বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পত্রিকা খুললে এখন শুধু লুট আর লুট ছাড়া কিছুই পাবেন না। অদ্ভুত! কারা লুট করছে? যারা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রের বড় দায়িত্বে, আর্মির সাবেক প্রধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান, আইজি; তাদেরটা বেরিয়ে আসছে। সংসদ সদস্য চোরাচালানির সাথে জড়িত, মাদকপাচারকারীও সংসদ সদস্য ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে; এই কোন সমাজ বলেন আপনারা।
রবিবার দুপুরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ওপরে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব ক্ষোভের কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে যায়, সোনা হারিয়ে যায়, ডলার রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকিং হচ্ছে, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার নিয়ে চলে যাচ্ছে, শেয়ারবাজারে রথি-মহারথিরা লুটপাট করে শেষ করে দিচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব (আবুল মাল মুহিত) বলেছিলেন- আমার কিছু করার নাই, ওদের হাত অনেক লম্বা।
তিনি বলেন, পত্রিকায় আসছে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকের শাখা থেকে ১৪৯ ভরি সোনা লোপাটের ঘটনা। এখন থেকে ১৪৯ ভরি সোনা তো কিছুই না ভাই, ব্যাংক থেকে তো টনকে টন সোনা চলে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনো দিকে কোনো চিন্তা নাই জবাবদিহিতা নাই, কিচ্ছু নাই।একটাই চিন্তা, আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে রাখতে হবে, কেউ নড়াতে পারবে না। তার জন্য আমি আমার চতুর্দিকে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে আমার সমস্ত রক্ষী তৈরি করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি যদি এইসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কথা শুনেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখেন এরা আমাদের প্রভু। ওই এক প্রভু আজকে কোথায় গেছে? পিস্তল দেখিয়ে বলতো এটা এমনি দেওয়া হয় নাই, এটা ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছে। করেছেনও ব্যবহার, মানুষকে মেরেছে, গুম করে রেখে... এখন আপনি (বেনজীর আহমেদ) কোথায়? তার (বেনজীর আহমেদ) সম্পর্কে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান বলছেন, আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানিনা।তাহলে রাষ্ট্র কিছুই জানে না। তাহলে এটা রাষ্ট্র আছে এখন?
তিনি বলেন, দেখেন ঋণ নিয়ে নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে। এদের যুক্তি হচ্ছে, ২০ বছর ধরে আমরা এটা করব, তারপরে আমরা নাই, যা হবার তাই হবে। কত দায়িত্বহীনতা। একটা ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঋণের ওপর দিয়ে রেখে যেতে চায়। এখনই ইতোমধ্যে সেই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে দেশকে রক্ষা করার, আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার, আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার। এই যে সরকার- আমি আগেই বলেছি এরা সরকার নয়, এরা বর্গী, ডাকাত, লুটেরা। এদেরকে যদি আমরা প্রতিরোধ করতে না পারি, ঠেকাতে না পারি, আমাদের দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারব না। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং আমরা দেশকে মুক্ত করার জন্য কাজ করি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।
জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্ম তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের প্রত্যেকটি কাজ দূরদৃষ্টি সস্পন্ন। ফারাক্কা, ভারতের সাথে সম্পর্ক, ইউরোপের সঙ্গে সস্পর্ক, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গি আছে। মেয়েদেরকে কি করে ওপরে তুলবেন, শিশুদের কি করে মানুষ হিসেবে তৈরি করবেন, ছাত্রদের কি করে সঠিক পথে নিয়ে যাবেন সেই কাজগুলো জিয়াউর রহমান করেছেন।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক শামসুল আলম লিটন ও ডা. আবু নাছের বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া প্রবীন চিকিসক আবদুল হক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজীসহ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।