গাজীপুরের শ্রীপুরে বিষাক্ত সাপের কামড়ে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। রাতে শোয়ার ঘরের মেঝেতে ঘুমানোর সময় কোনো কিছু কামড় দেয় তা তিনি টের পান। মঙ্গলবার (২০ মে) বাঁশবাড়ি নিজমাওনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে পিঁপড়ার কামড় ভেবে অবহেলা করে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এর দুই ঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়। মুমূর্ষু অবস্থা পাশের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে ইনজেকশন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। দুপুরে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবদুল কুদ্দুস (৭০) । তার বাড়ি গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামে। তিনি গ্রামের বাড়ি গিয়ে হাজিরা শ্রমিকের কাজ করতেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, রাতে নিজ ঘরের মেঝেতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন আবদুল কুদ্দুস। পরে ভোরে টের পান পায়ে কিছু একটা কামড় দিয়েছে। এতে তার ঘুম ভেঙে যায়। পরে পিঁপড়ার কামড় ভেবে ফের শুয়ে পড়েন। ঘন্টাখানেক পর শরীর বেশ খারাপ লাগায় জেগে উঠেন। এ সময় তিনি ঘরের মেঝেতে সাপ বসে আছে দেখতে পারে। এতে তিনি ধারনা করেন সাপে কামড় দিয়েছে।
পরে মুমূর্ষু অবস্থায় পাশের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গেলে ইনজেকশন দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী মোসা. এশা বেগম জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় তার স্বামী পায়ে কোনোকিছুর কামড় অনুভব করেন। কামড়ে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এরপর পিঁপড়ার কামড় ভেবে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তার শরীর ঠান্ডা হতে থাকে। তিনি জেগে দেখেন তার ঘরের মেঝেতে একটি সাপ শুয়ে আছে। পরে তিনি সে সাপটি মেরে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকেন। এর ঘন্টা দুই পড়ে তার মৃত্যু হয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুল হুদা বলেন, খবর পেয়েছি একজন সাপের কামড়ে মারা গেছে। তবে আমাদের হাসপাতালে আনা হয়নি রোগীকে। তিনি বলেন, অন্ধকারে কোনো কিছুর কামড় টের পেলে বা সন্দেহ হলেই দ্রুত জেলাসদর হাসপাতালে রোগীকে পাঠাতে হবে। যত দ্রুত হাসপাতালে যেতে পারবে আর এন্টিভেনম পুশ করতে পারবে তত মৃত্যু ঝুঁকি কমবে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে সময় নষ্ট করা যাবে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এন্টিভেনমের ব্যবস্থা থাকেনা। তাই জেলা হাসপাতাল বা কাছের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিতে হবে দ্রুত সময়ে। তবেই সাপে কাটা রোগীকে বাঁচানো যাবে। তবে ভুলেও কোনো ওঁঝার কবিরাজের কাছে নেওয়া যাবে না।
গাজীপুর ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের হারপেটোলজিস্ট(সরিসৃপবিদ) সোহেল রানা সৈকত সাপের ছবি দেখে নিশ্চিত করেন এটি বিষাক্ত কালাচ সাপ। এটি মারাক্তক বিষাক্ত। এটি কামড়ালে সহজে টের পাওয়া যায়না। তবে বুঝতে পারলে রোগীকে সাহস দিয়ে তার সাথে কথা বলতে বলতে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এরপর সেখানে এন্টিভেনম পুশ করতে হবে। প্রয়োজনে বেশ কদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। তিনি বলেন রাতে সাপ বের হয়। তাই সাবধানে চলাচল করতে হবে আর টর্চ লাইটের আলোতে পথ চলতে হবে।