সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের চিফ প্রসিকিউটর।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সৌদি যুবরাজের মিডিয়া উপদেষ্টা সাউদ আল-কাহতানি এবং গোয়েন্দা সংস্থার উপ-প্রধান মেজর জেনারেল আহমেদ আসিরিকে আগেই চাকরিচ্যুত করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানায়, সাউদ আল-কাহতানি এবং আহমেদ আসিরি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে ‘জোরালো সন্দেহ’ করছে প্রসিকিউটর অফিস। রয়টার্সকে তুরস্কের দুই কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানায়।
এএফপির বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, মঙ্গলবার এই দুইজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আনে প্রসিকিউটর অফিস।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন জামাল খাসোগি। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্টের এই কলামিস্ট।
শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সৌদি। তবে সংবাদমাধ্যমে তুর্কি গোয়েন্দাদের একের পর এক ‘তথ্য ফাঁসে’র মুখে ১৯ অক্টোবর খাসোগি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে স্বীকার করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। যদিও এর সাথে সৌদি যুবরাজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে তারা দাবি করে।
তবে আন্তর্জাতিক চাপে খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি রাজপরিবারের সম্পৃক্ততা জোরালো হলে ২০ অক্টোবর যুবরাজের প্রধান সহযোগী দেশটির রয়্যাল কোর্ট অ্যাডভাইজার সাউদ আল-কাহতানি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা জেনারেল ইন্টেলিজেন্স প্রেসিডেন্সির (জিআইপি) উপ-প্রধান আহমেদ আসিরিকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ঘটনায় সৌদি প্রসিকিউশন মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে।
নভেম্বরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই খাসোগিকে হত্যা করা হয়। এই কাজে সহযোগিতা ছিল তার ছোট ভাই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের।
ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করলেও সর্বশেষ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সদস্যরা সিআইএ প্রধানের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ঘোষণা দেন যে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের জড়িত থাকা নিয়ে তারা নিশ্চিত। এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ত না থাকার ‘সম্ভাবনা শূন্য’।
সৌদি কর্তৃপক্ষ আসিরি এবং কাহতানির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন না করায় ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটর এই দুইজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানি জারি করেছে বলে রয়টার্সকে তুরস্কের এক কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরো জানান, সৌদি আরব এ ঘটনায় সন্দেহভাজন জড়িতদের তুরস্কের হাতে তুলে দিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগকে মোকাবেলা করতে পারে।
তবে এ ব্যাপারে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ। যদিও সৌদি প্রসিকিউশন এর আগে স্বীকার করে, আল-কাহতানি এবং আসিরি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সৌদি আরবের প্রভাবশালী এই দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ। আল-কাহতানিকে মনে করা হয় যুবরাজের ডানহাত।
রয়েল কোর্ট অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করলেও আল-কাহতানি ছিলেন যুবরাজের মিডিয়া উপদেষ্টাও। ধারণা করা হচ্ছে, তার তত্ত্বাবধানেই ১৫ জনের একটি বিশেষ স্কোয়াড রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে যায় খাসোগিকে হত্যা করতে। যদিও আল-কাহতানি সেসময় তুরস্কে ছিলেন না।
একইভাবে যুবরাজের আরেক ঘনিষ্ট সহযোগী আসিরিকে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের একজন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি যুবরাজের একজন উপদেষ্টা, সেইসঙ্গে ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি জোটের মুখপাত্রও। ২০১৭ সালে যুবরাজ তাকে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদে নিয়ে আসেন।
আলজাজিরা জানায়, আল-কাহতানি এবং আসিরি ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। তুরস্কের প্রসিকিউশন মনে করে, এ দুইজন শুধু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় ছিলেন।
এর আগে তুরস্ক সৌদি আরবকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৮ জনের একটি তালিকা দিয়ে তাদের হাতে সোপর্দ করতে অনুরোধ করলেও, সে ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়নি সৌদি কর্তৃপক্ষ।