গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলে না নেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ হবে না—এমনই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে গাজায় কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতেও সম্মত নন বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার জেরুজালেমে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা জানি, গাজায় এখনো অন্তত ২০ জন ইসরায়েলি বন্দি জীবিত অবস্থায় রয়েছেন এবং আরও প্রায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলুর খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে জানান, শুধু বন্দিদের উদ্ধারে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির কথা বিবেচনায় আনা যেতে পারে, তবে সেটি হবে ‘সাময়িক বিরতি’।
অন্যদিকে হামাস বরাবরই জানিয়ে এসেছে, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ বন্ধ করে, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়, তাহলে তারা সব ইসরায়েলি বন্দিকে একযোগে মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
কিন্তু এসব শর্ত নেতানিয়াহু সাফ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত, তাদের নিরস্ত্রীকরণ এবং পুরো অঞ্চল দখলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলে বর্তমানে অন্তত ১০ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। এদের অনেকেই নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসা অবহেলার শিকার।
নেতানিয়াহুর এই অবস্থানের বিরোধিতা করে ইসরায়েলের ভেতর থেকেই আওয়াজ উঠেছে। বিরোধী নেতারা এবং বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু তার চরম ডানপন্থি জোটসঙ্গীদের খুশি রাখতে এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।
বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, “নেতানিয়াহুর বক্তব্যের অর্থ, গাজা আগামী বহু বছর ইসরায়েলের দখলে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয়ের কথা বলে নেতানিয়াহু মিথ্যা বলছেন।”
ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা ইয়াইর গোলান নেতানিয়াহুকে নিয়ে বলেন, “আমি দেখলাম এক চাপে ভেঙে পড়া, মিথ্যাবাদী এবং দায়িত্ব এড়ানো নেতার প্রহসন।”
তিনি ঘোষণা দেন, “নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করব এবং খুব শিগগিরই নির্বাচনে তাকে পরাজিত করব।”
এদিকে গাজায় বন্দি থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সুযোগ হারাতে চলেছি। ১৯ মাস পেরিয়ে গেছে, এই যুদ্ধের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না, আর পুনর্গঠনেরও কোনো সম্ভাবনা নেই।”
এই সবকিছু ঘটছে এমন সময়ে, যখন ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়ে আসছে। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।