বিরাট কোহলিদের প্রথম আইপিএল শিরোপা জয়ের আনন্দ পরিণত হয়েছে বিষাদে। গতকাল বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের শিরোপা উদযাপনের সময় ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের, অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুর্ঘটনার ঠিক পরে আহতদের প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের স্টেডিয়ামের ভেতরে নিয়ে রাখা হয়েছিল।
পদপিষ্ট হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা সমর্থকদের হাসপাতালে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন ছিল। সেই অ্যাম্বুলেন্স ছিল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভেতরে। কিন্তু মাত্র দুটি অ্যাম্বুল্যান্স থাকায় অনেককেই নেওয়া যায়নি। বাকি আহতদের কাঁধে বা কোলে নিয়ে স্টেডিয়াম থেকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
তাদের লক্ষ্য ছিল, রাস্তায় যে গাড়ি পাওয়া যাবে, সেটা থামিযে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হবে। কিন্তু সেখানেও দেখা দেয় সমস্যা। স্টেডিয়ামের আশেপাশে সব রাস্তাই অনুষ্ঠানের জন্য দুপুর থেকে বন্ধ ছিল। তাই কাঁধে বা কোলে করে আহতদের প্রায় অর্ধকিলোমিটারের বেশি দূরে নিয়ে যান নিরাপত্তাকর্মীরা। সেখান থেকে গাড়িতে করে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিরোপা উদযাপনকে কেন্দ্র করে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল। এত জনসমাগম পুলিশের পক্ষে সামলানো প্রায় অসম্ভব ছিল। বেঙ্গালুরুর এক পুলিশ অফিসার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা অনবরত মাইকে স্টেডিয়ামের বাইরে থাকা লোকদের ফিরে যেতে বলেছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। বরং কে আগে স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকতে পারে, সেটা নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা।
একটি দল এগিয়ে যেতে থাকে কাবন পার্ক মেট্রো স্টেশন থেকে ১৩ নম্বর গেটের দিকে। আর এক দল ১৩ নম্বর গেট থেকে ১ এবং ২ নম্বর গেটের দিকে এগোতে থাকে। মাঝে ছিলেন প্রচুর সমর্থক যারা রাস্তা আটকে নাচছিলেন, গাইছিলেন। স্টেডিয়ামে ঢোকার পথও ছিল সংকীর্ণ। ফলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। পাস বা টিকিট ছাড়া ঢোকার অনুমতি ছিল না।
দর্শকদের একটা বড় অংশের কাছে কোনো পাস বা টিকিট ছিল না। তারা এসেছিলেন স্রেফ উৎসবে অংশ নিতে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিশ। তাছাড়া উপস্থিত মানুষের তুলনায় পুলিশকর্মীর সংখ্যাও ছিল অত্যন্ত কম। চারদিকে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ভিড়ের চাপে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন প্রচুর মানুষ। তাদের পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে যান অনেকে!
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছে পুলিশ। গাড়ি রাখার জায়গা নেই বলে স্টেডিয়ামমুখী সমর্থকদের মেট্রোতে আসতে বলা হয়েছিল। তাই প্রতিটি মেট্রোতেই ছিল বিপুল ভিড়। স্টেশনে দাঁড়ানোর জায়গাও ছিল না। ওই সময়েই মেট্রো বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করে পুলিশ। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ যতক্ষণে সেই সিদ্ধান্ত নেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।