বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

দেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম

পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছি বলেই দেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন। এরপর ২৯ বছর বাংলাদেশের মানুষের জীবনে কোনো উন্নতি হয়নি, পরিবর্তনও ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।

আজ রবিবার সকালে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৩২টি ক্যাটাগরিতে ৭৭ রপ্তানিকারকের মাঝে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

এ সময় রপ্তানির জন্য নতুন পণ্য ও বাজার খোঁজার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কোনো একটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। রাজনৈতিক নয়, এখনকার কূটনীতি হবে অর্থনৈতিক।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের আর একটি কথা বলব আসলে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে ইউরোপীয় দেশগুলো কিংবা আমেরিকাই বলেন, তাদের মূল্যস্কীতি বেশি এবং অর্থনীতি কিন্তু খুব চাপের মুখে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু নতুন সুযোগ আছে। মিডলইস্ট, গালফ কান্ট্রি, আফ্রিকা, সাউথ এশিয়া, সাউথ ইস্ট এশিয়া, ইস্ট এশিয়ান কান্ট্রিগুলো, ইস্ট ইউরোপীয় কান্ট্রিগুলো এদের সাথে যত বেশি আমরা আমাদের যোগাযোগ রাখতে পারব, আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে পারব। এই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে কাজ করছি। মাঝে মাঝে প্রতিনিধিও পাঠাচ্ছি এসব জায়গায়।

তিনি বলেন, আমি আপনাদেরও বলব এসব দেশের দিকে আপনারা আরো বেশি করে নজর দেন। কারণ, যেসব দেশের সঙ্গে এত দিন আমরা রপ্তানি বাণিজ্য করতাম তাদের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে, দারিদ্রের হার বেড়ে গেছে, সেখানকার অবস্থা হয়তো ওপর দিয়ে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু সেসব দেশে যারা থাকে তারা জানে। সেজন্যই আমাদের নতুন নতুন জায়গা এবং নতুন নতুন পণ্য খুঁজতে হবে।

তিনি এসময় রপ্তানি বাস্কেটটকে স্ফিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা কেবল আরএমজি পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল থাকব কেন? ট্রেন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পোশাকের ডিজাইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সরকার এজন্য বেসরকারি খাতের সহায়তায় ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় করেছে কেননা এক্ষেত্রে গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে।

বর্তমান যুগ ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ এবং সেভাবেই বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে সরকারের নির্দেশ দেওয়া রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো দেশের বাজারে আমরা ঢুকতে পারব। সেটা সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা করব কিন্তু ব্যবসায়ীদেরও নিজেদের পার্টনার নিজেদের খুঁজে নিতে হবে। সেদিকেও আপনাদের নিজেদের দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের উৎপাদন যেমন বাড়াব, রপ্তানিও বাড়াবো আবার দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবেও আমরা এগিয়ে যাব।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘরে ঘরে ইন্টারনেট, ছেলে মেয়েদের জন্য কম্পিউটার ট্রেনিং ও কম্পিউটার ইনকিউবেশন সেন্টার করে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা ও ভোকেশনাল ট্রেনিংকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব যখন আসবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জনশক্তি তৈরী করা-এটাও আমাদের জন্য প্রয়োজন। সেভাবে উপযুক্ত জনশক্তি তৈরীতে তাঁর সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে।

তিনি বলেন, স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়ে এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের যুব সমাজ যাতে এগিয়ে আসে। এজন্য ‘কোম্পানি আইন’ সংশোধন করে সরকার ‘ওয়ান ম্যান কোম্পানি’ করার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনে নারীদের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে সেখানে নারীরা চাইলে আলাদা ভাবে প্লট নিয়ে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। কারণ, আমি চাই আমাদের সমাজে মেয়েরাও এগিয়ে আসুক এবং তারাও এই ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হোক, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আজ জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণকালে অনেক যুব উদ্যোক্তা দেখতে পেয়ে তিনি আনন্দিত হয়েছেন। অনেকেই বাবার ব্যবসা ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং ট্রফি হাতে তুলে নিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি শিরোনামে ১টি বিশেষ ট্রফিসহ (স্বর্ণ) মোট ২৯টি স্বর্ণ, ২৭টি রৌপ্য এবং ২১টি ব্রোঞ্জ ট্রফি প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম বক্তৃতা করেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত