বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

হজের সূচনা ও ইতিহাস

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৪ এএম

হজ শুধু ইবাদতের নয়, বরং এটি ত্যাগ, ভালোবাসা, আনুগত্য আর আত্মশুদ্ধির এক অনন্য মহাযাত্রার নাম। হাজারো বছর আগে শুরু হওয়া এই পবিত্র ইবাদত আজও বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আদম (আ.) থেকে শুরু করে ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর বিস্ময়কর আত্মত্যাগ, হাজেরা (আ.)-এর সীমাহীন নির্ভরতা এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর হেদায়েতপূর্ণ হজযাত্রা, সব মিলিয়ে হজের ইতিহাসে রয়েছে আশ্চর্য সব অধ্যায়।

প্রতিবছর বিশ্ব জুড়ে লাখো মুসলমান যখন কাবার দিকে ছুটে যান, তখন তারা শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন না; বরং তারা ফিরে যান সেই ইতিহাসে, যে ইতিহাস বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আত্মসমর্পণের গল্পে ঠাসা। হজ শুধু আরাফা, মিনা বা মুজদালিফার সফর নয়, বরং এটি আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার মাধ্যম। তাই হজের ইতিহাস জানা মানে মুসলমানদের আত্মপরিচয়, ঐতিহ্য ও বিশ্বাসের গভীর উৎসে ফিরে যাওয়া। এখানে সেই মহিমান্বিত ইতিহাসেরই এক সংক্ষিপ্ত বিবরণী তুলে ধরা হলো।

হজের সূচনা হয় পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আল্লাহতায়ালা কাবা ঘরের ভিত্তি স্থাপনের নির্দেশ দেন তাকে। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম ইবাদতের ঘর। কালের প্রবাহে তা বিলীন হয়ে গেলে বহু যুগ পরে আল্লাহর নির্দেশে নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র ইসমাইল (আ.) এই ঘর পুনর্নির্মাণ করেন।

ইব্রাহিম (আ.)-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হজের মূল প্রেক্ষাপট। তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজ স্ত্রী হাজেরা ও দুধের শিশু ইসমাইলকে নির্জন, জনশূন্য মরুভূমিতে রেখে আসেন। তখন সেখানে ছিল না কোনো পানি, খাদ্য ও আশ্রয়। এই অবস্থায় শিশুপুত্রের তৃষ্ণায় ছটফট করা দেখে মা হাজেরা ছুটতে থাকেন দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ার মধ্যে। সাতবার দৌড়ের পর আল্লাহর রহমতে ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে জমজম নামের পানির উৎস। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই হজ ও ওমরাহতে হাজিরা ‘সাঈ’ নামক আমল করেন।

মহান আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে আদেশ করেন প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার জন্য। পিতা ও পুত্র উভয়েই আল্লাহর হুকুমে আত্মসমর্পণ করেন। মিনায় কোরবানি দেওয়ার পথে শয়তান বাধা দিতে এলে ইব্রাহিম (আ.) তিনটি স্থানে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেন। আজও সেই স্মৃতি ধরে হাজিরা সেখানে পাথর নিক্ষেপ করেন।

কাবা ঘর পুনর্নির্মাণ শেষে ইব্রাহিম (আ.)-কে আদেশ দেওয়া হয়, সারা মানবজাতিকে হজের জন্য আহ্বান জানাতে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও, তারা পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে সওয়ার হয়ে আসবে দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে।’ (সুরা হজ ২৭)

হজের পূর্ণতা আসে মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। দশম হিজরিতে তিনি বিদায় হজ পালন করেন এবং আরাফার প্রান্তরে বিশ্ব মানবতার জন্য সর্বজনীন বার্তা দেন।

বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান হজে অংশগ্রহণ করেন। হজ বিশ্বের মুসলমানদের বৃহত্তম মিলনমেলা, যার সূচনা আদম (আ.)-এর মাধ্যমে, প্রতিষ্ঠা ইব্রাহিম (আ.)-এর দ্বারা এবং পূর্ণতা লাভ করেছে মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। এটি ইসলামের ঐতিহাসিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ঐক্যবোধের এক চিরন্তন নিদর্শন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত