গত জানুয়ারি মাসে দেশে কমপক্ষে ১২৪ টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৫ জন নিহত ও কমপক্ষে ৯৮৭ জন আহত হয়েছেন। নিহত ১৫ জনের মধ্যে বিএনপির ৮ জন এবং আওয়ামী লীগের ৬ জন। আর এসব সহিংসতার ৬৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে। যাতে ৫ জন নিহত ও ৬৭৭ জন আহত হয়েছেন। মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. ইজাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন গত সোমবার প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসলে জনতার মাঝে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের আকাঙ্খা সৃষ্টি হলেও তার প্রতিফলন মূলত ঘটেনি। সরকার এবং সংশ্লিষ্টরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারেনি।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের আশা থাকলেও এর প্রকৃত অবস্থা হতাশাজনক। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এতে নতুন ধারাও যুক্ত হয়েছে। মাসজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা, হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, গণপিটুনিতে হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন, দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে ভূক্তভোগী পরিবার ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে ৪ জন এবং বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন।
এইচআরএসএস’র তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে রাজনৈতিক সহিংসতার ২২টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপি- আওয়ামী লীগের মধ্যে। যাতে চারজন নিহত ও ১০৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৩টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। এতে একজন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে সংঘর্ষে চারজন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অন্তর্কোন্দলে ৫টি, ছাত্রলীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে ৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে কমপক্ষে ১২৭ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৪ জন, যাদের মধ্যে ২৮ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এছাড়া ৮৮ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৫২ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মাসে অন্তত ১৯ টি হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ২৮ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ১৯ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন দুইজন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন সাংবাদিক।