সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

তুরাগ তীরে তাবলিগের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত শতাধিক

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৪৮ পিএম

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে শনিবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

নিহত ইসমাইল হোসেন (৭০) মুন্সিগঞ্জের নীলপাড়া এলাকার খলিল মন্ডলের ছেলে। তিনি মাওলানা সাদ- এর অনুসারী বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফজরের নামাজের পরপরই মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইট-পাটকেল, লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের কারণে সকাল থেকেই টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় র‌্যাব ও পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এরই জের ধরে শনিবার সাদ ও জুবায়েরপন্থিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গি, গাজীপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গাজীপুর পুলিশ দপ্তরের ডিসি (প্রশাসন)আরিফুর রহমান বলেন, “সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত ও শতাধিক মুসল্লি আহত হওয়ার খবর পেয়েছি।”

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের কোন্দলে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত মাসে স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ ভারতের উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দপন্থিদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার এক আদেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে নির্দেশনা জারি করে।

এর আগে দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা পাঁচদিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইতজেমা মাঠ দখল করে আশপাশে পাহারা বসায়।

এ অবস্থায় মাওলানা সাদের অনুসারীরা শুক্রবার মাঠে ঢুকতে না পেরে আশপাশের মসজিদে অবস্থান নেন। শনিবার ভোর থেকে সাদের শত শত অনুসারী রাজধানীর দিক থেকে টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান দেশ রূপান্তরকে জানান, দুপুর দেড়টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বিরোধপূর্ণ ইজতেমা ময়দান থেকে দুই পক্ষের লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো পক্ষের আগে থেকে সেখানে অবস্থানের তথ্য ঠিক নয়। দুপক্ষের মুসল্লিরা বিক্ষিপ্তভাবে ইজতেমা মাঠের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ঢুকে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

জুবায়েরপন্থি মুফতি মিজানুর রহমান দাবি করেন, সাদপন্থিদের হামলায় তাদের কমপক্ষে ১০০ মুসল্লি আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে সাদপন্থি কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আহতের সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ  হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, জরুরি বিভাগে আসা বেশিরভাগ মুসল্লিই রক্তাক্ত ছিলেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক আলাউদ্দিন জানান,বিকেল পর্যন্ত ২৫ জন মুসুল্লিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বিল্লাল নামে একজনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিরা সাংবাদিকদের জানান, তারা মাওলানা জুবায়েরপন্থি। সকাল থেকে ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশে বিদেশি মেহমানদের থাকা ও ইবাদতের জায়গা তৈরি করছিলেন। এসময় তাদের ওপর সাদপন্থিরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। এতে তাদের অন্তত ৩০ জন মুসল্লি আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- মোজাম্মেল (২০), ইসহাক (২০), আরাফাত (১৮), নুরুল আলম (২২), ফয়সাল (২২), মোহাম্মদ হোসেন (৪০),  বেল্লাল (৪৫), অজ্ঞাত (৪৫), মাইনুদ্দিন (২৪), হাসানুর (২৮), আনিসুর (২৬), শামীম (৪০), শাহিন (৪০), সারোয়ার (১৮), ইমাম (৪৫), ইব্রাহিম (৪০), ওমর ফারুক (২৩), জসিম (৫০), হাসান (৩৫), শাকিল (২৮), শাহিন (১৯) আলমগীর (৪০) গোলাপ মিয়া (৪১) নুর হোসেন (১৮) আবু জর (২২) দুদু মিয়া (২৪) আনোয়ার (২৬) মাসুদুর রহমান (৩০)।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত