ফল আর্মাইওয়ার্ম’ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার শরিফুল ইসলাম জানান, ‘ফল আর্মাইওয়ার্ম’ একেবারেই অপরিচিত একটি পোকার নাম। সবচেয়ে শঙ্কার কথা হচ্ছে, ভারত হয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে ‘ফল আর্মাইওয়ার্ম’।
তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গায় শনাক্ত হয়েছে এই পোকার উপস্থিতি। এতদিন এ পোকা দেখা যেত আমেরিকা আর কানাডায়। পাতা ও কাণ্ড খেয়ে ফসল নষ্ট করে এ পোকা।
তিনি জানান, ‘ফল আর্মাইওয়ার্ম’ দিনে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি পাড়ি দিতে পারে। ২০১৭ সালে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্যশস্য নষ্ট করে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্যও এই পোকাকে দায়ী করা হয়।
এই বিশেষজ্ঞ জানান, এই পোকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর দিক হলো এরা দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। একদিনে জন্মগ্রহণ করে কয়েক হাজার।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুফি রফিকুজ্জামান জানান, গত বছরের ৩০ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক গোলাম মল্লিকের ভুট্টাক্ষেতে প্রথম ধরা পড়ে এ ভয়াবহ পোকার অস্তিত্ব।
তিনি জানান, পরে পোকার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ২২ ডিসেম্বর নিশ্চিত হওয়া যায় এ পোকাটিই ভুট্টা-ধানসহ ৮০ ধরনের ফসলের জন্য বিধ্বংসী ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিউর রহমান জানান, মরণঘাতী ‘ফল আর্মাইওয়ার্ম’ ধরা পড়ার পর তা নির্মূলে দিনরাত কাজ করছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি পোকাটি নির্মূলে গ্রহণ করা হচ্ছে নানা কার্যক্রম।
এই কৃষিবিদের মতে, পোকাটি গরমকালে দ্রুতবেগে বংশ বিস্তারে সক্ষম হলেও শীত মৌসুমে ভয়াবহতা কম। আর এ কারণে আক্রান্ত হওয়ার পরও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামের কৃষক রবজেল মন্ডল জানান, গত কয়েক বছর ধরে ‘নেক ব্লাস্টে’র কারণে গম আবাদ করা যাচ্ছে না। ধান ও পাটের আবাদে ধারাবাহিক লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। শুধু ভুট্টা আবাদই আমার মতো হাজার হাজার কৃষককে বাঁচিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেই ভুট্টায় ভয়ংকর এই পোকার আক্রমণ আমাদের দিশেহারা করে ফেলেছে।
একই উপজেলার রামনগর গ্রামের ভুট্টা চাষি সবদুল আলী। তার মতে, এখনই ফসলের জন্য এ পোকা দমনে সরকারি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে কৃষকদের।
তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন বিভাগ) ড. মো. আব্দুল মুঈদের। তার মতে, পোকাটি দমনে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে কৃষি অধিদপ্তর।