বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গ্যাস্ট্রাইটিসের ট্যাবলেট সেবন করে গুরুতর অসুস্থ হওয়া এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা সদরের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। বাবার দাবি, পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন তার মেয়ে। রোজিনা আক্তার (৩২) নামের ওই পুলিশ কর্মকর্তা ধুনট থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে ময়নাতদন্ত শেষে রোজিনার মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ধুনট থানা ভবনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় ট্যাবলেট সেবন করেন তিনি। পরে থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শজিমেকে ভর্তি করে। সেখানেই রাতে মৃত্যু হয় তার।
ধুনট থানার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয় নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের নান্নু মিয়ার মেয়ে রোজিনা আক্তারের। ২০০৮ সালে একই এলাকার আবদুল লতিফ মোল্লার ছেলে হাসান আলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। রোজিনার স্বামী হাসান আলী সিংড়া উপজেলার দমদমা কারিগরি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। রোজিনা খাতুন কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ধুনট থানায় যোগ দেন। এরপর ছেলে-মেয়ে ও তার মাকে নিয়ে তিনি থানার পাশে একটি ভাড়ার বাসায় ছিলেন।
বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে মেয়ের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা নান্নু মিয়া জানান, রোজিনার স্বামী হাসান আলী চাকরির সুবাদে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দুজন চাকরির কারণে দুই এলাকায় থাকায় তাদের মধ্যে দাম্পত্যকলহ দেখা দেয়। এরই মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল রফিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রোজিনা। রোজিনার বাসায় থাকা তার মা বিষয়টি জানতে পারলে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। গত দুই দিন রোজিনা ঠিকমতো খাচ্ছিলেন না। গত মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করেই থানা থেকে বাসায় ফিরে গ্যাস্ট্রাইটিসের ট্যাবলেট সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, দাম্পত্যকলহের কারণে ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর (ইউডি) মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনাটি নিয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়ার শেরপুর-ধুনট সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজীউর রহমান জানান, রোজিনার আত্মহত্যার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে দেখা হবে। তবে বিষাক্ত ট্যাবলেট সেবনে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।