নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি না নিলে বন্দরে জট সৃষ্টি রোধে মাশুল চালুর সুফল পেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইয়ার্ডের ভেতরে গত মাসে যেখানে ৪৪ হাজারের বেশি একক কনটেইনার মজুদ ছিল এখন তা নেমে এসেছে ২৯ হাজারে। অর্থাৎ গত ১০ মার্চের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি না নিলে চারগুণ হারে মাশুল দেওয়ার আদেশ জারি করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন আদেশ বাতিল চেয়ে চিঠি দিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক চিঠিতে চারগুণ হারে মাশুল (স্টোররেন্ট) প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়। জানা যায়, একটি ২০ ফুটের একক কনটেইনার নির্ধারিত চারদিনের ফ্রি টাইমের পর প্রথম সাত দিনের জন্য মাশুল আসবে ৬ ডলার হিসেবে এবং ৪০ ফুটের কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১২ ডলার হিসেবে। পরবর্তী সময়ে সাত দিনের প্রতিদিনের জন্য ২০ ফুটে আসবে ১২ ডলার ও ৪০ ফুটে ২৪ ডলার। তৃতীয় সাতদিনের প্রতিদিনের জন্য ২০ ফুটে ২৪ ডলার এবং ৪০ ফুটে ৪৮ ডলার করে মাশুল। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জারি করা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে এসব মাশুলের সঙ্গে চারগুণ হারে ফি দিতে হবে আমদানিকারকদের। আর এতেই বিপত্তি দেখছে বিজিএমইএসহ বিভিন্ন আমদানিকারক। সবার আগে বিজিএমএই তা প্রত্যাহারের আবেদন জানাল।
কিন্তু বিজিএমইএর এই আবেদন এখনই গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে এই মাশুল জারি করেছিলাম। এতে বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি হয়েছে এবং ভোক্তারা এ ব্যাপারে সাধুবাদ জানিয়েছে।
কিন্তু এখন যে আমদানিকারকরা তা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পণ্য আমদানি হয় ভোক্তাদের জন্য। ভোক্তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। মাশুল প্রত্যাহারের জন্য শুধু আমদানিকারকরাই আবেদন জানিয়েছে। তাই আমি মনে করি এই মাশুল বলবৎ থাকা উচিত এবং তা থাকবে।
এদিকে বন্দরের অভিযোগ রয়েছে আমদানিকারকরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য বন্দর থেকে বিলম্বে পণ্য ডেলিভারি নিতে চেয়েছিলেন। আমি তা বন্ধ করতে একটি নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে চারগুণ মাশুল আদায়ের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক সময় যা ৪৪ হাজার একক কনটেইনারের ওপরে ছিল এখন তা ২৯ হাজারে নেমে এসেছে। এখনো যারা নেননি তাদের তো মাশুল দিয়েই কনটেইনার নিতে হবে। এছাড়া শুধু বন্দরের ইয়ার্ডের ভেতরের কনটেইনার নয়। যারা লাইটার জাহাজে (মাদার ভেসেল থেকে পণ্য নিয়ে যেসব জাহাজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়) পণ্য বোঝাই করে সাগরে ভেসে বেড়ায় সেগুলোকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দরের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বন্দর থকে। অর্থাৎ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বন্দর চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগকে পজিটিভ উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বন্দরে কনটেইনার নামার পর চারদিনের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি নিলে কিন্তু কোনো জরিমানা দিতে হচ্ছে না। চারদিন কিন্তু কম সময় না। আর বন্দরকে পণ্যের স্টোরেজ হিসেবে রাখা সমীচীন নয়।’
তিনি আরও বলেন, বন্দরের উদ্দেশ্য কিন্তু জরিমানা আদায় নয়। বন্দর থেকে যাতে পণ্যগুলো দ্রুত ডেলিভারি নিয়ে নেওয়া হয় তা নিশ্চিত করা।
এদিকে বন্দরের মাশুল প্রত্যাহারের দাবিতে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকদের প্রতি এই মাশুল চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের এই শিল্পটি। তাই দেশের রপ্তানি আয় ও পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চারগুণ মাশুল আদায়ের আদেশ প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।’
পোশাক শিল্পের মালিকরা জানান, পোশাক শিল্পে এলসিবিহীন পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল করোনাকালে। পরবর্তী সময়ে গত বছর এই সুযোগ দ্বিগুণ দেওয়া হয়। এতে অনেক বেশি পণ্য আমদানি হয় কিন্তু ফ্রি এলসি সুবিধায় আনা পণ্যগুলো ছাড়করণে কাস্টমস দীর্ঘসূত্রতা করে। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ২০০ কারখানা বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ কারখানাগুলোর আমদানি পণ্য বন্দরে এসে পড়ে থাকায় ডেলিভারি বিলম্বিত হতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯৩ শতাংশ পরিবাহিত হয়। কিন্তু আমদানিকৃত এসব পণ্য অনেকে নির্ধারিত সময়ে বন্দর থেকে ডেলিভারি নেয় না। এতে বন্দরের ভেতরে কনটেইনার জট বৃদ্ধি পায়।