
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আগাম বন্যা ও সিডর, আইলা, আম্পান, বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত। শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে এ দেশের কৃষক জমিতে ফসল ফলায়। স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার। অথচ মুহূর্তেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সবকিছু সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। গত ৪ এপ্রিল রাতে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গরম ‘লু’ হাওয়ায় গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ নষ্ট হয়ে সাদা হয়ে গেছে। গোপালগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। এসব জমিতে এখন ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। অর্থাৎ ধানের শীষে দুধ এসেছে। মাত্র আধা ঘণ্টার ‘লু’ হাওয়ায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলার শত শত হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। একই সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলায়ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গরম হাওয়ায় হাওরের ধানের শীষও সাদা হয়েছে। অর্থাৎ এসব শীষে কোনো চাল নেই। সব পুড়ে গেছে। ধান তো পুড়েনি, পুড়েছে কৃষকের কপাল।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সময়ে-অসময়ে নানা রূপে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। যে আঘাতে খান খান হয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন। অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে নগর-মহানগরে বস্তিবাসী হয়ে যান। এভাবেই গোটা দুনিয়ার উন্নয়নশীল দেশের লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আইলার আঘাতে ল-ভ- হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ খুলনার বস্তিতে আশ্রয় নিয়ে পেশা পরিবর্তন করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। শুধু খুলনায় নয়, জলবায়ু উদ্বাস্তুরা এখন গোটা দেশের নগর-মহানগরে বস্তিবাসী হয়েই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বাস্তবেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতার দরুণ প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠছে। ফলে খরা, অতিবৃষ্টি, আগাম বন্যা, ঝড়ের প্রকোপের কারণে কৃষি চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাচ্ছে এবং গমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণও বাড়ছে। এমনকি অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতার কারণে গাছের ছত্রাক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বোরো মৌসুমে রাতে যদি ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে ধানের পাতায় পানি জমে এবং দিনে গরম পড়ে, তাহলে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। যদিও বিগত ২৫ বছরের আবহাওয়ার উপাত্ত থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের গড় উষ্ণতা তেমন বাড়েনি। তবে আশঙ্কা করা হয়, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি, ২০৫০ সাল নাগাদ ১.৪ ডিগ্রি ও ২১০০ সালে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা কম-বেশি হওয়ায় ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেমন কৃষিতে খরা একটি বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছরই ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রায় আক্রান্ত হয়। ফলে গাছের বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের বেড়ে ওঠার পথে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কৃষকদের নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে চাষাবাদ করতে হয়। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন পানি স্তরে পানির শূন্যতা, লবণাক্ততাও বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে, লোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সালে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হলেও ১৯৯৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫ লাখ হেক্টরে। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩০ লাখ হেক্টরেরও বেশি। উজান থেকে স্বাভাবিক পানির প্রবাহে বাধা, কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পরিমিত বৃষ্টির অভাবে সমস্যা প্রকট হতে পারে। লবণাক্ততা কৃষি চাষাবাদের জন্য অনুকূল নয়। কারণ লবণাক্ত পানিতে কৃষি চাষাবাদ হয় না। যদিও বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের অভাবনীয় সফলতায় লবণাক্ত সহনীয় খাদ্যশস্যের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। কিন্তু মিঠা পানির চাষাবাদ আর লবণাক্ত পানির চাষাবাদের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। শুধু লবণাক্ততাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূ-উপরিস্থ পানির বদলে ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় ব্যবহার করায় ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানকার বসবাসরত মানুষ এখন বেঁচে থাকার নিয়ামক বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় লক্ষাধিক নলকূপ অকেজো হয়েছে। আবার দুর্ভোগেও পড়েছেন চাষিরা। পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। অনেকেই ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে গর্ত করে নিচে সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে কোনো রকমে সেচ দিচ্ছেন এবং খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত নিয়ে অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উপমহাদেশের দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই, তারপরও আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন। অভিযোজনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও এই জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে বসবাস করি, যা প্রাকৃতিক ভাবে দুর্যোগপূর্ণ। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন ভূমিকম্প, ফ্লাউডবার্স, বরফ ধস, ভূমি ধস, ফ্লাশ বা হরকাবানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তেমনি বাংলাদেশের মতো সাগর উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বারবার বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি বা খরার মতো দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো অর্ধাহারে, অনাহারে প্রতি রাতে ঘুমাতে যায়। আমাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যারা জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। এ সংকট দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। গত ১১ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদের খাদ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বৃদ্ধি এবং ক্ষুধার কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও মৃত্যুর মুখে পড়বে। তিনি শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, তিন ডজনের বেশি দেশের ৩০ মিলিয়ন লোক দুর্ভিক্ষ ঘোষণা থেকে ‘মাত্র এক পা দূরে রয়েছে।’
আসলে ওই বৈঠকে যেসব উন্নত দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য তারাই দায়ী। এমনকি উষ্ণায়ন কমানোর ক্ষেত্রে তাদের কোনো আন্তরিকতাই নেই। আর এর বিরূপ প্রভাবে আমাদের কৃষি ও অর্থনীতি দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে নিজ উদ্যোগেই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নিজেদের তহবিল গঠন করেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে, যা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
লেখক : কৃষিবিষয়ক লেখক
দীর্ঘ ৮ বছর বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। দেশ রূপান্তরে রবিবার প্রকাশিত এমন সংবাদকে উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। শিক্ষকতার মতো মহান পেশার সঙ্গে জড়িত এমন ঘটনা নৈতিক স্খলনের পাশাপাশি সমাজে ক্ষমতাবানদের অনিয়ম ও দম্ভের বাস্তব চিত্রকেই নির্দেশ করছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই। আর এ সুবাদেই জাহাঙ্গীর হোসেন স্কুলে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে আসছেন।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের শাহআলীবাগ কলওয়ালাপাড়ায় গার্মেন্টস সুতার রঙের কারখানার ব্যবসা করেন। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় হাজিরা ঠিক থাকলেও তিনি গত আট বছরে কোনোদিনই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। ক্লাস রুটিনেও তার নাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা বলেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার প্রথম দায় শিক্ষকের, যিনি শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থেকে পেশাগত ওয়াদার ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলেছেন। এরপরে দ্বিতীয় দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। তারপরে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তারা শিক্ষা প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে পারেননি। ঊর্ধ্বতনরা যদি নিয়মনীতি মেনে চলেন, অধস্তনদের সেটি মানতে বাধ্য করতে পারেন। আর সেখানে ঘাপলা থাকলে তার জের গিয়ে পড়বে তৃণমূল পর্যন্ত। সিরাজগঞ্জের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে যেটি ঘটেছে, সেটি তারই পুনরাবৃত্তি। কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তার আপন বড় ভাই আব্দুল খালেক আর সভাপতি সেজ ভাই সাইফুল ইসলাম। এছাড়া তার মেজ ভাই আব্দুল মালেক একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক। ফলে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকায় অবস্থান করে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশের আর্থিক লোকসানও হচ্ছে। এইভাবে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের নামান্তর। একইসঙ্গে সমাজে শিক্ষকদের প্রতি যে স্বাভাবিক নৈতিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করা হয় সে ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা আঘাত করবে বলেই মনে হয়। কৈজুরি এলাকার লোকজন ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখানকার অনিয়মের খবর প্রকাশ পায় । যেসব এলাকায় এমন অভিযোগ প্রকাশ না করে গোপন করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এর চেয়ে খুব ভালো তা বলা যাবে না।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করতে হলে তাদের বেতনভাতা উত্তোলনে কঠোরভাবে আইন ও বিধিমালা মেনে চলতে হবে; কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কঠোর মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
করোনায় ভয়াবহতা বাড়ছে। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় ইউরোপ, ব্রাজিল, ভারতেও বেড়েছে মৃত্যু। ভারতে ও ব্রাজিলে মৃত্যু গত বছরের রেকর্ড অতিক্রম করছে। বাংলাদেশে করোনার তিনটি ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। তবে শনাক্তের ৮১ শতাংশই হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এর সংক্রমণে দ্রুত রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত হয়, প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরতে সময় লাগছে বেশি। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এক দিনে এত মৃত্যু বাংলাদেশেও গত বছর ঘটেনি। গত বছরের তুলনায় সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যু তিনটাই বেশি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের মতো মৃত্যুবরণ করলেও অনেকেই বলছেন মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো আরও বেশি। নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় ভীতিকর। কিন্তু মৃত্যু, শনাক্ত বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি লকডাউন ঘোষণা কেন যেন কোনো প্রভাব ফেলছে না।
ঢাকা মহানগর হাসপাতালগুলোয় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে ছুটছেন স্বজনরা। তাদের উদ্বেগ, আশঙ্কা, অসহায়ত্ব যে কেমন তা ভুক্তভোগীরা ছাড়া আর কেউ বুঝবেন না। শ্বাসকষ্ট হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন অক্সিজেন। আর তা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করতে গেলে প্রয়োজন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা। সেটা পাওয়া যাবে কোথায় বা কোন হাসপাতালে? হাসপাতালের বেড খালি পাওয়া যাবে তো? আর গুরুতর আক্রান্ত রোগীর জন্য আইসিইউ খালি পাওয়া যাবে কি? প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহরে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ১০৪টি আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ৩৭৬টি। আইসিইউতে প্রতিদিন সর্বনিম্ন খরচ ৩০ হাজার টাকা আর কোনো কোনো হাসপাতালে তা দুই লাখ টাকার বেশি। টাকা যায় যাক! প্রিয়জন বাঁচুক এই ভাবনায় অনেকে আইসিইউর আশায় হাসপাতালে ভিড় করছেন। ফলে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা সংকটাপন্ন রোগীর স্বজনরা প্রতি মুহূর্তে কামনা করতে থাকে যারা ভর্তি হয়ে আছে তাদের মৃত্যু। কারণ মৃত্যু ছাড়া আইসিইউ বেড খালি হওয়ার উপায় নেই। করোনা মহামারী মানুষকে কতটা অসহায় আর অমানবিক করে ফেলছে! মুখে না বললেও মনে মনে ভাবতে থাকে, একটা বেড দরকার। নিজের স্বজন ছাড়া বাকিরা মরে যাক!
২০২০ সালের মার্চের ৮ তারিখে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এক বছর এক মাস পার হয়েছে। করোনা স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশা আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বেফাঁস কথা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছিল। এরপর করোনাকালে বাজেট প্রণীত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে সে বাজেটে সেটা ভিন্ন আলোচনা, তা করলে হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিরক্ত হবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বিশেষত করোনা মোকাবিলায় সীমিত বাজেটের উদ্যোগগুলো কেমন নেওয়া দরকার তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তত বাস্তবায়িত হবে সে প্রত্যাশা নিশ্চয়ই অমূলক ছিল না। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই বলেছেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউটা প্রথমটার চেয়ে মারাত্মক হয়ে থাকে। কে বা শোনে কার কথা! প্রথমবার ছিল দম্ভ। আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে দেখা গেল আত্মতৃপ্তির ঢেকুর। আমরা করোনা জয় করতে পেরেছি, বাকি সবকিছুই জয় করতে পারব। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম ধাক্কাতেই আতঙ্কের শিহরণ জেগেছে মানুষের মনে। তাই কোনো আশ্বাসে মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছর জানিয়েছিল, দেশে সরকারি হাসপাতাল ৬৫৪টি, এখানে শয্যাসংখ্যা ৫১৩১৬টি। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫০৫৫টি, যেখানে শয্যাসংখ্যা ৯০৫৭৮টি। সব মিলিয়ে প্রতি ১১৫৯ জন মানুষের জন্য ১টি শয্যা। শতকরা একজনের জন্য হাসপাতাল শয্যা প্রয়োজন হলেও হাসপাতাল শয্যা ১০ গুণ বাড়াতে হবে। আইসিইউর সংখ্যা বলা হয়েছিল ১১৬৯টি। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৪৩২ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩৭। গত এক বছরে এসবের কতটুকু বৃদ্ধি হয়েছে তা জানার খুব ইচ্ছা হয়। যে তথ্য আতঙ্কের সঙ্গে ক্ষোভ জাগায় তা হলো, ৩৫০টি আইসিইউ কিনে আনা হয়েছে, সেগুলো নাকি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে এখনো স্থাপন করা হয় নাই। কথায় কথায় উন্নয়নের বিবরণ শুনে এখন কী অব্যবস্থাপনার উন্নয়নের চিত্র দেখতে হবে?
প্রথম ঢেউ বা ধাক্কার শিক্ষাটা কী ছিল? তা কি কর্তা ব্যক্তিদের মনে আছে? প্রথম ধাক্কায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ৭৫ শতাংশ ছিলেন পুরুষ। বাকিরা ছিলেন নারী। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৫৬ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৫ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১১ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছেন সে কথা পরিসংখ্যান বলছে। মৃত্যুর সংখ্যার শীর্ষে ছিল ঢাকা, প্রায় ৫৭ শতাংশ। করোনার উচ্চঝুঁকিতে ছিল ৩১টি জেলা। গত এক বছরে করোনায় কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। কাজ জোগাড় করা এবং বেঁচে থাকা দুটোই কঠিন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবীদের পক্ষে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং বিবিএস পর্যন্ত জরিপ করে দেখিয়েছে, কীভাবে মানুষের জীবনে কষ্ট বেড়েছে করোনার আঘাতে। প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছিল এবং ৯৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের অন্তত ২০ শতাংশ আয় কমে গিয়েছিল। কিন্তু এসব তো তথ্য। তথ্যের কি শক্তি থাকে, যদি তা কেউ বিবেচনায় না নেয়? বিশেষ করে, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা। যে যাই বলুক না কেন, ক্ষমতায় যারা থাকেন কিছু করার ক্ষমতা তো তাদেরই থাকে। কারণ ট্যাক্সের টাকা বা রাজস্ব আয় সব তো তাদের হাতে, প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ যত পরামর্শই দিন না কেন বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা তো ক্ষমতাসীনদের হাতেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট হাসপাতালের নতুন ২০০টি করোনা আইসিইউ বেড ও ১০০০টি আইসোলেশন বেডের প্রস্তুতকরণ ও কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে সরকারের লকডাউন ব্যবস্থা জরুরি ছিল, তাই সরকার দিয়েছে। যখন লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রয়োজন হবে, সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এসব সরকারি নির্দেশনা মেনে না চললে ভবিষ্যতে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।’ এই কথার সঙ্গে দ্বিমত করার কি কিছু আছে? কিন্তু যখন সিদ্ধান্তগুলো পালটে যায়, তখন হতবাক হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার আছে কি? ঢাকাসহ আটটি মেট্রোপলিটন শহরে গণপরিবহন চলবে, মার্কেট খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এ যেন এক বেদনা জাগানো রসিকতা! কঠোর সিদ্ধান্ত আর সীমিত বাস্তবায়নের ট্র্যাজিক নাটকের মঞ্চায়ন চলছে।
করোনার ইনকুবেশন পিরিয়ড ধরা হয় ১৪ দিন, সে কারণেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কথা বলা হয়। তাহলে সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হলো কোন বিবেচনায়? এখানেই সিদ্ধান্তহীনতার শেষ নয়, একবার বলা হচ্ছে লকডাউন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে আবার দুদিন পরেই নগরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অফিস-আদালত চলবে, কারখানা চলবে, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা চলবে, বইমেলা চলবে, মার্কেট খুলবে। ঢাকাকে যদি করোনার সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা ধরা হয় তাহলে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে যে মানুষ ছুটল গ্রামের দিকে তারা কি সংক্রমণের বিস্তার ঘটিয়ে দিতে সহায়তা করল না? এর ফলে কেন্দ্র থেকে প্রান্তে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে? জনগণ করোনাকে ভয় পাচ্ছে না, লকডাউন মানছে না, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছে, দোকানপাট খুলতে চাইছে, এসব কথা বলে তাদের দায়ী করা যাবে, কিন্তু তাদের ওপর দায় চাপিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাবে কি? করোনার হাত থেকে সুরক্ষার একমাত্র উপায় বলে কিছু এখনো সুনির্দিষ্ট করা যায়নি কিন্তু প্রধান উপায় বলে মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোর কথা সব চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন। এ ক্ষেত্রে সবার সমন্বিত সুরক্ষাই ব্যক্তিকে সুরক্ষিত করতে পারে। তাই জীবিকার চাপে যেন শ্রমজীবী মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয় সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। করোনার চেয়ে পেটের ক্ষুধা আর মুনাফার লালসা দুটোরই ক্ষমতা বেশি। গরিব মানুষ লকডাউন মানবে না ক্ষুধার জ্বালায়। মালিকরা কারখানা চালু রাখবেন, ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে থাকবেন আর গরিবকে ধমক দিয়ে ঘরে থাকতে বললে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না।
লেখক রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামনিস্ট
আজ থেকে দু’বছর আগের কথা। দুলাভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ১৩ শতক জমিতে ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে তুলেন চকপাঁচপাড়া গ্রামের একাদুল হক। চকপাঁচপাড়া ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। একাদুল হক এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর আর পড়াশোনা করেনি। বাড়ির পাশে পতিত জমিতে সবজি ও ব্রয়লার মুরগি চাষে মনোনিবেশ করে। মাত্র ৮০ হাজার টাকা দিয়ে পুরাতন টিনের একটি ঘর কিনে তার মেঝে পাকা করে, একদিন বয়সের এক হাজার বাচ্চা, খাবার ও ভ্যাকসিন কিনে একাদুলের যাত্রা ব্রয়লার মুরগি পালনে। একাদুল গত এপ্রিল মাসে তার তের শতকের ক্ষুদ্র খামারে উৎপাদিত এক হাজার মুরগি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা লাভ করে। শুধু একাদুল কেন? ওই গ্রামের মুজিবুর রহমান, বাহার উদ্দিন, আব্দুল জব্বার ও সানাউল্লাহসহ অনেক যুবক মুরগি পালন করে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করছে। এই টাকায় কারও সংসার চলছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় হচ্ছে। এনজিওর ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ হচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসার ওষুধ কেনা হচ্ছে। এই আয় থেকে সন্তানের প্রাইভেট পড়ার খরচও জোগাড় করছেন অনেক অভিভাবক।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রাণিসম্পদ খুবই সম্ভাবনাময় খাত হলেও নিকট অতীতে খাতটির বিকাশে কখনই তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এক দশক আগেও উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে সামান্য বরাদ্দের বিষয় ছিল অকল্পনীয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও কোরবানির গরুর চাহিদার জন্য নির্ভর করতে হতো পাশর্^বর্তী দেশের ওপর। ২০১৪ সালে ভারতের গরু রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দুই বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এখন দেশে উৎপাদিত পশুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ প্রাণিসম্পদ খাতের একটি বিশাল অর্জন ও সফলতার স্বাক্ষর। তবে এ খাতের উন্নয়নের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন দুধের চাহিদা পূরণে যদি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় খামারের ওপর নির্ভর করা হয়, তাহলে দুধ ও দুগ্ধপণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় হওয়া বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পরিকল্পিতভাবে দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব। এতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে তা নয়, তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হালাল মাংসের কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত। ছোট, বড়, মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রাণীর জাত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন করা সম্ভব হলে খুবই সহজে রপ্তানি বাজার তৈরি করা যেতে পারে। এতে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন দেশের প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা।
১৯৭১ সালে দেশে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা ছিল ৩০ মিলি। গত ১০ বছরে সরকার কর্র্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ফলে বর্তমানে জনপ্রতি দৈনিক ২৫০ মিলি চাহিদার বিপরীতে দুধের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৬ মিলি। দেশে বার্ষিক দুধের চাহিদা ১৫.২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। উৎপাদন ১০.৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ঘাটতি ৪৫.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। দেশে চাহিদার তুলনায় দুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। রোজার সময় এই ঘাটতি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকার দুধ আমদানি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সেই দুধ আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। শিক্ষিত কয়েক লাখ তরুণ দুগ্ধ শিল্পে নিয়োজিত হওয়ার কারণে দেশে চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি দিন দিন কমে আসছে। তারপরও দেশের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। তবে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে জাত উন্নয়ন, কৃত্রিম প্রজনন মানসম্পন্ন ব্রিড তৈরিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নত জাতের অভাবে দেশি গাভির দুধ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষুদ্র খামারিরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ক্ষুদ্র খামারিদের নিবন্ধন করে ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের এ খাতে নিয়োজিত করতে পারলে খাতটির সব ধরনের উৎপাদনে দক্ষতার ছোঁয়া লাগবে। এরই মধ্যে গুঁড়োদুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে। তাই আমিষের চাহিদা পূরণ ও দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণিসম্পদ খাতকে ঢেলে সাজাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের আরও বড় পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খামার তৈরি, গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উৎপাদন ছাড়াও বিপণন ব্যবস্থায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে। গ্রামের ছোট পরিসরে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রাথমিক কারখানা গড়ে তোলা দরকার। কাঁচা ও ঘাস জাতীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণে পতিত জমিকে কাজে লাগাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে প্রাণিসম্পদ খাত।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে অর্থাৎ আশির দশকেও বাংলাদেশে মাথাপিছু দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা ছিল ৩০ মিলির কম। অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারে সপ্তাহে একদিন রান্না হতো মাংস, তাও যৎসামান্য। ডিম খাওয়া হতো ভাগভাগি করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও জনপ্রতি দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা বেড়ে হয়েছে ১৭৬ মিলি। এ ছাড়া সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে ডিম ও মাংস। পুষ্টি চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের গড় আয়ু ও কর্মক্ষমতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশু ছিল এবং হাঁস-মুরগি ছিল ২ কোটি ১০ লাখ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকসেনা ও তার দোসররা প্রায় ২৫ শতাংশ হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু জবাই করে খেয়ে ফেলে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দেখা দেয় খাদ্য ও পুষ্টি সংকট। সেই বাংলাদেশে আজ চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে মাংস ও ডিম। ২০২০ সালে বাংলাদেশে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৬০ হাজার ও হাঁস-মুরগি ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার। জাত উন্নয়নের ফলে গরু-মহিষের দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৬ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ প্রত্যক্ষ ও ৫০ ভাগ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থিরমূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া সস্তায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য প্রাণিজ আমিষের জোগান দিচ্ছে পোলট্রি শিল্প। বর্তমানে পোলট্র্রি খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হচ্ছে ২৫ লাখ মানুষের। এই শিল্পের ওপর ভর করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত মাংসের বড় একটি অংশই বিক্রি হচ্ছে এসব খাবারের দোকানে। আর এ খাতেও কর্মসংস্থান হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। এর বাইরে বর্তমানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোয়েল, কবুতর ও টার্কি খামার। প্রাণিজ আমিষ সরবরাহে এসবের অবদানও কম নয়।
১৯৭১-৭২ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হয় ১০ লাখ মেট্রিক টন, মাংস উৎপাদন হয় ৫ লাখ মেট্রিক টন ও ডিম উৎপাদন হয় ১৫০ কোটি। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, মাংসের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ডিমের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি। বছরে জনপ্রতি ১০৪টি হিসাবে বর্তমানে দেশে ডিমের চাহিদা ১ হাজার ৭৩২ কোটি এবং দৈনিক জনপ্রতি ১২০ গ্রাম হিসেবে বছরে মাংসের চাহিদা ৭২ লাখ ৯৭ হাজার টন। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ ডিম ও মাংস উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, উদ্বৃত্ত একটি দেশ। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মাংস উৎপাদনে এবং ২০১৯ সালে ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে প্রাণিজ আমিষের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই লকডাউনের কারণে প্রাণিজ আমিষ বিশেষ করে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
১৮৮৫ সালের ১২ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি প্রতœতত্ত্ববিদ এবং সাহিত্যিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বাবা মতিলাল ও মা কালিমতী। তিনি ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১১ সালে তিনি ভারতের প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯১৭ সালে প্রতœতাত্ত্বিক তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ভারতীয় সভ্যতার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক ছিলেন। উৎকীর্ণ লিপিতত্ত্ব ও প্রাচীন হস্তলিপি বিদ্যা, মুদ্রাতত্ত্ব, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে তার একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। ভারতীয় শিল্পকলার চর্চায় তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়ান মেডিয়েভাল স্কুল অব স্কাল্পচার’ নামক গ্রন্থটি। প্রায় ৪০০ শোভাবর্ধক চিত্র সংবলিত এ গ্রন্থে তিনি পূর্ব ভারতীয় কলার নির্মাণ কৌশল, উৎপত্তি ও বিকাশ, বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের দেব-দেবীদের মূর্তিতত্ত্ব, জৈন প্রতিমা ও পূর্ব ভারতের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি উৎকীর্ণ মূর্তিতে উল্লিখিত তারিখ ও তারিখবিহীন মূর্তির অভিলেখের ওপর ভিত্তি করে কালানুক্রমে পাল-সেন যুগের ভাস্কর্যকে বিন্যস্ত করেন। ঔপন্যাসিক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। তার কয়েকটি উপন্যাস ভারতের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৩০ সালের ২৩ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রকৃতি স্থবির নয়, সে সজীব এ কথা প্রায় সোয়া’শ বছর আগে আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। এমনকি প্রতিটি বৃক্ষ অনুভূতিপ্রবণ, আঘাতে সে ন্যুব্জ হয়, ভালোবাসায় উৎফুল্ল হয়। যাকে আমরা আজ ‘প্ল্যান্ট নিউরোবায়োলজি’ নামে অভিহিত করি।
সভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের নির্মম কুঠারাঘাত। নিজেদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য ভোগবাদী বিচার-বিবেচনাহীন মানুষ উজাড় করছে বন-বনানী, পাহাড়-অরণ্য, ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র্য আর দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বায়ু। আর এর ফলাফল হিসেবে দেখছি- বিগত বছরে ঘটে যাওয়া মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বর্তমান ধরিত্রীর তীব্র উত্তপ্ত রূপ।
বিশ্ব গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে প্রায় অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশে মোট আয়তন ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সরকারি হিসাব মতে বনভূমির পরিমাণ ১৬ শতাংশ ধরা থাকলেও বাস্তবে আছে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে প্রতি বছর বন উজাড় হচ্ছে ৯.৪ শতাংশ। পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম বনভূমি পরিবেষ্টিত দেশগুলোর মধ্যে একটি। যেখানে বনভূমির হার মোট ভূমির মাত্র ৬.৭ শতাংশ।
আইন প্রয়োগের ঘাটতির কারণে নির্বিচারে বন-ধ্বংসের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শালবন প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে। এমনকি প্রত্যক্ষ তদারকি ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাংলাদেশের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে সক্ষম পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে নির্বিচারে চলছে বৃক্ষনিধন। এছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেও হুমকির সম্মুখীন সুন্দরবন। বিশ্বব্যাপী নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের মাধ্যমে অবাধে কার্বন নিঃসরণের ফলে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই হয়নি, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বন ও বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিকুল আজ ধ্বংস ও বিলুপ্তির পথে। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে একের পর এক প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে দেওয়ায় ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের জন্য পানিনির্ভর খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিশ্বব্যাপী চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কারখানার বয়লার চেম্বারের মতো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন থেকে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। এ বছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ বছর আগে ২০১৪ সালে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল। সে সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এই মাঝের সময়টা বা গত আট বছরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচেই ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভূবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে অনাবৃষ্টি, পানি অপচয় ও ব্যবহারজনিত কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনের পর দিন অতি দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এই বিপর্যয় মূলত পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি ও যথেষ্ট পরিমাণে গাছপালা না থাকারই ফল। এই প্রেক্ষাপটে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলায় দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচ- শীত অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ লক্ষণ মরুকরণ প্রক্রিয়ার আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস।
এসব কি তাহলে প্রকৃতির প্রতিশোধ? প্রকৃতি যদি সজীব হয়, যদি তার অনুভূতি থাকে, তাহলে তার এমন প্রতিশোধে বিস্মিত হব না। লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ ক্রমেই প্রকৃতির ওপর তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। বন কেটে বানিয়েছে নগর, ভূগর্ভ থেকে হরণ করেছে গ্যাস, তেল ও কয়লা, নদীপথ পরিবর্তন করে নির্মাণ করেছে অতিকায় বাঁধ। প্রকৃতির ওপর এক কাল্পনিক বিজয় লাভ করে আমরা নিজেদের অজেয় ভেবেছি। কিন্তু এখন সর্বংসহা প্রকৃতি মানবজাতির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
প্রকৃতি একসময় প্রতিশোধ নেবে, এমন এক সম্ভাবনার কথা প্রায় দেড়’শ বছর আগে উল্লেখ করে গেছেন ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস। এমন কথা সম্ভবত তিনিই প্রথম বলেছিলেন তার অসম্পূর্ণ ‘ডায়ালেক্টিকস অব নেচার’ গ্রন্থে। তিনি প্রকৃতির বিরুদ্ধে ধাবমান মানুষকে এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন, ‘এতটা বাড়াবাড়ি করো না। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি বিজয় প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে তোমাদের কাছেই ফিরে আসবে।’ আজকের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পারি, কী কঠোর সত্য উচ্চারণ করেছিলেন তিনি।
একটি আশার কথাও বলেছিলেন তিনি। মানুষকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমরা যদি নির্দয় বিজেতা না হয়ে, বহিরাগত কোনো আক্রমণকারী না হয়ে প্রকৃতির অনুগত প্রজা হই, তাহলে সে আমাদের কেবল আশ্রয় দেবে তাই-ই নয় বরং আমাদের রক্ষাকর্তাও হবে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, খুব বেশি কিছু নয়, এর জন্য প্রয়োজন শুধু প্রকৃতির আইন মেনে চলা। রবীন্দ্রনাথের ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায়ও আমরা সেই একই ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলাম। যান্ত্রিকতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতির কোলে আশ্রয়ের আকুতি!
পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনে মানব সচেতনতার একটি বৃহত্তর পদক্ষেপ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্নতার কারণজনিত বিষয়ে ১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন, জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের ‘প্রথম পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’-এর স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরপর ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের বার্তা তখনই সফলতা লাভ করবে, যখন প্রকৃতিকে তার স্বরূপ রেখে উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও মানবতা বিকাশের পথে বিশ্বের মানবজাতি এগিয়ে যেতে পারবে। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা, কঠোর আইন ও মূল্যবোধের বিকাশ।
মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিপন্ন এই ধরণী মাতার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা। সেখানে বনাঞ্চলের জমি প্রজাবিলি করার কাজে গিয়ে সেই বনের মায়ায় পড়ে যান সত্যচরণ বা লেখক। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেই ঘন বন কেটে শস্যপূর্ণ জনপদ বসাতে হয়। লেখক তাই উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে, ‘হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়....’
ক্ষমা করো...
আমাদের ক্ষমা করো বসুন্ধরা!
লেখক : প্রভাষক, বিইউবিটি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
চোরের মন পুলিশ পুলিশ কিন্তু পুলিশের মন ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল কি না সেটা অন্তত আপ্তবাক্য হিসেবে প্রচলিত না। তা না থাক, বহুদিন ধরেই ‘পুলিশকে আরও মানবিক আচরণ করতে হবে’ বলে কথাটি চালু আছে। তার মানে পরিষ্কার– পুলিশের আচরণে নিশ্চয়ই সমস্যা আছে। আরেকটি কথাও প্রচুর শোনা যায়– বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। তো বেশ পশুত্ব, হিংস্রতা, অমানবিকতার এই বাক্যে পুলিশ সদস্যরা শ্লাঘা বোধ করেন কি না তা জানি না। কিন্তু এটা জানি যে পুলিশের কাছে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক মানুষকে।
পুলিশের আচরণ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। বাহিনীটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার সদস্যদের পরিশীলিত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, বলছেন, অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রয়োগ হলে শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হচ্ছেও মাঝেমধ্যে, তবু অভিযোগের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে কলোনিয়াল মাইন্ডসেটের কথা। এর সত্যতা থাকলেও পুরোটাই কি সেই ঔপনিবেশিকতার জের, নাকি আরও কিছু ফাঁকফোকরকে ইতিহাসের কাঁধে চেপে আড়াল করে যাওয়া? পুলিশের এই বিকলাঙ্গ আচরণ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের পঙ্গুত্বকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পুলিশের অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাদের কর্মকাণ্ড যেমন আলোচিত, পাশাপাশি সমালোচিত। সাধারণ মানুষকে পুলিশ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নেগেটিভ মন্তব্যই বেশি পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো, কেন সাধারণ মানুষ পুলিশের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়? কেন সাধারণ মানুষের অভিযোগ বা মন্তব্যে কেউ কর্ণপাত করছে না? এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।সম্পªতি ১ জুন অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন, ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোনো ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়নি। প্রতিবন্ধী ভাতা পাঁচ হাজার টাকা করাসহ ১১ দফা দাবিতে রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে পুলিশের বাধায় পড়ে ‘সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ’।
আন্দোলনকারীদের ভাষ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি না মানলে সড়ক থেকে উঠবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে তাদের রুখতে সজাগ দৃষ্টিতে অবস্থান করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখান থেকে কর্মসূচি শেষে যাত্রা শুরু করলে তাদের শাহবাগেই আটকে দেয় পুলিশ। পরে একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়ক আটকে দিলে তারা সড়কে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। ধরে নিলাম, পুলিশের বক্তব্যই সঠিক। এই বক্তব্যকে এক পাশে রেখে চিন্তা করি যে একটি আদর্শ সমাজে কী হয়। প্রতিবাদ করা একটি অধিকার এবং প্রতিবাদের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হওয়ার কথা না।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টে আন্দোলনকারীরা পুলিশের যে আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। তারা জানান, পুলিশ সামনে হুইল চেয়ারে বসা আন্দোলনকারীদের সামনে এগোতে বাধা দিলে তারা সেখানেই অবস্থান নেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ধাক্কা দিয়ে, বলপ্রয়োগ করেই ক্ষান্ত হয়নি, হুইল চেয়ারসহ আন্দোলনকারীদের কাউকে কাউকে তুলে পেছনের দিকে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। একজন নারীকে হুইল চেয়ার থেকে টেনে ফেলে দিয়েছে পুলিশ। হুইল চেয়ারের চাকা ভেঙে দিয়েছে। শ্রবণপ্রতিবন্ধী হুইল চেয়ারে বসা আন্দোলনকারীদের বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তারা আরও মারমুখী হয়ে ওঠে এবং আন্দোলনকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়। একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এক আন্দোলনকারী বলেন, পরিস্থিতি নাজুক বুঝতে পেরে আন্দোলনকারীরাই নিজেদের শান্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যদি পরিস্থিতি শান্ত না করতাম তাহলে আরও বড় কিছু হয়ে যেত। এই পর্যায়ে আসলেই প্রশ্ন জাগে যে সেখানকার পুলিশ সদস্যরাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কি না। যেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের এই বিক্ষোভ-আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের চেয়ে তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশে নিরাপত্তা দেওয়াই স্বাভাবিক পুলিশি তৎপরতা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা যে আচরণ করেছে কেবল এজন্যই ওই পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি রাখে। এখানেই শেষ নয়। অপর একজন প্রতিবন্ধী আন্দোলনকারী জানাচ্ছেন, পুলিশ তাদের তুই-তোকারি করে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। পাবলিককে, জনগণকে এই তুই-তোকারি করার পুলিশি খাসলতের কারণেও অনেকে পারতপক্ষে পুলিশের কাছে যান না।
রাজনৈতিক আন্দোলন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সহিংসতা দমনের ধরন আর প্রতিবন্ধীভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, হাঁটাচলায় অক্ষম ব্যক্তিদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যে পুলিশ পার্থক্য করতে পারে না, সেই পুলিশ দিয়ে আমরা কী আশা করতে পারি! এখানে ‘অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে’ বলে কি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ বাহিনী দায় এড়াতে পারে? গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ জানানোর, দাবি জানানোর অধিকার সবার আছে। কিন্তু তা মোকাবিলায় পুলিশের যে আচরণ সেটা ন্যক্কারজনক। আমরা পুলিশকে পেটোয়া বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না।
বিদ্যমান পুলিশি আইনে পুলিশকে মানবিক করা যাবে না। কারণ পুলিশ চলছে ১৮৬১ সালের আইনে। যে আইনটি ব্রিটিশরা করেছিল এ অঞ্চলের মানুষকে শোষণ করার জন্য। যতদিন এ আইন পরিবর্তন করার যাবে না ততদিন পুলিশ এমন অমানবিক আচরণ করবে। এ আইন পরিবর্তন করে পুলিশকে বাহিনীর বদলে সেবাদাতায় পরিণত করতে হবে। তবে অন্যায্য বা অন্যায় আচরণ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না, এমনটা নয়। গত ছয় বছরে ৭৬ হাজার পুলিশকে নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে দেশের প্রতি দুজনের একজনই বাহিনীর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কোনো না কোনোভাবে সাজাপ্রাপ্ত।
প্রতিবন্ধীদের আন্দোলন দমনে সর্বশেষ পুলিশ সদস্যরা যে আচরণ করেছে, তাতে করে গণতন্ত্র রক্ষা না, অমানবিকতার দায়েই বাংলাদেশের পুলিশের ওপর উন্নত দেশগুলো বিশেষ ভিসানীতি দিতে পারে। পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চিকিৎসা জরুরি। এটা দীর্ঘদিনের আলোচনার বিষয়। কারণ যে মানুষটি সারা দিন অপরাধ বা অপরাধী নিয়ে থাকেন বা থাকছেন, তার মানসিক অবস্থার উন্নতি না হলে তিনি কখনো ইয়াসমিনদের তুলে নিয়ে যাবেন, কখনো লতা সমাদ্দারদের টিপ-কাপড় নিয়ে কথা বলবেন, আবার কখনো বা নারীর ব্রা-এর ফিতা কোন দিক দিয়ে বের হয়ে আছে, তা খুঁজে বেড়াবেন। দেখা যাচ্ছে যেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন সেখানে পুলিশ খড়গহস্ত– কেন?
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।