টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সহযোগী দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের নৈপুণ্য সাধারণ দর্শকের চোখে যতটা স্বস্তিদায়ক মনে হতে পারে, প্রকৃত চিত্রটি তেমন নয়। বরং এই পরিসংখ্যান অনেক বেশি দুশ্চিন্তার কারণ। সবশেষ ধাক্কাটি এসেছে ২০২৫ সালের ১৯ মে শারজায়, যেখানে ইতিহাস গড়ে টাইগারদের হারের তিক্ত স্বাদ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। নিজেদের ইনিংসে ২০৫ রান তুলেও জয় পায়নি বাংলাদেশ। বরং আমিরাতের অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ভর করে স্বাগতিকরা পেরিয়ে যায় সেই বিশাল লক্ষ্য — যা টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে কোনও পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে সহযোগী দেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশের জন্য তাই কেবল হার নয় এটি হয়ে এসেছে বড় ধাক্কা হিসেবে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশের হারের বৃত্তান্ত।
শারজাহ, ২০২৫ — আমিরাত বনাম বাংলাদেশ
ফলাফল: আমিরাত ২ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশ: ২০৫/৫ (তানজিদ ৫৯, হৃদয় ৪৫*)
আমিরাত: ২০৬/৮ (১৯.৫ ওভারে)
ওয়াসিমের ৪২ বলে ৮২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস আর জোহাইব খানের শান্ত-মার্কা অবদানের পর শেষদিকে ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংস মিলে এক বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে আমিরাত। এটি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে আমিরাতের প্রথম জয়—যা সহযোগী ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
হিউস্টন, ২০২৪ — যুক্তরাষ্ট্র বনাম বাংলাদেশ
ফলাফল: যুক্তরাষ্ট্র ৫ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশ: ১৫৩/৬ (হৃদয় ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১)
যুক্তরাষ্ট্র: ১৫৬/৫ (১৯.৩ ওভারে)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে প্রস্তুতি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাক টু ব্যাক হেরে যায় বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ কোরি অ্যান্ডারসন ও শেষদিকে হরমিত সিং-এর ঝড়ো ইনিংসে সহজেই জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
চট্টগ্রাম, ২০১৪ — হংকং বনাম বাংলাদেশ (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)
ফলাফল: হংকং ২ উইকেটে জয়ী
বাংলাদেশ: ১০৮ অলআউট (নাদিম আহমেদ ৪/২১, নিজাকাত খান ৩/১৯)
হংকং: ১১৪/৮ (১৯.৪ ওভারে)
নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপে এমন লজ্জাজনক হারের মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে। বোলিং দাপটে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্যাটিং লাইনআপ। এরপর হংকংও কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষপর্যন্ত জয় তুলে নেয়।
আল আমেরাত, ২০২১ — স্কটল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)
ফলাফল: স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী
স্কটল্যান্ড: ১৪০/৯ (গ্রিভস ৪৫, ওয়াট ২২)
বাংলাদেশ: ১৩৪/৭ (মুশফিক ৩৮, সাকিব ২০; গ্রিভস ২/১৯)
ম্যাচটি প্রায় বাংলাদেশের হাতে থাকলেও, ক্রিস গ্রিভসের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পাল্টে যায় সব। তিনি বল হাতে বাংলাদেশের দুই বড় ভরসা মুশফিক ও সাকিবকে ফেরান।
বাংলাদেশ বনাম সহযোগী দেশসমূহ:
টি-টোয়েন্টিতে নৈপুণ্যের পরিসংখ্যান |
||||
প্রতিপক্ষ |
ম্যাচ |
জয় |
হার |
জয় শতাংশ |
যুক্তরাষ্ট্র |
৩ |
১ |
২ |
৩৩.৩৩% |
আমিরাত |
৫ |
৪ |
১ |
৮০.০০% |
হংকং |
১ |
০ |
১ |
০.০০% |
স্কটল্যান্ড |
২ |
০ |
২ |
০.০০% |
নেদারল্যান্ডস |
৫ |
৪ |
১ |
৮০.০০% |
যদিও নেপাল, ওমান, মালয়েশিয়া ও পাপুয়া নিউগিনির মতো দলের বিপক্ষে বেশ কিছু জয় রয়েছে বাংলাদেশের। তবে যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, আমিরাত এবং স্কটল্যান্ডের কাছে হারগুলো যেন সব সাফল্যকে ছাপিয়ে দিয়ে ধরা দিচ্ছে অশনি সংকেত রূপে।