
নিয়মটা তো এই রকমেরই ধেয, একপক্ষ জয়ী হলে অন্যপক্ষ পরাজিত হবে এবং এ নিয়মেও মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত যে, জয়ীর সংখ্যা হবে অল্প, পরাজিতদের সংখ্যা অধিক। তা বাংলাদেশে জয়ী হয়েছে কারা, কারা ওই অল্পসংখ্যক লোক যারা পরাজিত করেছে বিপুলসংখ্যক দেশবাসীকে?
এ প্রশ্নের মীমাংসা মোটেই জটিল নয়, বরং খুবই সহজ। যেদিকে তাকাই দেখতে পাব জয়ীদের এবং সঙ্গে সঙ্গে দূরে নয়, কাছেই, বলা যাবে পাশেই চোখ পড়বে পরাজিতদের। এই শহরে তিন কোটি টাকা দামের গাড়িও চলে। দাম জানি না, নিরূপণের সুযোগ নেই, যারা জানেন তারা বলেন। এরাই তো জয়ী, এই বিত্তবানরা। আর পাশেই, ওই গাড়ি যখন যানজটের জন্য থেমে যায় তখনই চোখে পড়বে জীর্ণশীর্ণ কিশোরীকে, যে ফুল বিক্রি করে, তিনশ নয়, তিরিশও নয়, তিন টাকা পেলেই বর্তে যায়। এই যে তিন কোটি টাকা ও তিন টাকা এ কোনো স্থির ছবি নয়, সহ-অবস্থানের চমৎকার দৃশ্য বলা যাবে না একে, এ হচ্ছে তিন কোটিওয়ালার নিপীড়ন ও অপমান, তিন টাকাওয়ালাকে। তিন কোটির মালিক অল্প কয়েকজন, তিন টাকার কাঙাল অসংখ্য, লাখ লাখ।
এই জয়, এই পরাজয়, এ কোনো নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু জয়ী এবং পরাজিতের মধ্যে ফারাকটা বাড়ছে, দিনে দিনে, বছরে বছরে। গ্রামে কাজ নেই, আশ্রয়ও নেই, নিরুপায় মানুষ উপায়ের খোঁজে শহরে আসে, এসে বস্তিতে ওঠে তারপর বস্তিতে এক দিন আগুন লাগে, সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়, নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বস্তিবাসী গ্রামে পরাজিত হয়ে যে শহরে এসেছিল; শহরে হেরে গিয়ে সে কোথায় চলে যায়, কে জানে। যেখানে বস্তি ছিল সেখানে বিজয় উঠতে বিলম্ব ঘটে না, দর্পিত অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা আত্মসন্তুষ্ট বিপণি বিতান দাঁড়িয়ে যায়, জয়ীদের জয়ের তালিকা যেমন, তেমনি পরাজিতদের পরাজয়ের তালিকাও প্রসারিত হতে থাকে, পরস্পর বিরুদ্ধ ফলাফল তৈরি করে দিয়ে। ছোট ব্যবসায়ীদের বাজারটা পুড়ে যায়, যাতে বড় ব্যবসায়ীরা সেখানে আরও বড় বাজার খুলতে পারে।
এসব তো বাইরের দৃশ্য। জয়ী মানুষদের ঘরের ভেতরের ছবি দেখলে সন্দেহ থাকবে না যে, আরব্য রজনীর সেই দৈত্য তাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, হুকুম করার অপেক্ষামাত্র, অমনি যা চাইবে এনে দেবে। এরা ঈদে যায় কলকাতায়, অসুখ হলে ব্যাংককে, ছেলেমেয়েদের রাখে আমেরিকায়। নিজেরা কখনো দেশে থাকে, কখনো বিদেশে। দেশি জিনিস পারতপক্ষে ব্যবহার করে না, দেশি ভাষায় নিজেরা ক্ষমাঘেন্না করে কথা বললেও সন্তানদের কারবার সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এসব যখন চলে তখন মঙ্গা ঘটে রংপুরে। দেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, মঙ্গা কী তিনি জানেন না। আগের অর্থমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন, শেয়ার মার্কেট কী বস্তু তিনি বোঝেন না, যদিও তার চোখের সামনেই ফটকাবাজারে জুয়া খেলতে গিয়ে শত শত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার নিজেদের সর্বস্ব খুইয়েছে এবং দেশি-বিদেশি ভুয়া কোম্পানি শেয়ারের মূল্যহীন কাগজ তাদের হাতে গছিয়ে দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। মঙ্গা কী, তা মন্ত্রী না বুঝলেও ভুক্তভোগী মাত্রই বোঝে। হাড়ে হাড়ে। কয়েকজন তরুণ গিয়েছিল মঙ্গাপীড়িত এলাকায়। তাদের একটি অভিজ্ঞতাই বলে দেবে মানুষ সেখানে কীভাবে টিকে আছে। অতিশয় বৃদ্ধ একজন এসেছিলেন সাহায্য নিতে। তার পরনের লুঙ্গিটি ছেঁড়া, কিন্তু তিনি চাইলেন একটি শাড়ি। কারণ কী জানতে চাইলে বললেন, তিনি তো তবু ফাটা লুঙ্গি পরে বাইরে আসতে পেরেছেন, তার স্ত্রীর পক্ষে ঘরের বাইরে আসার উপায় নেই। ওই সময়টা ছিল রোজার, ত্রাণকর্মীরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন সাহরিতে তিনি কী খেয়েছেন, জবাব পেয়েছেন যে, পান্তাভাত ও কাঁচা মরিচ জুটেছিল, ইফতারির সময় পানি ছাড়া অন্যকিছু পাবেন বলে ভরসা করেন না। তরুণ ত্রাণকর্মীদের কৌতূহল রয়েছে ঈদের দিন তিনি কোন ধরনের খাবার খাবেন বলে আশা করেন, ভদ্রলোক জানিয়েছেন ভাতের সঙ্গে ডিম ভাজা পেলে খুবই খুশি হবেন। গরিবের ঈদ নিয়ে কবিতা আমরা অনেক পড়েছি। কিন্তু সেই ঈদ যে এমন সাদামাটা এবং এই ঈদ যে একজনের নয়, বহুজনেরতার বিপরীতে তিন কোটিওয়ালাদের ঈদ যে কতটা দাপটের হতে পারে তার হদিস কবির পক্ষেও পাওয়া সহজ হবে না।
কে জয়ী আর কে-ইবা পরাজিত তা নিয়ে কি সন্দেহের কোনো অবকাশ আছে? জয়ীর সংখ্যা শতকরা পাঁচজনের বেশি হবে না, বাদবাকি সবাই বিভিন্ন মাত্রায় পরাভূত। জয়ীরা কারা? তাদের পরিচয় কী? পরিচয় একটাই, তারা ধনী। হ্যাঁ, পেশাগত পার্থক্য আছে, আদর্শগত দূরত্বও থাকতে পারে, কিন্তু তাদের জয় সেসব বিভিন্নতাকে অবলুপ্ত করে দিয়েছে। এরাই এ দেশের ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিক এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেশাজীবী। এদের মধ্যে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি সবাই রয়েছে। যেন একই পরিবারের সদস্য, কলহ যা তা পারিবারিক বটে; ভাগাভাগি নিয়ে কাড়াকাড়ি মাত্র, নইলে তারা সমান সুবিধাতেই রয়েছে। সরকারি জোটের সদস্য জামায়াতের আমির নিঃসংকোচে বলে যাচ্ছেন যে, সূর্যসেন ছিলেন এ দেশের প্রথম সন্ত্রাসী, জামায়াত একাত্তরে মানুষ খুন করেছে, এখনো যে করছে না তা নয়, কিন্তু তা নিয়ে ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, দুঃখ প্রকাশও করতে হয়নি। জয়ীদের কাতারে তারা অত্যন্ত আরামে বসে আছে।
নব্বইয়ে একটি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল, পতন ঘটেছিল এক স্বৈরশাসকের। পতনের রাতে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করছেন বলে খবর রটেছিল, হাজার মানুষ ছুটেছিল বিমানবন্দরের দিকে, তাকে আটকাতে। তিনি আটকও হয়েছিলেন, কিন্তু পরে শুধু ছাড়াই পাননি, ওই যে যারা জয়ী তাদের মধ্যে একজন প্রধান পুরুষ হিসেবে বিরাজ করছেন। তিনি বিবাহ এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, সম্প্রতি মেয়ের বয়সী ও আগে-বিবাহিত এক পাত্রীকে স্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন, সে খবর নয় কেবল, তার নতুন স্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্যও আমাদের শুনতে হয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী নির্বাচিত এমপি, দ্বিতীয় স্ত্রীও শোনা যাচ্ছিল মহিলা কোটায় এমপি হবেন বলে কথা ছিল। পরে আরও তেলেসমাতি কা-। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তিনি ত্যাগ করেছেন এবং জেল খাটিয়েছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীও বসে নেই, অতবড় মানুষের স্ত্রী, তাই সাবেক হলেও রাজনীতিতে হট্টগোল করছেন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ড. মিলন, কাগজে খবর বের হয়েছে যে, যারা সেদিন মিলনকে গুলি করেছিল তাদের নিজ হাতে গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিলেন স্বয়ং এরশাদের প্রথম স্ত্রী। কদিন আগে মিলনের মা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মিলন হত্যার বিচার দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাকে আশ্বাস দিয়েছেন, বিচার হবে বলে। এর কদিন পর রওশন এরশাদ তার দলের এমপিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন বলে যে খবর বের হয়েছিল সে ঘটনার পরিণতি যদি এমন হতো যে, রওশন এরশাদ একজন মন্ত্রী হয়েছেন, তাহলেও বিস্মিত হওয়ার কারণ থাকত না। কিছুই অসম্ভব নয়।
রূপকথায় কল্পজগতের কাহিনী থাকে, সেখানে নিয়মকানুন-কায়দাকানুন সবকিছুই অন্যরকমের, আমাদের দেশে ধনীরাও ওই জগতেরই বাসিন্দা, তাদের কাজ একেবারেই ভিন্ন ধরনের। বিদেশিরা আমাদের গ্যাস-তেল নিতে চায়। সরকার রাজি, বিরোধী দলও যে গররাজি তা নয়। টাটা কোম্পানি আসবে, তাদের গ্যাস দেওয়া হবে; সরকার উৎসাহী, বিরোধী দল যে অনাগ্রহী তাও মনে হয় না। বিদেশিরা বন্দর নিয়ে নেবে এমন আশঙ্কা, সে ব্যাপারে সরকারি এবং বিরোধী দল কারও মনোভাবেই প্রকৃত দেশপ্রেমিকের নয়। এ দেশে যারা ক্ষমতায় যাতায়াত করে তারা সবাই একই শ্রেণির মানুষ। সেটি হলো শাসকশ্রেণি, সেই শ্রেণিতে দেশপ্রেমের বড়ই অভাব; ছড়াছড়ি আত্মপ্রেমের। একাত্তরে কি তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি? সেই যুদ্ধে কি জয় হয়নি জনগণের? শতকরা পঁচানব্বইজনই তো ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, পাঁচজন হয়তো বিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় কি তবে চলে গেল দেশের ধনিক শ্রেণির হাতে?
হ্যাঁ, সেটাই ঘটেছে বটে। ক্ষমতা চলে গেছে ধনীদের হাতে। একাত্তরে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল, কে ছিল বিপক্ষে সেটা আজ আর কোনো বিবেচনার বিষয় নয়, বিবেচ্য হলো কার হাতে টাকা আছে, কার হাতে নেই। যার টাকা আছে গেন ক্ষমতাবান, টাকা কোন পথে এসেছে তা কেউ জানতে চায় না। কেননা জানাই আছে যে, সব টাকাই অর্জিত হয়েছে অন্যায় পথে। কিন্তু ব্যাপারটাকে ছিনতাই বলা বোধকরি অন্যায় হবে। ঘটনাটা খুবই স্বাভাবিকভাবে ঘটেছে। সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ঘরের মেয়েরা নানাভাবে লাঞ্ছনা সহ্য করেছে। যুদ্ধ শেষে তারা চলে গেছে নিজ নিজ পুরাতন অবস্থানে, যে অবস্থান এরই মধ্যে আগের তুলনায় ভালো হবে কী আরও খারাপ হয়েছে। তারা কাজ পায়নি। অনেকে দুর্ভিক্ষে পড়েছে। আগে ছিল রাজাকারের আতঙ্ক, পরে দেখা দিয়েছে রক্ষীবাহিনীর ভয়। আর যারা বিত্তবান তাদের সুবিধা হয়েছে, তারা একবার ধন বৃদ্ধির সুবিধা পেয়েছিল পাকিস্তান আসায়, আরেকবার পেল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়। বিত্তবানদের যে অংশ যুক্ত ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা তো উৎফুল্ল হলোই, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তাদেরও কোনো অসুবিধা হলো না। রাজাকারদের ভেতর চিকন আলীরাই শুধু ধরা পড়েছে, স্ফীতোদররা সহজেই পুনর্বাসিত হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য, আদর্শের জোরে নয়, টাকার জোরে। যুদ্ধে জনগণের জয় হয়েছে. এটা একাত্তরের শেষে এবং বাহাত্তরের শুরুতে সত্য ছিল। মনে হয়েছিল বিপ্লব ঘটে গেছে। আমরা নতুন রাষ্ট্র তো বটেই, নতুন এক সমাজও পাব। জনগণ বলতে সেই মুহূর্তে ধনী-দরিদ্র সবাইকে বোঝাত। কেননা সবাই একসঙ্গে লড়ছিল একটি চিহ্নিত শত্রুর বিরুদ্ধে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের ঐক্য তো টেকেনি।
ধনীরা চলে গেছে ধনীদের জায়গায়, বাদবাকিরা পরাজিত মানুষের মতো ফিরে গেছে আগে, যেখানে ছিল তার চেয়েও খারাপ জায়গায়। গত ৩৪ বছরের ইতিহাস এ দেশে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার ইতিহাস বটে। ধনী হয়েছে উৎপাদন করে নয়, মূলত লুণ্ঠন করে; কাজটি হানাদাররা শুরু করেছিল, স্থানীয়রা তাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। একাত্তরে জাতি বিভক্ত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারে, তারপর বিভক্ত হয়েছে ধনী ও দরিদ্রে। ধনীরা জয়ী হয়েছে, গরিবদের হারিয়ে দিয়ে। যেন ধনীকে আরও ধনী করার জন্যই সবকিছু ঘটেছে।
এমন তো কথা ছিল না। লড়াইটা তো শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার ছিল না, ছিল সার্বিক মুক্তির, যে মুক্তির মূল ভিত্তিটাই হওয়ার কথা ছিল অর্থনৈতিকশুধু উন্নয়নের নয়, বৈষম্যহীনতারও। জনগণের আশা কেন তাহলে ভেঙে গেল খান খান হয়ে। গেল এজন্য যে, সমাজ মোটেই বদলাল না। রয়ে গেল আগের মতোই। রাষ্ট্র বদলাল বটে, কিন্তু সে শুধু বহিরঙ্গ, ভেতরে সে রয়ে গেল আগের মতোই। সেই একই আমলাতন্ত্র, আইনকানুন, অফিস-আদালত শিক্ষাব্যবস্থা, প্রচারমাধ্যম, ধমক-ধামক, ঠাটবাট। শাসক বদলাল কিন্তু শাসন বদলাল না।
সাতচল্লিশে ব্রিটিশ শাসকরা চলে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে, একাত্তরের পাকিস্তানি শাসকরাও সেই একই কাজ করতে বাধ্য হলো, ক্ষমতা দিয়ে গেল বাঙালি শাসকদের হাতে। রাষ্ট্র হুবহু এক রইল না, কিন্তু একই ধরনের রয়ে গেল। দুবারই যারা রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়েছে তাদের প্রধান যোগ্যতা ছিল তাদের বিত্ত। বিত্তবানরাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়ও তারাই রয়েছে। জয় তাদেরই। আর তারা যদি জয়ী হয় তবে সাধারণ মানুষ তো পরাজিত হবেই। তারা ঠিকই পরাজিত হয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে; বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সশস্ত্র যুদ্ধের সাহায্যে। এই ব্যবধানটা সামান্য নয়। স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতাও নয় শুধু; চাই মুক্তি। খুব বড় একটা আশা তৈরি মুক্তির কল্পনাকে ঘিরে হয়েছিল। সফল হলো না বিত্তবানদের কারণে। তারা রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে সেই কাজই করতে থাকলপাকিস্তানি শাসকরা যা করছে, নিজেরা আরও ধনী হতে থাকলে জনগণকে বঞ্চিত করে। এদের চরিত্র দেশপ্রেমিকের নয়, লুণ্ঠনকারীর বটে।
লেখকঃ ইমেরিটাস অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি হিসাবে বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কাজ করছে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ কর্মী (প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি)। জিডিপিতে প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দিন দিন প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। শ্রমবাজারে ভাষাজ্ঞান একটি শক্তি। যে কোনো শ্রমবাজারে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় ভাষাজ্ঞান। শুধুমাত্র ইংরেজি ভালো জানার জন্য আমাদের দেশের কর্মীদের তুলনায় ফিলিপাইন, ভারত ও শ্রীলঙ্কার কর্মীদের বেতন দ্বিগুণ বা তারচেয়েও বেশি বৈদেশিক শ্রমবাজারে।
বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ কর্মী ফিলিপাইনের প্রবাসে কাজ করে। তাদের প্রবাসী আয় বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণ ইংরেজির কারণে। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এডুকেশন ফার্স্ট (ইএফ)। সংস্থাটির সমীক্ষায় ফিলিপাইন ইংরেজি দক্ষতায় উচ্চ অবস্থানে (২০) রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ মনজুর এলাহী এক সভায় বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিপাইনের লোকেরা বাংলাদেশিদের চেয়ে চারগুণ বেশি বেতন পান। কারণ তারা সাবলীল ইংরেজি বলতে পারেন। যে জন্য তারা মধ্যম সারির কাজ পান’। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ফিদেন রামোস বিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিদেশে আমাদের দেশের কর্মীরা ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। ছোটবেলা থেকে তারা ইংরেজিতে অভ্যস্ত। তাই বিদেশে তাদের চাহিদা বেশি।’
শুধুমাত্র ইংরেজি ভালো না জানার কারণে আমরা প্রবাসে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ছি মেধা থাকা সত্ত্বেও। ক্যারিয়ার গঠনে ইংরেজি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তা ভুক্তভোগী প্রবাসীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘ইংরেজি দক্ষতার অভাবে আমরা আন্তর্জাতিক দেন-দরবারেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ এত প্রতিকূলতার পরও ইংরেজি ভাষাকে আমরা এখনো ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবেই শিখছি। ‘সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ঘোষণা করতে পারলাম না আজও। ইংরেজি দক্ষতায় বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নিম্নস্তরে এমন তথ্য উঠে এসেছে এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। অর্থনীতি ফোরামের হিসাবে ‘পৃথিবীতে ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন ১৫০ কোটি মানুষ। কিন্তু এদের মধ্যে ৪০ কোটিরও কম মানুষের মাতৃভাষা এটি (বিবিসি বাংলা)’। সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি যতটা ব্যবহার হয় অন্য কোনো ভাষা এতটা ব্যবহার হয় না। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা। ২০৫০ সালেও ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষাই থাকবে (বিবিসি বাংলা ২৬ আগস্ট ২০২০)’। সাহিত্য সংস্কৃতি, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় ইংরেজি এখনো শীর্ষস্থানেই আছে।
আমেরিকার নাগরিকরা অনলাইনে চাইনিজদের ইংরেজি ভাষা শিখিয়ে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করছে। ইউরোপের দক্ষ কর্মীর পাশাপাশি অদক্ষ কর্মীরা ইংরেজি ভাষার সুবিধা পেয়ে থাকে শ্রমবাজারে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই ৫টি দেশ ইংরেজি ভাষার সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজারেও ভারত ও শ্রীলঙ্কার ইংরেজিতে দক্ষ কর্মীরা অতিরিক্ত বেতনভাতা পাচ্ছে। আমাদের শ্রমবাজারের ঘাটতি পোষাতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে ইংরেজিতে দক্ষ কর্মী আনতে হয়। পেশাগত প্রয়োজনে ইংরেজি শেখার বিকল্প নেই। যদিও দুঃখজনক হলেও সত্য যে কোনো কর্মকর্তা পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইংরেজিতে প্রত্যাশিত দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত ৩ খাতের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি, গার্মেন্টস ও প্রবাসী আয়। যত সহজে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা যাবে; তত সহজে অন্য দুটি খাতে আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব না। তাই অর্থনীতির গতি ত্বরান্বিত করতে এই মুহূর্তে প্রবাসী আয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ইংরেজিতে কথা বলা ও শুনে বোঝা খুব কঠিন কাজ নয়। প্রয়োজন দেশব্যাপী একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে যত অর্থ, সময় ও শ্রম ব্যয় হবে তার চেয়ে অনেক কম শ্রমে ও অর্থে ইংরেজির মাধ্যমে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। সরকারি খরচে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই ভাষার ওপর জোর দিতে হবে। ভাষাচর্চার ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকা দরকার।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাখ লাখ কর্মীকে ইংরেজি শেখানো সম্ভব। আমাদের দেশে এখন ইংরেজি শেখানোর মতো দক্ষ জনবল রয়েছে। মাত্র কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করে কয়েক লাখ নাগরিককে কমিউনিকেটিভ বা বিজনেস ইংলিশ শেখনো যাবে না কেন? আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভাষা এক বিরাট শক্তি। আর এ শক্তি অর্জন করতে হলে ইংরেজির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে ও ২০৩০ সালের মধ্যে সাসটেইনেইবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে কর্মক্ষেত্রে। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে দেশে ইংরেজি ভাষা চর্চার ব্যবস্থা করে এ ভাষায় দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ভাষাই বয়ে আনতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনা।
লেখক : সাংবাদিক
গত শতকের ষাট সত্তর দশকে, পৃথিবীর ছবিটা ছিল অন্যরকম। তখন দুনিয়াজুড়ে বামপন্থি রাজনীতির বিপুল দাপট। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার সর্বত্রই বাতাসে বারুদের গন্ধ। আমার দেশও পিছিয়ে নেই। আমরা বড় হচ্ছি, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও, কমরেড মাও-এর চিন্তাধারা শুনতে শুনতে। দেয়ালে দেয়ালে মাও-এর মুখ। জ্বলজ্বলে পোস্টারে জানান দেওয়া হচ্ছে, চীনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান...।
আবেগের আতিশয্যে কোনো কোনো বিপ্লবী রেড বুক সাক্ষী রেখে বিয়ে অবধি সেরে ফেলতেন। গায়ক অজিত পান্ডে একই ভাবে লাল কেতাব হাতে নিয়ে, প্রেসিডেন্সি কলেজের পোর্টিকোতে বিয়ে করে অনেকের চোখে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। আজকের পৃথিবী বদলে গেছে। দক্ষিণপন্থি রাজনীতির রমরমা একটা দুটো দেশ বাদ দিয়ে সব জায়গায়। খোদ চীনেও বাজার অর্থনীতির দাপটে সমাজতন্ত্র আদৌ টিকে আছে কি-না তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মাও সেতুং নিয়ে কোনো চর্চাও নিজের দেশেই যেখানে নেই, সেখানে তার তিন দুনিয়ার তত্ত্ব বা গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাওয়ের রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা কতটা তা নিয়ে প-িতেরা আলোচনা করুন। আমরা বরং এদেশে মাওবাদী রাজনীতি নিয়ে যে বিরাট জল্পনা তা নিয়ে একটু-আধটু কথা বলি।
এ লেখা একাধারে ডায়েরি, রিপোর্টাজ, এলোমেলো চলতে চলতে দেখা থেকে। আসলে ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার হিসেবে ভারতের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়কে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। এদেশে যারা মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি করেন বা দাবি করেন যে তারাই আসল মাও রাজনীতির ধারক, তারা রাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক শক্তি। এখন তো আর্বান নকশাল শব্দটি রাজনৈতিক ডিসকোর্সে ঢুকে পড়েছে। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তাদের নিয়ে লেখালেখি করাও দেশের পক্ষে গর্হিত কাজ। আমি যে সময়ের কথা বলব তখন অবশ্য মাও শব্দটি এমন নিষিদ্ধ ছিল না। কিন্তু তখনো বস্তার, দ-কারণ্য এলাকায় উপদ্রুত ঘোষণা হয়ে গেছে। তল্লাটজুড়ে আধা সামরিক বাহিনীর বিপুল জমায়েত। তার মধ্যেই গড়ে উঠেছে মাওবাদী সংগঠনের গোপন গেরিলা ঘাঁটি।
খানিকটা ঝোঁকের মাথায় ঠিক করে ফেলেছিলাম যে নিষিদ্ধ এই বামদের নিয়ে একটা ছবি করব। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল যে এদেশের সবকটি বাম দলের কর্মসূচি, দলিল, চিন্তাভাবনা নিয়েই একধরনের ভিজ্যুয়াল প্রবন্ধ লিখব যা ভবিষ্যতে গবেষণার কাজে লাগবে। অন্য দলগুলো নিয়ে কাজ করা অনেক সহজ বলে প্রথমেই ঠিক করে নিলাম, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার পক্ষে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক মাওবাদী গেরিলাদের নিয়েই শুরু করব। ভাবা সহজ। কাজটা কঠিন। কুড়ি একুশ বছর আগেও গোপন ঘাঁটিতে গিয়ে শ্যুটিং করা ছিল অকল্পনীয়। একে তো মাওবাদীদের দিক থেকে ছাড়পত্র নাও মিলতে পারে। তারপর যদি তারা অনুমতি দিল, কিন্তু সরকার তো ছাড়বে না। এ একেবারে মারীচের মতো অবস্থা। হয় রামে না হয় রাবণে মারবে।
যাই হোক, অনেক কষ্টে, কাঠখড় পুড়িয়ে প্রায় এক বছর ধরে চেষ্টার পর বস্তার দ-কারণ্যের গভীর জঙ্গলে মাওবাদী ডেরায় গিয়ে শ্যুটিংয়ের অনুমতি পেলাম। একমাস ছিলাম গোপন ঘাঁটিতে। কীভাবে যে এখনো বেঁচে আছি, মাঝেমধ্যে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি। এক এক সময় এখন ভাবি, জীবন বাজি রেখে ডকুমেন্টারি করতে যাওয়ার পেছনে বোধহয় ছিল শৈশব কৈশোরে অবচেতনে মাও-এর প্রভাব। আগেই বলেছি যে, তখন তো এক অন্য সময়। বিশ্বে এনেছে নতুন দিন, মাও সে তুং আর হো চি মিন।
তখন অবশ্য মাওবাদ ছিল না। বলা হতো মাও চিন্তাধারা। সারা বিশ্বে দিচ্ছে নাড়া কমরেড মাও-এর চিন্তাধারা। এদেশে নকশালপন্থিদের দুটো গোষ্ঠী এমসিসি বা মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও সিপিআই-এমএল জনযুদ্ধ এই টার্মটা সামনে আনে মাওবাদ। পরে দুই গোষ্ঠী এক হয়ে নতুন পার্টির নাম রাখে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)।
বাদ না চিন্তা তা বিতর্ক রয়েছে। নকশালপন্থিদের বড় অংশ মাওবাদ বলে কিছু হতে পারে বলে বিশ্বাস করে না। প্রথম কথা দ্বান্দ্বিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে মার্কসবাদী তাত্ত্বিকতায় বৈপ্লবিক চিন্তা, শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের যে নীতি ও কৌশল তার থেকে মাও রাজনীতির নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ফারাক যথেষ্ট। মাও তৃতীয় বিশ্বে কৃষকদের অগ্রণী ভূমিকা যে বিপ্লবের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে তা চোখে আঙুল দিয়ে যান্ত্রিক মার্কসবাদীদের সফল চীন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে মার্কসবাদী তত্ত্বে মাও-এর নিজস্ব কিছু অবদান আছে তা অনস্বীকার্য।
কৃষিপ্রধান ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে তাই মাও সেতুং-এর প্রভাব অন্যান্য অনেক রথীমহারথীদের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি এটা ঠিক। প্রভাব না বলে আপনি জনপ্রিয়তাও বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে কার্ল মার্কস বা লেনিন সাহেবকেও পেছনে ফেলবেন মাও। কিন্তু তা হলেও মাওবাদ কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকবেই। বস্তুত ইদানীং কখনো কখনো খুব মনে হয় যে ১৯৪৯-এ চীন বিপ্লবের সময় সেদেশের পরিস্থিতি মেনে একুশ শতকের ভারতে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখাটা বোধহয় একটু বেশিমাত্রায় রোমান্টিক। অ্যাডভেঞ্চারিজম তো বটেই। আজকের দিনে ঘাঁটি এলাকা, লাল ফৌজ, গেরিলা যুদ্ধ, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও বাস্তবে কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
বস্তারে মাও রাজনীতির সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগারে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আবেগ, পরিশ্রম, দুর্জয় সাহস এসব বাদ দিলে কোথাও যেন পুরনো দিনের মাও পথকে অন্ধ অনুসরণ করার ঝোঁক খুবই চোখে লাগে। ওড়িশা, বিহার, অন্ধ্র, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় রাজ্যের যে সব এলাকায় মাওবাদী রাজনীতির প্রভাব রয়েছে সব জায়গাতেই জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আদিবাসী। উন্নয়নের তথাকথিত ঝলমলে ভারতে এই দলিত, আদিবাসীরাই সব থেকে বঞ্চিত। জল, জঙ্গল, জমি থেকে হাজারে হাজারে তারা নগরায়ণের নামে স্বাধীনতার পর থেকেই পিছু হটছেন। ফলে মাওবাদী রাজনীতির মূল সাফল্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে বড়মাপের গণআন্দোলন গড়ে তোলা। এ এক আদিবাসী বিদ্রোহ। তেলেঙ্গানার কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে বস্তারের জনযুদ্ধের মিল আছে। বস্তারের জঙ্গল বড় গভীর। ভালুক, চিতা, হায়েনার উৎপাত খুব। মাইলের পর মাইল হাঁটছি। দিন রাতে কম করে দশমাইল হাঁটা বাধ্যতামূলক। জল ফুটিয়ে খেতে হতো। খাওয়া বলতে দিনে ভাত তরকারি, রাতে রুটি সবজি। দশদিন বাদে একদিন ডিম পেয়ে খুব আনন্দ হয়েছিল। নদী, পাহাড় পার হচ্ছি গেরিলাদের সঙ্গে। ছোট ছোট স্কোয়াড। পিঠে রুকস্যাক, তারমধ্যে বাড়তি জামাকাপড় আর বই। পড়া কম্পালসারি। রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুম। ভুল বললাম, গাছের তলায় একটা নীল পলিথিন পেতে ঘুমিয়ে পড়া। থাকতে থাকতে শিখে গেছিলাম কেন বাঁশঝাড়ের নিচে শুতে নেই, কেন বট, অশ^ত্থ শোয়ার পক্ষে ভালো, দূর থেকে প্রাণীর ডাক শুনে বোঝা বিপদ আসছে কিনা আরও কত কিছুই যে শিখেছি, জীবনে ভুলব না। তাইতো কখনো কখনো ফিল্মের ক্লাসে ছাত্রদের বলি সব কথা তোমরা বইয়ে পাবে না। কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ডকুমেন্টারি বানাতে হয় তা বাস্তবে ক্যামেরা কাঁধে নিয়েই তোমাকে শিখতে হবে।
হাঁটছি আর গ্রাম দেখছি। শতাব্দী প্রাচীন এক একটা গ্রাম। মূলত গোন্দ জনজাতির বাস। গোন্দ ভারতের প্রাচীনতম বাসিন্দা। আদিতে এই জায়গা ছিল গন্দোয়ানা ল্যান্ড। তখন হিমালয় পর্বতমালার জন্ম হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ছিল গন্দোয়ানা ভূখ-ের অংশ। ভূমিকম্পের ফলে অস্ট্রেলিয়া আলাদা হয়ে গেল। আজ মাও সেতুং-এর জন্মদিন। ফলে এলোমেলো অনেক কথা মনে পড়ছে।
লেখকঃ ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
দেশে এখন জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধশতে পৌঁছে গেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি বা বিশেষ অবদানের জন্য নয়, প্রশাসনের দুর্নীতি এবং শিক্ষার মান সংকট নিয়েই বছরজুড়ে এগুলোর কোনো না কোনোটি আলোচনায় থাকছেই। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া আর্থিক দুর্নীতি, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষবাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির একের পর এক ঘটনা নিয়মিতই আসছে সংবাদমাধ্যমে। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো ইদানীং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষক নিয়োগেই যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তাহলে বিশ^বিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? অনিয়মের মাধ্যমে আত্মীয় বা নিজ পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়োগদাতারা কোন নৈতিকতা নিয়ে শিক্ষকতা করবেন? অনিয়মে শিক্ষক হওয়া ব্যক্তি শিক্ষার্থীদেরই বা কী শেখাবেন?
রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘প্রভাষক পদে ফেল করে হতে যাচ্ছেন সহকারী অধ্যাপক!’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগে প্রভাষক পদে একাধিকবার লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ফেল করা এক প্রার্থী এবার লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ওই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে দুজনকে নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে নিয়োগ বোর্ডের। যাতে প্রভাষক পদের পরীক্ষায় ফেল করা ওই বিভাগেরই প্রভাবশালী এক শিক্ষকের স্ত্রীর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক। জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের এ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আবেদন করলেও বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি শুধু চারজন প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠান। এদের মধ্যে একজন বিভাগের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের স্ত্রী। ওই শিক্ষক কুবি উপাচার্যের অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার স্ত্রী এর আগে একাধিকবার প্রভাষক পদে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। প্রভাবশালী ওই শিক্ষক আবার বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্য। নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের কেউ প্ল্যানিং কমিটির কোনো সদস্যের আত্মীয় হলে ওই প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনার সময় ওই সদস্য প্ল্যানিং কমিটির সভায় থাকতে পারবেন না। অভিযোগ রয়েছে, ফেল করা ওই প্রার্থী যে কারও আত্মীয় সে বিষয়ে সভায় কোনো আলোচনাই হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় প্রধান ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি ড. মো. সাইফুর রহমান ফোন কল কেটে দেন। কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়ম দেখতে হবে। রেজিস্ট্রার ভালো বলতে পারবেন।’ কুবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখানে শুধু মৌখিক পরীক্ষা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য কখনো লিখিত পরীক্ষা হয়নি। আমি আর কিছু জানি না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর সব নতুন নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে কুবি। শুধু অভ্যন্তরীণ প্রার্থী যারা ইতিমধ্যে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন, তারা দ্বিতীয়বার কোনো পদে আবেদন করলে তাদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই কয়েকবার ফেল করা প্রার্থী এবার সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করে শিক্ষক হতে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কাউকে অনিয়মের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ‘অন্ধ সেজে থাকার অনুরাগে’ নিয়মনীতি দেখতে না পাওয়া অথবা না জানার ভান করে কি পার পেতে পারে?
দুঃখজনক হলো, কেবল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ই (কুবি) নয়, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও আজকাল শিক্ষক নিয়োগে নিয়মবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। উপাচার্যের স্বজন বা কাছের লোক, প্রভাবশালীর আত্মীয়, রাজনৈতিক পরিচয়ে যোগ্যতা না থাকার পরও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন অনেকে। শিক্ষক পদের মানমর্যাদা রক্ষা এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন কর্মকা- এই সত্যই মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, জবাবদিহি না থাকা এবং অনিয়ম, অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো এমন লাগামহীন হয়ে পড়ছে। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞানচর্চাকে গৌণ করে ফেলে এসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেন কেবল সার্টিফিকেট বিতরণ আর কর্মসংস্থানের প্রকল্পে পরিণত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে কুবি’র আলোচিত নিয়োগ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিয়ে ও শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
প্রকাশক, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক চিত্তরঞ্জন সাহার জন্ম নোয়াখালীতে ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার নাম কৈলাশচন্দ্র সাহা এবং মা তীর্থবাসী সাহা। কাপড় ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হয়েও ১৯৫১ সালে চৌমুহনীতে তিনি বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি চৌমুহনী থেকে ঢাকায় তার পুস্তক ব্যবসা স্থানান্তর করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পুঁথিঘর প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী তার পুঁথিঘরের অফিস পুড়িয়ে দেয়। তিনি নিরাপত্তার জন্য কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ গড়ে তোলেন যা পরবর্তী সময়ে ‘মুক্তধারা’ নাম লাভ করে। তিনি নিজ উদ্যোগে ‘রক্তাক্ত বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ কথা কয়’ নামে দুটি সংকলন প্রকাশ করেন। তার উদ্যোগেই প্রথম বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বইমেলার সূচনা হয়। পরে বাংলা একাডেমি একুশে বইমেলার প্রবর্তন করে। তিনি ২০০৫ সালে একুশে পদক ও বিদ্যাসাগর পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।