ফরম্যাট বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতেই সবচেয়ে দুর্বল ক্রিকেট খেলে থাকে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রতিভা এবং সামর্থ্য নিয়ে বরাবরই আশায় বুক বাঁধেন দেশের ক্রিকেট পণ্ডিত থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকেরা। তবুও এই স্বল্প সামর্থ্যের বাংলাদেশের সামনে প্রদীপের দৈত্যের তিন ইচ্ছা পূরণের মতো আচমকা সুযোগ এসেছিল প্রথমবার কোনো বিশ্বকাপ আসরের সেমিফাইনাল খেলার।
দেশের সাবেক দুই সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মর্তুজা এবং তামিম ইকবাল দুজনেই মনে করেন ১২.১ ওভারে ১১৬ রান তাড়া করে সেমিফাইনাল খেলার জন্য সর্বোচ্চটুকু দেওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশের। সেটা তো পারেইনি, তার জন্য ন্যূনতম চেষ্টাটুকুও দেখা যায়নি বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। হয়তো মানসিকতার দিক থেকে অপরিপক্ক বাংলাদেশ দল ও ম্যানেজমেন্ট সেই সাহসটুকুই দেখাতে পারেননি। কিংবা বোঝেননি বিশ্বকাপের মতো আসরে সেমিফাইনাল খেলার মর্ম।
আজ ম্যাচশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাশরাফী বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘অথচ আজকের হিসাবটা ছিলো শুধুই ১২.১।এর বাইরে কিছুই ভাবার সুযোগ ছিলোনা।তাতে যদি ৫০ রানেও দল অল আউট হতো অন্ততো সবাই সেটা সহজ ভাবে নিতো। আর যদি এই ম্যাচ জিততাম,তাও বিবেকের কাছে হেরে যেতাম। এ ম্যাচ আর দশটা ম্যাচের মতো ছিলোনা আমাদের জন্য,এটা ছিলো ইতিহাস গড়ার সমান। এরপরও অবশ্যই আশা দেখি বা দেখবো ইনশাল্লাহ।হয়তো কোন একদিন ……..’
ইএসপিএনক্রিকইনফোর টাইম আউট অনুষ্ঠানে তামিম ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়ার জন্য যাওয়া উচিত ছিল। এতে যদি ৬০- ৭০ রানে আউট হয়ে যেতে হয় তারপরও। আজকে সুযোগ ছিল খুব বিশেষ কিছু করার। আর এমন সুযোগ সবসময় আসে না।’
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে কেউই জোর গলায় বলেননি বাংলাদেশ সুপার এইটে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর সেই আশার শুরু। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হৃদয় বিদারক হার সেই আশায় জাগিয়েছিল সঞ্চার। একে একে নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়ে দাপটের সঙ্গেই সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ।
সুপার এইটে দুই সাবেক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সামনে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্যতার চিত্র। আজ আফগানদের কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক শান্ত যদিও বলেছেন, ‘নিজেদের জায়গায় পুরোপুরি সৎ ছিলেন ক্রিকেটাররা, দিয়েছেন শতভাগ’। তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়- হয় এ দলটির ব্যাটসম্যানরা উঁচু পর্যায়ে খেলার যোগ্য নন, না হয় এ ব্যাটসম্যানদের ঘিরে কৌশল কিংবা পরিকল্পনা- কোনোটিই সাজাতে পারে না টিম ম্যানেজমেন্ট।
শান্ত স্বীকার করে নিয়েছেন, ৩ উইকেট হারানোর পর সেমিতে যাওয়া বাদ দিয়ে ‘ম্যাচ জিতে বাড়ি ফেরা’ নামক ‘প্ল্যান বি’ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। ওইখানেই স্পষ্ট হয় দলগত পরিকল্পনার ঘাটতির জায়গাটি। না হলে ৯.৫ রান রেটে ১২.১ ওভারে ১১৬ রান তাড়া করতে আপনি কেন এমন ব্যাটসম্যানদের আগে পাঠাবেন যারা লড়াই করছেন নিজেদের ফিরে পেতে।
প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানদের দিয়ে এ রান তাড়ার পরিকল্পনা করার পরও ব্যাটিং অর্ডারে কোনো পরিবর্তন নেই। ইনফর্ম হৃদয়, ফিনিশার মাহমুদউল্লাহ, হার্ড হিটার রিশাদ হোসেনের বদলে তানজিদ, শান্ত, ফর্মহীনতায় একাদশ থেকে বাদ পড়া সৌম্যকে বেঁছে নেওয়াই প্রশ্নবিদ্ধ করে দলের নিবেদনকে। অথচ একই ম্যাচেই ডিএলএস পদ্ধতিতে ম্যাচ হারা এড়াতে সবার সামনে ক্র্যাম্পের অভিনয় করতেও দ্বিধাবোধ করেননি আফগানিস্তানের গুলবাদিন নাইব।
দিনশেষে বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরেছে। লজ্জার ষোলকলা পূর্ণ করে সুপার এইট পর্বে নিদারুণ ব্যর্থতার গল্প লিখে আর ভবিষ্যতে ভালো করার প্রত্যাশা জানিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরার আগে সমর্থকদের কাছে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন শান্ত। বাড়ি এসে তারা শোধরাবেন নিজেদেরকে। আর অস্ট্রেলিয়াকে টপকে সেদিনের সেই পুঁচকে আফগানিস্তান সেমিফাইনাল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।