ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী মনে করেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে গণগ্রেপ্তার চলছে তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে। আজ বুধবার চলমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান আন্দোলন ও পরিস্থিতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলা করায় সরকার এখন পর্যন্ত নিজেদের দক্ষতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারেনি জানিয়ে অধ্যাপক ড. সাবের বলেন, আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে অন্তর্গত জায়গাগুলো ফুঁসে উঠেছে। এতে ক্ষোভের দাবানল যেকোনো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা থেকেই যায়।
এই আন্দোলন থামাতে সরকারের করণীয় কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার শুরুতে সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেনি এটা বড় ভুল। শুরুর দিকে আলাপ আলোচনা করলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আপাতত এই আন্দোলনের যে সমন্বয়ক আছেন তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। তারা বন্দি থাকলে এটা নেতিবাচক বার্তা দেবে এবং ক্ষোভ তৈরি করবে। তাদের ডিবির হেফাজতে রেখে যতই বিবৃতি দেওয়া হোক তাতে কোনো ভাবেই আন্দোলন দমানো যাবে না। এর চেয়ে বরং তাদের ছেড়ে দিয়ে ক্লোজ অবজারভেশনে রাখতে পারে পুলিশ তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে।
শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও ক্ষোভ প্রকাশের জায়গা সরকারকে করে দিতে হবে ও পুলিশকে অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই এবং বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এগ্রেসিভভাবে মোকাবিলা করতে গিয়ে তা নানাভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের এগ্রেসিভ আচরণ পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের মুক্তির দাবিতে ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ালে তাতে বাধা দেওয়া যাবে না।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, 'একটা উদাহরণ দেই, আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের পাশে ছাত্র ও শিক্ষকদের সম্মিলিত সমাবেশে এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ জোরপূর্বক আটক করতে চাইলে বাধা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দুজন শিক্ষক। এতে পুলিশের ধাক্কায় আহত হন শিক্ষক শেহরীন আমিন। এ রকম ক্ষেত্রে আন্দোলন তো দমন হবেই না উল্টো তা গণ ক্ষোভের দিকে অগ্রসর হতে পারে। পুলিশ যদি মাথা ঠান্ডা রেখে আটক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকদের কাছে ছেড়ে দিত তাহলে তা ইতিবাচক বার্তা দেবে। পুলিশ কেনো জন দূরত্ব তৈরি করছে তা বুঝতে পারছি না। এই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে মানুষের কাছে পুলিশের যে ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে তা পুনরুদ্ধার করতে অনেক সময় লাগবে'।
যেসব শিক্ষার্থী নির্দোষ তাদের আটক ও গ্রেপ্তার না করে ছেড়ে দিতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির কথা শুনতে হবে মনোযোগ দিয়ে তারপর যতটা সম্ভব সেই দাবি মেনে নিতে হবে। যখন মানুষ কথা বলতে পারে না তখন তারা চোরাগোপ্তা হামলায় চলে যায়। এখন যে পরিস্থিতি তাতে করে এই আন্দোলন সেই পথে যাওয়ার একটা ঝুঁকি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে পারছে না, দাবি জানাতে পারছে না এতে তারা প্যানিক হয়ে যাবে। ফলে তারা যেকোনো ভুল পথে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরী করে। সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনায় বসা।