
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তারা জানিয়েছে বাসাবাড়িতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হয়রানি করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী এখন বাড়িছাড়া। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকা বাদে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এ কর্মসূচির আগে গ্রেপ্তারকে উদ্দেশ্যমূলক বলছেন দলের শীর্ষ নেতারা। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবরে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না।’
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী কর্মসূচি সম্পর্কে বলেছেন, ইউনিয়নের পর থানা, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি আসবে। শেষ পর্যায়ে রাজধানীর ঢাকার দিকে পদযাত্রা হবে সারা দেশ থেকে।
রাজধানীর ঢাকার নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পদযাত্রা কর্মসূচি হচ্ছে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে। কিন্তু ঢাকার নেতাকর্মীদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে সাদা পোশাকের পুলিশ। এ ছাড়া জুরাইন কবরস্থানে এক জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে সেখান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনসমর্থন হারিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি শূন্য হয়ে গেছে। পথ হারিয়ে তারা এখন বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। তাতে মানুষের অংশগ্রহণ না থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে গোলাম মাওলা শাহীনকে গ্রেপ্তারের খবরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন রাজধানী ঢাকার বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার আতঙ্কে গত দুই মাস যাবৎ নিজ বাসায় থাকছি না। পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এভাবে কতদিন পালিয়ে বেড়াতে হবে তা বুঝতে পারছি না। কর্মসূচি এলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, বাসাবাড়িতে হানা দেয়, নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না। এ সময় যুবদল নেতা গোলাম মাওলা শাহীন ও ইখতিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তারেক রহমানকে অবহিত করেন। তিনি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কার্যালয়ে গেলে গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন আতঙ্কে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় কার্যালয়ে স্টাফ ছাড়া কেউ নেই। অফিস স্টাফ শামীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দপ্তরসংশ্লিষ্ট কেউ কার্যালয়ে আসেননি। বাদ আসর যুবদলের সাবেক সহসভাপতির জানাজা আছে তখন নেতাকর্মীরা আসতে পারেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের কর্মসূচি এলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করে। কর্মসূচির আগে ও পরে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেড়েছে মামলা গ্রেপ্তার। নতুন-পুরনো মামলায় সারা দেশ থেকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তারের খবর আসছে। জামিন নিতে তাদের ছুটতে হচ্ছে আদালতে, সময় কাটছে আদালতের বারান্দায়। আবার অনেকেই গ্রেপ্তার ও হয়রানি আতঙ্কে ঘরছাড়া, গ্রামছাড়া।’
গ্যাস, বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকা বাদে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। তবে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা করবে। আগামীকাল রবিবার রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।
সাবেক এমপি, মন্ত্রীরা নিজ নিজ এলাকার ইউনিয়ন পদযাত্রা করবেন : দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রা সফল করতে কিছু জেলা ও বিভাগে জ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি লক্ষ্মীপুরে জেলা নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান নোয়াখালীতে পদযাত্রা করবেন।
শরিকরা যে যেখানে থাকবেন : যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বাঁশতলা ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। পদযাত্রাটি নতুনবাজার (বাঁশতলা) থেকে শুরু হয়ে বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি। গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত ১৪ দফা দাবিতে প্রতিবাদী পদযাত্রা করবে। মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশের নেতারা রাজধানী ঢাকায় পদযাত্রা করবেন না। তবে ঢাকার বাইরে তারা পদযাত্রা করবেন।
কাগজে-কলমে ঠিকানা আছে, তবে অনেক সংগঠনের স্থায়ী বা অস্থায়ী কার্যালয় নেই। অথচ নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সব স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণ সাধন এবং তাদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে। দিবসীয় কিছু কার্যক্রম ছাড়া এসব সংগঠনের তৎপরতা চোখে পড়ে না খুব একটা। এরা নামে আছে, কাজে নেই।
অনেক সংগঠনের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ড ও আচরণের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৬ বছরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে বিভিন্ন নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলা, উপজেলায় ২৭০টি সংগঠন নিবন্ধন নিয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলসহ হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া এসব সংগঠনের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকরা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এদের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ। তারা বলেছেন, জামুকার আশকারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এরা ব্যবসা খুলে বসেছে। ঠিকানাহীন এসব সংগঠনকে নিয়ে অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে জামুকা। তারা শিগগির এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সুশীল সমাজের আপত্তি : ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জামুকা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের যেসব সংগঠনকে অনুমোদন দিয়েছে সেগুলোর নাম নিয়েও আপত্তি তুলেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মুক্তিযুদ্ধকে জানো, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন ও বিনোদন কেন্দ্র, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন সোসাইটি, সবুজ বাংলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, নিউ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা অরোরা ফাউন্ডেশন, ১৯৭১ সালে ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোট, সিটি মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাইটার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এমনসব নামে নিবন্ধন নেওয়া হলেও এসব সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। ঢাকার যে ঠিকানায় নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে সেখানে এদের অস্তিত্ব মেলেনি।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামুকার কাজ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে সহযোগিতা করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রূপায়ণের ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়নি। অথচ তারা মুক্তিযুদ্ধের নামে এসব দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে হচ্ছে ৭২-এর সংবিধান; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। তার রূপায়ণে জামুকা কিছু করেছে বা বলেছে বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের চিত্তবিনোদনের জন্য ক্লাব লাগবে কেন? এসব আসলে মুক্তিযুদ্ধের নামে ব্যবসা। এসব করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকেও হেয় করা হচ্ছে। এর দায় জামুকাকেই নিতে হবে।’
সরেজমিনে যা দেখা গেল : ঢাকায় জামুকার নিবন্ধিত অন্তত আটটি সংগঠনের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদক। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উন্নয়ন ফোরাম নামের সংগঠনের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বায়তুল খায়ের; ৪৮-এ-বি, কক্ষ নম্বর-১১০৭, পুরানা পল্টন। ওই ঠিকানায় গিয়ে এমন কোনো কার্যালয় দেখা যায়নি। ওই ভবনসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ১৩-১৪ বছর আগে এ নামে কিছুদিন একটি অফিস ছিল। ৫৯ (দ্বিতীয়তলা), পুরানা পল্টনের ঠিকানা দেওয়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ অরোরা ফাউন্ডেশনের খোঁজে সেখানে গেলে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এই নামে কোনো সংগঠন তারা এখানে দেখেননি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের ঠিকানা ১৪/২ তোপখানা রোড। সেখানে একটি পুরনো ও রং জ¦লে যাওয়া সাইনবোর্ড থাকলেও ভবনের নিচে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক সরবরাহকারী ব্যবসায়ী মো. হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই নামে এখানে কোনো সংগঠনের কার্যালয় আছে গত এক যুগে শুনিনি।’ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন ও বিনোদন কেন্দ্র নামের সংগঠনের ঠিকানা ৩৩, তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজা। ভবনের দায়িত্বরতরা বলেন, ‘এ ধরনের একটি কার্যালয় এখানে ছিল। কিছুদিন আগে অফিসটি বন্ধ হয়ে গেছে।’
মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাবের ঠিকানা ৫৬৭/সি কামারপট্টি রোড, খিলগাঁও বাজার। সেখানে গিয়ে এমন কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব মেলেনি। স্থানীয় সেলুন ব্যবসায়ী টিটু দাস বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর ধরে এখানে কাজ করছি; মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কার্যালয় কখনো দেখিনি।’ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনের সপ্তমতলায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের ঠিকানায় গিয়ে এ নামে কোনো সংগঠনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ১৬/এ, ওয়াজা ভবনের চতুর্থতলার ঠিকানায় গিয়ে ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন নামে সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভবনের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
যেভাবে নিবন্ধন দেয় জামুকা : জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২-এর ৭(ঙ) ধারা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০২ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সমিতি/সংগঠন নিবন্ধনের জন্য জামুকা ১৮টি শর্ত পূরণ করতে বলে স্থায়ী ও অস্থায়ী কার্যালয় থাকা, সংগঠনে শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তি, সংগঠনের নামে ব্যাংক হিসাব থাকা, সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থী কোনো কাজ না করা, জামুকার নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করা প্রভৃতি। জামুকার সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্যমতে, ২০০২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে নিবন্ধন পেতে ৫৫৫টি সংগঠন আবেদন করে। বিভিন্ন সময়ে ২৭০টি সংগঠনকে অনুমোদন দিয়েছে জামুকা। এসবের মধ্যে ঢাকায় ১৩৫টি। সংগঠনের নামের বিষয়ে জামুকার কোনো নির্দেশনা নেই। নিবন্ধিত সংগঠনগুলোর মধ্যে সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল জামুকার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০০২ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৮টি সংগঠনকে নিবন্ধন দেয় জামুকা। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ ছিল। ২০১০-এর মে মাস থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত ২০২টি সংগঠনকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। জামুকার ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেন, সংগঠনের স্বার্থবিরোধী কর্মকা- ও নিষ্ক্রিয়তায় বিভিন্ন সময়ে ছয়টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থা, বগুড়ার আদমদীঘির শহীদ যুদ্ধাহত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি, নওগাঁ জেলার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি, খুলনা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম কল্যাণ ও পুনর্বাসন, ঢাকার জাতীয় সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন ও ঢাকার ৭১-এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ। এ ছাড়া ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে দুটি সংগঠন থাকায় এদের নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়েছে। জামুকার নিবন্ধিত সংগঠন এখন পর্যন্ত ২৬২টি।
জামুকার সহকারী পরিচালক (রেজিস্ট্রেশন ও সার্টিফিকেট) মো. আবদুল খালেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০০ সংগঠনের সঙ্গে তাদের দপ্তরের কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। চিঠি দিলে উত্তর আসে না। কার্যক্রম দেখতে চাইলে সাড়া পাওয়া যায় না। প্রায়ই কমিটি নিয়ে দলাদলিসহ নানা অভিযোগ আসে।’ ৫০টির মতো সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জাগ্রত রাখাসহ যে উদ্দেশ্যে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল দেখা যাচ্ছে অনেকে সংগঠনই তা করে না। লোকবলের স্বল্পতার কারণে এত সংগঠনের কার্যক্রম তদারকি করাও কঠিন। তাই নতুন করে নিবন্ধন দিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, ‘সংগঠনগুলোর সঙ্গে একেবারেই যে যোগাযোগ নেই, এমনও নয়। আমরা নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছি। অনেকের হয়তো তৎপরতা নেই। অভিযোগ আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি। কীভাবে সংগঠনগুলোকে আরও গতিশীল করা যায় সে চেষ্টা আমাদের রয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক বা দুটির অস্তিত্ব আছে। বাকিগুলো কাজ করে বা করেছে বলে আমার জানা নেই। আড়াইশো সংগঠন প্রায় নামসর্বস্ব। নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। জামুকার উচিত হবে নিবন্ধন বাতিল করা।’
গায়ক তিনি, ছায়ানটে গান শিখেছেন পেশাদার গায়কের মতোই। উদীচীর সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ঢাকার বিএফ শাহীন স্কুলে ও তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করেছেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে সেনাবাহিনীর চাকরিতে যান। এ পেশার সঙ্গে পরিবারের স্বপ্নও অনেকাংশে জড়িয়ে ছিল। ব্যারাকের জীবনে ইতি টেনে জড়ান সাংবাদিকতায় ইউনিফর্মের বাইরে বেরিয়ে চাকরি শুরু করেন নিউ নেশনে, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে। সাংবাদিক হিসেবে শুধু প্রতিবেদন নয়, কলামও লিখেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গে অভিনয়েও যুক্ত ছিলেন। একসময় সাংবাদিকতা ছেড়ে অভিনয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। পেশা-নেশার বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন। বিচিত্র এই জীবনে যে কাজটি বরাবর করতেন এবং করেন তা হলো, ফটোগ্রাফি। ভালো রাঁধতেও পারেন। শখ তার ঘুরে বেড়ানো; প্রায় সব জেলায় ঘুরেছেন। সময় পেলেই আড্ডায় মাতেন। শখ তার আরও আছে খেলা দেখা এবং নেটফ্লিক্সে ছবি দেখা। তিনি হাসান মাসুদ। বাবার চাকরির সুবাদে শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে।
নিউ নেশন থেকে ডেইলি স্টারে যোগ দেন। ডেইলি স্টারে ছিলেন সাড়ে আট বছর। এরপর বিবিসিতে সাড়ে চার বছর কাটিয়ে সাংবাদিকজীবনের ইতি ২০০৮ সালের ৩১ মে। লেখালেখি এখনো করেন। খেলাধুলা নিয়ে কলাম লেখেন জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকে। ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় একটি জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছেন। ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়াও ছেলেদের টেনিস দেখতে বেশি আগ্রহী। ডেইলি স্টারে কাজ করার সময় বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে। খেলার খবর জোগাড় করতে নানা দেশে গেছেন। স্মৃতিতে জাগ্রত ঘটনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেপালে যুব ফুটবলে যেবার স্বর্ণপদক পেল বাংলাদেশ, সেবার মাঠে থেকে কভার করেছি সেই ঘটনা। সে দিনটাই বিশেষ আমার কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর তেমন আড্ডা দিতে পারি না। একটা সময় বেশ আড্ডা দিতাম। বেশির ভাগ দিনই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইবিএতে। নিজের থেকে বছর দশেকের ছোটদের সঙ্গে আড্ডা ভালো জমে।’ বন্ধুদের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘এ বয়সে আর বন্ধু থাকে না। কেউ কারও প্রকৃত বন্ধুও হয় না। তবে ছোটবেলার বন্ধুরা প্রকৃত বন্ধু। আমার শৈশব কেটেছে ইসলামাবাদে, সেখানকার কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই।’
ফেইসবুকে শৈশবের কবির নামে এক অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ হতো। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর ফেইসবুক আইডি হ্যাক হওয়ায় সেটাও বন্ধ এখন। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। এখন হাতে অনেক সময়। তার মনে হয়, বর্তমান প্রজন্ম নতজানু এক প্রজন্ম। সব সময় মাথা নত করে কী যেন দেখে! কী দেখে? সম্ভবত আত্মিক-মতাদর্শিক বিষয়েও তারা নত মস্তক।
হাসান মাসুদ বলেন, এখন ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ফোনে। তার লেখা বই একটাই উপন্যাস। সেটা বেরিয়েছে ২০১৬ সালে। শিরোনাম ‘একজন কনকের কথা’। লেখালেখি অনেক আছে, তবে পান্ডুলিপি করা হয়ে উঠছে না। সেনাজীবন নিয়ে একটি বই লিখবেন ভেবেছেন। কাজটা অনেকটা এগিয়েওছে।
তিনি যে অভিনেতা হবেন, ভাবনায় ছিল না। হঠাৎ করেই ১৯৯৫-এ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ দিয়ে অভিনয় শুরু। এই সিনেমায় তিনি ‘আজকে না হয় ভালোবাসো’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। তারপর নাটক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প অবলম্বনে প্রয়াত খালেদ খানের প্রযোজনায় একটা নাটক করেন তিনি। তাতে সহ-অভিনেত্রী ছিলেন দীপা খন্দকার। তারপর ফারুকীর ‘সিক্সটি নাইন’। নাটকের সংখ্যা এখন সঠিক বলতে পারেন না।
নাটক নিয়ে তিনি বললেন, ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার টেলিফিল্মটা আমার কাছে বিশেষ। সেটাতে যেমন কষ্ট করেছি, তেমনি মনেও দাগ কেটেছে। টানা ১০ দিন প্রচণ্ড গরমে ট্যাক্সিতে শ্যুটিং। মজার অনুভূতির কথা যদি বলতে হয়, সেটা সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় সান টু সান সিরিয়াল। কারণ সূর্য ডুবে গেলে আর কাজ হতো না।
এখন এত কাজ আর করেন না। মাসের ৮ থেকে ১০ দিন শ্যুটিং থাকে। এখন ওয়েব সিরিজ বেশি করছেন। অবসর সময়টা তিনি নেটফ্লিক্স দেখে কাটান। বেড়ানোর নেশা শৈশব থেকেই। সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার সপরিবারে ঘুরে এলেন গত সপ্তাহে। কুষ্টিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সব জেলাতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ফটোগ্রাফি তার একরকম নেশা। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের এমন জায়গা কমই আছে, যেখানে তিনি যাননি বা ছবি তোলেননি। হাসান মাসুদের পছন্দের খাবারের তালিকাটা বেশ বড়। চিকেন কর্ন স্যুপ, টম ইয়াম স্যুপ যেটাকে বাংলাদেশে থাই স্যুপ বলে, গরুর মাংস, চিংড়ি খেতে ভালো লাগে তার।
তিনি বলেন, ‘রান্না তো সবাইকে কমবেশি পাড়তে হয়। আমিও ভালো রাঁধি। তবে মাছ ভাজতে জানলেও রাঁধতে জানি না। মাছ রান্নায় মসলার হিসাবটা গোলমেলে হয়ে যায়। রান্নার হাতেখড়ি বিবিসিতে কাজ করতে গিয়ে লন্ডনে। তখন রোজই রাঁধতে হতো। ছুটির দিনে বাঙালি বন্ধুরা বাড়িতে খেতে চলে আসত।’
হাসান মাসুদ বলেন, ‘ক্রীড়া সাংবাদিকতা এখন অনেক দূর এগিয়েছে। খেলা নিয়ে অনেক কিছু হচ্ছে। ক্রিকেটে তো এখন থ্রি-সিক্সটি গেম। তবে আমার তো মনে হয় আজকালের অনেক সাংবাদিক এর ফিল্ড পজিশন বোঝেন না। আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করি আমি, উৎপল শুভ্র, মোস্তফা মামুন, সাইদুর রহমান, আমরা খেলা দেখে খেলার রিপোর্ট করতাম। এখন সেসব নেই।’
দেশের বাইরে তিনি শ্রীলঙ্কা দলের সাপোর্টার। ২০০৪ সালে ভারত ১৬ বছর পর পাকিস্তান গিয়েছিল খেলতে, ওই সিরিজ কভার করতে গিয়ে ৩৮ দিন ছিলেন। সংবাদ সংগ্রহের বাইরেও অনেক মজা করেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন। শৈশবের স্মৃতির জায়গাগুলো খুঁজেছেন।
অভিনয় কমিয়ে দেওয়ার অনেক কারণের একটা হলো বয়স। ভালো কনটেন্টের অভাবও আছে। দেশে ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার কম। তাই টেলিভিশনে কাজ কমিয়ে ওয়েবে সময় বেশি দিচ্ছেন। ফারুকীর লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান দিয়ে ওয়েবযাত্রা শুরু। চরকির জন্য অনিমেষ আইচের মাকাল করেছেন। অনিমেষের আরেকটি কাজ করবেন সান টু সান। আরও কটি সিরিজের পরিচালকের সঙ্গে কথা চলছে।
গান শখের বসেই শিখেছেন। ছায়ানট থেকে নজরুলসংগীতের ওপর পাঁচ বছরের কোর্সও করেছেন। ২০০৬ সালে অনেকটা ঝোঁকের বশে হৃদয়ঘটিত নামে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করেন। অবসরে বাসার সবাই মিলে গানের আড্ডা হয়। ফটোগ্রাফি যেহেতু নেশা, তাই এটা সব সময় করেন। নেচারের ফটোগ্রাফিই বেশি। বিশেষ করে প্রজাপতির। অনেক ধরনের প্রজাপতির ছবি আছে তার কাছে। তিনি বলেন, ‘যখন যেভাবে থাকি, সেই সময়টা সেভাবেই উপভোগ করি। আমি সময়কে উপভোগ করতে জানি।’
বিএনপির সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে তাদের মোকাবিলার ঘোষণা দিয়ে মাঠে আছে আওয়ামী লীগও। বিএনপি যেমন রাজধানী ও বিভাগীয় কর্মসূচির পর এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করছে। তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও তৃণমূলে নজর দিয়েছে। কিন্তু ঢাকা ঘিরে বিশেষ মনোযোগী ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের আঁচ কোনোভাবেই ঢাকায় লাগতে দিতে চায় না আওয়ামী লীগ।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেকোনো মূল্যে ঢাকা শান্ত রাখা হবে। রাজধানী শহর ও আশপাশ এলাকায় বিএনপির অবস্থান দুর্বল করে রাখা ও তাদের কব্জায় নেওয়ার কোনো সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। এ জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে আওয়ামী লীগ ও সরকার। ঢাকা ‘মুক্ত’ রাখতে প্রশাসনিক তৎপরতা প্রয়োজন হলে আরও জোরদার করার কথাও ভাবছে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, বিএনপির লক্ষ্য আন্দোলন করে ঢাকা অচল করা। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে ঢাকা শান্ত রাখা। বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগের বিএনপি মোকাবিলা করার কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও সরকারি দলের নেতারা দাবি করেন, তা কেন হবে। দুটি রাজনৈতিক দলের একই দিনের কর্মসূচি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির অভিযোগ থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতারা সে অভিযোগ মানতে চান না। আজ শনিবার বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। একই পর্যায়ে আওয়ামী লীগেরও শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কেন হবে? পদযাত্রা ও শান্তি সমাবেশ কি এক? এক না। তারা তাদের কর্মসূচি দিয়েছে, আমরা আমাদের কর্মসূচি দিয়েছি। এখানে পাল্টাপাল্টি দেখার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘কোনো দল ৩৬৫ দিন কর্মসূচি দিয়ে রাখে, অন্য দল কি কর্মসূচি দিতে পারবে না।’
দলটির সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি শান্তি সমাবেশ। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দেশের ও দেশের মানুষের শান্তি বজায়ে রাখার ব্যাপারে আমাদের ওপরও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সে দায়িত্বটুকু পালন করে মাত্র।’ ঢাকা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঢাকা দেশের রাজধানী। অনেক কিছুর চালিকাশক্তি ঢাকা ঘিরে। ফলে যেকোনো ঝুট-ঝামেলামুক্ত রাখার জন্য সরকার সবসময়ই সচেষ্ট থাকে।’
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি গত বছর আগস্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দলের শীর্ষ পর্যায়ে জানিয়েছে যে, বিএনপির লক্ষ্য ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, সভা-সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে মাঠ দখলে রাখা। বিএনপির শীর্ষ পর্যায় মনে করে, ঢাকায় আন্দোলন চাঙ্গা করতে পারলে সরকারবিরোধী আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরে পরিণত হবে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন। তবেই সরকারের ভিত নড়বড়ে হয়ে উঠবে। লক্ষ্য পূরণ হবে বিএনপির। আর তখন সরকার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার আগ্রহ দেখাবে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, আন্দোলনের নামে সংঘাত-সংঘর্ষ ও সহিংসতা সৃষ্টি করে ঢাকায় উত্তাপ ছড়ানোর সুযোগ বিএনপিকে দেওয়া হবে না। এ জন্যই বিএনপির কর্মসূচি যেদিন যেখানে থাকবে ঠিক সেদিন সেখানেই কর্মসূচি রাখবে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপিকে বেঁধে রাখার এ কৌশল জানিয়ে সরকারি দলের এই নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের এ কৌশলকে বিএনপিসহ দেশের বিভিন্ন মহল পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলে আখ্যা দিতে চাইলেও আওয়ামী লীগ তাতে বিচলিত নয়। বিএনপি ও তাদের সমর্থিত বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি ঘোষণার কৌশল থেকে সরে আসবে না। সমালোচনার ভয়ে কৌশল পরিবর্তন করলে এর সুযোগ নেবে বিএনপি। তিলকে তাল বানিয়ে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেবে নানা অপপ্রচার।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি ঢাকায় মাঠ দখলের সুযোগ না পেয়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্দোলন নিয়ে গেছে। বিএনপি তৃণমূলে আন্দোলন নিয়ে গেলেও ঢাকায় সভা-সমাবেশ কর্মসূচি থাকবে আওয়ামী লীগের। পাশাপাশি তৃণমূলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। কেন্দ্র থেকে তেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের ওই কর্মসূচিগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশগ্রহণ করবেন।
এ প্রসঙ্গে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোকসেদুল গণি রাব্বু শাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে আমাদের খানসামা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নেই শান্তি সমাবেশ করব। আমরা সংঘর্ষের চিন্তা করে মাঠে থাকব না। কেউ যদি গায়ে উঠে পড়ে সেই ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করব।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সহিংসতা কেন হবে? ওদের কর্মসূচি ওরা করবে, আমাদেরটা আমরা। জায়গা এক না হলে তো সহিংসতার আশঙ্কা নেই। আমরা সহিংসতা চাচ্ছি না, শান্তি সমাবেশ করব। আমরা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীদের মাঠে রাখছি চাঙ্গা রাখার জন্য।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র থেকে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা জোট আন্দোলন জোরদারের মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি দিয়ে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে আন্দোলনের গতি আনতে চায়। এ সময়টাতে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে সুযোগ পেয়ে যাবে বিরোধীরা।
ওই নেতা আরও বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তৃণমূলের নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করেছেন। সেখানে সরকারি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসভা করবেন তিনি। সেসব জনসভায় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে তৃণমূল সফর শুরু করেছেন তিনি। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, যশোর ও রাজশাহী জেলা সফর করেছেন। আসছে মার্চে ময়মনসিংহ ও বরিশাল জেলা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু এজেন্ডা নিয়ে চলতি বছর মাঠেই থাকবেন তারা। বিএনপি মাঠে নেমেছে বলেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপি মাঠে থাকলে আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকলে তাদের মনোবল নষ্ট হবে। মানসিক দুর্বলতা নেতাকর্মীদের মধ্যে জেঁকে বসলে নির্বাচনের আগে তা দূর করতে সময় ফুরিয়ে যাবে। এ সুযোগে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে বিএনপি।
দলের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে থাকায় ইতিমধ্যেই সুফল পাওয়া গেছে। তিনি মনে করেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল হতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নীতি অনুসরণ করায় বিএনপির নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে উপস্থিতি দিনকে দিন কমতে শুরু করেছে। এখন হামলা-মামলা ও পুলিশের অভিযানের ভীতি তৈরি করতে পারলে বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগ টানা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকলে বিএনপি একটা সময়ে কর্মসূচি ঘোষণার মনোবলও হারিয়ে ফেলবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যত কর্মসূচি যেভাবে দেবে আমরা সব জায়গায় সতর্ক অবস্থানে থাকব। তারা কর্মসূচি দিলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত থাকে। তাই শান্তি সমাবেশ নিয়ে আমরা সতর্ক থাকি।’
হানিফ বলেন, যেহেতু আমাদের লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় লাভ করা। এ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম মানুষের সামনে তুলে ধরব আমরা।
কর্মসূচি : আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহে ও ১৮ মার্চ বরিশালে মহাসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কের ১০টি অঞ্চলে মারা গেছে ১৯ হাজার ৮৭৫ জন। আর সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৩৭৭ জনের। ভূমিকম্পের পঞ্চম দিনেও উদ্ধারকাজের অনেক বাকি। এখনো ধসে পড়া অনেক ভবনে শুরু হয়নি উদ্ধার তৎপরতা। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সময় যত যাবে, মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়বে। শেষ অবধি এ সংখ্যা কোথায় থামবে তার কোনো ধারণাও তাদের নেই। এ মধ্যে তীব্র ঠান্ডা, বৃষ্টি, যোগাযোগে বিপর্যয়সহ নানা সমস্যায় উদ্ধার ব্যাহত হওয়ায় ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের আশা ফিকে হয়ে আসছে। আশ্রয়, খাবার, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের অভাবে উপদ্রুত এলাকাগুলোর বেঁচে থাকা মানুষেরা রয়েছে প্রাণ সংশয়ে। তবে ১১০ ঘণ্টা পরও গতকাল শুক্রবার দুই দেশেই কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো কোথাও কোথাও প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। ঠান্ডায় জমে যাওয়া আবহাওয়ার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কিংবা গাড়ির ভেতরে তৃতীয় রাত পার করেছে তুরস্ক এবং সিরিয়ার বহু মানুষ। ভূমিকম্পে তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে কিংবা হেলে পড়েছে। সেখানে আর ফিরে যাওয়ার সাহস নেই কারও।
গৃহহীন হওয়া লাখো মানুষ সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। পাঁচ দিন ধরে উদ্ধারকর্মীরা যেমন দুর্গতদের বাঁচানোর লড়াই করে যাচ্ছেন, তেমনি বেঁচে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে বেঁচে যাওয়াদেরও।
আলজাজিরা বলছে, তুরস্কের প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির কর্তৃৃপক্ষ ধ্বংসস্তূপ থেকে আট হাজার জনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া প্রায় চার লাখ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে সরিয়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, হোটেলসহ পরিচিতজনদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তুর্কিয়ে সরকারের। তবে রয়টার্স, বিবিসিসহ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, দুর্গত এলাকার মানুষ চার দিন পরেও উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। রয়টার্স বলছে, ভূমিকম্পের পর জরুরি পরিষেবাগুলো সাড়া দিতে অনেক দেরি করেছে, এমন অভিযোগকে ঘিরে তুরস্কে অসন্তোষ বাড়ছে। কিছু এলাকায় লোকজন দুদিন অপেক্ষা করার পরও জরুরি পরিষেবার দেখা পায়নি।
গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রায় ৯০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক নবজাতক ও তার মাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দশ দিন বয়সী এই শিশুর নাম ইয়াগিজ। দক্ষিণাঞ্চলীয় হতাই প্রদেশের একটি বিধ্বস্ত ভবন থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে নবজাতকটিকে সাবধানে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। কম্বলে মুড়িয়ে চিকিৎসার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় তুর্কিয়ে সংবাদমাধ্যম এ ঘটনাকে অলৌকিক হিসেবে তুলে ধরেছে।
ভূমিকম্পের ১০১ ঘণ্টা পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে একই পরিবারের ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল ইস্কেন্দেরুনের ধসে পড়া একটি ভবনের নিচে ৬ জনকে একসঙ্গে জীবিত পাওয়া যায়। তাদের সন্ধান পেয়ে অন্য উদ্ধারকর্মীরাও ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি তুর্কিয়ে কর্র্তৃপক্ষ।
আর তুরস্কের প্রতিবেশী সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল। এর মধ্যে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আর অন্য অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারকাজে সমন্বয়েও সমস্যা হচ্ছে। তবে চতুর্থ দিন ত্রাণের প্রথম বহর সিরিয়ায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তারা জানান, তুরস্ক থেকে ত্রাণ নিয়ে ছয়টি লরি ইদলিবের বাব আল-হাওয়া সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
সিরিয়ায়ও বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক লাশ যেমন উদ্ধার করা হচ্ছে, তেমনি জীবিতদেরও। তবে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কে উৎফুল্ল হওয়ার মতো উদ্ধারের কিছু ঘটনা ঘটলেও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমেই আশাহীন হয়ে উঠছে।
ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়াদের বের করে আনতে উদ্ধারকারীদের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে, কিন্তু ভূমিকম্পের পর থেকে প্রায় ১০০ ঘণ্টা পার হওয়ায় জীবিতদের উদ্ধারের আশা ক্রমেই মিইয়ে যাচ্ছে।
গত সোমবারের ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের সরকারি হিসাবে, দেশটিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি। আর সিরিয়ায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক এল-মোস্তাফা বেনলামিল জানিয়েছেন, দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ।
এদিকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি ত্রাণের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮৯০ কোটি টাকার (সাড়ে ৮ কোটি ডলার) প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসে। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) পক্ষ থেকে বলা হয়, লাখো মানুষকে জরুরি প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে এ তহবিল মাঠপর্যায়ের অংশীদারদের কাছে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবাদাতা খাতের বিভিন্ন অংশীদার। এ ছাড়া খাদ্য, আশ্রয় এবং জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবায় এ তহবিল ব্যয় হবে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায় দ্রুত সহায়তা পাঠায়। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ভূমিকম্পের পরপরই সহায়তার হাত বাড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ১৯টি দেশ থেকে ২৭টি উদ্ধার ও অনুসন্ধান দল গঠন করে পাঠানো হয়। এ দলে ১ হাজার ১৫০ জন সদস্য ও ৭০টি কুকুর পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার তুরস্কে পৌঁছে যায় চীনের উদ্ধারকারী দল। এ ছাড়া চীনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৬২ কোটি টাকা (৫৯ মিলিয়ন ডলার) পাঠানো হয়। দেশটির পাঠানো উদ্ধারকারী দলে চিকিৎসকও রয়েছেন। দেশটির পক্ষ থেকে সিরিয়ায়ও সহায়তা পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তার দেশ থেকে ৭৭ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞ নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে তুরস্কের গাজিয়ানতেপে কাজ করছেন। তুরস্ক ও সিরিয়ায় জরুরি উদ্ধারকাজে সাড়া দেওয়া আরেকটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দুই দেশেই উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সিরিয়ায় ৩০০ সেনা উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘের দল মাঠপর্যায়ে কাজ করছে। সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশ, ভারত, ইউক্রেন, জার্মানি, গ্রিস, ইসরায়েল, ইরান, জাপান, নরওয়ে, স্পেনের মতো দেশও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্ককে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। তুরস্কে ১০ হাজার ভ্রাম্যমাণ বাড়ি পাঠাচ্ছে কাতার। এ ছাড়া একটি ফিল্ড হাসপাতালের সরঞ্জাম এবং মানবিক সহায়তাও পাঠাচ্ছে কাতার। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটা সিরিয়া ও তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় কাতারের প্রচেষ্টার অংশ।
সিরিয়ার সেই শিশুকে দত্তক চান অনেকেই : ভূমিকম্পে ধসে পড়া সিরিয়ার একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে জন্ম নেওয়া এক শিশুকন্যাকে দত্তক নিতে চাইছে হাজার হাজার মানুষ। বিবিসি জানিয়েছে, ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে উদ্ধার করা শিশুটির নাম রাখা হয়েছে আয়া (আরবিতে যার অর্থ অলৌকিক)। উদ্ধারের সময়ও তার নাড়ি মায়ের সঙ্গে জোড়া লাগানো অবস্থাতেই ছিল। আয়াকে জীবিত পাওয়া গেলেও ভূমিকম্প তার মা, বাবা এবং চার ভাইবোনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
আয়াকে উদ্ধারের ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ফুটেজে দেখা যায়, একটি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক ব্যক্তি ধুলায় আচ্ছাদিত এক শিশুকে কোলে নিয়ে ছুটছেন। জঞ্জাল থেকে আয়াকে উদ্ধার করার সময় তার দূরসম্পর্কীয় এক আত্মীয়, খলিল আল-সুওয়াদি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনিই সদ্যোজাত শিশুটিকে সিরীয় শহর আফরিনে ডা. মারুফের কাছে নিয়ে যান।
বিবিসি বলছে, সদ্যোজাত শিশুটি হাসপাতালে আছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হানি মারুফ বলেন, সোমবার সে খুবই খারাপ অবস্থায় (পৃথিবীতে) এসেছিল, তার গায়ে কাটাছেঁড়া ছিল; শরীর ঠাণ্ডা ছিল, শ্বাস ঠিকভাবে নিতে পারছিল না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ এখন শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক খালিদ আতিয়াহ জানান, এরই মধ্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক ডজন ফোন পেয়েছেন, যারা শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী। কুয়েতের এক টিভি উপস্থাপক বলেছেন, ‘আমি শিশুটির দেখাশোনা করতে ও তাকে দত্তক নিতে প্রস্তুত, যদি আইনি প্রক্রিয়া আমাকে সেই সুযোগ দেয়।’
তবে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক আতিয়াহ বলেছেন, ‘যতক্ষণ তার পরিবারের দূরসম্পর্কীয় সদস্যরা না ফিরছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কাউকেই মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার অনুমতি দিতে পারি না। আমি তাকে আমার সন্তানের মতোই দেখছি।’ তিনি জানান, তার চার মাসের এক সন্তান আছে। তাদের মেয়ের পাশাপাশি আয়াকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তার স্ত্রী।
আয়ার শহর জিনদারিসের লোকজন এখনো ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে প্রিয়জনদের সন্ধান করে যাচ্ছেন। সেখানকার সাংবাদিক মোহাম্মেদ আল-আদনান বিবিসিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ আছে। এমন অনেকেই আছেন, যাদের কাছে আমরা এখনো পৌঁছাতেই পারিনি।’ জিনদারিসের ৯০ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অনুমান তার।
পড়ালেখা করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। কিন্তু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ফটোকপি দিয়ে চাকরি করছেন। চাকরির আবেদনপত্রে যে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন সেটাও মিথ্যা। পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এমন প্রতিবেদন দিলেও তিনি চাকরিতে বহাল। এই ব্যক্তি হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট মাইনুল আহমেদ। বর্তমানে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত। তার কর্মী নম্বর-৫৩০২৭।
মাইনুলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কথা বলছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, বড় অঙ্কের উৎকোচের মাধ্যমে ওই পদে চাকরি নিয়েছেন মাইনুল। ফলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি মাইনুলের পক্ষে দেওয়ার জোর তদবিরও ছিল বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তার। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরের অক্টোবর মাসে সঠিক প্রতিবেদনই দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এর পরও মাইনুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাইনুল সেদিনও কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাল সনদপত্রে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ পাওয়ার পরও কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।’
জাল সনদে চাকরির বিষয়ে জানতে গত ৩০ জানুয়ারি মাইনুল আহমেদকে ফোন করলে, তিনি এ প্রতিবেদকের প্রশ্ন শোনার পর কোনো মন্তব্য করবেন না বলেই ঠাস করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তাকে একাধিকবার ফোন করলেও আর রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপক (গ্রাউন্ড সার্ভিসেস) গোলাম সারওয়ার এবং মহাব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশনস) তাহেরা খন্দকারসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করলে তারা ফোন ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও তারা কোনো সাড়া দেননি।
উপ-ব্যবস্থাপক (গ্রাউন্ড সার্ভিস) তন্ময় কান্তি বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সনদপত্র জালের বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম।’ তিনি বলেন, ‘এখানে শিফ্টভিত্তিক অনেকেই চাকরি করেন। মাইনুল নামের কাউকে নাম শুনে চিনতে পারছি না।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাঁদপুর সদরের জি টি রোড দক্ষিণের বাসিন্দা এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে মাইনুল আহমেদ। তিনি ২০০৭ সালে চাঁদপুরের আমিন একাডেমি থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৯ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০১০ সালে ভর্তি হন ঢাকার ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউবিটি) ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (বিবিএ)। কিন্তু সেখানে পড়ালেখা শেষ করেননি। বিমানের ১১তম গ্রেডের ‘গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট’ পদে চাকরির আবেদনপত্রে নিজেকে বিইউবিটি থেকে চার বছর মেয়াদি বিবিএ পাস বলে উল্লেখ করেন। আবেদনপত্রে বিবিএতে সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.১০ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে গত বছরের ১২ জুন চাকরিতে যোগদানের আগে অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে বিইউবিটি থেকে বিবিএ পাসের একটি সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দেন মাইনুল। চাকরির আবেদনপত্রে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন খালেক সিটির বি-২৭/এ নম্বর বাসার ঠিকানা।
পরবর্তী সময়ে নিয়ম অনুযায়ী মাইনুলের চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি বা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আছে কি না তা যাচাইয়ে পুলিশকে অনুরোধ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে মাইনুলের বিবিএ জাল সনদের তথ্য পায় পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
এ বিষয়ে ওই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর কাছে মাইনুলের সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিইউবিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ বি মো. বদরুদ্দোজা মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ‘মাইনুল আহমেদের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট (সাময়িক সনদপত্র) এবং ট্রান্সক্রিপ্টের (নম্বরপত্র) ফটোকপি সম্পূর্ণ ভুয়া। বিইউবিটি থেকে এ ধরনের কোনো কাগজপত্রাদি দেওয়া হয়নি।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোপনে, প্রকাশ্যে ও স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করে প্রার্থীর (মাইনুল আহমেদ) বিরুদ্ধে বিরূপ তথ্য পাওয়া গেল যে তিনি ভুয়া সনদপত্র দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডে গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি করে আসছেন। তার ২০১৪ সালের বিবিএ পাসের সনদ যাচাইয়ের জন্য বিইউবিটিতে (ইউনিভার্সিটি) সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তদন্তকালে তার বিবিএ পাসের শিক্ষা সনদ নকল বলে কন্ট্রোলার প্রত্যয়নপত্র দেন।
এ ছাড়া প্রার্থীর বর্তমান ঠিকানা বি-২৭/এ, খালেক সিটি, থানা- দারুস সালাম, ঢাকা- স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে পুলিশের তদন্ত ফরমে (ডিআরে) উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা নয়। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানার ফ্ল্যাটটি তার ভগ্নিপতি মো. রাশেদুল হাসান চৌধুরীর। তার স্থায়ী ঠিকানা মূলত চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ বিষ্ণুদি এলাকার জিটি রোডের হোল্ডিং নম্বর-৩২৪।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
কাল ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দিনটি উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
দিনের প্রথম প্রহর থেকে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। দিনটি উপলক্ষে এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে-মুছে, ফুল আর রং-তুলির আঁচড়ে প্রস্তুত করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
গণপূর্ত বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দিনটি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধের মিনার থেকে শুরু করে পায়ে চলার পথ সবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। রং-তুলির আঁচড় পড়েছে ফুলের টপসহ না স্থাপনায়। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত রেখেছে গোটা সৌধ এলাকা।
স্বাধীনতা দিবসে সৌধ এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলায় সেজেছে নতুন সাজে। সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও ভবনগুলো সাজানো হয়েছে লাল-সবুজ বাতিতে।
সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, দিবসটি পালন করতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর উপজেলা চত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন। গোটা সৌধ এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়াও সড়ক-মহাসড়কে বসানো হয়েছে নিরাপত্তাচৌকি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
মানহানির মামলায় দণ্ডিত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার লোকসভা সচিবালয় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তার পার্লামেন্টের সদস্যপদও খারিজ হয়ে গেল। কংগ্রেস নেতা রাহুল লোকসভায় কেরালার ওয়েনাড আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রায় ঘোষণার দিন থেকেই রাহুল আর পার্লামেন্টের সদস্য থাকার যোগ্য নন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছিলেন রাহুল। ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে’ রাহুলের এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুরনেশ মোদি মানহানির মামলাটি করেছিলেন। চার বছর আগে করা ওই মানহানির মামলায় গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত। সাজা হলেও রাহুল জামিনে রয়েছেন, তাকে আপিল করার সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
গতকাল রায়ের পরদিন স্বল্প সময়ের জন্য লোকসভায় গিয়েছিলেন রাহুল। তিনি সেখানে দলীয় এমপিদের এক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তার মা, কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। বেশ কিছু ইস্যুতে হট্টগোলের কারণে শুরুর কয়েক সেকেন্ড পরই লোকসভার অধিবেশন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়, রাহুলও এরপর পার্লামেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান।
রাহুল গান্ধীকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে এদিন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর সাংসদরা দিল্লির বিজয় চক থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন অভিমুখে মিছিল শুরু করলেও পুলিশ বাধায় তা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।
শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেই ‘গণতন্ত্র বিপদে’ লেখা ব্যানার নিয়ে তাদের মিছিল শুরু হয়েছিল। পুলিশ নেতাদের আটক করে বাসে কাছাকাছি একটি থানায় নিয়ে যাওয়ায় মিছিলটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
পুলিশ বলছে, বিরোধী দলীয় এমপিদের মিছিলটির অনুমতি ছিল না। তা ছাড়া প্রেসিডেন্টও বৈঠকের জন্য এমপিদের কোনো সময় দেননি।
আদানি-হিনডেনবার্গ ইস্যু তদন্তে যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির দাবি জানানো এই বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদি মুর্মুর সাক্ষাৎ চেয়েছে। দলগুলো বলছে, ধনী শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথিত বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই ২০১৯ সালে করা একটি মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে কারাদণ্ড দিয়ে যে শোরগোল তোলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশোধমূলক রাজনীতির কারণে রাহুলকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে শুক্রবার একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস বিক্ষোভও দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
কংগ্রেসের ভাষ্য, রাহুলকে চুপ করিয়ে দিতেই এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করতে চাইছে।
তবে বিজেপি বলছে, ‘চোর’ মন্তব্যে পিছিয়ে পড়া ‘মোদি’ সম্প্রদায়কে অপমান করায় স্বাধীন বিচার বিভাগ রাহুলকে দণ্ড দিয়েছে, এখানে তাদের হাত নেই।
আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এই দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভূমি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বাসস
নাম আছে কিন্তু নিবন্ধন নেই। বেশির ভাগেরই কার্যালয় নেই। বছরের পর বছর চলে ইচ্ছেমতো কমিটি দিয়ে। এ নিয়ে আছে কোন্দল। দলাদলিতে সংগঠন ভেঙে একই নামে হয় আরেক সংগঠন। রয়েছে শাখা সংগঠন। ব্যবহার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের লোগো। সংগঠনের নেতাদের অনেকে ব্যবহার করেন ভিজিটিং কার্ড। নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ।
নানা দাবিতে কালেভদ্রে এসব সংগঠনকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়া ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এমন গুরুত্বহীন ও নামসর্বস্ব অগণিত সংগঠন গড়ে উঠেছে দেশজুড়ে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলসহ (জামুকা) বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এমন অবৈধ সংগঠনের সংখ্যা শতাধিকের বেশি। এর মধ্যে কিছু সংগঠন নেতিবাচক নানা কারণে প্রায়ই আলোচনায় আসে।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে জামুকার আড়াইশোর বেশি নিবন্ধিত সংগঠনের বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এখন মুক্তিযুদ্ধের নামে নিবন্ধনহীন এসব সংগঠন চেতনা বাস্তবায়ন তো করছেই না, উল্টো মুক্তিযুদ্ধের সম্মান হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এসব সংগঠনকে আশকারা ও প্রশ্রয় দেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি। তবে দীর্ঘ দিন ধরে জামুকার নাম ভাঙিয়ে এসব চললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জামুকা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি নেই।
ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রজন্ম লীগের নামে একাধিক সংগঠন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, মুক্তিযুদ্ধ ফ্রন্ট, শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ, ৭১-এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ এমন নানা নামে সংগঠনের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে এক নামের আদলে একাধিক সংগঠনও রয়েছে।
‘প্রজন্ম লীগ’ নামটি ব্যবহার করে কয়েক বছরে দলাদলি ও কোন্দলে বেশ কয়েকটি সংগঠন হয়েছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’ লীগ নামেই রয়েছে একাধিক সংগঠন। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্বা প্রজন্ম লীগ’ নামে রয়েছে কয়েকটি সংগঠন। একসময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক এসব সংগঠনের পোস্টার ও তৎপরতা ছিল। এখনো আছে, তবে সমালোচনার মুখে কিছুটা সীমিত। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কেন্দ্রিক ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন আলোচনায় আসে ২০১৯ সালের শেষদিকে। যদিও বিরোধের জের ধরে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে পৃথক আরেকটি সংগঠন করেছে একটি পক্ষ। তবে তাদের তৎপরতা এখন আর আগের মতো নেই। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠন জামুকা থেকে নিবন্ধন নিয়েছিল কয়েক বছর আগে। জামুকার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক নামে দুটি সংগঠন হওয়ায় সংগঠনের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। আর নানা নেতিবাচক কর্মকা-ে এসব সংগঠন নিয়ে তারাও বিব্রত।
জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সংগঠন চালাতে অবশ্যই জামুকার অনুমোদন লাগবে। ওদের বিষয়ে যতটুকু জানি এদের রেকর্ড ভালো নয়। কিন্তু আমাদের তো কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের জন্য এ ধরনের সংগঠন করা হয় এবং খুব সচেতনভাবেই এদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়। কেননা কিছু লোকের উদ্দেশ্যই হলো মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এ সংগঠনগুলো সে কাজটিই করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর রাজনৈতিক দলগুলোর নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কিছু করে তাহলে সেটি রাজনৈতিক দলগুলো দেখবে।’ তিনি বলেন, ‘এরা যদি অনৈতিক কাজে জড়িত হয় তাহলে এটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জামুকা এ বিষয়ে শক্ত ভূমিকা নিতে পারে।’
জামুকা থেকে গত ১৬ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৭০টি সংগঠন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোর তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। নানা অভিযোগে অন্তত ৬টি সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। এত বেশিসংখ্যক সংগঠনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলে। এ নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক দেশ রূপান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর ইতিমধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে জামুকা। নানা অভিযোগ ও বিতর্কের মুখে তিন বছর ধরে নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে যা জানা গেল : রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকেন্দ্রিক কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকানা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি কার্যালয় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে দেশ রূপান্তর। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের দেওয়া ঠিকানায় (১০ গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) একটি ভবনের দোতলায় দুদিন গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কার্যালয় থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ। ভবনসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, মাঝেমধ্যে অফিসে কিছু লোকজনকে দেখা গেলেও বেশির ভাগ দিনই এটি বন্ধ থাকে।
একই ভবনে ‘শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব মেলেনি। সংগঠনের সাইনবোর্ডে লেখা একটি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এর নির্বাহী সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন হাজি মো. এমদাদুল হক নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে এই ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর অফিসটি তারা সংগঠনের নামে ব্যবহার করেন। জামুকার অনুমোদন না থাকলেও আবেদন করা আছে। বিভিন্ন দিবসে তারা নানা কর্মসূচি পালনসহ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে কাজ করেন। তবে এখন সংগঠনের কার্যক্রম কিছুটা কম বলে জানান তিনি।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ভাতা চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ’ নামে একটি সংগঠন প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও সক্রিয় দেখা যায়। ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’ নামে একটি সংগঠনের শাখা সংগঠন এটি। সংগঠনটির সভাপতি পরিচয় দেওয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা বঞ্চিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদের হয়ে আমরা মানবিক কারণে কর্মসূচি পালন করি। কোনো মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাদের সন্তানরা ভাতা পান। কিন্তু নাতি-নাতনিরা কেন বঞ্চিত হবেন?’ গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের ছয়তলায় ‘শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় সম্প্রতি একাধিকবার গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ রকম বহু সংগঠন দেশে আছে। এদের বিষয়ে নানা অভিযোগ শুনি। এগুলোর বিষয়ে একটাই সিদ্ধান্ত এরা অবৈধ ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। এদের কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে উল্টোটা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মান সম্মানকে এরা ভূলুণ্ঠিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে কেউ এমন করুক এটা মানা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না। এটি করতে পারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা কেউ অভিযোগ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে এদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।