বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

এলজিইডির ৩৬ অফিসে দুদকের হানা 

  • কাজ না করে বিল উত্তোলন
  • কাজে নিম্ন সামগ্রী ব্যবহার
  • অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১২ পিএম

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন অফিসের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি, নিম্মমানের কাজ করা ও প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদকের একাধিক টিম মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দেশের ৩৬টি অফিসে একযোগে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক টিম। 

দুদকের তথ্যমতে, এলজিইডি কর্র্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি, একাধিক প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না করেই বিধিবহির্ভূতভাবে অগ্রিম বিল উত্তোলন করে আত্মসাত, এলজিইডির অধীন গ্রামগঞ্জের রাস্তা এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকাজে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের গুণগতমান বজায় না রাখা সংক্রান্ত শতাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে দুদকে। এসব অভিযোগের মধ্যে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়সহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মোট ৩৬টি অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। দুদকের প্রধান কার্যালয় ও বিভিন্ন  সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট টিম এসব অভিযান চালায়। 

দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এলজিইডির অনেকগুলো অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিশেষ করে কাজ না করে বিল উত্তোলন, কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করতে, অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে আমাদের টিম সেখানে কাজ করছে।’

দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলজিইডি অফিসের অধীন প্রকল্পের কাজে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ৩৬টি অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে বেশ কিছু অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

দুদকের তথ্যমতে, দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও মনির মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানকালে দুদক টিম অভিযোগ সংক্রান্ত বেশ কিছু রেকর্ডডপত্র সংগ্রহ করে।

দুদকের কুমিল্লা অফিসের সহকারী পরিচালক তারেকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি টিম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের যাত্রাপুর-পারুয়ারা সড়ক নির্মাণে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অভিযানকালে দুদক টিম জানতে পারে যাত্রাপুর-পারুয়ারা পর্যন্ত ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক ১ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৯ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সড়কের কাজ পান মুন্সিরহাট ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি সুমন পাটোয়ারীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাটোয়ারী এন্টারপ্রাইজ। তিনি কাজ শুরু করার কিছুদিন পর ৫ মাস পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখেন। এলাকাবাসীর দাবির মুখে তিনি কাজ শুরু করলেও নির্মাণকাছে পুরানো ইটসহ নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার শুরু করেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে তার মোবাইলফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

দুদকের বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন একটি টিপ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের মুরাদপুর থেকে চাকলতলা ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা নির্মাণে নিম্মমানের ইট ও বালু ব্যবহার এবং পুকুর পাড়ে মাটি ভরাটের অভিযোগে অভিযান চালায়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের অভিযোগের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেন দুদকের নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান ও শরীফুল ইসলাম। অভিযানকালে দুদক টিম এলজিইডি অফিস থেকে চলতি অর্থ বছরসহ গেল কয়েক বছরের নির্মাণ কাজের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেন। 

রাজশাহীর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে অভিযান চালান দুদকের রাজশাহী অফিসের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের একটি দল। দুদকের কর্মকর্তা বলেছেন- ঠিকাদারদের বিল পরিশোধকালে অর্থ আদায়সহ নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এছাড়া অনেক ঠিকাদার কাজ পেয়ে নিজে না করে অন্যকে দিয়েছেন। এসব অভিযোগের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। 

এছাড়া ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ; খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, বরিশাল পটুয়াখালী, পিরোজপুর, পাবনা, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, জেলার আওতাধীন এলজিইডি অফিসে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত