বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা 

আন্দোলনে ভাইকে নিহত দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে মামলা 

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পিএম

সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জীবিত ভাইকে মৃত দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে হত্যা মামলা করেন মোস্তফা কামাল। যাত্রাবাড়ী থানার কমকর্তা এসআই মোরশেদ আলমের তদান্তে বের হয়ে এসেছে এমন তথ্য।

জানা যায়, দুলাল ওরফে সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে আন্দোলনে ‘নিহত’ দেখিয়ে মামলা করেন তার ভাই মোস্তফা। সম্প্রতি সেই দুলাল ওরফে সেলিমকে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর কাজলায় গোলাগুলিতে ঠিকানা পরিবহনের বাসের হেলপার দুলাল নিহত হয়েছেন, এমন অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে হত্যা মামলাটি করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, দুলাল নিহত হননি। ২৬ ডিসেম্বর দুলাল ওরফে সেলিমকে আদালতে হাজির করে তদন্ত কমকর্তা এবং স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। তবে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান জবানবন্দি রেকর্ড করেননি। ওই ব্যক্তি দুলাল কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আরও ডকুমেন্ট  হাজির করার নিদেশ দিয়েছেন আদালত।

তদন্ত কমকর্তা বলেন, ‘মামলার তদন্তে গিয়ে দুলালকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করি। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী-এমপিরা আসামি। ভুক্তভোগী দুলাল ওরফে সেলিম স্ত্রীকে নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার বেলতলী বাজার এলাকায় বাস করে।’

যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগে ফুলবাড়িয়া থানা থেকে পুলিশ আসে। আমার নাম জিজ্ঞাসা করে। আমার নাম সেলিম, পরে মামলার বিষয়ে জানালে আমি বলি, কিছু তো জানি না। আমাকে বলে, আপনি তো ৩ আগস্ট গুলিতে মারা যান। আমার ভাইয়েরা আমাকে মেরে ফেলেছে। আমি তো কবরস্থানে আছি। সেখান থেকেই কথা বলছি। পরে পুলিশ আমার কথাবার্তা রেকর্ড করে নিয়ে যায়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশ আমাকে কোর্টে নিয়ে যায়।’

দুলাল ওরফে সেলিম বলেন, ‘আমরা চার ভাই। আমি সবার ছোট। আমার দুই মেয়ে। ছেলে নাই। তিন ভাই আমার সম্পত্তি তাদের ছেলেদের নামে লিখে দিতে বলে। তা না দেওয়ায় আমার ওপর অত্যাচার শুরু করে। মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাদের ভয়ে বাপের ভিটা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছি।’

তিনি বলেন, ‘তিন ভাই মিলে আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। তারা এত বড় ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা হলো সুবিধাবাদী। যখন যে সরকার আসে, তার কাছ থেকে সুবিধা নেয়। ২০২২ সালে জমি নিয়ে ঝামেলা হয়। তাদের নামে মামলা করেছি। মামলা এখনো চলছে। মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়। না তোলায় অত্যাচার শুরু করে। এর মাঝে ছাত্র আন্দোলন আসে। আমাকে মৃত দেখিয়ে মামলা করল। হয়ত আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে। আমি ঢাকা ছেড়েছি ৮-৯ বছর আগে। আমাকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় গুলিতে নিহত হিসেবে দেখিয়েছে। সম্পদের লোভে হয়ত তারা আমাকে মেরে ফেলবে।’

দুলাল ওরফে সেলিম বলেন, ‘মোস্তফার নামে তিনটি মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সে কোথায় আছে, কেউ খুঁজে পাচ্ছে না,পুলিশও তাকে খুঁজছে।’

ঠিকানা পরিবহনের বাসে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাল ওরফে সেলিম বলেন, ‘বেলতলী এলাকায় নিজের একটা দোকান আছে। ভাইদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে সেখানেই স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। আমি কখনো কোন বাসের হেলপার ছিলাম না।’

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়  গত ৩ আগস্ট কাজলা এলাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। সেই গুলি দুলালের মাথায় গুলি লেগে মারা যায়।

মামলার অপর আসামিদের মধ্যে আছেন— সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, রমেশ চন্দ্র সেন, আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, মশিউর রহমান মোল্লা সজল, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত