বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

তপ্ত রোদেও থামেনি রিকশার প্যাডেল

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম

তীব্র গরমে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গতকাল শুক্রবারের চেয়ে আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকায়  ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। রাজধানীতে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

আর চলমান এ তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ । জীবিকার তাগিদে প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করেও তারা রাস্তায় বের হচ্ছেন। বিশেষত ঢাকার রিকশা চালকরা পড়েছেন মহাবিপদে। কারণ ইট-পাথরের নগরীর যাত্রীবহুল মোড়গুলোতে নেই গাছপালা ও যাত্রী ছাউনি। এতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে যাত্রী ধরতে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। তপ্ত রোদেও থামাতে পারেনি নিম্নআয়ের এসব মানুষের রিকশার প্যাডেল। 

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার , বাংলামোটর ও মোহাম্মদপুর ছয় রাস্তার মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই মোড়গুলো জনবহুল হওয়ায় রিকশাচালক ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকদের ভিড় লেগেই থাকে। বেশ ক’দিন ধরে চলা প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেও এসব মোড়ে রিকশা ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকদের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কারণ গরমে আগের তুলনায় সড়কে যাত্রীসংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই যাত্রী ধরতে কাঠফাদা রোদের মাঝে চালকরা দাঁড়িয়ে থাকছেন। অনেক চালককে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গেই রোদের তাপ বাড়তে থাকে। এতে আমাদের আগের মতো ইনকাম হচ্ছেনা। কারণ রাস্তায় আগের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা কম। বিশেষ করে একবার যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে, শরবত বা ঠান্ডা পানি খেয়ে ফের রাস্তায় বের হতে হয়। এতে ইনকাম কমে যাচ্ছে।

মোহাম্মদপুর  ছয়রাস্তায় মোড়ে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক মাসুদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১৫ মিনিট ধরে যাত্রীর জন্য এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রোদে গা পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। তবুও জীবন চালানোর জন্য রোদকে সহ্য করতেই হয় আমাদের। নয়তো সংসার চলবে না। ঢাকা শহরের মোড়গুলোতে গাছপালা খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রাম হলে কাজের ফাঁকে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেওয়া যায়। কিন্তু ঢাকা শহরে সেটা সম্ভব হয়না।

এদিকে ফার্মগেট থেকে বাংলামোটরে যাত্রী নিয়ে এসেছেন মো. আল আমিন (৪০)। পুরো শরীর গামে ভেজা। নিজের কাছে থাকা গামছা দিয়ে ঘাম মুছছেন, আরেক হাতে টাকা নিচ্ছেন। টাকা নেওয়ার পর রিকশা রেখেই গেলেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শরবতের দোকানো। সেখানে ২০ টাকা দিয়ে এক গ্লাস শরবত খেলেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন আয়ের কিছু অংশ ঠান্ডা পানি খেতেই ব্যয় হচ্ছে। কিছক্ষণ পর পর গলা শুকিয়ে যায়, তাই শরবত বা ঠান্ডা পানি খেতে হয়। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।

এদিকে তীব্র গরমের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। এই ছুটি শেষে আগামী ২৮ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। চলমান দাবদাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত