৮ বছরের শিশু আবু বকরে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে বাউনিয়াবাদ এলাকার মো. রাতুল ও সুজন খান নামের দুই ব্যক্তির যৌথ মালিকাধানী গ্যারেজে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বুধবার (১৬ এপ্রিল) পল্লবী থানায় শিশুটির পরিবার মামলা করলে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে অন্য আসামিদের গতকাল রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। শিশুটিকে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার প্রমাণ পেলেও কী কারণে কোন পরিস্থিতিতে এমন নির্মমতা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ পর্যন্ত বিস্তারিত জানাতে পারেনি।
পুলিশ বলছে, পল্লবীর মো. রাতুল ও সুজন খানের যৌথ মালিকানাধীন মোটরসাইকেল গ্যারেজ রয়েছে। সেই গ্যারেজে কাজ করেন সিদ্দিক জাবেদ আলী ও আয়শা দম্পতির ১২ বছরের বড় ছেলে মো. জিয়াদ। মঙ্গলবার বিকেলে ৫ বছরের ছোট ভাই আবু বকরকে নিয়ে সে গ্যারেজে যায়। তখন গ্যারেজে রাজু, জিয়াদসহ শিশু কিশোর ছিল। শিশুটির বড় ভাই জিয়াদকে চা আনতে পাঠায় গ্যারেজ মালিক। চা নিয়ে এসে রাজু দেখতে পায় তার ছোট ভাইয়ের পেট ফুলে আছে, পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ছোট ভাই অচেতন। ওই অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটির মৃত্যু হয়। শিশুটির বাবা পেশায় গাড়ি চালক আর মা গার্মেন্টসে চাকরি করে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় রাজু , মো. সুজন খান সহ ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে কিশোর হওয়ায় তাকে সমাজ কল্যাণ কমকর্তার মাধ্যমে শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
আবু বকরের মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা জানান, বড় ছেলে জিহাদ তাদের জানিয়েছে, বেলা তিনটার দিকে সে আবু বকরকে নিয়ে গ্যারেজে যায়। গ্যারেজ মালিকদের একজন মো. সুজন খান তাকে পাউরুটি, চা এনে দিতে বললে সে ভাইকে রেখে দোকানে যায়। ফিরে এসে দেখে আবু বকর বমি করছে, পেট ফুলে আছে। পাশে এক কিশোর (পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার) দাঁড়ানো। কী হয়েছে, জানতে চাইলে ওই কিশোর তাকে জানায়, মোটরসাইকেল পরিষ্কার করার পাম্প দিয়ে সে আবু বকরে পায়ে বাতাস দিয়েছে। তাতে আবু বকর বমি করছে। এ কথা শুনে বিশ্বাস না হওয়ায় জিহাদ আবুর প্যান্ট খুলে দেখে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে। রক্ত কেন পড়ছে, জানতে চাইলে ওই কিশোর তাকে বলে, পায়ে বাতাস দেওয়ায় আবুর পেট ফুলে গেছে, পরে সে মুখের ভেতর পাম্প করে বাতাস দিয়ে পেটের বাতাস বের করার চেষ্টা করেছে। একপর্যায়ে বমি করতে করতে আবু বকর অচেতন হয়ে পড়লে সুজনসহ কয়েকজন তাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটেন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে গ্রেপ্তার কিশোর , হৃদয় নামের আরেক তরুণ, রাজু, সুজন সবাই শিশু আবু বকরকে পায়ুপথ দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করেছে। তারা শিশু আবু বকরকে একা পেয়ে মজার ছলে হত্যা করেছে। ঘটনায় মামলা করলেও হৃদয়ের নাম বাদ দিয়েছে পুলিশ।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। একজন কিশোরকে আটক করা হয়েছে। কিশোর হওয়ায় তাকে সমাজসেবা কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। পুলিশ তদন্ত করে বোঝার চেষ্টা করছে, কে কী উদ্দেশ্যে শিশুটির পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়েছিল। গ্যারেজে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। অন্য এক দোকানের সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা গেছে, একজনের কোলে অচেতন আবু বকর । সঙ্গে কয়েকজন। আবু বকরকে কোলে নিয়ে তারা রিকশায় উঠছেন।
বাউনিয়াবাদে পোড়া বস্তি পেরিয়ে ডি ব্লকে ‘আলহামদুলিল্লাহ বাইক সার্ভিস সেন্টার’। ঘটনার পর থেকে গ্যারেজটি তালাবন্ধ। গ্যারেজে তালা মেরে মালিক সুজন এবং রাতুল পালিয়েছে। যদিও ঘটনার পর গ্যারেজের দুই মালিকের একজন সুজন হাসপাতালে গিয়েছিলেন। শিশুটিকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক আবু বকরকে মৃত ঘোষণা করে।
শিশুটির বাবা জাবেদ আলী জানান, বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন বাসায় ছিলেন। গ্যারেজের দুই মালিকের একজন সুজনসহ কয়েকজন তার ছেলেকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছে শুনে হাসপাতলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে শোনেন তার ছেলেকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। শিশু হাসপাতাল থেকে বলা হয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই হাসপাতালে পৌঁছে তিনি দেখেন বড় ছেলে জিহাদের কোলে আবু নিথর পড়ে রয়েছে। চিকিৎসক তার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
জাবেদ আলী আরও জানান, তার বড় ছেলে জিহাদ পড়াশোনায় ভালো নয় বলে কাজ শেখার জন্য গ্যারেজে দিয়েছিলেন। আবু বকরের মা আয়শা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। জিহাদ ও আবু বকর নানি চন্দ্র বানুর কাছে থাকত। মা আয়শা পোশাক কারখানায় চলে যান বলে তিনি প্রতিদিন আবু বকরকে বাসা থেকে স্কুলে নিয়ে আসতেন। গতকালও তিনি বাসা থেকে আবু বকরকে নিয়ে স্কুলে যান। বেলা ১১টার দিকে জিহাদ ছোট ভাই আবু বকরকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। বিকেলে তিনি শোনেন আবু বকর মারা গেছে।
উল্লেখ এর আগে ২০১৫ সালে খুলনায় রাকিব (১২) এবং ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে ইয়ামিন (১৩) নামের দুই কিশোরের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। ওই দুই কিশোর কারখানায় কাজ করত।