রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বন কর্মকর্তার সহযোগিতায় টেন্ডার ছাড়াই গাছ কাটার অভিযোগ

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১০:০২ এএম

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার উত্তর খোশবাস ইউনিয়নে ২৮ বছর আগে এল জি আর ডি বিভাগের সৃজন করা ২০০ থেকে ৩০০টি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই গাছগুলি কেটে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার কাউছারির নেছা জানান, ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে বরুড়ার উত্তর খোশবাস ইউনিয়নের রামমোহন বাজার থেকে হরিপুর বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বেল, শিশু, রেন্ট্রি এবং আকাশমনি গাছ রোপণ করা হয়েছিল। ২৫-৩০ বছর আগে রোপিত এই গাছগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০-৩০ হাজার টাকা করে প্রতি গাছের। তবে, ২০২২ সালে রাস্তা সম্প্রসারণের অজুহাতে সাবেক এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলের নেতৃত্বে এল জি আর ডি থেকে সমাজিন বন বিভাগ গাছের টেন্ডার করেন এবং সেগুলো কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। সাবেক এমপির দলীয় নেতাকে নামে মাত্র টাকায় টেন্ডার দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার দামী গাছ কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু আমার নেতৃত্বে ১০ জন নারী এই গাছগুলো সংরক্ষণ করেন। আমাদের সরকারি বন্টন অনুযায়ী মোট টাকার ৬০ শতাংশ দেওয়ার কথা বলে উপজেলা বনকর্মকর্তা সকল কাগজপত্র নিয়ে যান ৬০ লাখ টাকা টেন্ডার পাওয়া গাছ থেকে আমাদের প্রতিজনকে ৮৭ হাজার টাকা করে অনেক গড়িমসি করে দেওয়া হয়।  

তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের যিনি টেন্ডার পেয়ে বেশিরভাগ গাছ কেটে নিয়ে গেছেন তিনি হলেন- ইউনিয়নের সাবেক যুবলীগের সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন, জসীম উদ্দিনের গাছের টেন্ডারের মেয়াদ শেষ জসীম বর্তমানে সরকার পতনের পর পলাতক হয়ে বিদেশে আছেন। বর্তমানে বনকর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি যোগসাজশে বাকি গাছগুলো কাটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সামাজিক বনায়নের বরুড়া উপজেলার বনকর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে, তার এক সহযোগী প্রতিবেদকের ভিডিও ধারণ করেন। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘২০২২ সালের টেন্ডার মেয়াদ শেষ। ঠিকাদার যুবলীগ নেতা। তিনি প্রবাসে পালিয়ে গেছেন।’

রি-টেন্ডার না করে কিভাবে গাছ কাটেন? এমন প্রশ্নে বন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপরের কর্তৃপক্ষ আমার ডিও স্যার বলেছে গাছ কাটার জন্য, আমি গাছ কাটিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে কোন রি-টেন্ডার হয়নি পূর্বে যিনি টেন্ডার পেয়েছিলেন তার কাছ লিখিত কাগজ অনুযায়ী মামুন নামের এক ব্যক্তি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কুমিল্লা বনবিভাগের কর্মকর্তা মিলে আমরা বাকি গাছগুলো কাটার অনুমতি দিই।’ 

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, ‘এইটা বনবিভাগের কাজ আমি এই বিষয়ে অবগত না। তবে বনকর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আমাকে মৌখিকভাবে বলেন, যিনি পূর্বে টেন্ডার পেয়েছিলেন তার সাথে সমঝোতার মাধ্যমে লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে বনকর্মকর্তার নির্দেশে গাছ কাটা হচ্ছে। এ কারণে তাকে বাধা দিতে পারিনি। তবে এই বিষয় বনকর্মকর্তাকে গাছ কাটার বন্ধ রাখা এবং সকল কাগজপত্র দেখানোর জন্য বলেছি।’

স্থানীয়রা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং বনকর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ তুলেছেন। তারা দাবি করেন, সাইফুল ইসলাম গাছ কাটার জন্য পাহারা দিয়ে এবং রি-টেন্ডার ছাড়াই গাছ কেটে নিচ্ছেন। স্থানীয়দের বাঁধা দেওয়ার পর বনকর্মকর্তা আইনি ঝামেলা ও মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত