চলতি বছরের ধানমন্ডির ঐতিহ্যবাহী তাকওয়া মসজিদের সংগ্রহ করা কোরবানির পশুর চামড়া স্থানীয় টেন্ডারে রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। গরুর চামড়া প্রতিটি ১ হাজার ৩৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, তাকওয়া মসজিদ সোসাইটির আয়োজনে ওপেন টেন্ডারে ৮৫৩টি চামড়া বিক্রি হয়। এ টাকা মসজিদের জাকাত ফান্ডে জমা হবে, যা এতিম ও দুস্থ মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। গত বুধবার বিকেলে তাকওয়া মসজিদ প্রাঙ্গণে টেন্ডারে অংশ নেয় স্থানীয় পাঁচটি চামড়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ দামে চামড়া কিনে ইমেক্স লেদার লিমিটেড। তাদের দেওয়া দাম ১ হাজার ৩৭২ টাকা।
টেন্ডারে অংশ নেওয়ার অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সালমা ট্যানারি লিমিটেড, আল মিজান ট্রেডিং লি, জে এ লেদার কমপ্লেক্স এবং আঞ্জুমান ট্যানারি।
এ বছর সরকার থেকে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতিটি চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩৫০ টাকা। টেন্ডারে বিক্রি করে পাওয়া দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২২ টাকা বেশি।
তাকওয়া মসজিদ সোসাইটির অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি হাসান সরিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘চামড়ার দাম বাড়ানো আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এই অর্থ মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। মসজিদের আয় বৃদ্ধি পেলে ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে তাকওয়া মসজিদ সোসাইটি এবার কোরবানির চামড়া সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করেছে, এটা অন্য মাদ্রাসা ও মসজিদ আগামীতে অনুসরণ করতে পারে। যদি কেউ প্রয়োজন মনে করে, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা আগামীতে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করব।’
স্থানীয় চামড়াশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা তাকওয়া মসজিদ সোসাইটির এই টেন্ডারকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদের এই টেন্ডার শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় বৃদ্ধির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও বটে।
সরকার এ বছর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও পাইকারি বাজারগুলোয় ৬০০-৯০০ টাকার মধ্যে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। আবার অনেক মৌসুমি বিক্রেতা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সেগুলো রাস্তায় ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে সরকার বলছে, সরকার প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মণ লবণ বিতরণ করেছে সারা দেশে মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোয়, যা দিয়ে চামড়া কোরবানির পরপরই বিক্রি না করে সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে করে অবশ্য সারা দেশে অনেক চামড়া সংরক্ষণও করা হয়েছে।
দেশের ছয়টি বিভাগে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ পিসের মতো গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এবার চামড়ার দাম গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং চামড়া নিয়ে ১৫ বছরে যে নৈরাজ্য তৈরি করা হয়েছিল, তার অবসান হয়েছে। সরকার ঢাকায় গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে এই দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
তবে কম দামে চামড়া বিক্রির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, লবণ দেওয়া চামড়া নির্ধারিত দামেই বিক্রি হয়েছে এবং সরকার শুধু লবণ দেওয়া চামড়ার দাম বেঁধে দিয়েছে। কাঁচা চামড়ার দাম বেঁধে দেয়নি।
ট্যানারি মালিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তারা। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ পিস। তারা জানান, সারা বছর যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে।