জাতীয় সংসদের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের (সিইসি) বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে, তারা সাবেক ৩ সিইসিসহ মোট ১৯ জন কমিশনার ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করবে।
আজ রবিবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এই আবেদন ইসিতে জমা দেয়। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ—মিজানুর রহমান, ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।
বিএনপি জানায়, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে তারা মামলা দায়ের করবে। ইসিতে আবেদন জমা দেওয়ার পর সালাহ উদ্দিন খান জানান, তারা মামলার জন্য শেরেবাংলা নগর থানায় যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার অভিযোগ করলেও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবার আমরা আশাবাদী, বর্তমান কমিশন এই বিষয়ে তদন্ত করবে।’
তিনি আরও জানান, যেহেতু আগারগাঁও এলাকার নির্বাচন ভবনের অধীনে এসব কমিশন কাজ করেছে, তাই ওই থানায়ই মামলা হবে।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা চলছিল। সেই নির্বাচনের ঘটনাগুলোর তদন্তে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভোট বর্জনের মাধ্যমে ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ। সঙ্গে কমিশনার হিসেবে ছিলেন মো. আবু হাফিজ, মো. আব্দুল মোবারক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী ও জেলা জজ (অব.) মো. শাহনেওয়াজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি ভোটগ্রহণে অনিয়ম ও রাতের আঁধারে ভোট দেওয়ার অভিযোগ তোলে। মাত্র সাতটি আসনে জয় নিয়ে সংসদে যায় বিরোধীরা। নির্বাচনটি ‘নীশিরাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিতি পায়। কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন কে এম নূরুল হুদা। কমিশনার ছিলেন রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা বর্জন করে। আওয়ামী লীগ নিজ দলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে ‘নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ তৈরি করে। একে ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন বলা হয়। তখন কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁর সঙ্গে কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, রাশেদা সুলতানা ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে জানানো হয়, বিগত আওয়ামী আমলে আয়োজিত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।