৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম। মঙ্গলবার পিএসসির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ৪৪তম বিসিএস দ্রুত শেষ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ভাইভা আগামী ১৭ জুনের মধ্যে শেষ করা হবে। এরপর দ্রুত ফলাফল প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে এবং ৩০ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, পিএসসি এখন একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান। আমরা সময়ের গুরুত্ব বুঝে কাজ করছি। প্রার্থীদের অপেক্ষা যেন দীর্ঘ না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছি।
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে মোট ১,৭১০ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রশাসন ক্যাডার ২৫০, পুলিশ ক্যাডার ৫০, পররাষ্ট্র ক্যাডার ১০, আনসার ক্যাডার ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডার ৩০, কর ক্যাডার ১১, সমবায় ক্যাডার ৮, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক ক্যাডার ৭, তথ্য ক্যাডার ১০, ডাক ক্যাডার ২৩, বাণিজ্য ক্যাডার ৬, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার ২৭, খাদ্য ক্যাডার ৩, টেকনিক্যাল ক্যাডার ৪৮৫ ও শিক্ষা ক্যাডার ৭৭৬ জন।
৪৪তম বিসিএসে মোট আবেদন করেছিলেন ৩,৫০,৭১৬ জন। এই বিসিএসের প্রাথমিক (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ মে। এতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন, যা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর ২০২৩ সালের নভেম্বরে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) চলমান রয়েছে, যা জুনের মাঝামাঝি সময়ে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম জানান, কমিশনের কাজের গতিশীলতা এবং স্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়মতো ফলাফল প্রকাশ এবং পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে প্রার্থীদের মানসিক চাপ কমানোর দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে পিএসসি যে গতিতে কাজ করছে, তাতে ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এদিকে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানো সম্ভব কি না সিদ্ধান্ত নিতে তিন দিনের সময় চেয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। পিএসসিকে এ সময় দিয়ে আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছেন, আগামী শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৫টার মধ্যে পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত জানানো না হলে তারা পিএসসি চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামবেন। পিএসসি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব কথা জানান পরীক্ষার্থীরা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সিয়াম নামে এক বিসিএস পরীক্ষার্থী প্রথমে জানান পিএসসি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। অর্থাৎ পূর্বঘোষিত ৮ মে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এমন তথ্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাইরে অবস্থানরত বিভিন্ন বিসিএসের পরীক্ষার্থীরা।
পরে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া সেনা কর্মকর্তা মেজর রেদোয়ান আন্দোলনরত বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জানান, পিএসসি সিদ্ধান্ত বদলাতে তিন দিনের সময় চায়। যেহেতু বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেজন্য অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। সিদ্ধান্ত বদলাতে হলে অর্থাৎ পরীক্ষার সময় পেছাতে হলে অনেক কিছুই আবার নতুন করে রিঅ্যারেনঞ্জ ও ম্যানেজ করতে হবে।
এজন্যই মূলত পিএসসি তিন দিনের সময় চায় এবং পিএসসি একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই এলাকাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। তখন পরীক্ষার্থীরা সেই তিন দিনের সময় মেনে নিয়ে পিএসসি ভবনের বাইরে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সিয়াম বলেন, পিএসসি তিন দিনের সময় চেয়েছে। আমরা সেটা মেনে নিচ্ছি তবে, তিন দিন মানে তিন দিন। অর্থাৎ আগামী শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে যদি ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত জানানো না হয় তাহলে আমরা আর এই দাবিতে আন্দোলন করতে আসব না, সরাসরি একদফার আন্দোলন অর্থাৎ পিএসসির চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামব।
তিনি ঘোষণা করেন, আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলনরত বিভিন্ন বিসিএসের পরীক্ষার্থীরা আবারও পিএসসি কার্যালয়ে আসবেন।
এর আগে দুপুরে ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসি কার্যালয়ে ঢুকে অবস্থান নেন বিভিন্ন বিসিএসের পরীক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল টিম। বিকেল ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৬ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোবাশ্বের মোনেম।