চট্টগ্রাম বন্দরের কুতুবদিয়া অ্যাংকরেজ এরিয়ায় নোঙর করে রাখা এলপিজি বহনকারী একটি লাইটার জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ৩৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে আগুন। এর আগে জাহাজ থেকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারীদলের সহায়তায় জাহাজে থাকা ৩২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে আগুনের ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ক্যাপ্টেন ফরমান উল্লাহ আনসারী। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলেই রয়েছি। জাহাজের আগুন সম্পূর্ণভাবে নিভে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শিপিং এজেন্ট সূত্রে জানা যায়, ‘ক্যাপ্টেইন নিকোলাস’ জাহাজে করে ওমান থেকে ৪২ হাজার ৯২৫ টন এলপি গ্যাস আমদানি করা হয়। গত ৬ অক্টোবর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপকূলে নোঙর করে। সেখান থেকে লাইটার জাহাজে করে আমদানিকারকরা গ্যাস নিয়ে যাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে শিপ টু শিপ (জাহাজ থেকে জাহাজ) ট্রান্সফার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথম চালানে ক্যাপ্টেইন নিকোলাস জাহাজ থেকে একটি লাইটার জাহাজে করে প্রায় ৩ হাজার ২০০ টন গ্যাস নিয়ে গেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্যাস। দ্বিতীয় চালানে শনিবার রাতে লাইটার জাহাজে স্থানান্তর করা হচ্ছিল ইউনিট্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের গ্যাস। ইউনিট্যাক্সের মালিক হলেন আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) মেয়ে জামাই বেলাল আহমেদ। জাহাজে ইউনিট্যাক্সের আরও প্রায় সাত হাজার এলপিজি রয়েছে। মাদার ভেসেলে থাকা গ্যাস থেকে কি ইউনিট্যাক্স আবারও গ্যাস নিতে পারবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেইন নিকোলাস জাহাজের এজেন্ট এবং সিওয়েভ মেরিন সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ ছামিদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইউনিট্যাক্সের তিন লাইটার জাহাজে ১০ হাজার টন এলপিজি ছিল। এক লাইটার জাহাজের এলপিজি আগুনে পুড়ে গেলে আরও দুই লাইটার বাকি থাকবে। মাদার ভেসেল থেকে খালাস শুরু হলে আগের ধারাবাহিকতায় যার যার গ্যাস পেয়ে যাবে।’
এদিকে ‘ক্যাপ্টেইন নিকোলাস’ ও আরও একটি জাহাজ ‘গ্যাস জিএমএস’ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী। অভিযোগে বলা হয়েছিল, জাহাজ দুটি ইরান থেকে পণ্য লোডিং করে চট্টগ্রামে এনেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল। সেই কমিটির সদস্যরা জাহাজ পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিয়েছেন এ জাহাজ দুটি ইরান থেকে আসেনি।
উল্লেখ্য, সাগরে এলপিজি গ্যাস স্থানান্তর খুব ঝুঁকিপূর্ণ। পানির ঢেউ কেমন, বাতাসের গতিবেগ, তাপমাত্রা সবকিছু বিবেচনা করে শিপ টু শিপ পদ্ধতিতে গ্যাস ট্রান্সফার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া রাতের বেলা গ্যাস স্থানান্তর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাহলে ওই রাতে কীভাবে স্থানান্তর করা হচ্ছিল এ বিষয়ে অন্য এক লাইটার জাহাজের ক্যাপ্টেন জানান, দিনের আলোতে দুই জাহাজের হোসপাইপ (যা দিয়ে গ্যাস স্থানান্তর হবে) সংযুক্তকরণের পর রাত পর্যন্ত গ্যাস স্থানান্তর করা যাবে। তবে রাতে নতুন করে হোসপাইপ লাগানো যাবে না।