বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে যেভাবে ফাঁসলেন কুবি শিক্ষক

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৪ এএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) অভিযুক্ত শিক্ষকের পড়ানো কোর্স মোবাইল জার্নালিজম (এমসিজে ৩০৮) সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ওই ব্যাচের কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ ও মোবাইল জার্নালিজম নামে দু’টি কোর্স নিয়েছেন এই শিক্ষক। এ ঘটনায় তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

বুধবার (১২ মার্চ) পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান রাহাত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একটি মেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আসে। অভিযোগে বলা হয়, ওই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি তাকে একাধিকবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন।

জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর ১ম সেমিস্টারে ৩.৬৯, ২য় সেমিস্টারে ৩.৮৯, ৩য় সেমিস্টারে ৩.৬৩, ৪র্থ সেমিস্টারে  ৩.৮৯ এবং সর্বশেষ ৫ম সেমিস্টারে ৩.৯৪ সিজিপিএ রয়েছে। 

ওই ব্যাচের কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ পরীক্ষা গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ওই নারী শিক্ষার্থীর কাছে সরবরাহকৃত পিডিএফের মেটাডাটা যাচাই করে দেখা যায় ২ নং প্রশ্নের উত্তরের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৬টা ৪৭ মিনিটে। একই সাথে ৪ নং প্রশ্নের উত্তরের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে।

আইসিটি অ্যান্ড সোসাইটি পরীক্ষাটি গত ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। ওই শিক্ষার্থীর কাছে থাকা পিডিএফের মেটাডাটা যাচাই করে দেখা যায় প্রশ্নের ৬ থেকে ১০ নং পর্যন্ত যে প্রশ্ন ছিলো তার হুবহু লিখা পিডিএফের ফাইলটি তৈরি করা হয়েছে ২ মার্চ রাত ১১টা ৩ মিনিটে।

গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টার চুড়ান্ত পরীক্ষা এমসিজে ৩০৫ গুণগত গবেষণা পদ্ধতি কোর্সের ২, ৩, ৪ ও ৫ নং প্রশ্নের সাথে ওই নারী শিক্ষার্থীর কাছে থাকা উত্তরপত্রগুলোর হুবহু মিল পাওয়া যায়।

প্রশ্নের সাথে উত্তরপত্রের হুবহু মিল থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইসিটি এন্ড সোসাইটি কোর্সের শিক্ষক অমিত দত্ত বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করে সেই প্রশ্ন পরীক্ষা কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছি। এখানে যদি অনৈতিক কিছু ঘটে থাকে তাহলে পরীক্ষা কমিটির সদস্যরাই সেটি ভালো বলতে পারবে।’ 

উক্ত ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, ‘প্রশ্ন যখন মডারেশন হয় তখন পরিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরাও থাকেন। এখানে প্রশ্ন ফাঁস হলে যে কারো কাছ থেকে হতে পারে। অভিযুক্ত ঐ শিক্ষকও পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন।’

ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, ১ম সেমিস্টার থেকেই কাজী আনিছের সহযোগিতায় এই ওই শিক্ষার্থী বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক কাজী আনিছের সঙ্গে সখ্যতার কারণেই ওই শিক্ষার্থী অভাবনীয় ফলাফল করে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে আগামীকালের পরীক্ষা স্থগিত করেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় প্রশ্নের বিষয়ে ধারণা দিয়ে থাকি, নোটও দিয়ে থাকি। এটাকে কাজে লাগিয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছে।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. নরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে একটি উড়ো চিঠি এসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়ন করব।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে তিনি অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বাহিরে থাকবেন। 

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত