শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সৈকতে বালিয়াড়িতে কৃত্রিম খাল, পর্যটকদের নিরাপত্তায় উদ্বেগ

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম

কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি কেটে কৃত্রিম খাল তৈরি করেছে দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পানি চলাচলের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে সমুদ্র ধারের বিচ প্যাসেফিক ও ডিভাইন ইকো রিসোর্ট নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বাঁধ তৈরির পর কৃত্রিম খাল খনন করেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ফলে সৈকত দ্বিখন্ডিত হওয়ার পাশাপাশি সৈকতজুড়ে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিচ কর্মী ও পরিবেশবাদীরা।

সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট সংলগ্ন ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশ দিয়েই দেখা মিলেছে কৃত্রিম খালটির। আশপাশের পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, হোটেল-মোটেল জোনের কিছু অংশের পানি ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পিছনের সীমানায় ছড়া দিয়ে চলাচল করতো। ওই ছড়ার পানি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশত। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফে মালিকপক্ষ ছড়াটি বন্ধ করে বালির বস্তা দিয়ে তৈরি করে বাঁধ। বাঁধের কারণে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের সামনে পানি জমে বড় ও গভীর ডোবার সৃষ্টি হয়।

পরে জমে থাকা নিষ্কাষণে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানার কোণ ঘেঁষে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয় একটি কৃত্রিম খাল। এতে খালটি দিয়ে জমে থাকা পানির পাশাপাশি ভারী বর্ষণে ঢলের পানি প্রতিনিয়ত সাগরে মিশে যাচ্ছে। আর জোয়ার-ভাটার সময় পানি যাতায়াতের কারণে খালটির পরিধি বাড়ছে দিন দিন। এতে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে অবিচ্ছিন্ন সৈকত।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানিয়েছেন, দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এতে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লাযুক্ত পানি প্রতিনিয়ত সাগরে মিশে যাওয়ার পাশাপাশি ভারী বর্ষণের কারণে খালটি বড় আকার ধারণ করছে। এতে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সৈকত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি সাগরের পরিবেশ দূষণ আর সৌন্দর্য্যহানির কবলে পড়েছে। আর কৃত্রিম খাল দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি প্রবাহিত হওয়ায় সমুদ্রতটে তৈরি হয়েছে স্থায়ী গর্ত ও গুপ্তখাল। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দায়িত্ব পালনকারি সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর জানিয়েছেন, সম্প্রতি বর্ষায় সৈকতের বিভিন্ন স্থানে গর্ত এবং গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে। এতে সমুদ্র স্নানে যাওয়া ৮ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট গর্ত ও গুপ্তখাল চিহ্নিত করা খুবই কঠিন।

ছবি: প্রতিনিধি

তিনি বলেন, মূলত বর্ষার সময় আশপাশের এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলের পানি এবং সমুদ্রের ঢেউর ধাক্কায় তৈরি হয় গর্ত ও গুপ্তখালের। এমন পরিস্থিতিতে সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের মাঝামাঝি এলাকায় কৃত্রিম খালটির কারণে গর্ত ও গুপ্তখাল সৃষ্টির আশংকা ব্যাপক হয়ে উঠেছে। এই খালটির কারণে সৈকতের বালিয়াড়ি জুড়ে ভাঙ্গনের মাত্রাও বেড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের জেনারেল ম্যানজার জাবেদ ইকবাল জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে পানি চলাচল করায় তার সামনে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙ্গন রোধ এবং পর্যটকদের যাতায়তের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক ছড়ায় বাঁধ তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে কেন পানি যাবে। তাই বাঁধ দিয়েছি। তবে খালটি কারা খনন করেছেন আমি জানি না।

ডিভাইন ইকো রিসোর্টের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রাকৃতিকভাবে যে পথে পানি নেমে যেত যেখানে একটি বাঁধ তৈরি হয়েছে। এতে তাদের প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন বিকল্প পথে পানি যাচ্ছে। এটি কৃত্রিমভাবে খনন করা হলেও তারা এটার সাথে জড়িত নন। কারা করেছে তাও জানেন না।

এদিকে ভ্রমণরত কিছু পর্যটক কৃত্রিম খালের কারণে অবিচ্ছিন্ন সৈকত বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারা সৈকতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম খালের কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি এবং সমুদ্রের দূষণ ও সৌন্দর্য্যহানি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব মূলত কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তারপরও অবৈধ পন্থায় কেউ কিছু করলে খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত