গত সপ্তাহে ইরানের ওপর অতর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে সংঘাত শুরুর পর আতঙ্কে ইসরায়েল ছাড়ছে দেশটির নাগরিক ও অবস্থানরত বিদেশিরা। এরই মধ্যে হাজার হাজার বিদেশি ও ইসরায়েলি নাগরিক দেশ ছেড়েছেন।
দেশটির জনসংখ্যা, অভিবাসন ও সীমান্ত কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ১৩ থেকে ১৯ জুনের মধ্যে ৩৮ হাজার ২৫০ জন ইসরায়েলি দেশটিতে প্রবেশ করেছে। একই সময়ে ২১ হাজার ৪৫৬ জন ইসরায়েলি দেশ ছেড়ে গেছে। আগমন এবং প্রস্থানের বেশিরভাগই ছিল স্থলপথে। এছাড়া সেখানে থাকা নাগরিকদের স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
খবরে বলা হয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলায় ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বন্ধ হয়ে গেছে আকাশসীমা, ব্যাহত হচ্ছে বাণিজ্যিক ফ্লাইট। সহজেই কেউ ইসরায়েলে প্রবেশ বা বের হতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে কিছু দেশ স্থল সীমান্ত ব্যবহার করে তাদের নাগরিকদের অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে বিমানবন্দর চালু রয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর সময়ে ইসরায়েলে প্রায় ৩৮ হাজার বিদেশি পর্যটক ছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পর্যটক ইসরায়েলি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দেশ ছাড়তে সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলে প্রায় সাত লাখ আমেরিকান রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মার্কিন-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক। এছাড়া ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আরও হাজার হাজার নাগরিক রয়েছে।
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আকাশপথে এবং ক্রুজ জাহাজে করে ইসরায়েল থেকে আমেরিকানদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। হাকাবি বলেন, ইসরায়েল ছাড়তে আগ্রহী আমেরিকানদের তথ্য সংগ্রহে স্মার্ট ট্র্যাভেলার এনরোলমেন্ট প্রোগ্রামে নাম লেখানোর কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য
ইসরায়েলে অবস্থানরত নাগরিকদের সরিয়ে নিতে তোড়জোড় চালাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকারও। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, তেল আবিব বিমানবন্দর পুনরায় চালু হলে ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে কাজ চলছে।
এর আগে সোমবার ব্রিটিশ সরকার ইসরায়েলে তাদের নাগরিকদের উপস্থিতি নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিকল্প রুটের বিবেচনা করছে।
চীন
চীন জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ১৬০০ এবং ইসরায়েল থেকে ‘আরও কয়েকশ’ নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, চীনা নাগরিকদের নিরাপদ স্থানান্তর ও সরিয়ে নিতে বেইজিং সর্বোচ্চ সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
এর আগে চীনা দূতাবাস জানিয়েছিল, শুক্রবার থেকে তারা ইসরায়েল থেকে বাসে করে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটে পোস্ট করা এক নোটিশে বলা হয়েছে, নাগরিকদের তাবা সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে মিসরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেজন্য তাদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে, যেন সরিয়ে নেওয়ার সময় সম্পর্কে অবহিত করা যায়।
নোটিশে বলা হয়েছে, চীনা, হংকং এবং ম্যাকাওয়ের পাসপোর্টধারীরা এই সুবিধা পাবেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটভুক্ত দেশগুলোর ৪০০ নাগরিককে জর্ডান ও মিশর হয়ে ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। বুধবার ব্রাসেলসে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ইভা হরনসিরোভা বলেন, ‘সদস্য দেশগুলো তালিকা সমন্বয় করে নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পরিবহন খরচ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারোট বৃহস্পতিবার বলেছেন, যেসব নাগরিক ইরান ও ইসরায়েল ছাড়তে চায় তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে সহায়তা করা হচ্ছে, যেখানে বাণিজ্যিক ফ্লাইট রয়েছে।
ব্যারোট বলেন, ইরানের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই আর্মেনিয়া ও তুরস্কে যেতে পারেন। যারা নিজেরা সীমান্তে পৌঁছাতে পারবেন না তাদের গাড়িতে করে নেওয়া হবে। সেই দেশ থেকে তারা ফ্রান্সের বিমানে চড়তে পারবেন।
ইসরায়েল ছাড়তে ইচ্ছুক ফরাসি নাগরিকরা জর্ডান ও মিশর হয়ে যেতে পারেন। শুক্রবার সকাল থেকে কিছু বাস ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে যাত্রী নিয়ে আম্মান ও শার্ম আল-শেখ বিমানবন্দরে যাবে।
জার্মানি
বুধবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে ১৭১ জনকে আম্মান থেকে ফিরিয়ে এনেছে জার্মানি। বৃহস্পতিবার আরও ১৭৪ জন ফিরে এসেছেন এবং এই সপ্তাহে আরও একটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
জাপান
সংঘাত শুরুর সময়ে প্রায় ২৮০ জন জাপানি ইরানে এবং ১ হাজার ছিল ইসরায়েলে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া শুক্রবার বলেছেন, মোট ৮৭ জন জাপানি নাগরিক ও তাদের পরিবারকে ইরান ও ইসরায়েল থেকে প্রতিবেশী আজারবাইজান ও জর্ডানে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাসে করে ইরান ছেড়ে যাওয়া ৬৬ জন শুক্রবার ভোরে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে পৌঁছেছেন এবং ইসরায়েল থেকে আরও ২১ জন জর্ডানের রাজধানী আম্মানে পৌঁছেছেন।
ইওয়াইয়া বলেন, উদ্ধারকৃতরা সুস্থ আছেন এবং জাপানের দূতাবাসের জরুরি ত্রাণ কর্মীরা তাদের সহায়তা করছেন। সরকার শনিবার থেকে বাসে করে দ্বিতীয়বার সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।